আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

:। সমালোচনা :।

পুরুষের জন্য রাতের আসল নেশা নারী আর নারীদের জন্যও রাতের আসল নেশা পুরুষ। সাধুরাও এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে লাইনচুত্য হয়ে যায়। অনেকে আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন। রবীন্দ্রনাথের চিরকুমার সভার সভাপতিও একসময় চিরকুমার থাকে না। তদ্রপ এ কথাও বলা যায় চিরকুমারী সভার সভানেত্রীও চিরকুমারী থাকবে না।

নারী- পুরুষের জন্য নরম মাংসের নেশা থাকা বাঞ্চনীয় কিন্তু সেটা যেন সমাজ, ধর্মের নিয়ম-নীতির মধ্যে থাকে এটাই আমাদের কাম্য, এর ব্যয়ত ঘটলেই নোংড়ামী, অশান্তি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কর্তা-কত্রীর স্বইচ্ছায় শারীরিক মিলন প্রেমের পর্যায়ে পড়ে আর কর্তা বা কত্রীর ইচ্ছায় কিন্তু কর্তা বা কত্রীর অনইচ্ছায় মিলনো হলো ধর্ষণ। প্রেম করে কিছু করলে অন্যায় হয় না। চুপি চুপি এ সমাজের অনেকেই যে যার মত করে রাতের নেশা করে যাচ্ছে। ধরা পড়লে সে সমাজের দৃষ্টিতে খুবই খারাপ; তখন আমরা বলাবলি করি, এ লোকও এ কাজ করতে পারে।

আর ধরা না পড়লে কোন সমস্যা নাই। রাজিব-প্রভার মত এ সমাজে বহু আছে। ওরা সমাজে হেয় হয়েছে প্রমাণ রেখে, প্রমান না থাকলে ওরাও সাধু থাকতো। আহসানের জৈবিক তাড়না তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না, যা সহজে কারো কাছে প্রকাশও করতে পারছে না এবং ইদানীং কোন কাজে তার মন বসে না। সময় সময় আমার কাছে দু একটু যা প্রকাশ করে তাতে বোঝা যায় তাকে নারীর নেশায় পেয়েছে।

মানুষের অজান্তেই প্রতিমূহুর্তে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে এই দুনিয়ায়। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তার চরিত্রের বিভিন্ন দিক আমাকে মাঝে মাঝে বেশ আশ্চর্য করে। তাকে আমাদের সমাজে ১০% মানুষ সুস্থ্য মানুষ হিসেবে সায় দেয় বটে তবে ৯০% মানুষ বলে একদম গাধা। “গন্ডির অধিকাংশের মতে আমার মত” এতে আমি বিশ্বাসী নই। যাতে কাজ শুদ্ধ হবে তাতেই আমার মত।

তাই আমি শতকরা দশ জনের মধ্যেই একজন। পৃথীবির কোন কিছুই একান্ত আমার না আবার ভাবলে সব কিছুই আমার। যা ধরার দরকার তা ধরে রাখবো এবং যা ছাড়ার দরকার তা ছেড়ে দিবো। আমি বিশ্বাসী হবো আমার কাজে। আর মানুষ কিভাবে গাধা হয় তাও আমার জানার যথেষ্ট আগ্রহ।

তাই আমি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় সঙ্গ দিতে লাগলাম তাকে, এতে তার চরিত্রের অনেক বৈচিত্রতা লক্ষ্য করলাম আমি। প্রত্যেক মানুষের জীবনই এমন বৈচিত্রময় হয়। পরীক্ষা সমাগত। পরীক্ষার জন্য সকলেই অল্প বিস্তর চিন্তিত থাকে । তবে পরীক্ষার পড়া শেষ না করে বিস্তর চিন্তা করা পরীক্ষার জন্য ভাল না হয়ে হয় খারাপ।

পরীক্ষা আগামী কাল আরম্ভ তাই সে পরীক্ষার চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ভাবছে পরীক্ষান্তে কিভাবে ভ্রমনে যাওয়া যায়। ভ্রমনে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হোটেলে গিয়ে মেয়েদের সাথে রাত কাটানো। আজ-কাল অনেক নামী-দামী লোকেরাও নাকি হোটেলে গিয়ে মেয়েদের সাথে রাত কাটায়। আহসানের ভাষ্য, “এরা সবাই নিজের বৌ পুরানো বলে হোটেলের ডিজিটাল মেয়েদের সাথে আলাদা মজায় রাত কাটায়। ” আমি বললাম, “তুই এত খবর রাখিস।

” সে বললো, “খবর না রেখে উপায় কি ? সবাইতো খবর রাখছে। ” পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে তার কোন সমস্যাই না তবে মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে বাংলায় সঠিকভাবে পাস করতে পারবে কিনা। অল্পতেই অনেক কিছু করতে পারে কিন্তু শূভ সময় আসেছে না। যদিওবা পরীক্ষা ভাল হয়েছে তবুও পরীক্ষায় পাস করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ। পরীক্ষার সময় নকল হাতের নাগালে পেয়েও হাত ছাড়া।

আবার নকল না পাওয়ায় নকল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর বেজায় ক্ষীপ্ত। নকল সম্পর্কে কথা উঠলেই আমি জোড় গলায় উপদেশ দেই এ ধরনের কার্য থেকে বিরত থাকার। মুহূর্তে সম্মতি পরক্ষণে বেমালুম ভুলে যায়। সত্যের উপড় বিশ্বাস রাখতের সন্দেহ। ৩ ঘন্টার পরীক্ষা, লেখা শেষ হউক আর না হউক আড়াই ঘন্টায় খাতা জমা দিয়ে কারো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কোন প্রকার দ্বিধা নাই।

কেউ যদি পরীক্ষার হলে অসুবিধার সৃষ্টি করে এবং সে যদি তার চেয়ে বেশী রাগী ভঙ্গিমা দেখায় তার বিরুদ্বে প্রতিবাদ করার সাহস নাই। সম্মানীত কোন ব্যক্তি কিছু বললে তা ভুল হলেও মিথ্যা হতে পারে না। সমাজ ১ম ও ২য় প্রত্রের পরীক্ষা দিয়ে ভীষণ সন্দেহ , কার কাছে যেন শুনেছে দু’টায় মোট ২০০ তে ৬৬ পেয়েও পাস হয় না। আমার কাছে বার বার সুধার পর বার বার সঠিক সত্যে বললেও অনেকবার জিজ্ঞাসা করে, তাই কি সত্য ? পরীক্ষা শেষ, তার এখন চিন্তা কোথায়ও যাবে। ভ্রমনের আশায় দিবা- রাত্রি টাকা সংগ্রহের জন্য ব্যতিব্যস্ত।

সঙ্গি করবে আমাকে কিন্তু আমি টাকার সমস্যায় মাঝে মধ্যে না বলছি। তবু আমাকে যেতেই হবে। কি আর করা। দু’জনে মিলে নির্দিষ্ট একটা দিন ক্ষণ স্থির করলাম। আমরা প্রথম ঢাকাতে আমাদের বন্ধু মামুনের কাছে যাব, মাঝে মাঝে মোবাইলে তার সাথে কথা হয়।

আহসান তাকে জিজ্ঞাসা করে, ঢাকাতে সুন্দরী মেয়ের শয্যাসক্ষিনী হওয়া যাবে কিনা ? মামুন বলে, টাকা থাকলে ঢাকাতে রাজকুমারীদেরও পাওয়া যায়। টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা যায় এই নিয়ে এখন আহসানের চিন্তা। ওর আছে একটা বাই সাইকেল। সিদ্বান্ত হলো বাই সাইকেলটা বিক্রি করে দিবে। বাই সাইকেলটার অবস্থা তেমন ভাল না তাই রিপেয়ারিং করে বিক্রি করলে বেশী অর্থ পাওয়া যাবে।

রিপেয়ারিং করতে খরচ হবে পাঁচশো টাকা কিন্তু সেই টাকাও তার কাছে নাই। তাহলে কি করা যায়? গ্যারেজ ওয়ালাকে বললো, সাইকেলটা বিক্রি করে দিবো। সে একজন ক্রেতাকে সাইকেলটা দেখালো। ক্রেতা দুই হাজার টাকার বিনিময়ে সাইকেলটা কিনতে রাজি হলো কিন্তু এই দামে সে সাইকেলটা বিক্রি করবো না। পাঁচশো টাকা কোন প্রকারে যোগাড় করে গ্যারেজ ওয়ালাকে দিয়ে সাইকেলটা সেখান থেকে নিয়ে আসলো।

তারপর এক ক্রেতা পাঁচ হাজার টাকায় সাইকেলটা কিনে নিলে তার পাঁচ হাজার টাকা যোগাড় হলো। সব আয়োজন ঠিক কিন্তু এর মধ্যে এক সমস্যা এসে হাজির হলো। আমার কলেজে টেস্ট পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষা এবং পারিবারিক অসম্মতির কারণে আমার আর যাওয়া সম্ভব হলো না। যাওয়ার আগের দিন ভ্রমনে গিয়ে কি হবে তা নিয়ে অনেক আলোচনা হলো।

কাল্পনিক অনেক ঘটনার রেখাচিত্র এঁকে মনের ভিতরে রেখে দিলো । সময় ও সুযোগ পেলে এর সঠিক বাস্তবায়ন করবে এই তার আশা। যাওয়ার দিন আহসানকে লঞ্চে উঠিয়ে দিলাম। ওর রোমান্টিকতা ভয়ে ভরপুর। ওর এক মামাতো বোন ঢাকা থাকে, সমবয়সী ওই মামাতো বোনকে ও খুব পছন্দ করে কিন্তু এই কথা মুখ ফুটে বলার সাহস এ যাবৎ কাল হয়ে উঠে নাই।

তাই সিদ্বান্তে আসলো, যা থাকে কপালে এবার মনের কথা খুলে বলবেই। আমার অধিকাংশ যুক্তিপূর্ণ সিদ্বান্ত তার নিকট গ্রহণীয় হয় বিধায় আমার কাছ থেকে অনেক কথা জেনে নিলো রোমান্টিকতা সম্পর্কে। আমিও যতটুকু সম্ভব সুচিন্তাই দিয়ে থাকি। অনেক কথায় পর স্থির হলো প্রথম এসএমএস করে জানাবে তার মনের কথা মামাতো বোনকে। যাত্রার দিন মুষলধারে বৃষ্টি তবুও খান্ত দিবে না যাত্রা থেকে।

এ ধরণের গোয়ারতুমি পদের জন্য তাকে অনেকে পাগল বলে। বৃষ্টি ভেঙ্গে শেষে লঞ্চে উঠলো। ১৫ দিন পর আবার তার সাথে দেখা, এর মধ্যে আমি অল্প বিস্তর খোঁজ খবর নিয়েছি বটে কিন্তু কবে নাগাদ আসতে পারে তার কোন খবর পাই নাই। দেখা হওয়া মাত্র অট্রোহাসি দিয়ে বললো, “হায় দোস্ত, ঢাকাতে পাগলের পরিচয় দিয়ে এলাম। ” আমি জানতে চাইলাম, “কি হয়েছে ?” আগে একটু হেসে নেই, তারপর বলছি, “আমার মামাতো বোনের কাছে গিয়ে বললাম, আমি তোকে ভালবাসি।

ওতো এ কথা মামীর কাছে বলে দিলো!” মামী আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “কিরে আহসান, তোর বোনকে কি বলেছিস ? সেতো তোর কথায় মাইন্ড করেছে। ” এ কথা শুনে আমিতো লজ্জায় আর নাই, আমার সাথে মনি কথা বন্ধ করে দিয়েছে, আমি লজ্জায় তাকে মুখ দেখাতে পারছি না। তারপর মনিই আমাকে প্রথম জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি এত খারাপ হয়ে গিয়েছো কবে থেকে!” আমি বললাম, “ আমিতো খারাপ হই নাই। ভালবাসার কথা বলা কি খারাপ? যদি খারাপ হয়ে থাকে তাহলে আমার ভুল হয়েছে। ” সে বললো, “এখন তোমার ভালবাসাকে সফল করো।

” আমি বললাম, “চলো তাহলে বাহিরে কোথায়ও ঘুরে আসি। ” সে রাজি হয়ে গেল তবে শর্ত দিল রিকশায় নিয়ে ঘুরতে হবে। বিকালে বের হলাম। একটা রিকশা ভাড়া করলাম তিন ঘন্টার জন্য। প্রথমে রিকশায় হুট খোলা ছিল।

কথা বলছি স্বাভাবিকভাবে । আস্তে আস্তে হাত ধরা, তারপর রিকশার হুট উঠিয়ে ঢাকাতে অধিকাংশ প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে যা হয় তা সবই হলো। অর্থের অভাবে মানুষ চুরি করে আর চুরি করাকে সমাজ অপরাধ চোখে দেখে এবং এর জন্য শাস্তি ব্যবস্থাও আছে। তবে ছেলে বাবার পকেট থেকে চুরি করলে শাস্তি পেতে হয় না। তাই মাঝে মাঝে বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে এবং ঘরের কিছু বিক্রি করে রুচিকারক খাবার খেতে বড় লিপ্সা জাগে প্রায় বালকেরই।

এ অভ্যাসটা আমারও আছে তবে আমি ঘরের কিছু বিক্রি করি না কিন্তু আহসানের এ অভ্যাসের কারণে শাস্তি স্বরুপ মাঝে মাঝে ঘর ত্যাগ করতে হয়। সে সময় আমাদের ঘর তার জন্য খোলা থাকে। প্রকৃত চোর চুরি করে চুরির কথা অতি আপন জনের কাছেও বলে না কিন্তু তার বেলায় এ সত্য টিকে না। চুরি করেই আমার কাছে বলা চাই। তাই তাকে প্রকৃত চোর হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না।

তাছাড়া চুরির অর্থ চুরির সহযোগী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে ভাগ দেওয়া হয় না কিন্তু সে চুরির অর্থ আমাকে ছাড়া অধিকাংশ সময় খাদ্যে পরিণত করে না। চুরি নিয়ে তার একটা চমৎকার ঘটনা ঘটে গেল। কিছু দিনের মধ্যেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পাবে তাই বাড়ীতে থাকতে কিছুতেই মানসিকভাবে তার মন সায় দিচ্ছে না কারণ পরীক্ষার ফলাফল খারাপ ছাড়া ভাল হবে না। আর খারাপ হলে বাবার কিছু শক্ত-মন্দ কথা শুনতে হবে যা খুবই অসহ্য। আমিও যাব তার সাথে ।

আমরা দু’জনে আলোচনা করে সিদ্বান্ত নিলাম প্রথমে বরিশাল যাব সেখান থেকে পটুয়াখালি। আগামী কালই যাওয়া হবে। আমাকে বললো, “তা হালে আজ তোমাদের বাসায় এসে থাকবো। ” বাবার পকেট থেকে টাকা আত্যসাধের ব্যাপারে আমি সব সময়ই নিষেধ করতাম। ওর বাবা ভালো বেতনে একটা ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকরী করে।

সে জানে তার ছেলে তার পকেট মারে তাই টাকা আত্যসাধ হওয়ার ভয়ে অতি অপরিচিত জায়গায় টাকা রাখে। কোথায় এখন টাকা রাখে তা উৎঘাটন করতে তিন-চার দিন আগেই কাজ শুরু হয়ে গেলো এবং একসময় রহস্য উৎঘাটন হলো। রাত ৮ টায় সময় ওর সাথে আমার দেখা। বললাম, “খবর কি ?” বলল , “কাজ হয়ে গেছে, পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছি। ” ওর বাবা টাকার খোঁজে এখানে আসতে পারে, সেই সন্দেহ ও আগেই পোষণ করেছিল।

আমি বললাম, “আসবে না। কিন্তু তোর সাজ গোজ এরকম কেন ?” আামাকে বললো, “আরে দোস্ত, তা আর বলিস না, আমি যে কিভাবে এসেছি তা আমি নিজেই জানি না। সব কিছু ঠিকঠাক মত রেখেও আনতে পারলাম না, লুঙ্গি পড়ে চলে আসলাম। এখন যা গতি কর। ” বোকমির মানসিক কষ্ট আর কি।

আসলে ওর প্রচুর আবেগ দেখে আমি কোন কিছুতেই না বলতে পারি না। আমি বললাম, “ঠিক আছে, আমার থেকে কিছু পোশাক দিচ্ছি। ” রাতে অনেকবার বললো, “বাবা এখানে আসতে পারে আমার সন্ধানে। আমি বারবারই না বললাম। ” রাতে আমিও বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা চেয়ে নিলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নিলাম । গোসল করার সময়ও একবার বলেছিল, “বাবা এখন এখানে আসতে পারে। ” আমি পূর্বউক্ত। যাবার জন্য সাজ-গোছ করছি ঠিক সেই সময়ই এসে হাজির ওর বাবা। আমি হতম্ভব, ওর চোরের মত হয়ে থাকলো।

ওর বাবা আমার মার কাছে বলল, “শোনেন ভাবি, আমি কাল একজনের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা ধার করে এনেছি আর সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকাই নেই। ” আমার মা এ কথা শুনে আঁকাশ থেকে পড়ল। আমার বাবা তখন ঘুমাচ্ছে। আমি নিজেকে সাধু সাজাতে বললাম, “আমিতো এসবের কিছুই জানি না। ” টাকা নেওয়ার দৃশ্য যেন তেমন কিছু না তবুও জোড় করে নেওয়া।

বাড়ীতে আমাকে অনেক বকা-জকা হলো এবং সেদিনের মত যাত্রা সাঙ্গ হলো। মানুষের সাথে ঝগড়া করা ভাল স্বভাব নয়। আবার সবাই মানুষের সাথে ঝগড়া করতে পারেও না। তাই আমি এটাকে বলবো জটিল খারাপ গুণ । এই গুনটা ওর মধ্যে খুব বেশী পরিমানে ছিল।

তবে একটা ব্যাপার হলো, আমার সাথে ওর এ যাবৎ কাল কোন প্রকার মুখ কালা-কালিও হয় নাই। আমি ওর জন্য ব্যতিক্রম। মানুষের যে কোন কথাকে নেগেটিভ দিকে নিয়ে ভাবা ওর স্বভাব। আমি এ ক্ষেত্রে প্রায়ই তাচ্ছিল্ল করি। এতে কোন কাজ হয়েছে মনে হয় না।

আমাদের অন্য এক বন্ধু, স্বভাবে সে স্বার্থপর এবং মুখর। কথার জন্য প্রায়ই তার বন্ধু ছোটে, অনেক কিছুর পর আবার জোড়াও লাগে। ওর সাথে আমাদের এই বন্ধুটির প্রায়ই কথার মারপ্যাচ হয় এবং বন্ধুত্ব হালকা হয়ে যায় যদিও এর জন্য আহসানই দায়ী। এলাকায় কয়েক জায়গায় টাকার বিনিময়ে রাতের সঙ্গী পাওয়া যায়। আহসান তার কিছু কিছুর ঠিকানাও জানে।

সাতদিন পরপর ওসব জায়গায় না গেলে তার মন-মানসিকতা ও শরীর কিছুই নিয়ন্ত্রনে থাকে না, কেমন জানি অস্থির অস্থির মনে হয়। ভাল বংশের ছেলে ওসব জায়গায় ধরা খেলে মান ইজ্জত সবই যাবে এই ভয়ে ভাল করে কিছুই করতে পারে না। একবার মাল আউট হলে একই টাকায় দ্বিতীয়বার আর সুযোগ নাই। কয়েকজন নাকি এ রকম ধরাও খেয়েছে। এলাকার মাস্তানরা টাকার বিনিময়ে তাদের মান রক্ষা করেছে।

সেও একদিন ধরা খেতে খেতে কোর রকম দৌড়ে মান বাঁচিয়েছে। প্রথম অবস্থায় ওর সাথে সবার সম্পর্কটা ভালই ছিল কিন্তু এখন আমাদের বন্ধুমহলের প্রায় প্রত্যেকেই ওর সাথে সম্পর্ক সৌজন্য মূলক। কেউ তাকে নিয়ে ভাল মন্তব্য করলে একধাপ বোঝা পড়া চাই। এ নিয়ে অনেকের সাথে আবার একহাত উঠেও গেছে। সবকিছু সামাল দিতে হয় আমাকে কিন্তু অনেক সময় ব্যর্থ হই।

কেউ কিছু বললে তার প্রতিউত্তরে কিছু একটা বলা চাই, তা না হলে সে রাতে ঘুম হবে না, অন্তর জ্বালাতো আছেই । আমি সব সময়ই সত্যটা বুঝাতে চেষ্টা করি, আমার কথা সে সম্পূর্ণ আমলে আনতে পারে না। আসলে কি এই স্বভাব মানুষের থাকতে নাই এতে পাওয়ার চেয়ে হরায়ই বেশী। নিজেকে খুব বড় মনে করার মধ্যে পাওয়ার কিছু নাই যদি কাজে বড় না হয় তবে উলুবনে মুক্তা ছড়াবার মধ্যেও জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় না। ও নিজেকে কুটনীতিবিধ হিসেবে চিহ্নিত করতে অধিক আগ্রহী।

কেউ তার সাথে বুদ্বির মারপ্যাচ খেললে তাঁকে অপরের কাছে ছোট করা চাই এবং ছোট করার প্রক্রিয়াটা সে কুটনীতিবিধের চাল হিসেবে মনে করে। সাধারণত কুটনীতিবিধ তার কুটবুদ্বি অন্যের কাছে হালকাভাবে প্রকাশ করে না কিন্তু তার ক্ষেত্রে এ সত্য টিকে না। তাছাড়া তার কুট প্রক্রিয়া হয় অতি নড়বড়ে, যা প্রয়োগকালে ধরা পড়ে। তার দু একটা উদাহরণ এরকম- আজকে আমাদের মধ্যেও দু’ বন্ধুর এক অপরের সাথে ঝগড়ার সৃষ্টি করবে। আয়োজন পূর্ণ এবং প্রয়োগ কালও সমাগত।

দু’জনের কাছে প্রথমে ভিন্ন ভিন্নভাবে কিছু বলা হলো। ঠিক যেভাবে বলা দরকার সেভাবে বলতে পারলো না। তার অতি চাতুরতার জন্য সব মিথ্যায় পর্যবসিত হলো। যে ব্যাক্তি যে ধরণের, তার জন্য সে ধরণের চিন্তা ভাবনা চাই। কিন্তু এক্ষেত্রে হলো তার বেশী না হয় তার কম।

চূড়ান্ত পর্বে এসে সবকিছু নিঃস্ফলে পর্যবশিত হলো। প্রকৃত ঘটনার ধারে কাছেও ( যা ঘটতে পারে বলে মনে করা) তারা যায় নাই ফলে সেখানেই শুরু হলো আবেগময় কূটনীতি, যার ফল হলো তারই সাথে ঝগড়ার সৃষ্টি। এতে নিজেকে আরো বেশী অপমানিত বোধ করে অনেকটা অপরের জন্য কূপ কেটে সে কূপে নিজেই পতিত হওয়া। নিজেকে কোন খারাপ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকার প্রমান স্বরুপ শত চাতুরতার পরিচয় দেয়। এ ক্ষেত্রে প্রমান হয় ঘটনার সাথে জড়িত না থেকেও ঘটনার প্রধান হোতা।

কথায় মধ্যে হঠাৎ এ প্রসঙ্গ টেনে আনায় অতি সাধারণ ভাবেই বুঝা যায় সেই এই কাজ করেছে। এর ফলে নিজের উপড়ই ধিক্কার আসে এবং পরে অনুসূচনা করে। পরিশেষে নিজেই নিজেকে সাব্যস্ত করে একজন ভূল মানুষ হিসেবে। অনেক আগ থেকেই শুনি মান-ইজ্জত সব গেল কিন্তু একে বারেই যায় না কোন কালেই। থাক, মান ইজ্জত থাকাই ভালো।

রত্না ভাবীকে এলাকার সবাই চিনে। দেখতে শুনতে বেশ ভাল। আক্কাস ভাই রত্না ভাবীকে বিয়ে করে দেশে তিন মাস ছিল তারপর চলে যায় মালয়েশিয়া কাজের জন্য । তিন বছর পর একবারের জন্য তিন মাসের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে আসে আবার চলে যায় তিন বছরের জন্য। রত্না ভাবী তার স্বামীকে বিদেশে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে, দেশেই ভাল কোন ব্যবসা করার পরামর্শ দেয়।

তার কথা রাখে নাই আক্কাস ভাই। রত্নাভাবী স্বামীবিহীন বেশীদিন ভাল থাকতে পারে নাই। তার নামে এলাকায় অনেক বদনাম। আহসানও কয়েকবার গিয়েছে তার কাছে। আহসানের যুক্তি হলো, কেউ যেন বিয়ে করে বৌকে রেখে বিদেশে না যায়।

প্রত্যেক মানুষই কর্ম দিয়ে জীবনকে উন্নত করে। কর্ম জীবন বলতে স্বতন্ত্র কোন পর্ব মানুষের জীবনে নাই। মানুষ প্রতি মূহুর্তেই কর্মের মধ্যে ডুবে থাকে। হউক সে কর্ম ভাল অথবা মন্দ । তবে আশ্চর্য লাগে যখন দেখি প্রায় ছাত্র এবং মানুষেরই শিক্ষা কর্ম ভাল লাগে না বলে।

আরে শিক্ষারইতো জীবন, কেবল চাকরীর জন্যই শিক্ষা নয়, মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য শিক্ষার মত মূল্যবান কোন কর্ম নাই। রাতরাতি বড় লোক হওয়ার বাসনা অনেক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান, যদি সে মহামানব না হয়। সমাজের মহামানব নির্ণয় করা অতি দূরহ কাজ, তাই লটারী ধরে ৪০ লক্ষ টাকার এ্যামাউন্ট দিয়ে শিল্প কারখানা নির্মান করতে এখনই খাতা-কলম নিয়ে হিসাব করতে বসা চাই। আমাকে অর্ধেক স্বত্যাধিকারী করে দিবে, ভ্রমণ খরচ, উন্নত ধরনের খাবার -দাবার ইত্যাদিতো ছাই। আমি বলি, ভবিষ্যতেটা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।

তারপর বলে, এটা যদি নাও হয় চিন্তা নাই, বাবা লাক্ষ দশ টাকা দিবে, তা দিয়ে দু’জনে ব্যবসা করবো, ব্যবসা থেকে অর্জিত টাকা দিয়ে আমাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবো। এর ধরনের কথা-বার্তা শুনে আমি বলি, “চেষ্টা করলে সবই হয়। ” মাঝে মধ্যে বলতাম, “ভবিষ্যতের চিন্তা ভবিষ্যতের জন্যই রেখ দাও। থাক পরে ভবিষ্যৎ, বর্তমান নিয়েই চিন্তা করি। ” কথায় আছে অহংকার , লজ্জা, ভয় এই তিন থাকিতে নয়।

তবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এই তিনটা বিশেষণ কিছু না কিছু বিদ্যমান থাকে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না কিন্তু আহসানের মধ্যেও এই তিনটা বিশেষণ খুব বেশী পরিমানে বিদ্যমান। তবে যে বিষয় নিয়ে ভয় পাওয়ার কথা সে বিষয় নিয়ে প্রায়ই সে ভয় পায় না, ভয় পায় অযথা বিষয় নিয়ে। অথাৎ যা হওয়া উচিত তা সে প্রায়ই হয় না। যেমনঃ- একদিন রাতে পাশের ঘরের একটি মেয়ে কি কারণে জানি একটু জোড়ে-সোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠল, ওমনি সেও ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল।

পরে জানতে চাইলে বললো, আমি বুঝেছিলাম কোথাও ডাকাত পড়েছে। রাত্রে আমাদের বাড়ী থেকে যাচ্ছিলো ওদের বাড়ীর দিকে। তখন প্রায় রাত বারটা বাজে। রাস্তায় কোন জনপ্রাণী নাই। নিস্তব্ধ চারপাশ, মনের মধ্যে দুক দুক হয়তবা ভূত-প্রেত, জ্বীন-পরি এ সবের ভয়।

তবে সে নিজেই এ সবে ভয় করে না বলে তবুও ভয়। ধর্মীয় গোড়ামী নিয়ে সহসা কথা বলে না পাছে যদি কবিরা গুনাহ হয়। চলছে আর মনের সাথে যুদ্ধ করছে হঠাৎ মাথার উপড় দিয়ে কোন নিশাচর পাখি উড়াল দিল অথবা কোন গাছের উপড় বসা পাখি যাওয়ার সময় সে গাছের শুকনো ডাল ভেঙ্গে পড়লো ওমনি তার আর সুস্থ মতি নাই, পাদুকা দুটি কোন মতে হাতে নিয়ে দৌড়, এক দৌড়ে বাড়ি। পরে এ ঘটনা শুনে আমরা প্রচুর হাসাহাসি করি। আরেকটা ঘটনা ঘটে আমাবস্যার রাতে।

আমরা জানতাম না আজ আমাবস্যা। গল্প-গুজব করে বাসায় ফিরছি হঠাৎ ওর মতি হলো সে নানা বাড়ি যাবে। তখন রাত ১১ টা। এখানে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে। বলা যায় শহরের নমুনা এখানে কিছুটা বিদ্যমান।

বিদ্যু থাকবে আর মাত্র এক ঘন্টা । এছাড়া ওর নানা বাড়ি যেতে আধিকাংশ পথেই বিদ্যু নাই। অন্ধকারে সাইকেল চলালে চোখের বিভ্রাট হতে পারে। তার বেলায়ও তাই হলো। এক সময় সাইকেল চালাতে চালাতে রাস্তা চুত্য হয়ে এক বাড়ির বাইলের বেড়া বেদ করে ঢুকে পড়লো।

বাড়ীর কর্তা ঘুম থেকে জেগে চোর বলে চিৎকার দিয়ে লাইট হাতে বাহিরে আসলো, এসে প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পারলো। তারপর তার সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর তাকেই কাল্পনিক ভূত হিসেবে সন্দেহ হলো, মন ভয়ে শিউড়ে উঠলো। মান রাখতে গিয়ে না রাখতে পারলে মান সবই যায়। তার মানের খাতায় মান যোগ করতে গিয়ে বরাবরই মান বিয়োগ হয়েছে। তারপরও মান এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি, কোনদিন শেষ হবে নাকি তাও জানি না।

তবে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন মান যে কিছু অবশিষ্ট থাকবে তা নিশ্চিত। তবুও প্রতিদিন মানের জন্য লড়াই। এ ক্ষেত্রে মানের সর্বণাশ করে লজ্জা। কারো সাথে কথা বললে (বিশেষ কোন সম্মানিত ব্যক্তির ) ভয়ে প্রাণ উদাস হয়ে যায়, পাছে উল্টা-পল্টা কিছু বলে ফেলে যাতে মান যাবে। কার্যত হয়ও তাই।

যেমন একবার গিয়েছিলাম থানা প্রকৌশলীর কাছে একটা আর্জি নিয়ে। অতি সাধুতা চোরের লক্ষণ, এখানে ঘটলো তাই। এখানে অতি সাধূতার পরিচয় দিতে গিয়ে যা বলার তা না বলে সেই কথাকেই অন্য ভাবে বলে ফেললো। এতে সে আমাদের খারাপ ভাবতে বাধ্য হলো। সেখানেই দু চারটা কথা শুনিয়ে দিলো।

এখানে কি আমাদের মান কিছু অবশিষ্ট থাকলো? তবুও মানে মানে মান নিয়েই ফিরে আসলাম। কোন ললনার সাথে বাধ্য হয়ে কথা বললেও মান যায়। মানের জন্য এত চিন্তা কিন্তু মানের হিসাব নাই। থাক, মান নিয়ে বেশী চিন্তা করলে পাছে মান কিছু খোয়া যেতে পারে। ওর সাথে দেখা হলে পাছে যেন আমাদের মান না যায় এ চিন্তা আমার এক বন্ধুর।

আহসানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত। দেশে ভাল চাকরী করার যোগ্যতা নাই তাই সে চলে গেল বিদেশে । বিদেশে প্রথমাবস্থায় বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে, একবার কাজ ছেড়ে দেশে চলে আসতে চেয়েছে কিন্তু মাথায় ছিল দেশে এসেতো ভাল কিছু করতে পারবো না। এখন বিদেশে সে বেশ ভাল আছে, সেখানে তার মাসিক বেতন বাংলাদেশী দু’লক্ষ টাকা। সেখানেও তার অনেক টাকা খরচ হয় মেয়েদের পিছনে তাই সে সিদ্বান্ত নিয়েছে এবার বাড়িতে এসে বিয়ে করে বৌকে নিয়ে যাবে বিদেশে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।