আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

" বিভীষিকাময় সেই রাত এবং পরিণতি.............."

আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। মনে হয় না এর থেকে বেশী কিছু চাওয়ার আছে। এই প্রথম একটি ভৌতিক গল্প লিখলাম। একটু কষ্ট করে পড়ে কেমন হলো জানাবেন। অনেক বিখ্যাত মানুষই বলে গেছেন ‘সব মানুষের জীবনে একটি করে হলেও ভয়াবহ গল্প থাকে’।

আমার মনে হয় আমার জীবনেও একটি গল্প আছে। যা আমার জন্য বেশ ভয়াবহ। এ পর্যন্ত অনেককেই এই গল্পটি বলেছি। কেউ শুনে ভয় পায় আবার কেউ এই শতাব্দীতে এমন গল্প শুনানোর জন্য আমার সাথে হাসাহাসি করে। কিন্তু তাতে আমি কিছু মনে করি না।

কারণ অন্য সময় অন্য কেউ আমাকে শুনালে আমিও বিশ্বাস করতে চাইতাম না। আমি এখন সেই গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। বিশ্বাস করা না করা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু একটি কথা বলে রাখি....পৃথিবী বড়ই রহস্যময়। থাক আর কথা না বাড়িয়ে গল্পটি শুনা যাক।

ঘটনাটি ২০০৫ সালের। সবে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। রেজাল্ট দিতে আরো ২মাস। পরীক্ষা শেষ হবার আগে মনে হয়েছিলো বিশ্বজয় করে ফেলবো। কিন্তু ২০/২৫দিন বেশ আরামে কাটানোর পর এখন খেই হারিয়ে ভেজা বিড়ালের মতো বিরক্তকর জীবন যাপন করছি।

কোন কাজ নেই, পড়া নেই, কোচিং নেই সে এক ফালতু অবস্হা। আমি থাকি রামপুরায়। সেখানে আমার বন্ধুদের একটা গ্রুপ আছে। অমিত, ফয়সাল, আনন্দ, অপু, রিপন, তমাল,একরাম এই হলাম আমরা। সবাই তখন ছুটিসংক্রান্ত বিড়ম্বনায় আক্রান্ত।

একদিন আমরা সন্ধার দিকে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে অমিত বলে উঠলো, “এই! আমার নানী কালকে ফোন করেছিলো। সেখানে যেতে বললো। তোরা সাথে যাবি নাকি?” অপু প্রায় লাফিয়ে উঠলো, “মামা! তোর পায়ে ধরি। কোন এক জায়গায় নিয়ে যা।

সময় আর কাটে না। ” “শোন সবাই, অপু ঠিকই বলেছে। চল সবাই একসাথে মিলে অমিতের নানী বাড়িতে বেড়াতে যাই। ” আমি বললাম। আমাদের মাঝে একরাম, তমাল তখন গ্রামের বাড়িতে।

সুতরাং এদের কথা বাদ। আমরা হলাম মোট ছয়জন। “পাঁচজন গেলে তোর নানী বাড়ি আবার ঝামেলা করবে না তো?” রিপন বললো। “আরে না। তোরা সব আমার বন্ধু না! কোন সমস্যাই হবে না।

” আর দেরী করলাম না। আনন্দ ছাড়া আর সবাই ২দিন পর রওনা দিলাম। কি এক কারণে আনন্দ যেতে পারলো। কিন্তু এখন মনে মনে ভাবি যদি আমার যাওয়া কোন কারণে বন্ধ হতো....... অমিতের নানীবাড়ি টাঙ্গাইল সদরে এবং উনারা ওখানকার বেশ প্রভাবশালী পরিবার। বিশাল দোতালা বাড়ি উনাদের।

অমিতের অনেক আত্মীয় টাঙ্গাইলে থাকে। ফলে আসার পর থেকেই দাওয়াত খেতে খেতে আমাদের সুখের দিনই কাটতে লাগলো। ওখানে আমাদের সাথে অমিতে এক মামাও বেড়াতে এসেছিলেন। আশিক মামা নাম উনার। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়েন।

উনার সাথে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। একসাথেই ঘুরতে লাগলাম আমরা। ভ্রমনের তৃতীয় দিন অমিতের এক খালার বাসায় রাতে দাওয়াত খেতে এসেছি। ভূনা খিচুড়ী আর গরুর মাংস দিয়ে পেট ভরে খেয়ে আমরা উনাদের বিশাল পুরনো বাড়িটা ঘুরতে লাগলাম। সত্যিই এক দর্শনীয় বাড়ি এটা।

জিজ্ঞাসা করলাম, “কি রে অমিত ? এই বাসায় রূম কয়টা রে?” “সে অনেকগুলো। বাসাটা চমৎকার। তাই নারে?” হঠাৎ আতিক মামা বললো, “তোমরা কি জান....এই বাসায় পূর্বদিকের কোণায় একটা রূম আছে। ১৫বছর আগে এক মহিলা সেখানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো?” কথাটা আমি, অপু, ফয়সাল প্রায় লুফে নিলাম। কারণ এইসব ভৌতিক বিষয়ে আমাদের বিশেষ করে আমার খুব আগ্রহ ছিলো।

কিন্তু অমিত আর রিপনকে তেমন আগ্রহী দেখলাম না। ফয়সাল বলে উঠলো, “না করিস না। চল সবাই গিয়ে রূমটা দেখে আসি। ” আমি আর অপু একসাথেই বললাম, মামা চলেন। “না...এই রাতের বেলা ওখানে যাওয়ার দরকার নেই।

” অমিতের ভীত কন্ঠ। আশিক মামা রেগে গেলেন, “ কেন যে তুই এইসব জিনিসকে এক ভয় করিস বুঝি না?? আরে পৃথিবীতে সুপারন্যাচারাল শুধু শব্দটাই আছে। বাস্তবে কিছু নেই। ” রাত তখন প্রায় ১০টা। একপ্রকার জোর করেই অমিত ও রিপনকে নিয়ে আমরা সেই ঘরটায় গেলাম।

কিন্তু রূমে ঘুকার আগে যে একটা আগ্রহ ছিলো রূমে ঢুকার পর তা সাথে সাথে নিভে গেল। খুবই সাদামাটা একটা রূম। কোন আলাদা বলার মতো কিছু নেই। রূমের চারিদিকে আমরা কতক্ষণ ঘুরলাম। কিন্তু আলাদা কিছুই চোখে পড়লো না।

মনে কিছুটা হতাশা নিয়েই আমরা বের হয়ে গেলাম। অবশেষে সবাই অমিতের নানী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিন্তু আমার মাথায় একটা পোকা ঢুকে গেছে। আমি পাশাপাশি হাটতে হাটতে আশিক মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা মামা...আসলেই কি এইসব সুপারন্যাচারাল বিষয়গুলোর কোন অস্তিত্ব আছে? ” “মনে হয় না। থাকলে একদিন না একদিন তো চোখে পড়তোই।

আমি কি আর কম চেষ্টা করেছি। ” মানে!!! রিপন আচমকা হাটা থামিয়ে বললো। ‘আরে আশিক মামা প্ল্যানচেট করতে পারে.....’ অমিতের জবাব। অমিতকে থামিয়ে দিলেন আশিক মামা। ‘পারি বলাটা ঠিক হবে না।

কারণ এখন পর্যন্ত আনতে পারি নি। কিন্তু নিয়মটা কিছু জানি। ’ হঠাৎ করে টাঙ্গাইলের নির্জন রাস্তায় আমার মনের মাঝে এক অজানা ভয়, এক আতঙ্ক চেপে বসলো। প্রথমে মনে করেছিলাম শুধু আমি, পরে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি কি এক কারণে সবাই কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে। ফয়সাল হঠাৎ করে আমার মনের কথাটা বলে বসলো, ‘মামা চলেন আজকে রাতে আমরা প্ল্যানচেট করে দেখি।

দেখি আজকে কোন আত্মাকে এনে তার সাথে কথা বলতে পারি নাকি। ’ রিপন তীব্র কন্ঠে এর প্রতিবাদ করলো। অপু মৃদুকন্ঠে আরেকটি তথ্য দিলো এটি করতে গিয়ে অনেকে নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। কেউ আর কোন কথা বললো না। সবাই চুপচাপ হাটতে লাগলাম।

রাতটি ছিলো অমাবস্যা। সেই রাতটি যেন শুধু আমাদের জন্য তার সব রহস্যেভরা রূপ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। কোনমতে বাসায় ফিরলাম। রাত ১১.৩০টার দিকে সবাই বারান্দায় বসে আছি। সবারই মনে এক অজানা ভয়।

কিন্তু একটি কথা আছে, ‘প্রেত থাকুক আর না থাকুক কিন্তু মানুষ কেন জানি এটিকে গায়ে লাগিয়ে ভয় পেতে খুব ভালোবাসে। ’ সুতরাং সবার সম্মতিক্রমে রাত ১টার দিকে আমরা প্ল্যানচেট করতে বসে গেলাম। প্ল্যানচেট সম্পর্কে কিছু বলে নেই। আমিও সঠিক জানি না এর সম্পর্কে। এখানে যা বলছি সব আশিক মামার মুখ থেকে শুনা।

এটি হলো মানুষের আত্মাকে হাজির করবার এক পদ্ধতি। একটি অন্ধকার রূম, নিশুতি রাত, একটি মোমবাতি, ‘A-Z’ পর্যন্ত লেখা একটি কাগজ এবং ৪/৫জন হলেই শুরু করে দেয়া যায়। যে আত্মা আসবে সে নাকি অক্ষরের সাহায্যে যেকোন প্রশ্নের উত্তর দেয়। বাংলার আত্মা কি করে ইংরেজী প্রশ্নের উত্তর দিবে সেটি কিছুতেই মাথায় আসছিলো না। কেউ এটিকে বিশ্বাস করে আবার কেউ করে না।

আশিক মামা আমাদের নিয়ম বেশ ভালোভাবেই বোঝাতে লাগলেন। এটির গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হলো ‘বন্ধন’। যতজন করতে বসেছে অবশ্রই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাতে হাত রেখে বন্ধন তৈরী করে রাখে। কারণ এই আত্মা উপস্হিত কোন একজনের উপর ভর করবে। সেই অবস্হায় বন্ধন ছুটে গেলে আত্মাটি আর চলে যেতে চাইবে না এবং তখন একে বিদায় করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তখন এটি যার উপর ভর করেছে চিরকালই তার সাথে থেকে যেতে চায়। আমাদের সবার মনে অবস্হা তখন ভয়াবহ। আমার মনে মাঝে আবার এক অজানা ভয় ঘিরে ফেললো। কে যেন আমাকে অনেক দূর থেকে কাতর কন্ঠে সাবধান করে যাচ্ছে। কি আর করা সবাই মনে এক অজানা ভয় নিয়ে রাত ১টায় রূমের সব বাতি নিভিয়ে দিলাম।

বাইরে অমাবস্যার রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে। রূমের সবকিছু কালোতে ডুবে গেলো। কিছু কি আবারও সাবধান করে দিতে চাইছে?? আমি কি বুঝেও না বুঝার ভান করে যাচ্ছি??? মেঝেতে সবাই বসলাম। মামা মোমবাতি জ্বালিয়ে কাগজি উনার সামনে এনে রাখলেন।

শুরু হলো এক অনিশ্চয়তার পথের যাত্রা। মামা আস্তে আস্তে বলতে লাগলেন, ‘সবাই একে অপরের হাত ধরে চক্রাকারে কসে একটি বন্ধন তৈরী করো। আমি এখন আত্মাকে ডাকবো। আজ যাই ঘটুক কেউ কিন্তু বন্ধন ছাড়বে না। ’ আপনাদের কি বলবো তখন মনের কথা? চারিদিকে শুনশান নীরবতা, গাঢ় অন্ধকারের মাঝে মোমবাতির রহস্যময় আলো যেন পরিস্হিতিকে আরো ভযাবহ করে তুললো।

মামা সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বললেন। ওনার না বললেও হতো। কারণ আতঙ্কে সবাই চোখ ততক্ষণে বন্ধ করে ফেলেছি। মামা আস্তে আস্তে গমগম কন্ঠে বললেন, ‘কোন আত্মা যদি আমার আহ্বান শুনতে পান তাহলে আমাদের কাছে আসুন। আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমরা অপেক্ষায় আছি। আপনি আসুন। আমরা আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আপনি আসুন। ’ মামার এই আহ্বান চলতেই থাকলো।

আর আমরা প্রায় দম বন্ধ করে বসে আছি। আমি আমার জীবনে এত ভয় পাইনি.....যতটা আজ পাচ্ছি। ওদিকে মামা বলেই চলছেন, ‘আপনি আসুন....আপনি আসুন। ’ অনেকক্ষণ হয়ে গেলো বসে আছি। কারো কোন সাড়াশব্দ নেই।

না না.....এটা কিসের শব্দ পেলাম! মনের ভুল নাকি? হঠাৎ করে জানালা দিয়ে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস আমার গায়ে লাগলো। মেরুদন্ড দিয়ে শীতল রক্ত বয়ে গেলো মনে হয়। ভয়ে আমি ঘামতে লাগলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে ফেললাম। সে এক পরিবেশ এখানে!! নিজের এবং অন্যদের হৃদপিন্ডের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।

‘আপনি কি আমাদের মাঝে এসেছেন?’ কোন সাড়া শব্দ নেই। আমি আড়চোখে সবার দিকে চোখ বুলালাম। সবাই কেমন যেন ঝিম মেরে বসে আছে। মামা আবার বললেন, ‘আপনি কি আমাদে...........’ “এই চুপপপপপপ” কার গলা এটা??? আমি তো বলিনি। অমিত, ফয়সাল, অপু, রিপন এই চারজনের মাঝে কেউ একজন বলেছে।

কিন্তু কে? আমি সাথে সাথে আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মামাও ভয়ের চোটে চুপ মেরে গেছেন। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলার শব্দ শুধু শোনা যাচ্ছে। আমি আবার চোখ খুললাম। প্রথমেই তাকালাম মামার দিকে।

মামারও চোখ খোলা। বাকিদের দিকে দুজনেই তাকালাম। দেখলাম ফয়সাল, অপু আর রিপন এর চোখ বন্ধ। আর কোর সাড়াশব্দ নেই। অমিতের দিকে তাকালাম।

অমিতই জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে। তাহলে কি??? যা থাকে কপালে। আমি কাপা কাপা গলায় বললাম, ‘আপনি কি এসেছেন?’ বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম। যদি আমার দিকে তাকায়!! হঠাৎ মোটা গলায় কাদা কাদা স্বরে কে জানি বললো, ‘হুমম। আমি এসেছি।

’ কথাগুলো অমিতের কাছে থেকেই আসলো। যা বুঝার বুঝে নিলাম। আত্মা অমিতের উপরই ভর করেছে। আর প্রশ্ন করবো কি?? এক ভয়াবহ নিরবতায় চুপচাপ বসে আছি। আমি ঘামতে লাগলাম।

মামা যে আতঙ্কে মিইয়ে গেছেন তা না বললেও বুঝা যায়। ফয়সাল, রিপন ও অপু যেন মরেই গেছে। কোন সাড়া শব্দ করছে না একটাও। মন চাইছিলো উঠে গিয়ে লাইটটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু বন্ধন ভেঙ্গে উঠে কি বিপদে না আবার পড়ি!!! দরকার নেই।

এক অচেনা আত্মার সাথে আতঙ্কের সময় কাটতে লাগলো। হঠাৎ আত্মা বলে উঠলো, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে রে এখানে। আমাকে কেন ডেকে আনলি রে তোরা ???’ কার প্রশ্নের কি উত্তর দিবো!! দরকার নেই। ঝিম মেরে আছি। ভয়ে চোখ খুলতেও পারছি না।

চোখ খুলে যদি দেখি আমার দিকে ওটা তাকিয়ে আছে!!!কোন মানে হয়!! কোন মানেই হয় না। মামা তো একদম চুপ। হঠাৎ খুব জোরে ঠাস ঠাস শব্দ হতে লাগলো। হৃদপিন্ড ভয়ে প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। একটু পরে বুঝলাম ওটা দরজার শব্দ।

অমিতের নানীর গলা শুনতে পেলাম। ‘আমার অমিত কই? এই দরজা খোল। আমার অমিত কই??’ চোখ খুলে ফেললাম। দেখি মামা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনার চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেলাম উনি আর এই বন্ধনের পরোয়া করেন না।

ভয়ে উনার সব শেষ। যাই হোক উনি এখন দরজা খুলবেন। আমার মনের কথা আরকি। বসে থাকার সাহস আমার অনেক আগেই শেষ। বাকি ৩টার কোন শব্দই নেই।

মরে গেল নাকি?? প্রায় একই সাথে আমি ও মামা উঠে গিয়ে প্রায় দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। মামা দরজা আগলে রেখেছেন যাতে কেউ ঢুকতে না পারে। নানীর সাথে দেখি বাসার সবাই দাড়িয়ে আছে। নানী চিৎকার করেই বললেন, ‘ভিতরে কিসের চিৎকার চেচামেচী শোনা যাচ্ছে? আমার অমিত কই, অমিতকে নিয়ে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। ওকে ডাক।

’ বুড়ো মানুষটার কথার কি জবাব দিবো? আমাদের চেহারা দেখেই সবাই কিছু একটার আভাস পেয়ে গেলেন মনে হয়। হঠাৎ করে বিকট পশুর মতো চিৎকার রূমের ভিতর থেকে ভেসে আসলো। আমি আর পারছিলাম না। আমি মামাকে ধাক্কা দিয়ে রূমের বাইরে চলে আসলাম। মামাও আমার পরে বাইরে বেরিয়ে আসলেন।

ভয়ে দুজনেই থকথক করে কাপছি। কি জানি কি মনে করে অমিতের বড় মামা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আশিক মামা মাটিতে বসে পড়লেন। উনি এখনো কাপছেন। আমার অবস্হা প্রায় জম্বির মতো হয়ে রইলো।

মুখ দিয়ে এত মানুষের মাঝেও কেউ শব্দ করছে না। হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেল। বাসার ছোটরা ভয়ে চিৎকার করে কাদতে লাগলো। রূম থেকে কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কে যেন হারিকেন ধরিয়ে এনে রাখলো।

অমিতের নানী ও খালারা জোরে জোরে কাদছেন আর সূরা পড়ে যাচ্ছেন। ভিতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে কেউ জিজ্ঞাসাও করলো না। সবাই মনে হয় মনে মনে কিছু একটা টের পেয়ে গেছেন। ১০/১২ মিনিট পার হলো। রূম থেকে কোন শব্দ পাচ্ছি না।

হঠাৎ অমিতের বড় মামা একটা বড় দা ও টর্চ নিয়ে আস্তে আস্তে সবার নিষেধ অমান্য করে দরজা খুললেন। আস্তে আস্তে তিনি ভিতরের দিকে ঢুকতে লাগলেন। হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি কিছুটা সাহস এসে পড়লো। আমিও উনার পিছে পিছে গেলাম। প্রথমদিকে রূমের কিছুই দেখতে পেলাম না।

মামা সামনে আমি উনার পিছনে। মামা রূমের মাঝখানে টর্চের আলো ফেললেন। যে দৃশ্য সামনে পড়লো জীবনেও মনে হয় আমি আর বড় মামা এই দৃশ্য চোখের সামনে থেকে মুছতে পারবো না। আবছা আলোয় দেখলাম অমিত কুকুরের মতো হামাগুড়ি দিয়ে রূম চক্কর দেবার চেষ্টা করছে। কিন্তু ছায়াটি কার?? এ কিসের ছায়া রূমে?? বাকি তিনজন পড়েই আছে।

হঠাৎ অমিত থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকালো। এমন ভয়াবহ হলুদ কেন অমিতের চোখ?? এ কার চোখ?? বিকট শব্দে অমিত হাসতে লাগলো। পশুর মতো চিৎকার করে বললো, ‘আয় আয়.....আমার কাছে আয়। আয় না।

হি হি হি। ’ আবার জোরে শব্দ করে কাদতে লাগলো। হঠাৎ অমিত আমাদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে বিকট বিভৎস চিৎকার করে আস্তে আস্তে আসতে লাগলো। দৌড় দিয়ে আমি আর বড় মামা রূম থেকে বেড়িয়ে গেলাম। মামা সাথে সাথে ফিট হয়ে পড়ে গেলেন।

আমি সাথে সাথে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। বিকট শব্দ করে কে যেন দরজায় বাড়ি মারছে আর বলছে, ‘এই.......হারামজাদার দল দরজা খোল বলছি.......দরজা খোল বললাম। ’ একবার হাসি, একবার কান্না আবার আরেকবার এমন ভয়াবহ চিৎকার যেন কেউ যেন তাকে জবাই করছে। কিছু করার নেই। একেবারে অসহায়ের মতো আমরা সাতজন রূমের বাইরে দাড়িয়ে আছি।

এইসময় একইসাথে খূব দ্রুত কয়েকটি ঘটনা ঘটলো। বাসাটি যেন ভয়াবহভাবে দুলে উঠলো, কারেন্ট চলে আসলো, ভিতর থেকে সব শব্দ আসা বন্ধ হয়ে গেলো আর আমিও সাথে সাথে ফিট হয়ে পড়ে গেলাম। আমি জেগে উঠলাম পরেরদিন সকালে। উঠে যা দেখলাম অমিত, ফয়সাল, অপু, রিপন আর আশিক মামা সবাই বেশ স্বাভাবিক আছে। কারেন্ট আসার পর মহল্লার আরো কিছু মানুষ ডেকে নাকি দরজা খোলা হয়েছিলো।

খুলে দেখলো অমিতসহ ৪জন অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। কাউকেই আর জাগানো যায়নি। আমিসহ সবারই সেই ঘুম ভেঙ্গেছে সকাল বেলা। অমিতের রাতের ঘটনা কিছুই মনে নেই। বাকি ৩জনতো কিছুই দেখেনি।

পরে অবশ্য সব জানলো আমাদের মুখ থেকেই। আমি আর আশিক মামাই জানি যে প্ল্যানচেট করেই আমরা কি বিপদ ডেকে এনেছিলাম। সবাই শুনলে খুব ধমকাধমকি করবে এই ভেবে আমরা প্ল্যানচ্যাটের কথা কাউকেই বলিনি। বলেছি সবাই রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপরই নাকি অমিতের এই অবস্হা।

সেটা দেখে বাকি ৩জন ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং আমি আর আশিক মামাই কোনমতে বাইরে বের হয়ে যাই। সবাই ধরে নিলো কোন এক কারণে অমিতের উপর সেদিন রাতে প্রেত ভর করেছিলো। সেদিন পর আর একদিন ওখানে থাকিনি। ওইদিনই সবাই ঢাকায় ফিরে এসেছিলাম। সেই রাতের পর থেকে আমার জীবনটাই কেমন হয়ে গেলো।

এখনো প্রায় রাতে এক অজানা তীব্র ভয় আমার মনে গ্রাস করে থাকে। গল্পটি অবিশ্বাস্য বলে মনে হলো ?? মনে হবারই কথা। কিন্তু আপনাদের কি করে বোঝাই এর এক বিন্দু বানানো না। দরকার হলে অমিতের নানী বাড়িতে নিয়ে যাবো আপনাদেরকে। সবাই যা দেখেছিলো তাদের মুখ থেকেই শুনে নিবেন সেই ঘটনা।

কিন্তু সেটা আর সম্ভব না। কারণ?????????????? কারণটি হলো এই ঘটনার এক সপ্তাহের মাঝে কোর কারণে এতদিন সকাল বেলা অমিতের রূম থেকে গলায় ফাস দেওয়া লাশ উদ্ধার করে সবাই। অমিত একটি নোট লিখে গিয়েছিলো। সেখানে একটি কথাই লেখা “আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ” আমি অমিতকে শেষবারের জন্যও দেখতে যাইনি।

আশিক মামা ১মাসের মাঝে একদিন রাত ২টার দিকে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলো। কারণটি কি কে জানে??? ফয়সাল, অপু আর রিপনের কিছুই হয়নি। তারা স্বাভাবিক আছে এবং কোন এক কারণে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করে না কেউ। আমি ওদের দোষ দেই না। কারণ আমার হাতে বেশিদিন সময় নেই।

ব্যাপারটি কিছুদিন আগে ধরতে পেলাম। গভীর রাতে রূমে বসে বুঝতে পারি কেউ একজন আমার দিকে বারান্দার জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে গভীর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই। আমি জানি সেটা কি......কিন্তু আমি এখন সেটার অপেক্ষায় আছি। আমার কিছু প্রশ্ন আছে উনার কাছে।

ভয় এখন আর আমার মাঝে কাজ করে না। আপনি দেরী করছেন কেন??? আপনি আসুন। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসের ১০তারিখ। রাত ৩টা বাজে। সিগারেট খাচ্ছি আর বারান্দার দরজার দিকে তাকিয়ে আছি।

হঠাৎ ঘট করে শব্দ করে বারান্দার দরজা খুলে গেল। সেই পরিচিত আমার চেনা হলুদ চোখ। আমি সিগারেটটি ফেলে দিয়ে হাসিমুখে উঠে দাড়ালাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।