আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফের দরপতন, বিক্ষোভ

ঢাকা, অক্টোবর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ব্যাংকগুলো বারবার আশার কথা শোনালেও দিনভর দর পতনের পর বুধবার আবারো রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। দিনের লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪৩ পয়েন্ট কমে হয়েছে ৫ হাজার ৪১১ পয়েন্ট। লেনদেন চলাকালে কয়েক দফা ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকে সূচক। এর প্রতিবাদে বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনের রাস্তায় নেমে আসে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তারা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিএসইর সামনের রাস্তায় তাদের বিক্ষোভ চলে। ফারুক হোসেন নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, "আমাদের নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক আরো বিনিয়োগ করবে বলেছে। কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। তারা আসলে তো বাজার এভাবে পড়তে পারে না।

আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি পদক্ষেপ চাই। " বিক্ষোভ শুরুর পর ডিএসইর সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, "বাজার ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। " "ব্যাংকের বিনিয়োগের কথা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কার্যকারিতা নেই। শুধু মুখের কথায় হবে না, ব্যাংকগুলোকে বাস্তবেই বিনিয়োগ করতে হবে", যোগ করেন তিনি।

এদিন লেনদেন হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩টির, কমেছ ২৩৭টির। অপরিবর্তিত ছিল ৭টির দর। লেনদেন হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া শেয়ারের তালিকার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- গ্রামীণ ফোন, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, বেক্সিমকো, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মালেক স্পিনিং, সিটি ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ও সামিট পাওয়ার। বুধবার যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের দাম বেড়েছে তার শীর্ষে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো লিমিটেড, প্রথম বিএসআরএস মিউচ্যুয়াল ফান্ড, চতুর্থ ও পঞ্চম আইসিবি, দেশ গার্মেন্টস, ন্যাশনাল টি, আকিজ বন্ড, ব্র্যাক সাব কনভার্টিবল বন্ড, সমরিতা হাসপাতাল ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস।

আর দর কমার তালিকার শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠান হলো- অলটেক্স, মেট্রোস্পিনিং, রহিমাফুড, মেঘনা সিমেন্ট, মালেক স্পিনিং, ফেডারেল ইন্সুরেন্স, ইমাম বাটন, বিডি অটোকারস, প্রাইম ইনস্যুরেন্স ও এইচআর টেক্স। সকালে লেনদেন শুরুর পর প্রথম ৩০ মিনিটের মাথায় সূচক কমে ৫ হাজার ৪৮৬ পয়েন্ট হয়। ১২টার দিকে সূচক কিছুটা বেড়ে ৫ হাজার ৪৮৭ পয়েন্ট হলেও আবার তা পড়তে শুরু করে। দুপুর একটায় সামান্য বেড়ে সূচক হয় ৫ হাজার ৪৯৬ পয়েন্ট। তবে সেই ধারা স্থায়ী হয়নি।

লেনদেনের সাড়ে তিন ঘণ্টার মাথায় সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪১৭ পয়েন্টে। মঙ্গলবার সূচক বাড়লেও পরদিনই এই পতনের কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। মাহফুজুল হক নামের একজন বিনিয়োগকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আইএমএফের বক্তব্যের কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ না করলে বাজারে আবার ধস নামবে। এ কারণে আমি আজ কম দামেই শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছি। " পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণায় আইএমএফের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, "আইএমএফের মতে, এই তহবিল (পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে) ব্যর্থতাকে পুরস্কৃত করবে।

এটি শুধু ভুল নয়, উদ্যোগের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় শেয়ারের বিপরীতে তহবিলটির ইউনিট বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে। এতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণগ্রহীতার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘিত হবে। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, "আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক অযাচিতভাবে পুঁজিবাজারে মন্তব্য করে ক্ষতি করছে। তাদের তো একটি দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে এভাবে কথা বলার অধিকার নেই।

" অবশ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সভাপতি শাকিল রিজভী আইএমএফের প্রতিবেদনের কারণে বাজার পতনের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "প্রফিট টেকিংয়ের কারণে সূচক কিছুটা নেমে আসতে পারে। তবে কেনাবেচার পরিমাণ ভাল। ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের লেনদেন বেশি হচ্ছে। দিনশেষে বাজার ভালো হবে বলেই আশা করছি।

" ব্যাংকগুলো চলতি সপ্তাহ থেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াবে- এমন ঘোষণার পর গত বৃহস্পতি ও রোববার ডিএসই সাধারণ সূচক বাড়ে প্রায় ৩৯৫ পয়েন্ট। কিন্তু সোমবার সাধারণ সূচক ১৮০ পয়েন্ট কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়িয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। এরইমধ্যে 'স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন তহবিল' নামে একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এরপর মঙ্গলবার ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৫৫ পয়েন্ট হলেও লেনদেন হয় ৩৫০ কোটি টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা কম।

বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার মঙ্গলবার বলেন, "আমার ব্যাংকসহ সব ব্যাংক বাজারে বিনিয়োগ করছে। আমরা ব্যাংকাররা তো বসে নেই, আস্তে আস্তে কিনছি। আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত আছে এবং তা থাকবে। " বাজার এবার স্থিতিশীল হবে- এমন দৃঢ় আশা প্রকাশ মজুমদার বলেন, "ব্যাংক যখন এগিয়ে এসেছে, তখন এই বাজার ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাংকের তো আর টাকার অভাব নেই।

মোট দায়ের ১০ শতাংশ হিসাবে এখনো ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগ উপযোগী ৪৫ হাজার কোটি টাকা আছে। এর দশভাগ বাজারে এলেও তো অনেক টাকা। " তিনি জানান, 'স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন তহবিল' হবে একটি মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড। ২৯টি ব্যাংক ন্যূনতম ২০ কোটি টাকা করে এ তহবিলে জমা দেবে। এছাড়া বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন এবং 'লিস্টেড' ও 'নন লিস্টেড' কোম্পানিগুলোও এতে যোগ দিতে পারবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।