আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি খুন হয়ে যাওয়ার পরে।

শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... গতকাল স্বপ্ন দেখলাম। একদল ধর্মান্ধ ধারাল ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পুলিশ উদ্ধার করা পর্যন্ত ছুরিটা লাশের পাশেই ছিল। আমি সেখানে যখন পৌছলাম। তখন কেবল জমাট বাঁধা কাল রক্ত পরে আছে।

লোকজন বলাবলি করছে আমাকেই খুন করা হয়েছে। এই লাশটি আমার। নিজের খুনের পরবর্তী ঘটনা নিজের পক্ষে দেখা বাস্তব সম্মত নয়। কিন্তু এটাতো স্বপ্ন। বাস্তব সম্মত হওয়ার কোন দরকার নেই।

স্বপ্নেই যেহেতু দেখেছি তাই আমার উচিৎ ছিল একেবারে শুরোতে উপস্থিত থাকা। কিন্তু হয়তো কোন জরুরি কারনে সঠিক সময় উপস্থিত ছিলাম না। মৃত্যুর সময় আমি কি খুব হাতপা ছুড়ে ছিলাম। খুব চিৎকার করে জীবন ভিক্ষা চেয়ে ছিলাম? আমি কিছুই জানি না। তীব্র ভয়ে আমার চোখ দুটি কি গরুর চোখের মতো বড় হয়ে গিয়েছিল? তাও জানি না।

আমরা কেউ নিজের এমন দৃশ্য দেখি নি। হয়তো কখনোই পারবো না। কিন্তু মৃত্যু আমরা দেখি প্রতিনিয়ত। ঘরে বাইরে, হাটে মাঠে,রাস্তা ঘাটে, জলে স্থলে। মৃত্যু নিয়ে কি ভাবে একে অন্যকে জানাতে হয় তা আমরা জানি।

কি ভাবে শেষ কৃত্যানুষ্ঠান করতে হয় তাও জানি। কি ভাবে তার খ্যাতি নিজের কাজে ব্যবহার করতে হয় তাও জানি। দুর্নাম করে থাকলে কি ভাবে তা থেকে রেহাই পেতে হয় তাও জানি। কেবল জানি না কি করে বাঁচাতে হয়। জানি না কি করে বাঁচতে দিতে হয়।

কি ভাবে জীবনের জন্য বাঁচতে হয়। লোকজন খুন হয়ে যাওয়া যায়গাটা দেখছে। কাছেই জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে। আবার খুব কাছে আসছেনা। কোন এক ভীতি তাদের এখনো আছে।

কি সেই ভীতি? সেই ধর্মান্ধরা ফিরে আসতে পারে? নাকি তারাও ধর্মান্ধ হয়ে খুনি হয়ে যেতে পারে? কৌতুহল ক্রমেই বাড়ছে। একজন আর একজনকে রক্তের দাগ দেখিয়ে ভিবৎষতা বর্ণনা করছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটার সময় কত দূর পর্যন্ত গিয়েছে তার হিসাব করছে। রক্তে ভেজা মাটি হয়তো দেখেছে। কিন্তু একাত্তুর গিয়েছে অনেক দিন হলো।

মানুষের রক্তে ভেজা মাটির প্রতিও তাদের আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে। সোচ্চার হচ্ছে তাই নতুন স্লোগান। একটাই দাবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। মানুষের আদম্য কৌতুহল থেকে এবং আমাদের চিরাচরিত স্বভাব থেকে জন্ম নিচ্ছে গল্প। আমি গল্প লেখার সূত্র জানি না।

এই লেখাটাকে কি গল্প হিসেবে চালানো যাবে? আমি অন্তত তাই চাইছি। একটা তুচ্ছ ডাইনোসরের মৃত্যুও যেন গল্প হবার যোগ্যতা পায়। কিন্তু কেবল মৃত্যু নিয়ে কোন গল্প হতে পারেনা। সাভারে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মেরেছে সাধারন ছাত্রদের। নোয়াখালীতে পুলিশের উৎসাহে মারা হয়েছে এক কিশোরকে।

ক্রস ফায়ারে মরছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এসব খুব পুরনো গল্প। মৃত্যু গাল-গল্পের মতোই তুচ্ছ হয়ে গেছে। আমি আড্ডার পাবলিক তাই আমি ভাল করেই জানি। মৃত্যু এতই তুচ্ছে যে এসব নিয়ে গল্প করলে আসর ভেঙ্গে যায়।

আমার রক্তও মিশে যাবে মাটিতে,যেমন নিয়মিত যায়। মৃত্যু সংবাদও মিশে যাবে বাতাসে, যেমন নিয়মিত যায়। তবু মৃত্যুর মিছিলের একজন দাঁড়িয়ে জানতে চাইল একজন মানুষকে খুন করে ফেলা হলো? শুধু মাত্র কথা বলার জন্য খুন করা হলো? কেউ হয়তো মাথা নেড়ে বলল স্বাধীনতার জন্যই রক্ত ঝড়ে। এটা বাকস্বধীনাতই হোক... আর একজন প্রশ্ন করলো :যিনি খুন হয়েছেন তিনি আপনার কি হন? আর একজন:কেন খুন হলো? আর একজন:কি ভাবে খুন হলো? আর একজন:কখন খুন হলো? আর একজন:কয়জন খুন হলো? তারপর আমি জেগে উঠলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।