আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতি আনকমন নামের সুফল!!

জীবন হচ্ছে সেই জলের মত, যে জলে আগুন জ্বলে! কথায় আছে--নামে কি আসে যায়?! এই কথাটা অনেকাংশে সত্য হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নয়!! আমার নাম নিয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কাহিনী বলব আজকে আপনাদের। আমার মায়ের অনেক সখ ছিল তার ছেলে-মেয়ের নাম হবে আনকমন টাইপের। তো আমার জন্মের পর আমার ডাকনাম কি হবে- এটা নিয়ে আমার পুরো পরিবারেই হলস্থুল লেগে গেল। পরিবারের প্রথম ছেলে সন্তান বলে কথা! সবাই নিজ নিজ পছন্দ মত নামে আমাকে ডাকা শুরু করল। কিন্তু আমার মায়ের সাফ কথা-—ডাকনাম হতে হবে একদম আনকমন এবং সেই সাথে সুন্দর! তো বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও আমার ডাকনাম আর রাখা হয় না! শেষে মা আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্নীয় এক সাংবাদিকের (যিনি এখন একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক) আশ্রয় নেন।

তিনি সব শুনে বসে যান আমার জন্য একটি “আনকমন এবং সেই সাথে সুন্দর” নাম সার্চ দা খোঁজ করার কাজে! অবশেষে ৩-৪ দিন পর আমার জন্য একটি অসাধারন নাম খুঁজে বের করার কাজে সফল হন তিনি! আমার বাবা দুইটি খাশি জবাই দিয়ে আমার নাম রাখেন তূর্য!! অতি আনকমন একটি নাম! আমার মা অনেক খুশি! তার মনের ইচ্ছা যে পূরন হয়েছে!! আমার কত আত্নীয় যে এই আনকমন নাম উচ্চারন করতে গিয়ে দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন তার হিসাব দেয়া মুশকিল! অনেকের কাছে আবার আমার মা-বাবাকে “ছেলের হিন্দুয়ানী নাম কেন রাখা হল”-এই প্রশ্নের জবাব দিতে হত!! ছোটবেলায় বেশ অসুস্থ থাকতাম মাঝে মাঝে, অনেকে বলত এমন “হিন্দুয়ানী” নামের জন্যই নাকি আমার এই অবস্থা!! অবশ্য আমার মা-বাবা এসবে কান দেননি। এই ফাঁকে বলে নেই যে বাংলা একাডেমীর ডিকশনারী অনুযায়ী “তূর্য” শব্দটির অর্থ রণসিংগা, প্রাচীন ভারতের যুদ্ধে ব্যবহ্রত বাশি। এই আনকমন নামের সুখ আমার কপালে বেশিদিন সইলো না!! আমাদের পাশের বিল্ডিং-এ যে নতুন ভাড়াটিয়া এল তাদের ছেলের নামও তূর্য!! আমার মা যথেস্টই হতাশ হলেন!! কিন্তু কি আর করা! এলাকায় ২টি তূর্য এসে গেল......... মা ভয়ানক হতাশ সেদিন হলেন যেদিন শুনলেন যে আমাদের পাশের বাসার নতুন ভাড়াটিয়ার ছেলের নামও সেই একই!! এতদিন নাহয় পাশাপাশি বিল্ডিং-এর দুই ছেলের নাম ছিল ছিল এক, এখন তো পাশাপাশি দুই ফ্লাটের ছেলের নামই এক!! বুঝুন অবস্থা!! বেশি সমস্যার শুরু হল তখন থেকেই। সেইসময়ে সবার বাসায় ফোন থাকত না, আমাদের এবং আমাদের পাশের ফ্লাটেও ফোন ছিল না। আমাদের ফোন আসত আমাদের বাড়িয়ালার বাসায়।

তো কেউ যখন বলত “তূর্যর আম্মাকে ডেকে দিন” এবং ফোন যদি ধরত বাড়িয়ালার কাজের মেয়ে তাহলেই হয়েছে!! কোনবারই সেই মেয়েটি সঠিক “তূর্য”র আম্মাকে ডেকে দিতে পারেনি!! এমনও হয়েছে অনেক্ষন কথা বলার পরেও আমার আম্মা বুঝতে পারেননি এটি তার ফোন নয়, এটি তূর্য নাম্বার-২ এর আম্মার ফোন!! যাক, ভর্তি হলাম স্কুলে। প্রথমদিন ক্লাস করে এসে সবাই খুব এক্সাইটেড থাকে। আর আমি হলাম বিমর্ষ!! কারন ক্লাসে যে আমার সাথে আরো ২জন তূর্যের দেখা হয়েছে!! একই ক্লাসে তিন তিনজন তূর্য!! কপাল আর কাকে বলে!! স্কুলে পুরো ১০টা বছর আমাকে নাম সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এতো বেশি ঝামেলা হয়েছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব বুঝতে পারছি না!! কতবার যে অন্য তূর্যর দোষে আমি মার খেয়েছি বা আমার দোষে অন্যরা মার খেয়েছে এর কোন ইয়াত্তা নেই!! একবার রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার আগেই রটে গেল তূর্য ফার্স্ট হয়েছে!! আমার বন্ধুরা তো আমার পকেট ফাঁকা করে টিফিন খেয়ে নিল। পরে দেখা গেল আমি না, ফার্স্ট হয়েছে অন্য তূর্য!! মাথার চুল ছিড়ব নাকি অন্যকিছু ছিড়ব বুঝছিলাম না!! স্কুল লাইফ শেষ করলাম অনেক কস্টে...... কলেজে ভর্তি হয়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে আমার সেকশনের পূরো ১২০ জন স্টুডেন্টের মধ্যে আমি একাই তূর্য!!! আমার খুশি দেখে কে!! তবে বরাবরের মত আমার এই সুখ বেশিদিন সইলো না!! এক স্যারের কাছে কেমেস্ট্রি পড়তাম প্রাইভেট।

ওনার ওখানে আরেক তূর্য জুটে গেল!! তবে এটা আমার গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল, অতি আনকমন নামের সুফল!! তো আমি ঐ স্যারের ব্যাচের একটি অতি রুপবতী মেয়ের প্রেমে পড়লাম!! সাহস করে একদিন মেয়েটিকে একটি চিঠিতে মনের কথা লিখে চালাকী করে ওর বইটা নিয়ে ওটার মাঝে গুজে দিলাম। এমনভাবে দিলাম যাতে ও এখন টের না পেলেও বাসায় গিয়ে দেখতে পায়। এবং এখানেই জীবনের অন্যতম বড় ভুল করলাম!! ( কয়েকদিন পরে সেই তূর্য নাম্বার– ২ আমাকে হঠাৎ করে ডেকে নিয়ে বলে, --দোস্ত আমার তো লটারী লাগছে!! --কিভাবে? --তুই কি সাথীকে কোন চিঠি দিছিলি? --তোকে কে বল্লো??!! অবাক হলাম আমি!! --আরে সাথী তো তোর চিঠি পড়ে ভাবছে আমি ওইটা লিখছি। আমাকে ও কালকে রিপ্লাই দিছে। এই দেখ।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল!! সাথী লিখেছে যে তোমার চিঠিটা পড়ে নিজেকে আর বেধে রাখতে পারলাম না!! আই লাভ ইউ টু! (( --এটা তো ঠিক না। চিঠি তো আমি লিখছি। তুই তো আর লিখিস নাই। আমি এখনি সাথীকে গিয়ে সব জানায় দিব। --প্লিজ দোস্ত আল্লাহর কসম লাগে এমন করিস না!!! আমি আর তুই না মিতা!! প্লিজ সাথীকে আমার জন্য সেক্রিফাইস কর দোস্ত!! কি আর বলব! করে দিলাম সেক্রিফাইস! অতি আনকমন নামের সুফল!! এই জীবনে কত তূর্যের সাথে যে দেখা হল তা গুনে শেষ করা যাবে না!!! বাংলাদেশের মা-বাবারা যে সন্তানের জন্য খালি আনকমন নেমই খোঁজেন, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছি আমি নিজে ও অন্য সকল তূর্যরা!! -------------------------------------------------- বাই দা ওয়ে, যাওয়ার আগে আরেকটা নিউজ দেই।

পরে ঐ তূর্য নাম্বার -২ আর সাথীর ব্রেকআপ হয়ে যায়। সাথী নাকি ওকে বলেছিল, "চিঠি পড়ে তোমাকে যতটা রোমান্টিক ভেবেছিলাম আসলে তুমি ততটা রোমান্টিক না!!"  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।