আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাছ কিনতে গেছিলাম বি সি এস কম্পিউটার সিটিতে ।সাথে

ব-দ্বীপ মানে বদ্‌ দের দ্বীপ না কিন্তু। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ভুল বোঝা স্বাভাবিক। একটা মাছ কিনতে খুব মনচাইতাছে। খুব দরকারো অবশ্য।

তাই সরাসরি গেছিলাম দেশের সবচেয়ে বড় আর তাজা মাছ, মুরগী গরুর মাংসের বাজার বিসিএস কম্পিউটার আড়ত, আগারগাও । দোকানের নাম ড্যাফোডিল মৎস্য ভান্ডার। কইলাম ভাই মাছ কিনতাম চাই। বাজেট ১৫ হাজার টাকা। কইল খাড়ান।

স্যার আইতাছে। স্যার আইলো । হেতেরে কইলাম মাছ কিনমু। বিভিন্ন নদীর মাছ দেখান। স্যারে কইল সনি নদীর মাছ ছাড়া আর কোন মাছ এই ভান্ডারে নাই ।

আমি কইলাম দেখান কয়েকটা। স্যার দেখাইল “ ওইযে কাইল্লা মাছটা দেখতাছেন ওইটা ১৬ কেজি, দাম ১৩০০০, ওইযে সাদাডা ওইডা ১২ কেজি দাম ১০০০০। আমি কইলাম ভাই কোনডা কত কেজি হেইডাতো গায়েই লেখা, দেইখাই বোঝা যাইতাছে। আগে কন কোনডা কোন মাছ আর তার দাম কত । স্যার তাকাইল আমার দিকে, এমুন সে দৃস্টি!! ফকিন্নির পোলা আইছস মাত্র ১৫০০০ দিয়া মাছ কিনতে আবার মাছের নামো শুনতে চাস ।

মুখে কইল, এমতে আমরা মাছ বেচি না। আপনে অন্য দোকানে যান । আমি ভ্যাবাচেকা খায়া গেলাম । মাছ কিনুম কি খালি খোমা দেইখা? কোনডা কোন মাছ এইডাও কি যাচাই করমু না ? হ্যা আজকে গিয়েছিলাম বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে ক্যামেরার বিভিন্ন মডেল দেখতে ও তার প্রাইজগুলো যাচাই করতে। অভিজ্ঞতাটা হয় ড্যাফোডিল কম্পিউটারস এ যেয়ে।

আমার বাজেট এর লোয়ার আর আপার লিমিট বলতেই এক্সিকিউটিভ আমাকে দেখাতে শুরু করলেন সনির কালো মডেলটা ১২০০০ হাজার সামথিং, সাদাটা ১০০০০, আমি বাধা দিয়ে বললাম একটু মডেলগুলো বলেন আমি একটু লিখে নেই। প্রথমে হতাশা, তারপর বিরক্তি অতঃপর তাচ্ছিল্যের চাহনি, সঙ্গে সঙ্গে আরেকজনের দিকে মনযোগ দেয়ার আগে বলল “এখানে এভাবে হবে না, আপনি অন্য দোকানে খোজ করুন। “ আমি জিগ্যেস করলাম আপনি কি আমার কাছে শুধু ক্যামেরার রঙ আর বাইরের আউটলুকিং দেখিয়ে ক্যামেরা বেচতে চাচ্ছেন? এভাবে কি ক্যামেরা কেনা উচিত? উনি পুরাই লোকাল বাসের হেল্পারের মত আমাকে ইগ্নোর করলেন । অভদ্রের মত আমার সাথে কথা না শেষ করেই মনোযোগ দিয়ে দিলেন পাশের মহিলার প্রতি। “আপা কি লাগবে? ক্যামেরা ?” আমি হতাশ হলাম, দুঃখ পেলাম তার আচরনে।

এভাবে বড়জোর তার কাছ থেকে কোনটা কত মেগাপিক্সেল আর স্ক্রিন সাইজ কত, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি কিনা এতটুকুই জানা যাবে, কিন্তু ক্যামেরার আরো আনুসঙ্গিক ব্যাপারগুলো তার মডেল সম্পর্কে না জানলে নিজ দায়িত্বও বের করা সম্ভব না। আর এই এক্সিকিউটিভ যে কি ইনফরমেশান দিবে তাতো বোঝাই যাচ্ছে । তবে আমাকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা উপকার অবশ্য করেছেন। পাশের এক দোকান দেখিয়ে বললেন আপনি ওদের দোকানে গেলে সনি ক্যমেরার মডেল ও প্রাইস সহ লিফলেট পাবেন। আমি তাই করলাম।

কিন্তু এত কিছুর পরো আমার একটা প্রশ্ন। একটি হাই টেক মার্কেটে একজন সেলস এক্সিকিউটিভ কিভাবে আশা করেন যে তার ক্রেতারা মাছ বা সব্জি বাজারের মত শুধু সব্জির চেহারা দেখেই তাদের পন্য কিনবেন? তারতো প্রত্যেকটা জিনিসের মডেল নং , তার স্পেসিফিকেশান, মেরিটস ডিমেরিটস সব জানা উচিত এবং সেই অনুযায়ী কাস্টমারের সাথে আচরন করা উচিত। আমরাতো গন্ডমুর্খ কাস্টমার নই যে তাকে এমন সব হাস্যকর প্রশ্ন করব যা তাকে বিব্রত করবে। কিন্তু তার আচরন দেখে মনে হচ্ছিল তিনি গন্ডমুর্খ কাস্টমারই আশা করছিলেন। এবং আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে আমার পাশে যে মহিলা ও তার সাথে একজন পুরুশ ছিলেন তারা ঠিক তার মনের মতই ‘ভাই, ঐ সিলভার কালারের ক্যামেরার দাম কত? আচ্ছা পাশেরটা?” এভাবেই তার সাথে কথা বলে যাচ্ছিল আর তিনিও হাসিমুখে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন ।

বুখিলাম, অতি জানতে চাওয়া, অতি বুঝদার কাস্টমার দিয়া তার কোন লাভ নাই, তার দরকার ক্যামেরা বানান করতে পারা কাস্টমার। (অনেকটা গরু ছাগল চিনতে পারার টাইপ) সাথে আরো যাহা বুঝিলাম, নেংটার দেশে কাপড় পরলেই পাগল, আর হাইটেক কেনা বেচার দোকানে মডেল নাম্বার/স্পেসেফিকেশান জিগাইলেই ছাগল। (অফটপিকঃ আমি নিজেও ক্যামেরার ব্যাপারে আমজনতার কাতারে পরতাম। তবে সামুর ব্লগারদের কল্যানে নিজেকে একটু আপডেটেড ভাবতে শুরু করেছি। গত রোজার ঈদে সামুতে ক্যামেরা কেনার জন্য হেল্প চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম, সেই পোস্টে অনেকেই হেল্প করেছিলেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্য। অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ক্যামেরা আর কেন হয় নাই, তাই এবার আটঘাট বেধে নেমেছি, দেখা যাক কি হয়। তবে একটা কথা, ওইসব মাছবাজারের এক্সিকিউটিভ থেকে আমার সামুর ব্লগার ভাইরা অনেক স্মার্ট আর ভ্যালুয়েবল । ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।