আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

The Big Bang Theory: প্যারাগণ অফ কমেডি সিরিজ

"অ্যাবসার্ড" বর্তমানে দেশ ব্যাপী হিন্দি সিরিয়াল এর যে মাতম চলছে, তা দেখে আমার মনে সিরিয়াল এর প্রতি এক ধরনের ঘৃণা জন্মেছিল। সিরিয়ালের কথা শুনলেই আমার মাথায় রক্ত উঠে যেত। আমার বন্ধুদের কাছে শুনতাম ইংরেজি কিছু সিরিয়াল আছে, ওগুলো নাকি খুব ভালো। তারপরও আমি পন করেছিলাম যে দেখব না কোন সিরিয়াল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক বন্ধুর অনুরোধে দেখলাম বিখ্যাত টি ভি সিরিয়াল দা বিগ ব্যাং থিওরি।

ইংরেজি টি ভি সিরিয়াল সম্পর্কে আমার ধারনা পালটে দেয় ওই সিরিয়াল। সেপ্টেম্বর ২০০৭ থেকে শুরু হওয়া ওই সিরিয়াল কালে এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে, ০৭ থেকে আজ অব্দি তা তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। সিরিয়ালটির প্লট,প্যাসাডিনা ,ক্যালিফোর্নিয়া। দুই পদার্থ বিজ্ঞানী বন্ধু থাকেন একটি ফ্ল্যাটে। লেনার্ড এবং শেলডন যার যার পেশাগত জীবনে চরম ভাবে সফল দুই বিজ্ঞানী কিন্তু সামাজিক দক্ষতা অর্জনে চরম ভাবে ব্যার্থ।

অর্থাৎ তাদের অদ্ভুত কর্মকাণ্ডে সবাই বিব্রত। তাদের জীবন এক নাটকীয় মোড় নেয়, যেদিন তাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতে আসে পেনি নামের সুন্দরী এক ওয়েট্রেস কাম অভিনেত্রী। পেনি কে দেখার সাথে সাথে লেনার্ড তার প্রেমে পড়ে যায় কিন্তু সামাজিকতায় অদক্ষ লেনার্ড তার প্রেমের কথা পেনি কে বলতে পারে না। সিরিয়ালটিতে আরও দুই জন বিজ্ঞানী কে দেখানো হয়। ইঞ্জিনিয়ার হাওয়ার্ড এবং মহাকাশ বিজ্ঞানী রাজেশ কুত্রাপালি।

তাদের কর্মকাণ্ডও লেনার্ড এবং শেলডন এর মতই সমান হাস্যকর। সম্পূর্ণ সিরিয়ালটি আবর্তিত হয় চার বিজ্ঞানী বন্ধুর সামাজিক দক্ষতার অভাব এবং পেনির সোশ্যাল স্কিল এবং কমন সেন্স এর সংঘর্ষ নিয়ে। এবার একটু সিরিয়ালের চরিত্র গুলোর দিকে নজর দেয়া যাক। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন জনি গেলেকি- লেনার্ড সবার মধ্যে তাকেই একটু নরমাল মনে হয়। অর্থাৎ তার সোশ্যাল স্কিল সবচে বেশী দেখানো হয়।

সে একজন এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিসিস্ট। ২৪ বছর বয়সে সে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করে। তার আই কিউ ১৭৩, তা নিয়ে সে খুব গর্বিত। যদিও সে তার ভাই বোন দের মধ্যে সব চাইতে পিছিয়ে। সে শেলডন এর সাথে একটি ফ্ল্যাট শেয়ার করে, যা একটি রুমমেট এগ্রিমেন্ট এর উপর পরিচালিত হয়।

রুম মেট এগ্রিমেন্ট এ যত অদ্ভুত শর্তাবলী থাকে, যেমন কেউ যদি রোবট হয়ে যায় তাহলে কি করনীয়, অথবা কেউ যদি এলিয়েন দের হাঁতে বন্দী হয় তাহলে কি করতে হবে ইত্যাদি। শেলডন কুপার চরিত্রে অভিনয় করেন জিম পারসন্স- টেক্সাসের রক্ষণশীল পড়িবার থেকে আশা শেলডন ১৬ বছর বয়সে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করে, আই কিও ১৮৭। অতি অহংকারী এবং স্বার্থপর শেলডন নিজেকে নোবেল পুরস্কারের নিশ্চিত বিজয়ী ভাবতে পছন্দ করে। রুটিন এর ভেতর চলতে ভালবাসে। সে সারকাজম বুজতে পারে না।

এবং সে শারীরিক সম্পর্ক কে অসাস্থকর মনে করে। কেউ যদি তাকে কোন প্রশ্ন করে তাহলেই খবর আছে। এমন ভাবে উত্তর দিতে থাকে যেন সে পৃথিবীর এক মাত্র জ্ঞানী ব্যাক্তি। তাই ভয়ে কেউ তাকে কোন প্রশ্ন করতে চায় না। কারো আবেগ সে বুঝতে পারে না, যেমন কারো মন খারাপ হলে সে জিজ্ঞেস করে, " তুমি কি ক্ষুধার্ত?'' পুরোটা সিরিজে সে এরকম হাজারটা মজার ঘটনা ঘটায় সে।

দর্শকের সব চাইতে প্রিয় চরিত্র বোধকরি সে। পেনি চরিত্রে অভিনয় করে কেলি কোকোউ সাধারন মেয়ে পেনিকে দিয়ে পরিচালক আসলে সাধারন একটা আমেরিকান মেয়েকে দেখাতে চেয়েছেন। সুন্দরী,বুদ্ধিমতি পেনি একজন অভিনেত্রী হতে চায়। পাশাপাশি সে একটি রেস্টোরেন্ট এ কাজ করে। অনেক ছেলের সাথে প্রেম করলেও এক পর্যায়ে তার লেনার্ড এর সাথে প্রেম হয় যদিও তার স্থায়িত্ব দোদুল্যমান।

এবারে আসি হাওয়ার্ড এর কথায়- এই চরিত্রটিতে অভিনয় করেছে সাইমন হেলবার্গ। অতিশয় রোগা শরীরের এই ইহুদি ইঞ্জিনীয়ার পি এইচ ডি না করার দরুন বন্ধুদের কাছে চরম ভাবে লাঞ্ছিত। যদিও সে সব সময় সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার এম আই টি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীর কথা। সে নাসার স্পেস স্টেশন এর জন্য জিরো গ্রাভিটি টয়লেট তৈরি করে। সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল, সে নিজেকে দুর্দান্ত লেডি কিলার মনে করে।

যদিও মেয়েরা তার কাছ থেকে দুরে থাকতেই বেশী পছন্দ করে। বিচিত্র সব পোশাকের কারনে তাকে হাস্যকর দেখায়। সে তার মায়ের সাথে থাকে, যদিও তার মাকে কখনো দেখানো হয়নি। তার মায়ের সাথে তীব্র উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় খুব মজার। রাজেশ কুত্রাপালি, অভিনয়ে কুনাল নায়ার- ইন্ডিয়ার ছেলে রাজেশ, মহাকাশ বিজ্ঞানী।

সে সিলেকটিভ মিউটিজম এ আক্রান্ত। অর্থাৎ সে মেয়েদের সামনে কথা বলতে পারে না যদি না সে মদ্যপান করে। এবং মদ্যপান করার পর সে যা করে তা বলাই বাহুল্য যে চরম বিব্রতকর এবং হাস্যকর। তবে হাওয়ার্ড এর চাইতে তার মেয়েভাগ্য ভালো বলা যায়। অনেকে এবার হাওয়ার্ড এবং রাজেশ কে গে মনে করে।

এখানে আরও কয়েকটা চরিত্রের কথা না বলে পারছি না, লেসলি উইঙ্কেল চরিত্রে অভিনয় করেন সারাহ গিলবার্ট ক্যালটেক এর সহকর্মী লেসলি,শেলডন এর শত্রু। প্রায় সময়ই শেলডন কে ডাম্বএস ডাকে সে। লেনার্ড এবং পরবর্তীতে হাওয়ার্ড এর সাথে ডেটিং করে। বার্নাডেট হাওয়ার্ড এর প্রেমিকা। অভিনয় করেন মেলিসা রাউচ।

পেনির সহকর্মী এবং মাইক্রো বয়োলজিতে গবেষনা রত। এমি চরিত্রে মিরিয়াম বেইলিক। আচার আচরনে শেলডন এর মতো এমি কে খুঁজে পায় হাওয়ার্ড এবং রাজেশ একটি অনলাইন ডেটিং ওয়েব সাইটে। তারপর তারা শেলডন এর সাথে এমি কে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পেনি এবং এমি বান্ধবী হয়।

শেলডন এবং এমি ঠিক করে তারা বাচ্চা নিবে,তবে টেস্ট টিউব বেবি। যদিও পরে তা হয় না। এমি কয়েকবারই লেনার্ড কে মেরে ফেলতে চায় পেনি কে দুঃখ দেয়ার অপরাধে। সবাই এমি কে শেলডন এর প্রেমিকা বললেও শেলডন প্রচণ্ড ভাবে অস্বীকার করে এবং বলে, "শী ইজ এ গার্ল অ্যান্ড ইয়েস শী ইজ মাই ফ্রেন্ড বাট শী ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড" এবারে আসি সিরিজের মূল কাহিনীর দিকে- প্রায় প্রতিটি পর্ব বিজ্ঞান কে ঘিরে। সবাই ক্যালটেক এ চাকরি করে।

এবং সবার দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব পড়ে। যেমন লেসলির সাথে লেনার্ড এর সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় ,লেসলি এবং শেলডন এর তর্কযুদ্ধে লেনার্ড শেলডন এর পক্ষ নেয়ায়। হাওয়ার্ড এর প্রেমিকা লেনার্ড এর এক্সপেরিমেন্ট দেখতে চাওয়ায় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এদিকে পেনি ফিজিক্স সম্পর্কে জানতে চায় শেলডন এর কাছে যাতে সে লেনার্ড এর সাথে বার্নাডেট এর মতো ফিজিক্স নিয়ে কথা বলতে পারে। শেলডন এবং এমির সম্পর্ক ও একবার বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্ক করতে গিয়ে ভেঙ্গে যায়।

তাদের প্রতিদিন এর কর্মসূচী ঠিক করা আছে, যেমন বুধবার রাত কমিক বুক ষ্টোরে যাওয়া, বৃহস্পতি বার রাতে কাপড় ধোয়া ইত্যাদি। সবাই গেমস এর ভক্ত,এবং বিভিন্ন গেমসের অথবা মুভির অথবা কোন সুপার হিরোর স্মারক সংগ্রহ করা তাদের নেশা। এগুলোর জন্য তারা তাদের সব কিছু হারাতে রাজী। একবার লেনার্ড এবং শেলডন এর ফ্ল্যাটে চুরি হয়, সব কিছু বাদ দিয়ে শেলডন শুধু চেক করে তাদের কমিক বইগুল ঠিক আছে কিনা। এই সিরিজটির যদি দুর্বল কোন দিক থাকে তাহলে সেটা হবে তার দুর্বোধ্য সংলাপ।

পুরো সিরিজে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন শব্দ , কৌতুক এগুলো ব্যাবহার করা হয়েছে যার ফলে শিক্ষিত এবং তরুন সামজের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিওতা থাকলেও সাধারন জনগনের জন্য বুঝতে একটু সমস্যা হওয়ারই কথা। তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া এই সিরিজটির প্রাপ্তি অনেক- ২০০৯ সালে এটি শ্রেষ্ঠ কমেডি সিরিজের পুরষ্কার পায় ২০১০ সালে পায় People's Choice Award for Favorite Comedy জিম পারসন্স জিতে নেন Primetime Emmy Award-২০১০ Golden Globe Award-২০১১ Emmy Award-২০১১ সিরিয়ালটি নির্মাণ করে ওয়ানার ব্রাদারস এবং চাক লোর প্রোডাকশন। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয়া এই সিরিয়াল এর এখন ৫ম সিজন চলছে। আরও ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলবে, এরকম একটা কথা শুনেছি। একটা টি ভি সিরিয়াল এত আনন্দদায়ক এত মনোমুগ্ধকর হতে পারে আমার ধারনা ছিল না।

আশা করি আমাদের দেশেও এরকম সিরিয়াল তৈরি হবে। হয়ত এমন এক দিন আসবে, যেদিন এই দেশের মানুষ আর বিদেশী সিরিয়াল দেখবে না। সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম। । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।