আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ১ম পর্ব
আমার দিকে একটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল “প্লিজ নিন” ।
আমি খানিকটা অবাক হওয়ার ভান করলাম একটু খুশিও হলাম ।
“Thank you”
“আপনি কি এমন কাজ প্রায়ই করেন?”
“কি রকম কাজ?” আমি না বোঝার ভান করি ।
“এই যে একটু আগে যা করলেন “ আমি হাসি ।
বলি “আসলে ব্যপারটা ওরকম না ।
কেউ যদি আমার কাছে কিছু চায় আর সেটা যদি আমার কাছে থাকে তাহলে কেন জানি দিয়ে দেই”।
“কিন্তু তাই বলে পকেট খালি করে দেওয়া তো ঠিক না “।
‘ঠিক না । তবুও । দেখুন এই যে ঐ বাচ্চা গুলো আইসক্রিম পেয়ে যে আনন্দিত হয়েছে , ওদের মুখে যে হাসি এসেছে , এর কি কোন তুলনা আছে বলুন? কাউকে কষ্ট দেওয়া খুব সহজ কিন্তু কাউকে আনন্দ দেওয়া খুব কঠিন ।
কারো মুখে একটু হাসি আনতে যদি আমার খানিকটা কষ্ট হয় , হোক না” ।
আমার কথা গুলো মনে হল অনুশেখার পছন্দ হয়েছে । ও হাসলো । সত্যি খুব সুন্দর করে হাসল । যদিও আমার সব কিছু প্লান করা তবুও কেন জানি অনুশেখার হাসি দেখে বুকের মাঝে একট অদ্ভুদ অচেনা অনুভূতি হল ।
“আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর” । ও আবার হাসলো ।
“আপনি কোথায় থাকেন?’
কি কথার কি উত্তর ।
“আমি থাকি আজিমপুর” ।
“ওমা সে তো অনেক দুরে ।
আপনি যাবেন কিভাবে?”
“বাসে|” ।
“কিন্তু আপনার কাছে তো টাকা নাই” ।
নিজের জ্বিব কাটলাম । তাইতো ভুল হয়ে যাচ্ছিল । বললাম “সমস্যা নাই ।
চলে যাবো” ।
“যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি আপনাকে পৌছে দেই ? আমার সাথে গাড়ি আছে” ।
আমি একটু খুশি হলাম । বললাম “আপনার বাসা কি ঐ দিকেই । না ঐ দিকে না ।
এইতো কাছেই” ।
“না না তাহলে যাওয়ার দরকার নাই । সত্যিই বলছি একদমই প্রয়োজন নাই” ।
“তাহলে এতো দুর আপনি কিভাবে যাবেন ? আপনার কাছে তো কোন টাকা নেই” ।
আমি মনে মনে খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না ।
এই মেয়েটা আসলেই এরকম কেন ? আমি অপরিচিত একটা মানুষ আধা ঘন্টাও হয়নি এর সাথে কথা বলছি । তবুও আমি কিভাবে বাড়ি যাবো তা নিয়ে সে চিন্তিত । কেন? এরকম মানুষ কি আছে আজকাল?
“কি ভাবছেন” ?
“ভাবছি .... আচ্ছা আমার নাম কি বলুন তো?”
“ নাম তো বলেন নি আপনি ! কি নাম আপনার?”
“ আমরা কথা বলছি কতক্ষন?”
“ এই ২০ মিনিট প্রায়” ।
“তাহলে একজন অপরিচিত মানুষের জন্য এতো চিন্তিত?”
অনুশেখা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর বলল “চিন্তা করছি কারন আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি একজন ভাল মানুষ ।
একজন ভাল মানুষের একটু উপকার করতে পারলে আমার খুব ভাল লাগবে” ।
“এতো তাড়াতাড়ি কিন্তু মানুষকে চেনা যায় না” ।
অনুশেখা হাসল ।
“আমার মন বলছে আপনি ভাল মানুষ” ।
“ওকে ওকে মেনে নিলাম আমি ভাল মানুষ ।
তাহলে আমার একটা উপকার করুন” ।
“বলুন প্লিজ । আমাকে ২২ টাকা দিন আর আপনার মোবাইল নাম্বরটা” ।
অনুশেখা খানিকটা অবাক হল ।
“২২ টাকা?”
“ব্যাখ্যা করছি ।
২২ টাকা হল বাস ভাড়া । মোবাইল নাম্বরটা হল ঐ ২২ ফেরত্ দেবার জন্য” ।
অনুশেখা হেসে ফেলল । বলল “আপনি যে ভাল মানুষ তার প্রমান কিন্তু আবার দিলেন ।
“কিভাবে দিলাম ।
আমি নিজেই তো বুঝলাম না” ।
ও কিছু বলল না । ব্যাগ থেকে চকচকে একটা ১০০ টাকার নোট বের করে দিল ।
“২২ টাকা” ।
“সরি এর থেকে ছোট নোট আমার কাছে নেই” ।
তারপর ও মোবাইল নাম্বার দিল । বলল “আমার নাম অনুশেখা । আপনার ?”
“ইফতেখার হাসান । তবে অপু বলে ডাকলে ভালো হয়” ।
তারপর আমি চলে আসি ওখান থেকে ।
ঐ দিন বিকালেই ১০০ টাকা অনুশেখার নাম্বরে পাঠিয়ে দিই । কিন্তু ওকে কল করি না । কেন জানি খুব ইচ্ছা করছিল ওর সাথে কথা বলার জন্য । কিন্তু করি না । অনুশেখাকে ফোন করি আরো ৩ দিন পর ।
মেয়েদের সাইকোলজি আমি মোটামুটি ভাল বুঝি । তাই আমি জানতাম আমার সাথে কথা বলার জন্য অনুশেখা অপেক্ষা করে আছে ।
ফোন দিলাম আমি
“হ্যালো? অনুশেখা?”
“ওহ্ আপনি? আমিতো ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমাকে আর ফোনই করবে না । টাকা পাবার পর আমি ওয়েট করছিলাম যে আপনি ফোন করবেন” ।
“সরি ।
আসলে সত্যি বলতে কি আমারও খুব ইচ্ছা করছিল আপনাকে ফোন করি । কিন্তু দ্বিধার কারনে করতে পারি নি । আপনি কি না কি মনে করেন?”
“বলেছে আপনাকে ! কিছু মনে করলে কি আপনাকে ফোন নম্বর দিতাম বলুন ? আমি সত্যি আপনার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম” ।
কিছুক্ষন নিরবতা ।
“আপনার কি আজ বিকালে একটু সময় হবে?”
“আমি বলি কেন বলুন তো?”
“আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম” ।
“বিকালে তো আমার একটু কাজ আছে” ।
“ও” অনুশেখাকে মনে হল যেন একটু হতাশ হল ।
“তবে” ।
“তবে?”
“আপনি ইচ্ছা করলে এখন আমার সাথে দেখা করতে পারেন । আমি এখন ঐখানেই আছি যেখানে আমাদের দেখা হয়েছিল” ।
…
“সত্যি?”
“আপনি একটু দাড়ান আমি এক্ষুনি আসছি। "
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।