আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশা এবং বাস্তবের সমান্তরাল গল্প

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । ' মর্নিং শোজ দা ডে ' কথাটা কখনোই বিশ্বাস করতেন না । অবিশ্বাসের প্রমাণ হাতেনাতে আরেকবার পেয়েছিলেন আজকে । সকালে বের হবার সময় হুড়মুড় করে বৃষ্টি নেমে পড়েছিলো । কোনভাবে বয়সের কথা মনে রেখেও প্রয়োজনে দৌড়ে বাস ধরতে পেরেছিলেন ।

বাসেও স্বর্গসুখ নেই বিলক্ষণ জানতেন । সেই সম্ভাবনাই এই পোড়ার দেশে প্রত্যাশা করা যায়না । একগাদা মানুষের ভিড়ে গাদাগাদি করে , চিৎকার - চেঁচামেচি , মানুষের ঘামের গন্ধ ইত্যাদি ডিঙ্গিয়ে অবশেষে যুদ্ধজয়ের স্বস্তি নিয়ে দেড় ঘন্টা পর নেমে পড়লেন । ততক্ষণে আবার আবহাওয়া রৌদ্রজ্জ্বল । মাথার চারপাশটা চক্কর দিয়ে উঠতে নেয় এমন অবস্থা ।

রাস্তায় তখন মানুষ যথারীতি নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত । দেখলে ঠাহর করাই যায়না দেড় ঘন্টা আগেও কিভাবে বাস ধরতে সবাই পড়িমড়ি করে ছুটেছিলো । গন্তব্যের পথ আরো কিছুটা দূরে । কিছু সামনে থেকে পুলিশের ' তোলা ' ধরার দৃশ্য দেখতে থাকলেন মন দিয়ে । এরা কি বস্তু দিয়ে তৈরী ভেবে পাননা ।

পয়সা কুড়ানোর সামান্যতম সম্ভাবনা দেখলেও কোন ছাড়াছাড়ি নেই । নিরাপদ , নিরীহ পাবলিক পেলেই হলো । পাঁচশো থেকে শুরু করে চা-নাস্তার জন্য বিশ টাকা হলেও নেবে । পথটা সামান্য পরিবর্তন করে নিলেন । চারপাশে লোক জমে যাবার কোন চান্স নেই ।

কোন না কোন অজুহাতে তার কাছ থেকেও টাকা নেবেই নেবে । হাতে আজকাল বিশেষ টাকা থাকেনা । আজকেও নেই । স্ত্রীর চিকিৎসায় জলের মত টাকা যাচ্ছে । ইদানিং হাতখরচেও টান পড়েছে ।

হাঁটতে হাঁটতে ছেলের মুখ সামনে ভেসে উঠলো । বেকার ছেলের জন্য অব্যক্ত ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করেন কখনো কাউকে বুঝতে দেননি । এমনকি ছেলেকেও নয় । অন্য আট - দশটা ছেলের মত ধান্দাবাজ হলে চিন্তা করতেন না তার জন্য । ঠিকই একটা চাকরী কিংবা ব্যবসা শুরু করতে পারতো ।

কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা । ছেলে তার কাছে হাতখরচের টাকা চাইতে এসে লজ্জিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকলে তার বুক মোচড় দিয়ে উঠে । মাস দুয়েক আগে হবে ছেলের এক বান্ধবীর সাথে ছেলেকে রাস্তায় দেখেছিলেন তিনি । সেই হাসিমুখ মিইয়ে যাবে একদিন বুঝে নিয়েছিলেন । চাকরী নেই , চালচুলোও যুৎসই ধরণের নয় এমন ছেলে তার সময়েও বাসস্টপের মত এখনো তাই ।

তিনি বোঝেন ছেলে ইতোমধ্যেই এই উপলব্ধির তেতো স্বাদ পেয়েছে । আজকাল তাকে আর হাসিমুখে তেমন দেখেন না । বেশীরভাগ সময়তে নিজের ঘরেই থাকে । তার অনেকগুলো পাওনা চুকিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে । নিজের পেনশন , ছেলের একটা চাকরী , পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমিকে গ্রামের মোড়লদের হাত থেকে বাঁচানো ।

অবশেষে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে যান । তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় । যার কাছে এসেছেন সে এখন ধরাছোয়ার বাইরে । তবুও শেষ আশা তাকে চিনতে পারবে । বাল্যকালের প্রিয় বন্ধুর জন্য কিছুটা সময় নিশ্চয়ই বের করে নেওয়া যায় ।

অট্টালিকাসম বাড়ির গেটের দারোয়ান পরিচয় জিজ্ঞাসা করে । নিজের নাম - ধাম , ঠিকানা সব বলার পর বাড়ির মালিকের সাথে তার সম্পর্কেও কথাও উল্লেখ করেন । দারোয়ান ছুটে যায় । তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন , সময়টা থেমে গেলো কিনা বুঝে উঠতে পারেন না । বাড়ির পথে ফিরতে গিয়ে একসময় প্রবল অবসন্নতা , গাড় হতাশা , অনিশ্চিত ভবিষ্যত এই ৩ প্রতিপক্ষের কাছে হার মেনে ম্যাসিভ হার্ট এটাকে চলে যাবার আগে ভদ্রলোকের মনে চারপাশের প্রতি প্রবল ঘৃণা ছিলো , পরাজয়ের গ্লানি ছিলো নাকি তার প্রিয়জনদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা ছিলো কেউ জানতে পারেনি ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।