আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা না, তার বাবা উপজাতি না, এবং সে নারী না ! সে মেধাবী, এটাই তার অপরাধ ! !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ধরুন, জাতীয় ক্রিকেট টিম সিলেকশন হবে । সবাই লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে । বোর্ডের চেয়ারম্যান নাম পড়া শুরু করলেন । দেখা গেল এগারো জনের ভিতর সাকিব, মুশফিক আর তামিমের নাম নাই ! কেন নাই ? কারন কোটার কারনে তাদের জায়গা হয় নাই ! তাদের স্থানটা অন্য তিন খেলোয়ার দখল করে নিয়েছে । যাদের একজন হচ্ছে উপজাতী, একজন জেলা ভিক্তিক ভাবে এসেছে আর একজন হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার নাতি ! আপনার মতে কি এটা ঠিক হয়েছে ? একটা খেলা জেতার জন্য যেমন দক্ষ্য খেলোয়ারের প্রয়োজন তেমনি একটা দেশ সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্যও দক্ষ আর মেধাবী মানুষ দরকার ! আলছাল গরুছাগল না ! আবার মনে করেন, আপনি বান্দর বন বেড়াইতে গেছেন ! পাহার বেয়ে চাঁন্দের গাড়িতে করে উঠতে হবে ! আপনি গিয়ে দেখলেন সেখানে দুইটা স্ট্যান্ড রয়েছে ! একটা রয়েছে এমন কিছু ড্রাইভার যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ! আর অন্যটাতে চালক দের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোটার ভিত্তিতে ।

সেখানে দক্ষতা থেকে কোটাকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়েছে ! এখন আপনার কাছে প্রশ্ন আপনি কোন স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করবেন ? দক্ষ চালক ? নাকি কোটা ভিত্তিক চালক ? নিজের সুরক্ষার জন্য আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন ! আর দেশের সুরক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন না সেইটা কেমন হয়ে গেল না ? আবার মনে করেন দুইটা স্কুল ! দুইটাই সরকারী স্কুল ! সব কাঠামো এক, সুযোগ সুবিধাও এক ! কেবল শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন ! প্রথম স্কুলের ১০ শিক্ষকের ১০ জনই নিয়োগ পেয়েছে তাদের দক্ষতা, মেধার ভিত্তিতে ! আর দ্বিতীয় স্খুলের ১০ জনের ৬ জন পেয়ে কোটার ভিত্তিতে ! এখন আপনার কাছে প্রশ্ন আপনি আপনার সন্তান কে কোন স্কুলে পাঠাবেন ? নিজের সন্তানের জন্য ভাল শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন আর দেশের জন্য ? আমি খুব ভাল করেই জানি এই তিনটি ক্ষেত্রের আপনার জবাব কি ? নারী কোটা-১০% দেশে নারী উন্নয়েন অবশ্যই দরকার তাই বলে কি একজন কম যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েকে একজন অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলের স্থল ভিত্তিক করা উচিৎ ? মেয়েরা সব সময় সমঅধিকারের কথা বলে কিন্তু এখানে কি ছেলেদের প্রতি অন্যায় করা হল না ? উপজাতি কোটা-৫% মোটা জনসংখ্যার তুলনায় উপজাতীদের সংখ্যা অতি নগন্য ! আমাদের দরিদ্র রাষ্ট্র যেখানে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কর্মসংস্থানের সমস্যা প্রকট সেখানে “আদিবাসী কোটা” নামে একটা বিষয় কতটা যুক্তিযুক্ত সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। আদিবাসীরা এদেশের পূর্ণ নাগরিক হয়ে জীবন যাপন করতে চায়, তাহলে তো ওদের সাধারণ নাগরিকের মত “সমান অধিকার” নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ! কোটা মানেই তো “অগ্রাধিকার”! মুক্তিযোদ্ধা কোটা-৩০% এখানে অনেকেই কেবল একটা কথা বলে যে যে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য এতো কিছু করলো তাদের সম্মান জানাবো না ? আসেন একটা গল্প বলি ! গত ৪২টি বছর ধরে মমতাজ বেগম ফিস্টুলার মতোন মরণ যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন। ডায়রিয়া হলে পুরো বাড়িঘর ছেয়ে যায়, গন্ধের কারণে কেউ পাশে থাকে না। মেয়ে মাঝে-মধ্যে এসে সেবা করে যায়। তার কথা, ‘মা-তো, তারে ফালাইয়া দিতে তো পারি না’ পেটে একটা বাড়তি থলে নিয়ে কাটিয়ে দিলেন জীবনের ৩৮টি বছর।

এই থলে দিয়ে প্রতিনিয়ত পায়খানা বের হয়। গত ২৯ জুন ভয়াবহ ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হন সোহরাউয়ার্দী হাসপাতালে। আছেন ৮ নং ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে। এই মমতাজ বেগম কে জানেন ? আচ্ছা আর একটা গল্প বলি ! সংসার নামক জীবনের অচল চাকা সচল করতে থেমে গেছে বুলু মিয়ার তেজদীপ্ত যৌবন। ষাটের কোঠা পার করেছেন দু’বছর আগে।

অনাহারে অর্ধাহারে মাত্র দু’জন মানুষের সংসারের ঘানি টানতেই হোচট খেতে হয় তাকে প্রতিনিয়ত। স্বাধীনতা সম্পর্কে বুলু মিয়ার ধারনা ছিল এটা এমন একটা জিনিষ, যা অর্জিত হলে সারা জীবন পরিবার পরিজন নিয়ে আর কারো দারস্থ হতে হবে না। যৌবনের তেজদীপ্ত সময়ে রিক্সা নামক যন্ত্রটার সাথে ঘষাঘষি করে কোন মতে ৪ সন্তান আর স্বামী স্ত্রীর সংসার চলতো। এই বুলু মিয়া কে জানেন ? প্রথম জন হল একজন বীরাঙ্গনা । আর দ্বিতীয় জন হল একজন মুক্তিযোদ্ধা ! কি আজব এই দেশ ।

এখানে মুক্তিযোদ্ধারা রিক্সা চালায়ে, বাদাম বিক্রি করে খায়, বিনা চিকিৎকায় মারা যায় আর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিগো চাকরি দিয়ে বেড়ায় ! বড়ই চমৎকার ! ভাই সাব যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেখাতেই চান তাহলে তাদের জন্য বিনা মুল্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন ! রাষ্ট্রিয় ভাবে তাদের ভরনপেষনের ব্যবস্থা করেন ! তাদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন ! আচ্ছা কিছু করা লাগবে না সবার আগে দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটা তালিকাই বের করে দেখান দেখি ! মুক্তিযোদ্ধরা বৈষম্য নিরসনের জন্য পাক হানাদার বাহিণীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করেছিলেন, আর এখন এই মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে অন্য এক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে । অযোগ্যরা চাকরী পাচ্ছে আর যোগ্যরা বাদ হয়ে যাচ্ছে ! এই জন্যই কি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল? একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কখনই একজন দক্ষ মেধাবীর বদলে নিজের অযোগ্য সন্তানের চাকরীর জন্য দাবী জানাবে না ! আর কিছু বলার নাই ! কিছু বলার নাই ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।