আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৮ অক্টোবর আর চাই না.....।

মানবজাতির ইতিহাসে সর্বাধিক লোমহর্ষক ঘটনা কোন্টি? এ প্রশ্নের জবাবে অনেকেই অনেক ঘটনার উল্লেখ করবেন ইতিহাস থেকে। আমরা সুদূর ইতিহাস থেকে ঘাঁটাঘাঁটি না করে বিগত ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের ঘটনাবলির দিকে দৃষ্টিপাত করতে চাই। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ৫ বছর পর ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সংবিধানের নিয়মানুযায়ী জোট সরকার দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সংবিধানের নির্দেশনানুযায়ী প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করবেন।

১৯৯১ সাল থেকে বিগত ১৬ বছর যাবত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এভাবেই এগুচ্ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালের অক্টোবরে জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রাক্কালে এ ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কথিত মহাজোট ২৮ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে যে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালায় সভ্য সমাজে তার দৃষ্টান্ত বিরল। সেদিন রাজপথে প্রকাশ্যে নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর যে উন্মত্ততায় হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের হিংস্রতা-বর্বরতার ঘটনাকেও হার মানিয়ে দেয়। ইতিহাসের ওইসব ঘটনাবলি যেমন মানুষের হৃদয়কে যুগ যুগ ধরে আন্দোলিত করবে, তেমনি ২৮ অক্টোবর পল্টন মোড়ে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্যোল্লাস করার দৃশ্য যে কোনো বিবেকবান মানুষকে আহত করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

২৮ অক্টোবর জাহেলিয়াতের হিংস্র থাবার ফাঁদে যাঁদের জীবন খসে গিয়েছে তাঁরা আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না সত্য, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী ৬টি লাশের বিনিময়ে মহান রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের জমিনে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের পরাজয় ঘটিয়ে দীনের বিজয় দান করেছেন। এদেশের মানুষ নতুন করে চিনতে পেরেছে সত্য মিথ্যার দল কোন্টি। বহু মানুষের বিবেকের দরজা খুলে গিয়েছে, অনেকের চেতনায় লেগেছে আঘাত। সারা বিশ্বে লগি-বৈঠার উন্মত্ত আক্রমণের আলোচনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই নিহতদের পরিবারসহ সারা দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হবে এবং নরপশুরা যথাযথ শাস্তি পাবে।

আর তার ফলে হয়তো মানবতার ইতিহাস থেকে কালো একটি অধ্যায় মুছে ফেলা সম্ভব হবে। কিন্তু এর বিপরীতে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতায় আরোহণের পরপরই নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলাগুলো একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আরও নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়ে বরং ভিকটিম দলের নেতাকর্মীদের নামে করা মিথ্যা ও সাজানো মামলা সচল রাখা হয়েছে। কী নিষ্ঠুর পরিহাস! ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর মর্মান্তিক ঘটনাবলি আমাদের জাতীয় জীবনে বেদনাদায়ক ইতিহাস, এক দুঃস্বপ্ন বটে! সভ্য পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক পরিবেশে লগি-বৈঠা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা অচিন্তনীয়, অবিশ্বাস্য। যারা এ ধরনের নির্দেশ দেন সভ্য সমাজে তাদের বসবাসের অধিকার নেই।

এরা মানুষরূপী কোনো হিংস্র প্রাণী। হত্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেও আমরা বিশ্বাস করি, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন হবে এবং শহীদদের রক্তের প্রতিটি ফোঁটার প্রতিদান তাঁরা পাবেন। আর জাতির ঘাড়ে যে কলঙ্ক লেপন হয়েছে তা হয়তো তখনই মোচন সম্ভব হবে। আমরা সোনালি প্রভাতের প্রত্যাশায় পথ পাড়ি দিচ্ছি। জানি এ পথ হয়তো সামনে আরো পিচ্ছিল, আরো কণ্টকাকীর্ণ এবং অযুত বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হবে।

কিন্তু আমরা নিরাশ এবং আশাহত হতে চাই না। বাংলাদেশে নতুন করে যে রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে অবিলম্বে তা দূর হবে এবং প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে দারুণ এক আবহ ফিরে আসবে, নবোদ্যমে হেসে উঠবে মানবতা এবং জীবনের জয়গান গেয়ে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্রতী হবেÑ এ প্রত্যাশা নতুন করে বুকের মাঝে বপন করছি এবং তা পরিচর্যার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।