আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামাত-শিবিরের কর্মীদের স্বাধীন বাংলাদেশে বেঁচে থাকা নিরর্থক....

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি কথাটা আমার না। কথাটা জামাতের গুরু কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের করা একটা উক্তি। কথাটা বলা হচ্ছে সেই সকল জামাত শিবিরের কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে - যারা নানান ভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। যারা জামাত-শিবিরের কর্মী সমর্থক - এরা কিসের জন্যে তাদের নেতাদের সমর্থন করে দিনরাত তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? জামাত-শিবির আসলে কোন আদর্শের রাজনীতি করে। এরা মুখে ইসলামের কথা বললেও যখন কার্যক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশাবলীর খুব কমই গুরুত্ব দেয়।

উদাহরন হিসাবে ১৯৭১ সালে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যণ্ত পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়লো - যখন নির্বিচারে মানুষ মারলো - মা বোনকে ধর্ষন করলো - বাড়ী ঘরে আগুন দিয়ে অনাসৃষ্টি করলো - তখন মজলুম কারা ছিলো? বাংলাদেশের সাধারন মানুষ তখন মজলুম ছিলো। ইসলামের বিধান হলো মজলুমের পক্ষে থাকা। জামায়ত-আর তার সহযোগী ছাত্র সংঘ (যা পরে শিবির নামে জন্ম নিয়েছে) জালেমের পক্ষ নিলো - যা সরাসরি ইসলামের শিক্ষা অবস্থান। তখন তাদের কাছে একট ভুখন্ড আর ক্ষমতা আল্লাহর বিধানের চেয়ে বেশী লোভনীয় হয়ে গিয়েছিলো। জামায়াত আর ছাত্র সংঘের নেতারা প্রকাশ্যে গনহত্যার সমর্থন করেছে - নিজেদের কর্মীদের দিয়ে রাজাকার আলবদর বাহিনী বানিয়ে গনহত্যা আর ধর্ষনে সহায়তা করেছে।

তারপর ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে - কিন্তু এরা ওদের এই জঘন্য কাজের জন্যে সামান্যতম লজ্জিতও হয়নি - ক্ষমা চাওয়াতো দুরের কথা। এরা সুযোগ মতো আবারো বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্নে বিভোর। এখন সময় এসেছে - তাদের হিসাব মেলানো। ইতিহাস বলে - ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর জামায়াত/ছাত্র সংঘের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীরা আবার সংঘঠিত হয়েছে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার লোভী রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুবাদে।

এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার বদৌলতে এরা স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদও পেয়েছে। তখনও কি এরা ইসলামের কোন বিধান নিয়ে ভেবেছে। ১৯৭১ সালের ছাত্র সংঘের নেতা মুজাহিদ (আলবদর বাহিনীরও নেতা) সমাজকল্যান মন্ত্রী হলেও তার মন্ত্রনালয়ের অধীনে যৌনপল্লীর ব্যবসা চলেছে যথারীতি বৈধ ভাবে - না যৌনপল্লীগুলো পূর্নবাসনের চেস্টা করেছে - না তা বন্ধ করার চেষ্ঠা করেছে। কিন্তু নিজের জন্যে উত্তরায় জমি বরান্ধ নিতে ভুল করেনি। আজ যারা এই নরপিচাশদের বাঁচানোর জন্যে মায়াকান্না করছেন তাদের জন্যে বলি - ১৯৭১ সালে গোলাম আজম ঘোষনা করেছিলো - "পাকিস্তান যদি না থাকে জামায়াত কর্মীরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বার্থকতা মনে করে না" (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ - দৈনিক সংগ্রাম) আর নিজামী আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেছিলো - "পাকিস্তান আল্লাহর ঘর" (১৭ নভেম্বর ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রাম) এখন আপনারই নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন - পাকিস্থানপ্রেমী এই গুটিকয়েক ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্যে যারা এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করছেন - জীবন যাপন করছেন - তারা আসলে কি নিজের সাথে প্রতারনা করছেন না? যারা এখন জামায়াতে নেতাদের বাঁচানোর জন্যে আহাজারি করছেন - তারা কি এবারও জিজ্ঞাসা করেছেন যে - জামায়াতের নেতারা ১৯৭১ সালে যে আদর্শের জন্যে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর দোসর হয়েছিলো - তা থেকে তারা কি সরে এসেছে? তারা কি তাদের ১৯৭১ এর ভুমিকার জন্যে লজ্জিত? এরা মোটেও লজ্জিত বা দু:খিত না।

বরঞ্চ এরা এখনও তাদের কর্মকে রাজনৈতিক অবস্থান হিসাবে বুঝানো চেষ্টা করছে। আর কর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্যে নানান ইস্যুতে বিতর্ক তৈরী করে। কিন্তু ১৯৭১ বাংলাদেশের অস্থিত্বের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ বিষয়ে সবার সুষ্পষ্ঠ অবস্থান থাকতে হবে। কেউ যদি চেষ্টা করে ১৯৭১ এর ইতিহাসকে এড়িয়ে - ইসলামের কথা বলে বাংলাদেশে টিকে থাকবে - ক্ষমতা গিয়ে নিজেদেরকে মহান বানাবে - তা হবে ভুল - কারন ইতিহাস লুকানোর যুগ শেষ - এখনকার তরুন প্রজন্ম সত্যটি জানতে চায় - এবং জামাত শিবিরের কর্মীদেকেও সত্যিটা জানতে হবে।

মিথ্যার বেড়াজালে নিজেদের লুকিয়ে রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করা মুলত নিজের সাথে প্রতারনাই করা হবে। হয় তাদের স্বাধীন বাংলাদেশকে মানতে হবে সঠিক ইতিহাস সহ - মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানিত স্থানে বসাতে হবে - রাজাকার-আলবদরদের নর্দমায় ফেলে দিতে হবে - নতুবা যেই দেশের জন্যে তাদের অগ্রজরা জালেমের পক্ষে ছিলো - সেই পাকিস্তানে চলে গেলে ভাল হবে। (সূত্র - মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভুমিকা - আলী আকবর টাবী - প্রকাশ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.