আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্য সঞ্জীব চৌধুরী আনলিমিটেড...............টোকন ঠাকুর

কিংবদন্তী একদিন বড় হয়ে যাবে । কিংবদন্তী একদিন বুঝতে শিখবে, কিংবদন্তী কাকে বলে? কেন মানুষ কিংবদন্তী হয়ে যায়? কেন মানুষ মুখে মুখে ফেরা জনশ্রুতির তাৎপর্য গ্রহণ করে?... কফিন বাকশের দিকে তাকানো ভাবলেশহীন শিশু,শিশুটি কি জানে কফিনের মধ্যে যে ঘুমিয়ে আছে, সে কে? সে কেন বাসায় না-ফিরে ঐ বাকশের মধ্যে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে? শুয়ে থাকা মানুষটি বাবা, না সঞ্জীব চৌধুরী? সঞ্জীব চৌধুরী কে ছিলেন? কি ছিল তার অন্তরের কথা, স্বপ্নের কথা? কী ছিল তার দাহ? কেনো এতো অগ্নিময় জলের বুদবুদ হয়ে ফেটে যাওয়া? কোন ভুবনে ছিল তার স্বপ্নের পাখি? কিংবদন্তী একদিন জানতে পারবে,এখানে অন্ধকার ছিল,পরম্পরার । তার বাবা সেই অন্ধকারে জোনাকি হয়ে গেছে । সে একদিন বুঝতে পারবে, এখানে অনেক পাথর ছিল ,তার বাবা যৌবনের সমস্ত শক্তি ঢেলে পাথর সরাতে চেয়েছে, প্রেমতীব্র পথ তৈরি করতে চেয়েছে । কিংবদন্তী একদিন শুনতে পাবে, বাতাসে রঙ্গীন সুর ছড়িয়ে আছে, কারণ সঞ্জীব চৌধুরী গান গাইত ।

ভয়াল নৈঃশব্দে শব্দ ছড়িয়ে সঞ্জীব চৌধুরী চলে গেছে । শাদা শূন্যতায় মধুবনের রঙ ছড়িয়ে গেছে, আলাপের মধ্যে কবিতা পুঁতে রেখে গেছে । এখানে অনেক বিচ্ছিন্নতা ছড়ানো বলে, তার বাবা অনেক গল্প রেখে গেছে । রাত্রি গভীর হলেও, যে- রাতে কিংবদন্তীর ঘুম আসবেনা, যখন সে খুলে খুলে দেখবে অ্যালবাম-ভর্তি এক মুখ, হাওড়-প্রদেশের সেই মুখই সঞ্জীব চৌধুরীর মুখ। কিংবদন্তী নিশ্চয়ই টের পাবে,বহুদিন আগে তার বাবাই কিংবদন্তী হয়ে গেছে ।

এমনকি তার জন্মের আগেই কিংবদন্তী হয়ে যায় মিছিলের ,কবিতার, গানের দলছুট সঞ্জীব চৌধুরী । এই ঠাঠা-মরার দেশে সঞ্জীব চৌধুরী বড় বেশি অপরাধী, কারণ তার ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল । কারণ, সে ভালোবাসত । কারণ এই পোশাকি সিস্টেমের দেশে সঞ্জীব চৌধুরী আপন অস্তিত্বের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে । এই ফাঁকা-ফাঁকা মন্দির-মসজিদ-গির্জার দেশে , সঞ্জীব চৌধুরী ছিন্নমুল মানুষের বাসস্থানের ভাবনা মাথায় রেখেছে ।

নিরন্নের, অন্ন ও পানীয়ের অধিকারের কথা বলার জন্য, সাহসে, বুক টানটান করে রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকেছে । কিংবদন্তী একদিন জানবে, মেডিকেল কলেজের গবেষণায় তার বাবার শরীর কাজে লেগেছিল । সেখানেই রয়ে গেছে সঞ্জীব চৌধুরীর কংকাল... হয়তো আগন্তুকের সঙ্গে আড্ডা দিতে চায়ও, নতুন একটি কবিতা নিয়ে, গান নিয়ে মেতে উঠতে চায় । মা বকা দিলে, হয়তো একদিন খুব মনখারাপ হলে আমাদের কিংবদন্তী কাউকে না বলে একা একাই চলে যাবে মেডিকেল কলেজের দিকে । সে কি বাবার কংকালের সঙ্গে কথা বলবে_'বাবা আমার মন ভালো নেই, তুমি একটা গান গাও তো ' আমরা কিংবদন্তীর পেছনে পেছনে যাব এবং লক্ষ রাখব, দেখব, বাবার কংকাল মেয়ের আবদার রাখে কিনা? কংকাল কি কথা রাখবে...? আমরা জানি সঞ্জীব চৌধুরী কিংবদন্তী ছিলেন... ...................................................... ........................................................ [বি.দ্র. এই লেখাটা সন্জীব দা'র মৃত্যুর ৩ দিন পর লিখেছিলাম।

কিংবদন্তী সন্জীব চৌধুরী ও শিল্পী (তার স্ত্রী)'র একমাত্র কন্যা। সন্জীব দা'র কঙ্কালটা এখনো ঢাকা মেডিকেলে দান করা আছে। ১৯ নবেম্বর তার চলে যাওয়ার দিন, ৪র্থ তম। ২০০৭-এ যখন সন্জীব দা চলে যান, তখন কিংবদন্তীর বয়স ছিল ৪] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।