আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যারা বলে, গণজাগরণ মঞ্চ ব্যর্থ, যারা বলে শাহবাগ মঞ্চ আওয়ামী মঞ্চ, তাদের বলছিঃ

মনেরে আজ কহযে, ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে। [সংবিধীবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই লেখা কোন দলের অন্ধ ও গোঁড়া সমর্থকদের জন্য নয়। এই লেখা বোঝার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা ‘কমন সেন্স’ থাকা] http://www.bdnews24.com এর দুইটি শিরোনাম দিয়ে শুরু করছি। ১। Click This Link “সরকারের সমালোচনায় ইমরান” “বিরোধী দল এবং তাদের পক্ষের সংবাদ মাধ্যমের কাছে ‘সরকারি লোক’ হিসেবে চিহ্নিত ইমরান এইচ সরকার গণজাগরণ মঞ্চের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন।

” ২। Click This Link “শাহবাগে অনশনে আন্দোলনকারীদের একাংশ” “জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে অনশনে বসেছে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের একটি অংশ, যাতে গণজাগরণ মঞ্চ ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ স্পষ্ট হয়েছে। ” প্রথম খবর এটা প্রমাণ করে না যে এই আন্দোলন সরকারের সাজানো নাটক নয়। নিন্দুকেরা দাবী করতেই পারে যে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য এটা আরেক চাল। যেমন অদ্ভুত সব দাবী প্রথম থেকেই তারা করে আসছে, তাতে এমন দাবী হলে আমি মোটেই অবাক হব না।

কিন্তু এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল এই শাহবাগ এতদিন সরকারকে এত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেনি। অতএব এটা বলাই যায়, এই তরুণদের উপর আস্থা হারানোর সময় এখনো আসেনি। এর সাথে এটা তো স্বীকার করতে হবেই যে, ৫ই ফেব্রুয়ারী এদের আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়েছিল রাজাকারদের বিচারের ব্যপারে তাদের হঠকারী অবস্থান থেকে সরে আসতে। আন্দোলনের প্রথম দুই সপ্তাহ সরকার এই মঞ্চের প্রতিটি কথা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। এই সরকার কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনকে যথেষ্ট সমীহ করেছে।

সাথে সাথে সরকার এদের কাছ থেকে ফায়দা লোটারও চেষ্টা করেছে। এবং এতে তারা কিছুটা সফলও হয়েছে। এর পিছনে তরুণদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার যেমন অভাব ছিল, তেমনি সংশয়বাদীদের ভূমিকাও কম ছিল না। সংশয়বাদীদের সংশয় ছুঁয়ে গেছে অনেককেই। এসবের যোগফল হল আন্দোলনের গতি হারানো।

একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, এতে আসলে না লাভ হয়েছে আওয়ামী লীগের, না লাভ হয়েছে বিএনপির। আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে জামাত-শিবির। দ্বিতীয় খবরে বোঝা যাবে এই আন্দোলনের শক্তি বা সফলতা। শহীদ রুমী স্কোয়াড আন্দোলনকে নিয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে। এই তরুণেরা আর গান্ধী নীতিতে বিশ্বাসী নয়।

এখনি সরকারের সাথে সরাসরি দ্বন্দে যাওয়া উচিৎ কিনা সে নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই তরুণেরা বিশ্বাস করে “পথে এবার নামো সাথী, পথেই হবে পথ চলা”। এই প্রেরণা যদি যুগিয়ে থাকেন জাহানারা ইমাম, তবে সাহস যুগিয়েছে শাহবাগ চত্ত্বর। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। শাহবাগের সার্থকতা এখানেই।

সরকার বা বিরোধী দল যদি এদের নিয়ে আরও খেলতে চায় তবে এই আন্দোলনের গতি বাড়তেই থাকবে। এই গতি থমকাতে পারে, কিন্তু স্তব্ধ হবে না। আমরা যদি একটু পিছন ফিরে তাকাই, তবে দেখতে পাব ’৫২ র ভাষা আন্দোলন কিংবা ’৬৯ এর গণ অভ্যুথ্যান অথবা ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন- কোনটাই শুরু থেকে মার মার কাট কাট মনোবৃত্তি নিয়ে শুরু হয়নি। প্রতিটি সরকারকেই সুপথে ফিরে আসার যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। সরকার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করার আগে আমরা কিন্তু অসংযমী হইনি।

এই আন্দোলনও চলছে একই পথে। আমি এখানে শাহবাগকে মহান আন্দোলন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার ব্রত নিয়ে এই লেখা লিখছি না। আমি এই লেখা লিখছি সংশয়বাদীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। উপরের দুইটি শিরোনাম এবং ব্যখ্যামূলক লেখার অবতারণা সেই কারণেই। সংশয়বাদীদের প্রতি আমার আহ্বান, প্রজন্ম চত্বরের গতি রুদ্ধ হয়েছিল যে সংশয়ের দোলাচলে, তাকে দয়া করে আবার সামনে নিয়ে আসবেন না।

আমাদের বুঝতে হবে, রাজাকারদের শক্তি হল আমাদের নীরবতা, আমাদের পারস্পরিক দ্বন্দ। এছাড়া ওদের কোন শক্তি নেই। বিষয়টি খুব সরল। একে জটিল করবেন না। এই তরুণেরা পথে নেমেছে দুইটি মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে।

রাজাকারদের সঠিক বিচার (কোন কোন ক্ষেত্রে ফাঁসী) এবং জামায়াত নিষিদ্ধকরণ। এখানে অন্য কোন প্রসঙ্গ আনবেন না। এই দাবীর সাথে যদি আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি একাত্মতা প্রকাশ করে, তো ক্ষতি কি? আমি অন্তত বিশ্বাস করি না যে দেশ পরিচালনায় এদের এক জন অন্যের চেয়ে এতটা এগিয়ে যে তার জন্য রাজাকারদের সঠিক বিচার এবং জামায়াত নিষিদ্ধকরণের দাবী থেকে এক চুলও সরে আসা যায়। এই দুইটি দল জনগণের কথা কখনও ভাবে নি। এদের কথা আপনারা ভাবছেন কেন? আমি একটা ভাল কাজে অগ্রসর হলে তাতে যদি আপনার অপছন্দের বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পায়, সে জন্য আপনি ওই ভাল কাজকে সমর্থন দেবেন না; এটা কি কোন নীতি হতে পারে? এই রকম মানসিকতার জন্য আমরা কি এই দুই দলকে এতদিন তিরস্কার করে আসিনি? আর একটি বিষয় হল, শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ যেমন লাভবান হয়েছে, বিএনপিও কি তেমন লাভবান হতে পারে না? যদি তারা তা না করে, তাহলে তার দায় কেন এই তরুণদের উপর বর্তাবে? তাই আসুন, আমরা আমাদের অন্য সকল মতপার্থক্য এক পাশে রেখে এই তরুণদের সমর্থনে এগিয়ে যাই, একটু হলেও শোধ করি শহীদদের ঋণ।

আওয়ামী লীগ আর বিএনপি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মানুষ ছাড়া আর যারা এদের নিয়ে সংশয়ে আছেন, তারা এদেশের ধর্মভীরু জনগণের একাংশ। তাদের প্রতি আমার আমার একটাই আহ্বান, ইসলাম আর এই বিষয় দুটিকে এক করবেন না। আমি অন্য ধর্মের বিধায় এর বাইরে তাদেরকে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি শুধু এটুকুই আশা করি, তারা যেন প্রকৃত সত্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন, উড়ো কথায় বিশ্বাস না করেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।