আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা তুমি বাসায় চলো

ভালবাসি স্বপ্ন দেখতে, ভালবাসি স্বপ্নলিখতে। আর সারাটাক্ষণ মেতে থাকি স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্ন নিয়েই আমার সব। স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাচ্ছি। তাই স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখাই।

সুহা ঘুম থেকে উঠে দেখে মা বাসায় নেই। ডাইনিং টেবিলে তার জন্য নাস্তা দিয়ে রাখা আছে। রান্নাঘরে মিনা কাজ করছে। উফ! মা-টা যে কী না! এই তো গতকাল সুহাকে বলল, কাল তোমার জন্মদিন, আমি কাল কোত্থাও বেরুব না। আমার লক্ষী মামণিটার সাথে বাসায় থাকব।

অথচ দেখ, ঘুম থেকে উঠেই সুহা দেখে মা বাসায় নেই। সুহা ভেবে নিল, মা যতক্ষণ না আসছে, সে নাস্তা খাবে না। খাবে না, খাবে না, খাবে না। হুম। এটাই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

সুহা বসে আঁকাআঁকি করতে লাগল। ওদের বাসার কাজের মেয়ে মিনা এসে ওকে দেখে চিৎকার করে উঠল। -সুহা আপু!!! টেবিলে দেখি সব খাবার পড়ে আছে। তুমি কিছু খাওনি? কী আশ্চর্য! এবার শরীর খারাপ করবে তো। আমি খালাম্মাকে কী বলব তখন? -মাকে কিচ্ছু বলতে হবে না।

মা আমাকে নিয়ে এক ফোঁটাও ভাবে? ভাবে না তো। কাল তো তোর সামনেই আমাকে বলল যে আজকে কোথাও যাবে না। আর দেখ, সকালে উঠেই দেখি মা নেই বাসায়। কেমন লাগে? মা না আসা পর্যন্ত আমি কিচ্ছুটি খাব না। মুখ ভার করে বলল সুহা।

-এই দেখো! ও কী কথা সুহা আপু? খালাম্মা তো তোমার জন্য জন্মদিনের উপহার কিনতে গিয়েছে। তা বলে এত রাগ করলে হয়? আর জানো তো, খালাম্মার এক বন্ধু আছে না, ওই যে বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজায় যার অফিস, আজকে খালাম্মা আবার তার অফিসেও যাবে। তোমার জন্মদিন উনাকে আসতে বলতে যাবে। উপহার কিনতে গেছে মা? শুনেই মনটা ভালো হয় গেল সুহার। যাই হোক, সুহা কিছু খাবে না।

মা না আসা পর্যন্ত সত্যিই ও কিছু খাবে না। সুহা ছবি আঁকায় মনোনিবেশ করল। একটা মেয়ে, তার দুইপাশে মা আর বাবা। সামনে একটা কেক। পিছনে ব্যানারে লেখা, হ্যাপি বার্থডে টু সুহা।

সুহা অ্যারো চিহ্ন দিয়ে মেয়েটার পাশে নিজের নাম লিখল, মা আর বাবাটার পাশে লিখল আমার মা আর আমার বাবা। এটা আজকে বিকেলের ছবি। । সে অগ্রিম এঁকে ফেলেছে। আজকে বিকেলে সে তার মা-বাবার সাথে এভাবে কেক কাটবে।

সুহা খুব আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে কখন তার মা-বাবা ফিরবে। মা কী উপহারই বা দেবে তাকে? খুব জানতে ইচ্ছে হয় সুহার। ঘড়িতে বেলা সাড়ে ন’টা বাজে। কলিংবেলের শব্দ শুনে ছুটে যায় সুহা। তার বাবা এসেছে।

কী ব্যাপার! বাবার তো আসতে রাত হয়। আজ একটু আগে আগে বিকেলে আসার কথা, কিন্তু সকালেই ফিরল কেন? সুহা দেখল তার বাবার চেহারায় গভীর উদ্বেগের ছাপ। তিনি ওকে বললেন দ্রুত তৈরি হয়ে নিতে। কোথায় যাবেন তা কিছু বললেন না। সুহা চটপট তৈরি হয়ে গেল।

বাবা রিক্সায় করে ওকে নিয়ে গেলেন বাস স্ট্যান্ডে। এখানে অনেক মানুষ। এত্ত মানুষ কেন? ব্যাপারটা কী? বাসস্ট্যান্ডটা ব্যস্ত থাকে সবসময়, কিন্তু এত লোক তো হয় না! বাবাকে জিজ্ঞেস করতেই বাবা বললেন এখানে নাকী একটা বিল্ডিং ধ্বসে পড়েছে। সেটার ভেতরেই নাকী সুহার মা ছিল। আরো অনেক অনেক মানুষ ছিল।

বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন বাবা। কিন্তু সুহা তখনো পুরো বিষয়টা বুঝে ওঠেনি। ৮ বছরের ফুটফুটে মেয়েটা জানে না ভবন ধ্বসে পড়া মানে কী, আর তাতে কিইবা হয়। বাবা ওকে নিয়ে অনেক ছোটাছুটি করলেন। অনেক মানুষ একটা বিল্ডিং ফুটো করে ঢুকছে, সেখান থেকে অনেক মানুষকে বের করে আনা হচ্ছে।

তাদের কারো গা রক্তে মাখামাখি, কেউবা কোন কথা বলছে না, চোখও মেলছে না। অনেকে কাঁদছে। অনেক্ষণ পর সুহা দেখল কতগুলো মানুষ তার মাকে ওখেন থেকে বের করে এনেছে। বাবা লোকগুলোর দিকে ছুটে গেলেন। বললেন, এটা আমার স্ত্রী।

লোকগুলো মাকে একটা বিছানার মত জিনিসে শুইয়ে দিয়ে বলল, আহারে! মেয়েটা আপনার তাই না? বলে সুহাকে খুব আদর-টাদর করল আর স্বান্তনা দিল। কারণটা কী সুহা বুঝতে পারল না। কেউ কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। সুহা তাদের ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল। সে আগে তার মায়ের কাছে যাবে।

মায়ের কাছ থেকে তার জন্মদিনের উপহার নিবে আর বলবে যে সে মায়ের উপর রাগ করে ছিল। বাবা সুহাকে মায়ের কাছে নিয়ে এলেন। সুহা দেখে তার মা চুপচাপ শুয়ে আছে। কোন কথা বলছে না। মায়ের গায়ে রক্ত।

সে যত্ন করে জামা দিয়ে রক্ত মুছে দিতে আগল। ডাকল, মা, মা? মা সাড়া দিল না। মা কী রাগ করে আছে নাকী? নাকী সুহাকে চমকে দিতে চাচ্ছে? সুহা তার মায়ের হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতে গিয়ে দেখল মা শক্ত করে হাতে একটা প্যাকেট ধরে আছেন। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে খুলতেই সুহা দেখে তার মধ্যে একটা বার্বি ডল। মা নিশ্চই তার জন্য কিনেছেন।

সে খুশিতে গদগদ হয়ে পুতুলটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। মায়ের নিথর শরীরের উপর ঝাঁপ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, থ্যাঙ্ক ইউ মা, আমার পুতুলটা অনেক পছন্দ হয়েছে। এখন তুমি ওঠো তো, বাসায় চলো। আমি তো তোমার সঙ্গে খাব বলে কিচ্ছু খাইনি। মা কোন উত্তর দেন না।

সুহা আবার ডাকে, মা, মা? নাহ! মায়ের কোন সাড়াশব্দ নেই। শুধু আশেপাশের মানুষগুলো হুহু করে কেঁদে ওঠে। কেন যে কাঁদে সুহা বুঝতে পারে না। সে ডাকতেই থাকে, মা, মা, বাসায় যাবে না? ওঠো না মা, বাসায় যাব। আমার খুব খিদে পেয়েছে তো... মা, ও মা, মা গো? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।