আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বরেন্দ্র:বিদ্রোহভূমি

বরেন্দ্র ঃ বিদ্রোহভূমি প্রান্তর উড়ালো ইলামিত্রের আঁচোল, নাচোলে দেবেনা সোনা, শস্য সোনা আর সাঁওতাল দেবেনা সামন্ত তেভাগা নেবেনা তালগাছে লাল নিশানা ওড়াতে সিপাহি দেবেনা ! তা বলে কি বিদ্রোহ হবেনা? মারন গান্ডিব হাতে কখনো কি আর কালো পান্ডবেরা হারানো ভূমিতে কুরূক্ষেত্র পথে ফিরে আসবেনা? তা বলে কি বিদ্রোহ হবেনা ? ৎ বরেন্দ্র ৎ মোহাম্মদ কামাল বাংলাদেশে শাষন করেছে শক হুন মোগল পাঠান ইংরেজ পাকিস্তানিরা ,কিন্ত কারো বশ্যতাই অন্তর থেকে এ দেশের মাটি ও মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তাই দেখা যায় ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে শুধু বিদ্রোহ আর বিদ্রোহ। ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারাণী তাই বাংলাদেশকে ‘বালগাকপুর’ নামে অভিহিত করেছেন যার অর্থ যেখানে সর্বদাই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। কিন্ত গোটা বাংলাদেশটা আগ্নেয়গিরি হলে বরেন্দ্র অঞ্চল যেনো সে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। এখানেই সংঘটিত হয়েছে একের পর এক সমাজের নানা বৈষম্য আর অবিচার অনাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা নানা ধরণের বিদ্রোহ।

আজ থেকে প্রায় সোয়া নয়শ বছর আগে অন্ত্যজ শ্রেণীর কৈবর্তরা এই বরেন্দ্রের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল। বরেন্দ্র আসলে বিদ্রোহভূমি। কালে কালে যুগে যুগে এখানে এমনিতর আরো অনেক বিদ্রোহ পুঞ্জিভূত হয়েছে, ফেটে পড়েছে প্রচন্ড বিক্ষোভে সমাজের নানা বৈষম্য, অনাচার, অত্যাচার ও নিপীড়ণকে প্রতিহত করার জন্য। বিদ্রোহের বীজ যেন লুকিয়ে আছে এই বরেন্দ্রের মাটিতে। লাল মাটির এই দেশে মাটিতে লোহার ভাগ বেশি বলেই কি ঐ রক্তিম মাটি মানুষগুলোকেও লোহ কঠিন রক্ত-দৃপ্ত বিদ্রোহীতে পরিণত করেছে? তাই দেখা যায় একের পর এক স্বভাবজাত বিদ্রোহে উন্মাতাল সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল।

শোষিত সমাজের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন অনেক মানবহিতৈষী দার্শনিক। তাঁরা শ্রেণী সংগ্রামের কথা বলেছেন। বলেছেন খেটে খাওয়া মানুষের সুখ দু:খের কথা। বলেছেন শ্রেণী সংগ্রামের পথ ধরে একদিন তারা মুক্ত হবেই। শোষণ নিপীড়ণের কবল থেকে মুক্ত হয়ে তারাই হবে সত্যিকারের রাজা।

নিজেদের ভাগ্য তখন তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অষ্টাদশ উনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ান বিপ্লব, চীন বিপ্লব সহ ছোট খাটো আরো অনেক বিপ্লব মূলত: অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। সমাজের নিচুস্তরের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের অধিকার। ফ্রান্সের হে মার্কেটের ঘটনা, চীনের লং মার্চ আর রাশিয়ার খেটে খাওয়া মানুষদের বিদ্রোহ আজকের ওয়াল স্ট্রীটের বিদ্রোহ সব আসলে ঐ একই সুতোয় গাথা। আজ থেকে হাজার বছর আগের বরেন্দ্রর কৈর্বত বিদ্রোহ অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষদের তেমনি ধরণের বিদ্রোহ।

তার আগে বা পরে সমাজের নিচু স্তরের কোনো একক জাতির এমন ধরণের সফল বিদ্রোহ আজ পর্যন্ত আর শুধু বাংলাদেশ নয় এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশের কোথাও ঘটতে দেখা যায়নি । ইতিহাসে এই ঘটনাই ‘বরেন্দ্র বিদ্রোহ’ বা ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ নামে চিহ্নিত। এর বিস্তৃত বিবরন রয়েছে দশম শতাব্দীতে রচিত পাল রাজকবি সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতম’ গ্রন্থে। যেখানে গ্রন্থকার এই বিদ্রোহকে “অনিকম ধর্ম ব্প্লিবম’ বা ‘অশুভ ধর্ম বিপ্লব’ নামে অভিহিত করেছেন। পাল রাজাদের আমলে দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বের সময় এই ঘটনার সূত্রপাত।

তবে এর পূর্বসূত্র মনে হয় আরো অনেক আগের। মহীপাল তার সিংহাসন নিঃষ্কন্টক করার জন্য তার দুই ভাই দ্বিতীয় শুরপাল এবং দ্বিতীয় রামপালকে বন্দী করেছিলেন। ফলে বন্দী দুই ভাইয়ের সমর্থক কিছু স্থানীয় সামন্ত তার বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু মূল সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল কৈবর্তদের সাথে,যারা জাল দিয়ে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। মনে রাখতে হবে কৈবর্তরা বরেন্দ্রের তথা এদেশের একটি আদিমতম সম্প্রদায়।

পোদ, কোচ, মেচ, শবর ইত্যাদি বরেন্দ্রর আদি অধিবাসীদের সাথে কৈবর্তদের নামও বরেন্দ্রর আদিম জাতি হিসেবে সব সময় উচ্চারিত হয়ে এসেছে। কৈবর্তরা মূলত ধীবর শ্রেণীর লোক (জালুয়া কৈবর্ত)। মাছ ধরা আদিকাল থেকেই তাদের পিতৃপুরুষের পেশা। পাল রাজারা বৌদ্ধ ছিলেন বলে ধর্মীয় দিক থেকে অহিংস নীতির কারনে তারা মাছ মাংস ভক্ষনের বিরোধী ছিলেন। এবং এ সমস্ত পেশাকে তারা নিরুৎসাহিত এমনকি বাধাগ্রস্থ করতেন।

এতে করে সমগ্র কৈবর্ত সমাজের তারা বিরাগভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ফলে ধীরে ধীরে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো দ্বিতীয় মহীপালের সময়। এবং সংঘটিত হলো বরেন্দ্র বিদ্রোহ বা কৈর্বত বিদ্রোহ। কৈবর্তদের নেতা দিব্যকের নেতৃত্বে সমগ্র কৈবর্ত সমাজ তাদের আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম শুরু করলেন। তাদেরকে মদদ দিল মহীপাল বিরোধী কিছু প্রভাবশালী সামন্ত নায়ক।

যুদ্ধ হলো। যুদ্ধে মহীপাল নিহত হলেন। বরেন্দ্রর রাজা হলেন কৈবর্ত নায়ক দিব্যক। রামচরিত কাব্যে মহীপালের সম্পর্কে যে সব বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে মহীপালকে নিছক হঠকারী ও নিষ্ঠুর রাজা বলেই মনে হয়। রামচরিতে বলা হয়েছে মহীপাল ছিলেন ‘‘দুর্ণয়ভাজ (দুর্নীতি পরায়ন) অনীতিকারম্ভরত (নীতি বিরুদ্ধ কার্যে রত) কুট্টিম কঠোর (পাথরের ন্যায় কঠিন চিত্ত), চিত্র কুট (বিচিত্র মায়াকারী) এবং ভূতনয়াত্র্রাণযুক্ত (সত্য ও নীতির অরক্ষনে প্রসক্ত) ইত্যাদি।

এ সমস্ত কারণে মহীপাল রাজা হিসেবে জনগণের নিকট খুব গ্রহণযোগ্য বা জনপ্রিয় ছিলেন না বলেই মনে হয়। ফলে মহীপালের অপসারণে দিব্যকের শক্তিশালী উত্থান লাভ ঘটলো। সমগ্র বরেন্দ্রে কৈবর্তদের অপ্রতিহত প্রভাব এবং কর্তৃত্ব স্বীকৃত হলো। রমেশচন্দ্র মজুমদার ৩য় পাল সাম্রাজ্যে সংঘটিত এই বরেন্দ্র বিদ্রোহ এবং কৈবর্তদের প্রসঙ্গে বলেছেন - ‘‘রামপাল বরেন্দ্র উদ্ধার করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু পারেন নাই। বরং দিব্য রামপালের রাজ্য আক্রমণ করিয়া তাহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়াছিলেন।

যদিও রামচরিতে দিব্যের রাজত্বকালের কোনো ঘটনার উল্লেখ নাই। তথাপি যিনি জাত বর্মা ও রামপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া বরেন্দ্রী রক্ষা করিতে পারিয়াছিলেন তিনি যে বেশ শক্তিশালী রাজা ছিলেন এবং বরেন্দ্রে তাহার প্রভূত্ব বেশ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল তাহা স্বীকার করিতেই হইবে। দিব্যের মৃত্যুর পর তাহার ভ্রাতা রুদোক এবং তৎপরে রুদ্যেকের পুত্র ভীম বরেন্দ্রের সিংহাসনে আরোহন করেন। রামচরিতে ভীমের প্রশংসাসূচক কয়েকটি শ্লোক আছে এবং তাহার রাজত্বের শক্তি ও সমৃদ্ধির বর্ণনা আছে.... দিনাজপুরের কৈবর্ত স্তম্ভ আজিও এ রাজবংশের স্মৃতি বহন করিতেছে। ” এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় উল্লেখ করেছেন - ‘‘বরেন্দ্রাধিপ দিব্যকে যুদ্ধে বর্মণ বংশীয় বঙ্গরাজ জাতবর্মার সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল।

কিন্তু তাহাতে কৈবর্ত রাজ্যের কিছু ক্ষতি হয় নাই বলিয়া মনে হয়। শুরপাল বেশীদিন রাজত্ব করিতে পারেন নাই। রামপাল রাজা হইয়া দিব্যর রাজত্বকালেই বরেন্দ্রী পুন:রুদ্ধারের চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু সফলকাম হইতে পারেন নাই। বরং কৈবর্তপক্ষ একাধিকবার রামপালের রাজ্য আক্রমণ করিয়াছিল।

দিব্যর পর রুদকের আমলেও রামপাল বোধ হয় কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই। রুদকের ভ্রাতা বরেন্দ্রীর অধিপতি হওয়ার পর সুপ্রতিষ্ঠিত কৈবর্ত শক্তি এক নূতন ও পরাক্রান্ততর আকারেদেখা দিল। ভীম জনপ্রিয় নরপতি ছিলেন, তাহার স্মৃতি আজো জীবিত। রামপাল শংকিত হইয়া প্রতিবেশী রাজাদের ও পাল রাষ্ট্রের অতীত ও বর্তমান স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সামন্তদের দুয়ারে দুয়ারে তাহাদের সাহায্য ভিক্ষা করিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া ফিরিলেন। অপরিমিত ভূমি ও অজস্র অর্থ দান করিয়া এই সাহায্য ক্রয় করিতে হইল।

”২ এ প্রসঙ্গে একই ধরনের মত প্রকাশ করে রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন- “রামপাল রাজা হইয়া বরেন্দ্র উদ্ধার করিবার প্রয়াস করিয়াছিলেন,কিন্তু বিফল মনোরথ হইয়া বহুদিন নিশ্চেষ্ট ছিলেন। তারপর আবার এক গুরুতর বিপদ উপস্থিত হইলে পুত্র ও অমাত্যগণের সহিত পরামর্শ করিয়া বিপুল উদ্যমে কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইলেন। এই গুরুতর বিপদ কি রামচরিতকার তাহার উল্লেখ করেন নাই। সম্ভবত দিব্য কতৃক আক্রমণই এই বিপদ এবং রাজ্যের অবশিষ্ট অংশ হারাইবার ভয়েই বিচলিত হইয়া রামপাল পুনরায় দিব্যের প্রতিরোধ করিতে কৃতসংকল্প হইলেন। দিব্যের বিরুদ্ধে সৈন্য সংগ্রহের জন্য রামপাল সামন্ত রাজাগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরিতে লাগিলেন।

অর্থ ও সম্পত্তির প্রলোভনে অনেকেই তাহাকে সাহায্য করিতে স্বীকৃত হইল। এইরুপে বহুদিনের চেষ্টায় রামপাল অবশেষে বিপুল এক সৈন্যদল সংগ্রহ করিতে সমর্থ হইলেন। ”-৩ রামচরিতমের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কৈবর্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রামপাল অন্তত পনেরোজন রাজা এবং সামন্ত নায়কের পূর্ণ সহযোগীতা পান। এ প্রসঙ্গে নীহাররঞ্জন রায় আরো বলেছেন, -‘‘এই সম্মিলিত শক্তিপুঞ্জের সঙ্গে ক্ষৌনী-নায়ক ভীমের পক্ষে আঁটিয়া ওঠা সম্ভব ছিলনা। রামচরিতে রামপাল কর্তৃক বরেন্দ্রীর উদ্ধার যুদ্ধের বিস্তৃত বিবরণ আছে।

গঙ্গার উত্তর তীরে দুই সৈন্য দলে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং ভীম জীবিতাবস্থায় বন্দী হন। ভীমের অগণিত ধনরতœপূর্ণ রাজকোষ রামপালের সেনাদল কর্তৃক লুণ্ঠিত হয়। কিন্তু ভীম বন্দী হওয়ার অব্যাহিত পরেই ভীমের অন্যতম সুহৃদ ও সহায়ক হরি পরাজিত ও পর্যুদস্ত সৈন্যদের একত্র করিয়া আবার যুদ্ধে রামপালের পুত্রের সম্মুখীন হন। কিন্তু অজস্র অর্থদানে কৈবর্ত সেনা ও হরিকে বশীভূত করা হয়। ভীম সপরিবারে রামপাল হস্তে নিহত হন।

”-৪ রামচরিতে নয়টি শ্লোকে এ যুদ্ধের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। হস্তীপৃষ্ঠে যুদ্ধ করতে গিয়ে দৈব বিড়ম্বনায় উক্ত যুদ্ধে ভীম বন্দী হয়েছিলেন । ফলে ভীমের সৈন্যদল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। হরি নামক ভীমের এক সুহৃদ যখন সৈন্য দলকে একত্রিত করে যুদ্ধ জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যান তখন স্বর্নকলস উজাড় করে উপঢৌকনের মাধ্যমে রামপাল হরি এবং তার সেনাদলকে নিজের পক্ষভূক্ত করেন এবং এভাবে শঠতা এবং দূর্নীতির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে ঐ যুেদ্ধ জয়ী হন। কৈবর্ত শ্রেণীর মানুষেরা আর যেন কোনো বিদ্রোহ সংঘটিত করতে না পারে।

সে জন্য ভীম এবং অন্যান্য নেতৃস্থানীয় কৈবর্তদের কঠোর দন্ড দেয়া হয়। বদ্ধভূমিতে নিয়ে প্রথমে ভীমের সামনে তার পরিজনবর্গকে হত্যা করা হয় এবং পরে ভীমকে হত্যা করা হয়। এভাবে নিভে যায় কৈবর্ত বিদ্রোহের শেষ নায়ক ভীমের জীবন প্রদীপ। সাথে সাথে নিভে যায় অন্ত্যজশ্রেণীর মানুষের আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নবিলাস। সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত রাজা এবং সামন্ত নায়কদের কাছে অন্ত্যজশ্রেণীর কৈবর্তরা পরাজিত হতে বাধ্য হলেও কৈবর্ত রাজবংশের শাসনের স্মৃতি আজো বাংলাদেশে অমর হয়ে আছে।

কিছু দিন আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে কৈবর্তরাজ দিব্যকের শৌর্যবীর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য বিভিন্ন স্থানে দিব্য স্মৃতি, অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হতো। দিব্যকের পর রুদোক, রুদোকের পরে ভীম কৈবর্ত রাজবংশের শাসনভার পরিচালনা করেন। বরেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে ভীমের জাঙ্গাল, ভীমের পান্টি আজো কৈবর্ত রাজবংশের স্মৃতি বহন করে চলেছে। হাজার বছর আগের সেই বিদ্রোহের আহ্বান যেন আজো বারে বারে ফিরে আসে বরেন্দ্রভূমির আনাচে কানাচে। তাই দেখা যায়,পঁয়ত্রিশ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল যেন এক বিদ্রোহভূমি।

যেখানে মীর কাশেমের সাথে যোগ দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ছিলেন ফকির মজনু শাহ। শুরু হয়েছিল প্রায় অর্ধ শতাব্দীকালের ফকির বিদ্রোহ। যেখানে গেরুয়া পোশাক পরা সন্ন্যাসীদের নিয়ে বৃটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন সন্ন্যাসী নেতা ভবানী পাঠক। যেখানে সংঘটিত হয়েছে রংপুরের কৃষক বিদ্রোহ। সংঘটিত হয়েছে তেভাগা আন্দোলন এবং নীলকর বিদ্রোহ।

এমনকি দেশ বিভাগের অব্যবহিত পরে সংঘটিত হয়েছে নাচোলের বিখ্যাত সাঁওতাল কৃষক বিদ্রোহ। ১৯৫১ তে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রাণ দিয়েছে অনেক রাজবন্দী। ১০৭৫ সালের কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে ২০০৬ সালের কানসাট বিদ্রোহ অন্য আর কিছু নয় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম। এই বিদ্রোহ বরেন্দ্র ভূমিতে অতীতেও ছিলো বর্তমানেও রয়েছে, অনাগত কালেও হয়তো তার আগমন এই বিদ্রোহ ভূমিতে বার বার ফিরে ফিরে আসবে। তথ্য নির্দেশ ১।

রমেশচন্দ্র মজুমদার ,বাংলাদেশের ইতিহাস, পৃঃ- ১১১ ২। নীহাররঞ্জন রায় ,বাঙ্গালীর ইতিহাস, পৃঃ-৩৯৫ ৩। রমেশচন্দ্র মজুমদার। প্রাগুক্ত, পৃঃ-১১২ ৪। নীহাররঞ্জন রায়।

প্রাগুক্ত, পৃঃ-৩৯৬ বিঃ দ্রঃ এই লেখাটি আমার বরেন্দ্র অঞ্চল বিষয়ক গবেষণাধর্র্মী বই ‍ ‍‌‍''আহা বরেন্দ্র অনন্য বরেন্দ্র " থেকে সংক্ষেপিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।