আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঃঃঃ কবীর চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা !!! ঃঃঃ

ঃঃঃঃ চল বহুদূরে...নির্জনে আড়ালে লুকোই...ঃঃঃ চলমান জীবনের কথা নিয়ে ২০০৬ সালে আবারও লিখতে চাইছিলেন স্মৃতিকথা। কিন্তু সেই স্মৃতিকথার নাম কী হবে, তা নিয়ে কবীর চৌধুরীর নাতনিদের সঙ্গে চলে আলোচনা। তিনি ‘শেষ বেলাকার কথকতা’ নামটি পছন্দ করলেও নাতনিরা প্রবল আপত্তি তোলেন। অবশেষে একটা রফা হয়। ‘শেষ বেলা নয়’ এ লেখার নাম হবে ‘বেলা শেষের কথকতা’ বলে ঠিক করেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।

তিনি নামটি নিয়ে বলেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর অনুষঙ্গ একটু নমনীয়। একটু শিথিল, একটু দূরাগত। ’ তবে তখন তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ‘আমার শেষ বেলা এখন না হলে কখন হবে?’ বাংলা একাডেমীর মাসিক উত্তরাধিকার পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছিল তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘নাই বা হলো পারে যাওয়া’। পত্রিকাটির এ বছরের আশ্বিন সংখ্যায় তাঁর ওই ধারাবাহিকের সপ্তম পর্বের একটি অংশে মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ নিয়ে কী করা হবে, সে সম্পর্কে কিছু ইচ্ছার কথা লিখে যান। তিনি লিখেছেন, ‘আমি মৃত্যুর পর দ্রুত সমাহিত হতে চাই।

চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে হলেই ভালো হতো। নিকটস্থ মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। একটি জানাজাই হবে। তার বেশি নয়। আমার মরদেহ শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি কোথাও কারো শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে না।

কোনো মিলাদ, কুলখানি, চল্লিশা ইত্যাদি হবে না। আমি সেখানে সমাহিত চাই, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের পর আরেকজন সমাহিত হতে পারবেন আমার কবরের ওপরেই। ’ ‘নাই বা হলো পারে যাওয়া’ ছিল লেখকের জীবদ্দশায় আত্মজীবনীমূলক সর্বশেষ প্রকাশিত রচনা। শেষ বিদায়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সিক্ত কবীর চৌধুরী জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

রেখে গেলেন মুক্তচিন্তা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাদীপ্ত অসামান্য এক কর্মময় জীবনের দৃষ্টান্ত। ৮৮ পেরিয়েও যিনি দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করতেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবি না। ’ ঘুমের মধ্যেই শান্তির এক মহা প্রস্থানের পথে চলে গেলেন কবীর চৌধুরী। তাঁর পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর নয়াপল্টনে নিজ বাসভবনে আজ মঙ্গলবার ভোররাতের কোনো একসময় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

কবীর চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। বর্ণাঢ্য কর্মমুখর জীবনের অধিকারী কবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিলে। তাঁর বাবা আবদুল হালিম চৌধুরী ও মা আফিয়া বেগম ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের দিয়েছেন উদার ও মুক্তচিন্তার এক পারিবারিক পরিমণ্ডল। সেখান থেকেই বেড়ে ওঠেন তিনি, তাঁর ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, বোন ফেরদৌসী মজুমদারের মতো বাংলাদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর আগেই কবীর চৌধুরী তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে শেষ ইচ্ছার কথা লিখে গেছেন। তাঁর শেষকৃত্য নিয়ে কোনো ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন হোক, তা তিনি চাননি। তাঁর সেই ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কবীর চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হচ্ছে না। তবে তিনি চেয়েছিলেন শেষবারের মতো তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যেতে। সেই ইচ্ছাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে বাদ আসর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা শেষে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া দেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি এবং সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তার মরদেহ শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে দাফন করা হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।