আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা,১৩শ পর্ব

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে ১২শ পর্ব Click This Link একই বাড়ীর দোতলা আর তিনতলায় দুইভাইয়ের পরিবারের বসবাস । রুমানার বিয়েতে আত্মীয় স্বজনের আসা যাওয়া লেগেই আছে । এর মাঝে লীনা ইউনিভার্সিটি ঘুরে এসেছে দরকারী ক্লাসগুলো মিস করতে চায় নি বলে । দীপু জানে চাচাতো বোনের বিয়ের জন্য বাড়ী যাবার তাড়া থাকে লীনার , তবু ভাবে কি হয় আরো কিছুক্ষন থাকলে ক্যাম্পাসে । পাশে না থাক্ , ক্যাম্পাসে লীনা থাকলে দেখা হবার সম্ভাবনা থাকে ।

মুখ ফুটে কিছু বলে না । নিজেকে বোঝায় কটা দিন মাত্র , তারপর আবার লীনা অনেকটা সময় তার আশে পাশে কাছাকাছি কোথাও থাকবে । লীনা বেশ আনন্দে আছে, বাড়ীর প্রথম বিয়ে বলে কথা । তা'ছাড়া সানোয়ার সাহেব শর্ত মেনে বসে আছেন অপেক্ষায় যে তার ছেলে রাকিবের বিয়ে হয়ে গেলে এ বাড়ী ভেঙ্গে ফেলা হবে , আধুনিক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট উঠবে এখানে । লীনা ভেবে কোন কূল কিনারা পায় না , তখন কেমন হবে এখানের পরিবেশ ! কারা থাকবে এখানে ? খুব একটা হৈচৈ শোরগোল জমবে , কি করে থাকবে ওরা এখানে ।

আর কে বা জানে লীনা আদৌ থাকবে কিনা এখানে তখন ! রুমানার বিয়ে বৌভাত সব শেষ হোল । লীনা খেয়াল করেছে এত সব অনুষ্ঠানের ভেতরেও রাকিব ভাইয়ার আলাদা একটা কেয়ার ছিল তার জন্য । তাই নিয়মিত ক্লাসে ফেরার পর দীপু যখন বলল, 'তুমি বোঝ কি বোঝনা জানি না, তোমার রাকিব ভাই তোমাকে পছন্দ করে এবং সেটা চাচাতো ভাইসুলভ নয় , আরো কিছু একটা আছে এর মধ্যে' তখন লীনা আরো দ্বন্দের মধ্যে পড়ে গেল । দীপু কেন এসব বলছে জানতে চাইলে দীপু জানাল রুমানার বউভাতে দাওয়াত ছিল বরপক্ষের আত্মীয় হিসেবে ক্লাসের মাহমুদের । সে লক্ষ্য করেছে সেদিন রাকিব বার বারই নিষ্পলক তাকিয়ে ছিল লীনার দিকে এবং সে দেখায় অন্য কিছু ছিল ।

ইচ্ছে করেই মাহমুদ দীপুকে বলেছে, অবশ্য বলেছে সবটাই আরো যা যা যা তার মনে হয়েছে । লীনার ভাল লাগে না এসব কথা । নিজে থেকে বলে, রুমানা আপুটা নেপাল যাচ্ছে হানিমুনে, নিশ্চয় খুব মজা হবে । দীপু: বিয়ের পরে তুমিও নেপাল যেতে চাও ? লীনা: নাহ্ , আমি যেতে চাই পারুল নদীর কাছে । দীপু: সেটা কোথায় ? কখনো শুনি নি পারুল নদীর কথা ।

লীনা: কুষ্টিয়ায় , নিয়ে যাবে ? আমার স্বপ্নের নদীর কাছাকাছি যাবো , বাস্তবে যাবো, ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি । 'এই নাও' বলে একটা কাগজে লিখে দিল ঠিকানা ; বললো , হারিয়ে ফেলবে না । এখুনি দিলাম যাতে খোঁজ নিয়ে রাখতে পারো । দীপু লীনার এমন ছেলেমানুষীতে মুগ্ধ হয়ে যায়, কেমন অদ্ভুত ধাঁতের মেয়ে । দিন বসে থাকে না, কেটে যেতে থাকে ।

রুমানা এখন অন্য বাড়ীতে থাকে বলে লীনার কেমন যেন লাগে । চাচীও প্রায় উদাস হয়ে যান । নববিবাহিতা রুমানারা বাড়ীতে এলে সবাই কেমন হাসিখুশী থাকে, চলে গেলে সবাই চুপ । একটা মেয়ে সংসারে জন্ম নিয়ে বেড়ে ওঠে সেখানে , সে একটা অংশ সেই পরিবারের । তারপর বিয়ের পর সে পরিবারের কি দশা হয় ? অনেকটা অঙ্গহানির মত ।

লীনা মাঝে মাঝে বিজ্ঞের মত নিজের চাচীকে, মাকে সান্ত্বনা দেয় " রুমানা আপু বিদেশে যদি পড়তে যেত তখন কি হোত? এখন তো ঢাকাতেই থাকে কতবার আসতে পারছে" ; ওর নিজেরই কেমন লাগে । তাছাড়া রুমানা বয়সে বড় হলেও এ বাড়ীতে বন্ধুর মত ছিল ওর । দেখতে দেখতে দিন গড়িয়ে যায় । সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা, এর মধ্যে জানা গেল দীপুর বোন হাজবেন্ডের সাথে কানাডা চলে যাচ্ছে তিনমাস পর । ইমিগ্রশনের সব বন্দোবস্থ ফাইনাল ।

বোন হঠাৎ বায়না ধরল সে দীপুর বিয়েটা দেখে যেতে চায় । দীপুদের পরিবারেও কোন প্রস্তুতি নেই । তারপরেও ওরা দীপুকে বলেছে তার সিদ্ধান্ত জানাতে । অগাধ জলে পড়ে গেল সে , লীনাকে বললো বাধ্য হয়ে । শেষ পর্যন্ত রুমানার মধ্যস্থতায় কথাটা অভিভাবক পর্যন্ত গড়ালো ।

শুক্রবার বিকেলে লীনার বাবা , চাচা, চাচী সবাইকে পাওয়া যাবে বলে সেদিন পারিবারিকভাবে সবাই বসতে চাইল বিষয়টা নিয়ে আলাপ করবার জন্য, কিছুদিন আগে রুমানার বিয়ে গেল; তারপর অনেকটা হঠাৎ করেই এমন প্রস্তাব । জানে রাকিব সাধারনত: থাকে সে সময়ে তাই তাকে আগে ভাগে বলা হয় নি । শুক্রবার বিকেলে সবাই বসলো, রুমানা দুপুরেই জেনেছে রাকিবের একটা অফিসিয়াল ডিনারের জন্য বেরিয়ে যেতে হয়েছে । লীনার ফুফু এসেছেন, মামারা এসেছে । সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করলো বিয়ে নয়, এনগেজমেন্ট করে রাখা হবে ; সেটাও ওদের পরীক্ষার পর ।

দীপু একটা কোন কাজে ঢুকলে পরে এদিকে গুছিয়ে লীনার বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে । ফোনে দীপুর অভিভাবকদের এটা বুঝিয়ে বলা হল । লীনার যার সাথে বিয়ে হবে তার একটা পেশা থাকবেনা এটা অত্যন্ত বেমানান । দীপুদের রাজী করানো গেল । রাতে রাকিব বাড়ী ফিরতেই কে কার আগে খবরটা দেবে ! রিমি, রুমানা শুরু করলো একসাথে বলা ' লীনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, এনগেজমেন্টের তারিখ ঠিক করা হবে দুই একদিনের মধ্যে, দীপু ভাইয়ারা খুব তাড়া দিচ্ছে' এবং আরো কি সব অপ্রয়োজনীয় কথা ।

হ্যাঁ, অপ্রয়োজনীয় কথাই তো ! রাকিব শুধু হু হা করলো । রেহানা বললেন ,তুই বাড়ী ছিলি না, তোর মতামত জানা হোল না । রাকিব: আমার আবার কিসের মতামত ? আমি খেয়ে এসেছি । ঘুমোব আমি, টায়ার্ড । তারপর? রাকিব ঘুমুবে কি ভাবে ? কি করে ঘুমুতে হয় ? কখন কি করতে হয় ? সব গোল পাকিয়ে যায় ।

ফোন করে ইমনকে ' শোন্ লীনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে দীপুর সাথে ; আমি কোথাও চলে যাবো , ব্যবস্থা কর '। তারপর ওদের বাড়ীতে এ বিয়ে সংক্রান্ত কি কি আলাপ হয়েছে জানাল । লন্ডনের বন্ধু শফিক এবং সুলতানাকে মেইল করলো একই ভাষায় ' লন্ডনে আমার জন্য কাজ রেডী করো, কামিং সুন ' । ও কেন এখানে থাকতে চাইছে না , কেন পালিয়ে যেতে চাইছে সে কথা শুধু বিস্ময়কর হবে নে হয়তো অনেকের কাছে হাস্যকর লাগবে । ওর নিজের কাছে আর কোন বিকল্প নেই ।

ও চলে যাবে । লন্ডনের স্বচ্ছল, সহজ , পরিচিত জীবন ছেড়ে পরিবারের সাথে চলে এসেছিল এই দেশে । দেশটাকে ভালবেসে , প্রিয় মানুষ তার মা রেহানার সাথে এখানে থাকতে চেয়েছিল । তখন কি জানতো একটা মেয়ের জন্য , তার আপন চাচাতো বোন মেয়েটার জন্য তাকে চলে যেতে হবে । মানুষ তার অনাগত দিনের কথা কি জানতে পারে ? পারে না ।

নির্নয় হয়তো করতে পারে নিশ্চিত হওয়া যায় না । লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল । জ্বর আসছে মনে হল, উঠে ওষুধ খেতে ইচ্ছে করছে না , শুয়ে থাকল চোখ বন্ধ করে । হঠাৎ মনে হোল ছোট হাতের স্পর্শ ওর কপালে । হালকা রঙের হাটু পর্যন্ত লম্বা ফ্রক পরা ছোট মেয়েটিকে খুব যেন চেনা মনে হয় ।

হ্যাঁ লীনাই তো ! সেবার এসেছিল দেশে বেড়াতে সবাই লন্ডন থেকে,দাদী তখনও বেঁচে ছিলেন । তখন রাকিব স্ট্যান্ডার্ড সিক্সে পড়ত । দেশে আসবার কিছুদিন পরেই জ্বরে পড়ল সে । সবচেয়ে বেশী উৎকণ্ঠিত ছিলেন দাদী, জ্বরের তিনদিন কাছাকাছি ছিলেন । আর প্রায় সব সময়ে ওনার সাথে ছিল প্রিয় সঙ্গী লীনা ।

একদিন দাদী কপালে জলপট্টি দিচ্ছিলেন, আরাম লাগছিল; তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল কিছুটা সময় । হঠাৎ চোখ খুলে দেখে ছোট্ট লীনা তার ছোট ছোট হাতে কাপড় ভিজিয়ে ওর কপাল মুছে দিচ্ছে । আর লাগবে না দেওয়া বলতে থামল সে । রাকিব জানতে চাইল দাদী কোথায় । নামাজ পড়তে গেছে , তোমার জন্য অনেক দোয়া করবে বলেছে ; তুমি ভাল হয়ে যাবে ।

তারপর বিড়বিড় করে কয়েকবার কি যেন বলে লীনা ঝুকে ওর মুখে ফুঁ দিল । মনে হল অনেকটা থু থু ছিটিয়ে দিল ওর মুখের ওপর । ও ঠাস করে উঠে আম্মু আম্মু করে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছিল । হো হো করে হেসে উঠল রাকিব আজ এতদিন পরেও সে সব কথা মনে করে ; উঠে বসে পড়ল । ডান হাতের তালু দিয়ে মুখটা মুছল যেন এখনও লেগে আছে মুখে ।

হয়তো আছে । অদৃশ্য হলেও কিছু দাগের এমন শক্তি , এমন শক্তভাবে বসে যায় যে কোনভাবে সে দাগ মুছে ফেলা যায় না ; সময় তার ওপরে আবরন টেনে দিয়ে লাগাম ধরে রাখে । ইচ্ছে মত সরিয়ে দেয় আবার ঢেকে দেয় ইচ্ছে মত । রাকিবের ইচ্ছে করছিল লীনাকে ডাকতে, ওর কাজিন সে ; কেন পারে না এসে ওর জ্বরতপ্ত কপালে একটু হাত রাখতে । নাহ্ বড় হয়ে গেছে লীনা, বড় হয়ে গেছে রাকিব ।

এখন অনেক সহজ কাজেও বাঁধা । থাক্ পড়ে এসব বিষয় । হয়ে যাক লীনার বিয়ে দীপুর সাথে । রাকিব খবর নিয়ে জেনেছে ছেলেটা আসলেই ভাল । সুখে রাখবে লীনাকে ।

আর ভাল লাগছে না । কোন যুক্তি তার গ্রহন ক্ষমতার ধারে কাছে আসছে না । চলে যাবে তাড়াতাড়ি , যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এশহর ছেড়ে , এ দেশ থেকে । চলবে .... পরের অধ্যায় Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।