আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অটিজম ; সচেতনতার এখনি সময়

"অ্যাবসার্ড" আমি নিজে ডাক্তার হওয়া সত্তেও অটিজম সম্পর্কে ভালো ধারনা ছিল না। যদিও আমি ডাক্তার হয়েছি অল্প কিছুদিন হল। অটিজম আমার স্পষ্ট ধারনা হয় তখন, যখন আমি জানতে পারলাম আমার মামাতো ভাই অটিজম এ আক্রান্ত। একদিন আমার মামা ফোনে আমাকে বললেন উনার ছেলের সমস্যার কথা। আমি উনাকে পরিস্কার করে কিছু বলতে না পারার লজ্জা থেকে আমি পরবর্তীতে অটিসম সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি।

অটিজম কি?? এটি মুলত একটি ব্রেইন এর গঠন এবং বৃদ্ধি জনিত রোগ। যা একটি শিশুকে সামাজিক যোগাযোগ এবং দক্ষতা অর্জনে বাধা দেয়। শিশুটি সারাক্ষন নিজের মনে খেলতে থাকে এবং একই কাজ বারবার করতে থাকে। সে তার বেড়ে উঠার যে মাইলস্টোন গুলো যেমন, সঠিক সময়ে কথা বলা, বর্ণমালা চিনতে পারা এগুলো অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে অটিজম এর প্রকোপ এত বেড়ে গেলো কেন?? এই সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার Adrian Sandler, M.D( Mission Children's Hospital, in Asheville, North Carolina) বলেন, "আজ থেকে ১০ বছর আগে হয়ত অটিজমে আক্রান্ত শিশুর রোগ আমরা নির্ণয় করতে পারতাম না।

" এখন পর্যন্ত সবচে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, রোগ টি মুলত জেনেটিক। কেউ কেউ আবার এটাকে হেভি মেটাল পয়সনিং যেমন পারদ কে দায়ী করে থাকেন। পারদ একটি ভেক্সিন এ প্রিসারভেটিভ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে যা শিশুদের দেয়া হত। এটাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ২০০১ সাল থেকে পারদ/ থাইমেরোসাল প্রেসারভেটিভ এর ব্যাবহার করা হয় না। কিছুদিন শিশুদের দেয়া ভ্যাক্সিন এম এম আর (হাম, মাম্পস, রুবেলা) কে দায়ী করা হলেও এর সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি।

বরঞ্চ শিশুদের এম এম আর টীকা না দিলে বেশী ক্ষতি বলে রায় দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ প্রসঙ্গে Catherine Lord, Ph.D., director of the Center for Autism and Communication Disorders at the University of Michigan, বলেন," এটা সম্ভবত জেনেটিক এবং আমাদের পরিবেশে পয়সনিং এর একটা মিলিত ফলাফল। " সাধারনত, আড়াই থেকে তিন বছর বয়সে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। ছেলে শিশু ৪ গুণ বেশী আক্রান্ত হয় মেয়ে শিশুর চেয়ে। লক্ষন সমুহঃ ১; সঠিক সময়ে কথা বলতে না পারা।

যেমন ১২ মাস বয়সে কথা বলতে না শেখা। যদি ১৮ মাস বয়সে একটা দুটার বেশী শব্দ বলতে না পারা। ২; কারো কথা না শুনা- যেমন কোন দিকে তাকাতে বললে না তাকানো। ৩; একই কাজ বার বার করা। একই শব্দ বার বার উচ্চারন করা, একই খাবার খেতে চাওয়া, একই কালারের কাপর পরতে চাওয়া, একই গান বার বার শুনতে চাওয়া, একই বিজ্ঞাপন বার বার দেখতে চাওয়া ইত্যাদি।

৪; অটিসটিক বাচ্চারা সাধারনত একা খেলতে পছন্দ করে। এবং একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন এ খেলে। অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে চায় না। ৫; কোন সমস্যার কথা না বলা। কোন খেলনা খুঁজে না পেলে হাত দিয়ে ইসারা করা।

অর্থাৎ মুখে কিছু না বলার প্রবনতা। ৬;মাঝে মাঝে দেখা যায় অটিস্টিক বাচ্চারা কানে কম শুনে অথবা শব্দের প্রতি বেশী সংবেদনশীল হয়। ৭; স্পর্শের প্রতিও সংবেদনশীল হয়। কেউ তাকে টাচ করুক এটা সে চায় না। ৮; সে তার চারপাশ এর পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকে না।

যদিও দৈনন্দিন রুটিন এর ব্যাপারে খুব সচেতন থাকে। আরও কিছু লক্ষন আছে তবে উপরে যা উল্লেখ করলাম এগুলোই প্রধান। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন বাচ্চাদের মাথা যদি স্বাভাবিক এর চে বড় হয় তাহলে মা বাবার উচিত শিশুটির দিকে খেয়াল রাখা। এপ্রসঙ্গে একটি কোটেশন উল্লেখ করছি, Pediatricians don't always measure head circumference at well-baby visits, so it's wise to request it. However, don't panic if your baby's head size is above the norm. Some babies just have big heads. "Rapid head growth is not a way to diagnose autism," Dr. Akshoomoff points out, "but it means that a child should be watched closely to be sure that she meets speech and behavioral milestones. রোগ নির্ণয়ঃ কোন পরীক্ষার দ্বারা এখন পর্যন্ত অটিজম নিরনয় করা সম্ভব না। তাই কোন বাচ্চার ভেতর উপরক্ত লক্ষন দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত এই মুহূর্তে আমাদের সবচে বড় প্রবলেম হল, অটিসম এর উপর অভিজ্ঞ ভালো ডাক্তারের অভাব।

ভালো থেরাপিসট এর অভাব, যে কিনা বাচ্চাকে behavioral therapy দিবে। নেই অটিজম এ আক্রান্ত বাচ্চাদের জন্য ভালো স্কুল। একটি অটিস্টিক শিশু কিন্তু ভালো থেরাপি পেলেই কিছুটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা কম। বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারী ভাবে অটিস্টিক শিশুদের জন্য রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

আশা করছি আমাদের দেশেও এরকম কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারী বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হবে। শিশুদের থেরাপি নিয়ে আরও একটা কোটেশন উল্লেখ করছি "Intervention can take many forms, from going to a regular preschool to a parent's working with her child over the course of a normal day to direct therapies from well-trained teachers and professionals -- all depending on the child," Dr. Lord. অটিজম স্থায়ী ভাবে নিরাময় করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিস্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং behavioral therapy ছাড়া আর কিছু করার নেই আমাদের। স্থায়ী চিকিৎসা আবিষ্কারের আশায় রইলাম। এবং সকল অটিস্টিক শিশুর মা বাবার প্রতি লেখাটি উৎসর্গ করলাম।

( লেখাটিতে কোন ভুল চোখে পড়লে, দয়া করে জানাবেন। বিশেষ করে যারা ডাক্তার আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ রইল। ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।