আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত পানি না দেয়ায় বাংলাদেশের তিস্তা সেচ প্রকল্প অকেজো হবার পথে : ব্যারেজ অবকাঠামো অচিরেই কঙ্কালে পরিণত হবার আশঙ্কা

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" ফটো : বাংলাদেশের ডালিয়ায় তিস্তা প্রকল্পের বর্তমান অবকাঠামো ভারতের সঙ্গে তিস্তা পানি চুক্তি না হবার ফলে বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্প ভেস্তে যাবার উপক্রম হয়েছে। আর পানি না পেলে তিস্তা প্রকল্পের অবকাঠামো অচিরেই কঙ্কালে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের আলোচনার বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিচুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ৩৫টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক সাধারণ কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন তাদের কৃষি নিয়ে। পানি চুক্তি না হওয়ায় তিস্তাসেচ প্রকল্পে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। খরস্রোতা তিস্তা সিকিমে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি দিয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে প্রবেশ করে ১২৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদীতে মিলিত হয়েছে।

তিস্তা পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ১৯৭৯ সালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৩৫টি উপজেলার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধার আওতায় আনার পূর্ণ পরিকল্পপনা করা হয়। কিন্তু তিস্তা ব্যারেজের ৯০ কিলোমিটার উজানে ভারতের গাজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে। সেখানে ভারতের সুবিধামতো পানি আটকে দেয়া হয়। এর ফলে বাংলাদেশের প্রকল্পটির উদ্দেশ বাধাগ্রস্ত হয়।

এই পরিস্থিতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ৬৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালু করে। পরবর্তীকালে ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। কিন্তু ক'বছরের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচের অভাবে অনাবাদী পড়ে থাকে। গত বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে তিস্তার পানিচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রি ডা. দিপুমনির দেয়া ‘নিশ্চিত ঘোষণা'র ফলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরেও এর কোন সুরাহা না হওয়ায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের আশার তরী ডুবে গিয়ে মন ভেঙে যায়। বাংলাদেশ এবং ভারতের পক্ষে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পরেও পানিচুক্তি না হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এই এলাকার বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিঃস্ব মানুষগুলো। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা এবং জলঢাকা উপজেলার হাজার হাজার কৃষক পানি চুক্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিস্তার পানিচুক্তি না হলে সেচ প্রকল্পটি ভেস্তে যাবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই অঞ্চলের কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, তিস্তায় প্রয়োজনমতো পানি আসলে দেশের উত্তরাঞ্চলের এক বৃহৎ অংশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হতো। একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হতো, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার আশপাশের নদীগুলোতেও সার্বক্ষণিক পানি পেলে কৃষকরা খুব সহজেই ও কম খরচে সেচ সুবিধা পেতো। ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়ে যেত অনেক বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চুক্তি না হলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা ব্যারেজ হয়ে থাকবে জীবিত লাশের মতো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.