আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে এই মুখোশধারী বীরসেনানী?

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা ইসলামী ইতিহাসের সূচনালগ্নে হিজরী প্রথম শতকে বিশ্বময় চারিদিকের মুসলমানদের তুমুল বিজয়াভিযানে যে কজন বীর সেনাপতি অনন্য বীরত্ব ও অনস্বীকার্য কৃতিত্ব দেখিয়ে আজ পর্যন্ত স্মরণীয় অমর হয়ে আছেন- মাসলামা ইবনে আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম। তাকে সেকালের খালিদ বিন ওয়ালিদ বলা হতো। একাধারে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বময় ইসলামের বিজয়কেতন উড়িয়েছেন। তার হাতে বিজিত অঞ্চল ও শহর এবং দূর্গের সংখ্যা অসংখ্য। আরব সীমানা ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন রোম সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

সেখানকার কোনো এক যুদ্ধে শত্র“পক্ষের বিশাল দূর্গ অবরোধ করে রেখেছেন। তিনি বারবার তার বাহিনী থেকে কেউ একজন যেন গিয়ে সাহস করে শত্র“প্রাচীর ডিঙিয়ে দূর্গের ফটক খুলে দেয়- সেজন্য উজ্জীবিত করছিলেন। কিন্তু দূর্গের দেয়াল উচ্চতা, প্রহরীদের কড়া পাহারা এবং তাদের সশস্ত্র ভয়াবহতা মুসলিম বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ভীত এবং আড়ষ্ট করে রেখেছিল। কেউ এগিয়ে যাচ্ছিলো না, যেতে সাহস পাচ্ছিলো না। হঠাৎ সামনের সারির এক প্রান্তে শোরগোল শোনা গেল।

কেউ একজন এগিয়ে আসছে। হাত তুলে সে সেনাপতির কাছে নিজের জন্য অনুমতি চাইছে। আশেপাশে সবার ভেতর তখন ফিসফিস শুরু হয়েছে- বাপরে বাপ! কে এই বীরবেটা! এমন শক্ত দূর্গের দিকে পা বাড়াচ্ছে! বাপকা বেটা! কিন্তু সবাই অবাক হতে গিয়ে হতাশ হলো। কারণ লোকটির চেহারা কাপড়ে আবৃত। তার মুখাবয়ব দেখা যাচ্ছে না।

মুখোশে মুখ আড়াল করে রাখা লোকটি ধীর কদমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপর। চোখের পলক। খুব দ্রুত সুকৌশলে তিনি কোনো এক ফাঁক-ফোকড় দিয়ে জানবাজি রেখে দূর্গের প্রাচীরে উঠে পড়লেন। শত্র“বাহিনীর উদাসীনতাকে কাজে লাগিয়ে হুট করে ভেতরে চলে গেলেন।

ঝড়ের বেগে দৌড়ে গিয়ে মূল ফটকের কড়া ফেলে দিলেন। তারপর সজোরে আল্লাহু আকবার বলে ধ্বনি তুললেন চারপাশ কাঁপিয়ে। তার ধ্বনি শুনে বাইরে তৈরী হয়ে থাকা মুসলিম বাহিনী হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো দূর্গের ভেতর সর্বত্র। বিজয় তখন তাদের পদতলে সমর্পিত। যুদ্ধাভিযান এবং দূর্গ বিজয় শেষ হল।

বাহিনীপ্রধান মাসলামা ঘোষণা দিয়ে জানতে চাচ্ছেন- ঐ মুখোশধারী লোকটি কোথায়! সামনে আসুন! সমবেন সৈন্যরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কিন্তু কোথাও কেউ উঠে দাঁড়াচ্ছে না। তবে লোকটি গেলো কই? মাসলামা একটু পরপর বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন। কিন্তু মুখোশধারী দাঁড়াচ্ছে না। সবার অগোচরে এক কোণায় সে আড়াল হয়ে বসে আছে।

শেষ পর্যন্ত মাসলামা জানিয়ে দিলেন, ঠিক আছে। মুখোশধারী লোকটি এখানে থেকে থাকলে সে যেন আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে। এটা আমার নির্দেশ। কিছুক্ষণ পর। সেনাপতি মাসলামার তাঁবুর কাছে একজন মুখোশধারী।

তিনি ভেতরে যাওয়ার অনুমতি চাইছেন। প্রহরীরা তাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমিই কি সেই মুখোশধারী? না, আমি নই। তবে তার সম্পর্কে আমি জানাতে পারবো। ’ মুখোশধারী আগত লোকটির নির্লিপ্ত উত্তর। মাসলামা অনুমতি দিলেন।

তিনি ভেতরে গেলেন। মাসলামা মূল মুখোশধারীর পরিচয় জানতে চাইলেন- যে এমন সাহসী হয়ে দূর্গের ভেতর গিয়েছিল। যার সাহসিকতায় আজ এমন বিজয় হলো। আগন্তুক মুখোশধারী আরয করলো, মহামান্য আমীর! তার পরিচয় জানার আগে আপনাকে তিনটি ওয়াদা করতে হবে। মাসলামা নড়েচড়ে বসলেন।

এবার কি সত্যিই তার নাম জানা যাবে? মাসলামা তার সবগুলো ওয়াদা পালনের প্রতিশ্র“তি দিয়ে দিলেন। এবার মুখোশধারী সৈনিক ব্যক্তিটি তিনটি ওয়াদার কথা জানাচ্ছে- ঐ ব্যক্তির নাম খলীফার রেকর্ডে রাখা যাবে না। তাকে কোনো বখশিশ দেয়া যাবে না। তার সম্পর্কে নাম-ধাম খোঁজ নেয়া যাবে না। মাসলামা এ সবগুলো ওয়াদা আবারও মেনে নিলেন।

উৎসুক হয়ে তার আগ্রহী জিজ্ঞাসা, আহা! হলো তো! এবার বলুন তো! তিনি কে? মুখোশধারী সৈনিকটির মাথা আরও নীচু হয়ে এলো। গলা আরও ক্ষীণ হলো। তারপর তার স্বীকারোক্তি প্রকাশ পেলো- মুহতারাম আমীর! আমি সেই লোক। মাসলামা অবাক। এ কি সেই সৈনিক- যার সাথে এতক্ষণ তিনি কথা বলছেন।

তিনি আরও কাছাকাছি হয়ে বসতে চাইলেন। কিন্তু তার আগেই মুখোশধারীর মুখে সালাম। তিনি চলে গেলেন। মাসলামা তার এমন একনিষ্ঠ ইখলাস দেখে ততক্ষণে হতবাক। এ লোকটির এমন বিরল কান্ড মাসলামা তার বাকি জীবনে ভুলেননি।

ভুলে থাকতে পারেননি। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে মাসলামার দুআয় অংশ হয়ে গেলো এ মুখোশধারী। মাসলামা তার দুআয় পরম শক্তিমান আল্লাহর কাছে আরয জানাতেন, ‘হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন তুমি আমাকে এ মুখোশধারীর সাথে রেখো। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।