আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই অপচয়,মনস্তাপ আর বিড়ম্বনার জন্য দায়ী কে?

একজন মুক্ত মনের মানুষ । বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত হল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। আর রেমিটেন্স বাংলাদেশের দারিদ্র দূরীকরন,শিক্ষার প্রসার এবং জীবন মান উন্নয়নে অগ্রনী ভুমিকা পালন করে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমান বছরে ১০বিলিয়ন ডলারের মত । এর শতকরা ৬৪% আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।

এই মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ রেমিটেন্সের যোগানদাতা সৌদি আরব । সেখানে প্রায় ২৫ লক্ষ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন । আমার আজকের বিষয় সেটা নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এ যাবৎ যত পররাস্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন তার মধ্যে সবচাইতে অযোগ্য পররাস্ট্রমন্ত্রী হল বর্তমানের স্মার্ট(?) মন্ত্রীসভার পররাস্ট্রমন্ত্রী দিপু মুনি । মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সৌদি আরবে আসেন তখন সে বলে ছিল বাদশাহ্‌ আব্দুল্লাহ্‌ হাসিনাকে বোন বলেছেন ।

সব সমস্যার সমাধান হবে। যার এই জ্ঞানটুকু নেই যে এখানে কাউকে বোন বলার কোন বিশেষ মহাত্য নেই । আর তার কথার অসারতা এখন প্রমানীত । সৌদি আরবে এটা একটা কমন সম্ভোধন । পুরুষকে আঁখি(ভাই) এবং মহিলাকে উখুত(বোন)।

আর আমাদের প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী মাশাল্লাহ্‌ । আফ্রিকা থেকে শুরু করে চাঁদের দেশেও মানুষ পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলে গল্প করছেন । তবে সেটা কবে নাগাদ আল্লাহ্‌ মালুম। আমি যেই বিষয়টা বলার জন্য এই পোস্টের অবতারনা তা হচ্ছে, আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে সকল প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট(M.R.P.)দিচ্ছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে প্রফেশান উল্লেখ নেই ।

সৌদি আরবের ২৫ লক্ষ বাংলাদেশীর মধ্যে প্রতি বছর নূন্যতম ৫০ হাজার প্রবাসী কোরবানীর ঈদে দেশে যান। এই ৫০হাজারের মধ্যে প্রায় ২০হাজার লোক মেশিন রিডেবল পাসপোর্টধারী। সমস্যা হচ্ছে এই মেশিন রিডেবল পাসপোর্টধারীরা এবার দেশে যেতে পারছেন না। কারন সৌদি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ব্যাপারে তাদের কিছুই জানায়নি। যার জন্য তারা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টধারীদের এক্সিট-রি এন্ট্রি ভিসা দিচ্ছে না ।

সৌদি আরব অনেক বড় দেশ । রাজধানী রিয়াদ এবং জেদ্দা কনসূলেট অফিস ছাড়া প্রবাসীরা আর কোন জায়গা থেকে সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই । দুতাবাসে আসলে বলছে সমাধান হবে,মিটিং হবে কিন্তু আসলে সবই মিথ্যা আশ্বাস। আজ দুইদিন থেকে বলছে ঈদের পর ঝামেলা মিটে যাবে । দুতাবাসে আসলে যাতায়াত,থাকা-খাওয়া এবং বেতন কর্তন(কাজ না করলে বেতন কাটা হবে) হিসাব করলে প্রতিজনের গড়ে ৩৫০ রিয়াল খরচ আছে ।

তারপর যারা টিকেট কিনেছিলেন তারা ফেরত দিতে গিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রিয়াল কম পাচ্ছেন । অর্থাৎ গড়ে ২৭৫ রিয়াল প্রতি জনে লোকসান দিচ্ছেন । এখন এই হিসাবে হিসাব করলে বাংলাদেশের লোকসান ২৫কোটি২৫লক্ষ টাকা । (20,000 x S.R. 625 x 20.2 = TK.25,25,00000) রাজনৌতিক কারনে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু সরকার যদি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রবাসীদের জানিয়ে দিত যে,মেশিন রিডেবল পাসপোর্টধারীরা টেকনিক্যাল কারনে আপাতত ছুটতে যেতে পারবেনা তাহলে হাতে লেখা পাসপোর্ট এক বছরের জন্য রিনিউ করে দেশে যেতে পারত।

টাকাটার চেয়ে মানুষের মনোবেদনা যে কি পরিমান তা আমি দেখেছি পাশের রুমের এক লোকের মধ্যে। অল্প বেতনে কাজ করেন বলে ২/৩ বছর পর পর দেশে যান । গত ১২ বছর দেশে ঈদ করেননি(আমি নিজে গত ১৮ বছরে দুইবার ঈদ দেশে করেছি)। সন্তানরা আবদার করেছে দেশে গিয়ে ঈদ করতে । সে কান্না বিজড়িত কন্ঠে কাল রাতে বলছিল, আমি আমার সন্তানদের কথা দিয়েছিলাম।

রাখতে পারলাম না। এই লোকটা মাঝে মাঝে ২/১টা সিগারেট খেত। এখন রাতে ঘুম থেকে উঠে যখনই করিডোরে যাই দেখি বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। তাকে সান্তনা দেবার ভাষা পাইনা। এমন হাজারো প্রবাসী হয়তো এভাবেই মনস্তাপ করছেন।

(এই ব্লগে অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরা আছেন। কেউ যদি এই হতভাগা প্রবাসীদের সমস্যাটা তদন্ত সাপেক্ষে মিডিয়ায় তুলে ধরতেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব। ধন্যবাদ সবাইকে। ভাল থাকবেন সবাই। আগাম ঈদের শুভেচ্ছা।

)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।