আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Jaago-র ভলান্টিয়ারদের আচরণে আমরা মর্মাহত এবং শঙ্কিত।

আমি...... আমরা গত বুধবার (৯ নভেম্বর) 'জাগো ও তার ভলান্টিয়ারদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা' এই শিরোনামে একটি নোট প্রকাশ করি । সাম্প্রতিক সময়ে Jaago নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে তার উপর আমাদের মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করি। লেখাটি প্রকাশ করার পর আমরা আশা করেছিলাম যে, Jaago কিংবা তার ভলান্টিয়াররা সুন্দর ভাষায় সমালোচনার জবাব দিবে । ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সত্যি সমাজ বা দেশের জন্য কাজ কবে। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো পথে হাটছে।

তারা কেবল লেখককেই ব্যক্তিগত আক্রমন করেনি পেইজের ফ্যানদেরও ব্যাক্তিগত আক্রমন করেছে । তাদের অধিকাংশ মন্তব্য ছিল অত্যন্ত অশালীন ও অমার্জিত। আমরা বিভিন্ন পেইজে ঘুরে দেখলাম, যেখানেই তাদের সমালোচনা করা হয়েছে, সেখানে তারা সমালোচনাকারীদের গালা-গালি করেছে । এমনকি একটি পেইজে দেখলাম যে, সমালোচনাকারীকে inbox করে গালি দেওয়া হচ্ছে বলে একজন অভিযোগ করেছে। পথশিশুদের জন্য কাজ করে - এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ভলান্টিয়ারদের এমন আচরণ খুবই বেমানান।

Jaago-র ভলান্টিয়ারদের প্রত্যেকটা মন্তব্যে একই কথা ঘুরে ফিরে আসে। হয়ত আমাদের জবাব দিতে কিছুটা সময় দেরি হয়েছে, তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আমাদের প্রথম নোটটিতে প্রত্যেকের মন্তব্যের জবাব দিতে। কিন্তু তাদের কুরুচিপূর্ণ কথাগুলোর জবাব দিতে পারছিলাম না। আমাদের প্রথম লেখাটি পড়লে বুঝতে পারবেন যে, আমরা স্পষ্টভাবেই বলেছি , 'Jaago-র কে কি পোষাক পড়লো ? সীসা বা গাজা কোনটা খেল ?' - তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তরুণেরা যেন কারো নির্দেশে ভুলপথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। 'Jaago-র জন্মের ইতিহাস' যা ছিল তার লক্ষ্য ত়া নাও থাকতে পারে।

আমরা আরো আশংকা প্রকাশ করেছিলাম যে , তরুনরা 'ব্রেইন ওয়াশড' হয়ে যদি অন্ধভাবে কোনো কিছু সমর্থন করে তবে তা জাতির জন্য শংকা। আপনারা যদি আমাদের আগের লেখাটি না পড়ে থাকেন তবে আজকের লেখাটি ধরতে পারবেন না। তাই Jaago-র কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের বিস্তারিত মতামত জানতে আগে প্রথম লেখাটি পড়তে অনুরোধ করছি । 'জাগো ও তার ভলান্টিয়ারদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা' - এই শিরোনামে নোটটি পড়ার জন্য এই লিঙ্কে যান। আমাদের প্রথম লেখায় Jaago-র ভলান্টিয়ারদের মন্তব্যগুলোর সার অনেকটা এই রকম - 'যারা Jaago-র সমালোচনা করে তাদের কাজ কাম নাই।

তারা নিজেরা কিছু করে না। বাংলাদেশে একমাত্র Jaago পথ শিশুদের জন্য কিছু করছে', - ভলান্টিয়ারদের মন্তব্যে এমনটাই মনে হবে আপনাদের। একজন ভলান্টিয়ার যিনি Jaago-র একজন কন্ট্রিবিউটর ও বিদেশ থেকেও জাগোর ফান্ড সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন, তিনি বলছেন যে , 'Jaago-র সমালোচনাকারীরা লেখাপড়া জানে না , Jaago-র সমালোচনাকারীরা 'narrow minded' , 'গরু ছাগল' , 'চামার', 'useless crap' , 'sick mentality'. এই রকম আরো অকত্থ ভাষায় অন্য ভলান্টিয়াররাও গালি দিয়ে গেছে যা আমরা বলতে পারছি না। অনেকে সমালোচনাকারীদের বলছেন যে , 'করভীর পায়ের কেনি আঙ্গুলের সমান যোগ্যতাও নাই। কোনো দিন হবেও না।

' আরো বলেছেন, 'পারলে করভীর মত কিছু একটা করে দেখাতে। ' আসলে জানার গন্ডি সীমাবদ্ধ হলেই কেবল মানুষ এমন মন্তব্য করতে পারে। আচ্ছা , তারা কেন ব্যক্তিগত আক্রমন করছে তা বুঝতে পারলাম না। আমি help করেছি কিনা তা কি আমি ছবি পোস্ট করে প্রমান করতে হবে ? তবে আমি দুক্ষিত , আমি ৬০ হাজার টাকা খরচ করে DSLR কিনে, মানুষকে ২০ টাকা সাহায্য করে, তার ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করি না। আমার অবস্থান থেকে আমর সাধ্য মত আমি গরিবদের জন্য কাজ করছি।

Jaago US Embassy-র support পায়, এই কথার জবাবে অনেকে নিজের দেশকেও নিচু করে বলেছেন যে, 'বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে ভিক্ষা করে চলে। ' Jaago কেবল একটি প্লাটফর্ম, যেটার মাধ্যমে আপনি পথশিশুদের সাহায্য করতে পারবেন। অথচ Jaago-কে সাপোর্ট দিতে গিয়ে নিজের দেশকে ছোট করায়, Jaago-র ভলান্টিয়াররা যে কি পরিমান 'ব্রেইন ওয়াশড' হয়েছে তা প্রকাশ পেল। Jaago-র যে ভলান্টিয়াররা এই মন্তব্যগুলো করছেন, আপনারা আর কিছু না করেন, অন্তত শিশুদের জন্য কিছু করতে যাবেন না। তাতে অন্তত শিশুরা খারাপ গালি শিখতে পারবে না।

আমাদের গত লেখাতে বলেছিলাম যে, 'US Embassy আর কিছু না পারুক, অন্তত Jaago এর মাধ্যমে এই ৭০০০ তরুণকে ১ দিনের জন্য কাজের সুযোগ দিয়ে তার এক শ্রেণীর 'অনুগত তরুণ সমাজ' তৈরি করে রাখছে। ' দেখা যাচ্ছে, আশংকাটি ভুল নয়। ২০০৭ এ Jaago শুরু হবার আগেও অনেকে পথশিশুদের জন্য কাজ করেছে, এমনকি Jaago না করেও অনেক অনেক মানুষ পথশিশুদের জন্য কাজ করছে। আমি এমন একজন মানুষকে চিনি , যিনি একটি সরকারী প্রাথমিক স্কুলের পিয়ন এবং সেই স্কুলে কোনো লাইব্রেরি না থাকায় , তিনি নিজের বাসায় বাচ্চাদের জন্য লাইব্রেরি খুলেছেন এবং শিশুদের বিনামূল্যে বই পরার সুযোগ করে দিয়েছেন । এই ঘটনা টিভি বা পত্রিকাতে পাবেন না, কারণ সবাই লাখ টাকা খরচ করে সার্টিফিকেট দেবার প্রোগ্রাম করে না।

এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে যারা 'মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট' নেন নি। 'সাদা মনের মানুষ' নামের একটা অনুষ্ঠান হয়ছিল, যারা সেটা দেখেছেন মনে করে দেখুন, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অনেক মানুষ ছড়িয়ে রয়েছে নিজের বিবেক থেকে নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না। মানুষের জন্য কাজ করেই তারা প্রশান্তি পান। কিন্তু Jaago-র ভলান্টিয়ারদের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম।

Income Tax Day 2011 এ Jaago একটা Event করে, সেই Event এর Wall এ গিয়ে দেখলাম, যারা সেই Event এ অংশ নিয়েছিল তারা সার্টিফিকেট পাবার জন্য রীতিমত হন্যে হয়ে ঘুরছে। 'কখন সার্টিফিকেট দিবে ?' এই প্রশ্ন তাদের পুরো Wall জুড়ে। কিছু Screen Shot দেখুন - এই রকম আরো অনেক অনেক পোস্ট দেখতে পারবেন যে তারা সার্টিফিকেট চাচ্ছে । এটা কি এমন কোনো সার্টিফিকেট যেটা না পেলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে ? বা পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে ? তবে কেন এত উত্কন্ঠা ? তাদের সার্টিফিকেট দেবার অনুষ্ঠানে কোনো লাখ টাকা ব্যয় হয় তা আপনার ধারণা আছে ? তাদের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখুন - Jaago-র বিশাল বাজেটের প্রোগ্রামের আয়োজনের পুরো album দেখতে পাবেন এই লিঙ্কে । আচ্ছা , এই টাকা কি দরিদ্র শিশুদের জন্য খরচ করা যেত না ? হ্যা যেত , কিন্তু Jaago ত়া না করে বিশাল অঙ্কের একটা টাকা দিয়ে কেন সিলিব্রেসন করছে ? কারণ পরদিন ত়া পত্রিকায় আসবে , মূল কারণ - পাবলিসিটি।

হ্যা , এটা ঠিক সমাজসেবা করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে হিরোইজম অথবা লোক দেখানো মনোভাব কাজ করে কিন্তু এরপরও তারা কিছু একটা করতে চায়। কিন্তু Jaago তরুনদের সমস্যা সমাধানের পথ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে এবং তরুনদের বিবেককে মিথ্যা প্রশান্তি দিচ্ছে যে তারা সমাজের জন্য কিছু একটা করেছে। বাস্তবতা হলো, সার্টিফিকেটের লোভে বছরে এক দিন রাস্তায় নামা আর সমাজকে পরিবর্তন করার চেতনা এক নয়। কিন্তু Jaago তরুনদের মনে একধরনের মিথ্যা প্রশান্তিতে পরিপূর্ন করছে যে, তারা মনে করছে তারা অনেক কিছু করে ফেলেছে। কয়েকটা ফুল বিক্রি করা তরুনদের শান্ত করে দিয়েছে , তাদের সমস্যার মূল থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

আর এইটা নিয়েই আমরা প্রথম লেখাতে আশংকা প্রকাশ করেছিলাম, যা জাগোর ভলান্টিয়ারদের মন্তব্যে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গালা-গালির পাশাপাশি বিভিন্ন পেইজ এডমিনদের হুমকি দিচ্ছে Jaago-র ভলান্টিয়াররা, যাতে তারা Jaago-র বিরুদ্ধে না লিখে। 'আমারব্লগ'-এ একজন এই অভিযোগও করেছে যে, ১ লাখ টাকায় একজন ব্লগারের মুখ বন্ধ করেছে Jaago এবং ব্লগারকে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে জয়েন করার অফারও দিয়েছে। বিস্তারিত এই লিঙ্কে গিয়ে পড়তে পারবেন। Jaago-র ভলান্টিয়ারদের এমন আচরণে আমরা শঙ্কিত ও মর্মাহত ।

এমন ব্যবহারকারীরা অন্তত সমাজসেবার করার যোগ্যতা রাখে না। সার্টিফিকেটের লোভে, পপুলারিটির লোভে - লোক দেখানো কাজ করা, আর বাস্তবেই ভালো কিছু করার মাঝে বিস্তর পার্থক্য। সূত্রঃ " অপ্রকাশিত " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।