আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দি ভর্তি পরীক্ষা : আমার ভত্তা হবার পরীক্ষা

না চাইলেই পাই, না চাইতে চাই সকাল থেকে কেমন জানি স্মৃতি কাতর হয়ে পরেছি। সেই স্মৃতি সুখের নাকি দুখের বুঝতে পারছি না, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসলাম। ভণীতায় না গিয়ে মূল কথায় আসি। গত মাসের এই দিন সকালে আমি ঢাবির জন্য লড়েছি, আর এই সময়টাতে হা করে বসে আছি, পরের দিন বুয়েটের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগের দিন যে পড়া যায় না, এই প্রথম দেখলাম।

তাও একদম না পড়লে বিপদ হতে পারে, তাই সূত্র গুলো দেখছিলাম। যেটুকু সাহস সঞ্চয় করে ঢাবির পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম, সেটুকু যেন আর তখন আমার মধ্যে নেই। অবশ্য এর জন্য ঢাবির পরীক্ষার ও দায় আছে অনেক খানি। আমার সিট এক কলেজে পড়ছিল। আমার রুমে ছিলেন দুই অতি স্বাস্থ্যবতি ম্যাডাম, যারা আমাদের যথেষ্ট প্রয়োজনীয় ইন্সট্রাকশন দেন নি।

যার ফলে আমাদের রুমের অর্ধেক স্টুডেন্টই পরীক্ষার খাতায় আর উপস্থিতির খাতায় অনেক ভুলভাল করছিল (বলাই বাহুল্য, আমি সেই ভাগ্যবান (!!!) দের মধ্যে ছিলাম)। ফলে অনেক ধমক ধামক শুনছি। তাও ভালো, আমার ক্ষেত্রে এইটুকুর উপর দিয়েই গেছিল। দুই জন তো ডিসকোয়ালিফাইড ই হয়ে গেছিল। সেই মুহুর্তে আমার মাথায় শুধু একটা জিনিসই কাজ করছিল, আগামীকাল আরেকটা পরীক্ষা, দম হারালে চলবে না।

মানুষ এভাবে ঢাবি আর বুয়েটের পরীক্ষা পর পর ফেলাতে পারে???? এইচ এস সি পরীক্ষার পর একটু বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ পাই নি। শুরু হয়ে গেল কোচিং। কোচিং এ গিয়ে প্রথমেই যেটা টের পেলাম, ইন্টারের পুরা দেড়টা বছর শুধু ঘুমাইছিই। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া আমাদেরই পাঠ্য বইয়ের অনেক অনেক অংশ। এখন যখন চোখ মেললাম, দেখি, আমাকে কে রেসের ময়দানে নামায়ে দিছে, এখন শুধু দৌড় আর দৌড়।

পড়া যেন সমুদ্রের ঢেউ, একটার পর একটা ক্রমাগত এসে পরতেছে, থামার নাম গন্ধ পর্যন্ত নাই। আর কোচিং এ কি সব আজগুবি আজগুবি কোশ্চেন করে, অনেক প্রশ্নের উত্তর তো ভাইয়ারা পর্যন্ত দিতে পারতেন না। কনসেপ্ট বুক গুলো সমস্যায় বোঝাই। ভাইয়াদের দেখাইলে বলে, এগুলো কস্মিন কালেও আসবে না, বাদ দেও। তো যা আসবে না, তা ঢুকাইলেন ক্যান???? তার পর মোর জ্বালা আরো আছে।

আমাকে রাস্তায় পরিচিত কেউ দেখলেই জিজ্ঞাসা করত, কোথায় কোচিং করতেছ - প্রাইমেট না রেটিনা। আমি যখন জ্বিনা বলে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং এর কথা বলতাম, সবাই ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। হয়তো মনে মনে ভাবতো, মাইয়া টা কয় কি? যা বলতাম ঠিকই বলতাম। আমরা মফস্বলের গুটি কতক মেয়ে যে এভাবে প্রচলিত প্রথা ভেঙে অন্য দিকে এগিয়ে যেতে পেরেছি, এজন্য আমাদের গর্বই হয়। মেয়েরা কেন শুধু ডাক্তার ই হবে? এই যে আমার বুয়েটের চয়েস ফর্ম চলে এসেছে, তাও আমার এখনো শুনতে হয়, বেসরকারী মেডিকেলেও পড়তে পারতে! পরে কিন্তু পস্তাবে? পস্তাবো তখনই তো, যখন আমি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হেরে যাব! এটা এত সহজ না.... যাই হোক, কোচিং এর চাপই হোক, বাস জার্নিই হোক, আর পরীক্ষার ভীতিই হোক.... ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে যে একেবারে ভর্তা হয়ে গেছিলাম সেটা একদম ঠিক।

তবে, বুয়েটের ক্যাম্পাসে যখন ঢুকলাম, তখন খুব লাকি মনে হচ্ছিল। আমাদের সাথে অনেক ভালো ভালো ছেলে মেয়ে উটকো ভাবে পদার্থে বা রসায়নে এ+ মিস করে তো এটুকু আসতেই পারল না। তাদের থেকে তো আমি অনেক লাকি, তাই না? এখনো পড়া শুরু করি নাই, তবে honestly speaking, আমি কিন্তু বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকে ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়ে গেছিলাম.... এত্ত গাছপালা, এত্ত সুন্দর!!! তাই যখন MCQ exam টা একদমই মনের মতো হলো না, শুধুই মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আমার প্রথম আর শেষ আসা, আর এত সুন্দর জায়গাটাতে আসা হবে না। ভালোই লাগছে, আমার ভয়টা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেল। আমার নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা কামনা করে আমার এই অনর্থক বকবকানি দি এন্ড টানলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।