আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহজ ইতিহাস : অটোমান সাম্রাজ্যের পতন

অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপের হাঙ্গেরী, রাশিয়ার ক্রিমিয়া থেকে পূর্বে জর্জিয়া পর্যন্ত। আর আরবের ইয়েমেন পর্যন্ত। তাহলে এভাবে বলা যায়, ইউরোপের অস্ট্রিয়ান বর্ডার ও এশিয়ায় রাশিয়া ও ইরান বর্ডার পর্যন্ত। নিচের ম্যাপ দেখতে পারি, (রঙ্গিন অংশটুকু অটোমান সাম্রাজ্য) অটোমান সাম্রাজ্য ছিল বহু ধর্ম, বর্ণ এবং বহু ভাষার। এই দিকে থেকে ইউরোপীয়ান স্কলাররাও একমত যে অটোমান জোড় পূর্বক কাউকে ধর্মান্তরিত করে নাই।

কিন্তু বিধর্মীরা রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য বিবেচিত হতো না এবং তাদের নিদৃষ্ট হারে ট্যাক্স প্রদান করতে হতো। ইউরোপীয়ান স্কলাররা এই দিকটাকে উল্লেখ করে থাকে ধর্মান্তরিত না করার কারন হিসেবে! শিল্পবিপ্লব ও ফরাসী বিপ্লবের পর থেকেই অটোমানের দুর্দিন শুরু হয়। নব্য সংগঠিত ও সমৃদ্ধের পথযাত্রী খ্রিস্টান ইউরোপীয়ানদের জন্য অটোমান ছিল চ্যালেঞ্জ। অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসকারী খ্রিস্টানরা খুব দ্রুত রেঁনেসা পরবর্তী ইউরোপের শিল্প ও জ্ঞান সমৃদ্ধির পথে নিজেদের যুক্ত করে ফেলে। অটোমান সাম্রাজ্যের বাসিন্দা হলেও পশ্চিমের সাহায্যে একটি নিজস্ব শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা সমৃদ্ধ করে ফেলে।

কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের শরিয়া আইন, বিধর্মী ট্যাক্স এবং রাজনৈতিক আইসোলেশন তাদের স্বাধীনতার প্রতিবন্ধক রূপে দেখা দেয়। ফরাসী বিপ্লবের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে এবং ভিন্ন ধর্ম এবং ভিন্ন এলাকার সুলতানী শাষনে বসবাসরত এসব এলাকায় খুবই দ্রুত জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে। জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রসার এবং প্রথম টার্গেটই হয় অটোমান সাম্রাজ্য! আর এদিকে প্রাচীন টেকনোলজী এবং ট্যাক্স নির্ভর অর্থনীতির ধারক অটোমান তুলনামূলকভাবে দিন দিন শক্তি হারাতে থাকে। আর দুর্বল হতে থাকা অটোমান সাম্রাজ্যের উপর সংস্কারের জন্য বহিঃশক্তি মানে, ফ্রান্স , ব্রিটেন, অস্ট্রিয়া, রাশিয়ার চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পায়। এবং নিজ বর্ডারের ভেতরের ভিন্ন ধর্ম ও ভাষার জনগণও সংস্কারের জন্য চাপ দিতে থাকে।

কিন্তু ইসলামীক খেলাফতের ভেতর সেক্যুলার সংস্কার করার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না তৎকালীন অটোমান সুলতান! এসবের ফলাফলে দীর্ঘ সময় ও শক্তি হারিয়ে ১৮৩৯ থেকে অটোমানরা বাধ্য হয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। "তাঞ্জিমাত" ও এর ধারাবাহিকতায় "ইসলাহাত" নামে দিন বদল শুরু হয়। বিধর্মী ও মুসলিমদের সামাজিক অবস্থান সমান করা হয়, বিধর্মী ও মুসলিমদের ট্যাক্স সমান করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ডাক শুনতে পাওয়া জনগণ এসবে সন্তুষ্ট না! তার উপর সুলতানের আমলাদের দুর্নীতি এবং প্রাচীন সামরিক সরঞ্জামও শাষনের কঠোরতা ধরে রাখার পথে বাধা ছিল। আর ইউরোপ থেকে মুসলিম অটোমান বিতাড়িত করার ৫০০ বছরের লালিত স্বপ্নতো তৎকালীন পরাশক্তিদের ছিলই! সংস্কারের প্রথম ধাপে রিভার্স এফেক্ট হলো, দুর্বল অটোমান আরো দুর্বল হয়ে পড়লো।

এরপর ক্ষমতায় আসে সুলতান আব্দুল হামিত, যিনি শরিয়া ও খেলাফতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অটোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান দেশগুলোতে বাস্তবায়িত সেক্যুলারিজমে মুগ্ধ সংস্কার বন্ধ করে আবার ইসলামিক পুনরুত্থানের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এবারের ফলাফল হয় আরো খারাপ, অটোমান শাষকগোষ্ঠি থেকেই প্রতিরোধ তৈরী হয়। গঠিত হয় তরুন তুর্কী গুপ্ত সংগঠন। যারা ১৯০৮ সালে সফল বিদ্রোহের মাধ্যমে সুলতানকে একপ্রকার পুতুলে পরিনত করে। এবং অটোমান সাম্রাজ্যে সুলতানী শাষনের ইতি ঘটায়! এবং সংসদ কার্যকর করে নিজেরা আড়ালে থেকে সাম্রাজ্যের পতনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতার নিয়ন্ত্রন করে।

তরুন তুর্কীদের নিয়ন্ত্রনে দুর্বল অটোমান ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও ততদিনে বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে গেছে। দিকে দিকে বিদ্রোহ এবং রাশিয়া ও ইউরোপিয়ান শক্তির সাথে যুদ্ধ হচ্ছে এবং অটমান হারছে! এদিকে সাম্রাজ্যের প্রতিপক্ষ রুপে তুর্কী'র নিজস্ব জাতীয়তাবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সাম্রাজ্যের আনাতোলিয়া ( আনাদোলু ) অংশটুকু কেন্দ্র করে। এমন সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠে, অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানির সাথে চুক্তি করে। এবং নিদৃষ্ট সময়ে যুদ্ধে যোগদিয়ে পরাজিত হয়। যুদ্ধের মাঝেই অটোমানের আরব অঞ্চলগুলো বিদ্রোহ করে বসে।

এবং সবশেষে পরাজিত অটোমান তাদের সাম্রাজ্য সম্পুর্ণভাবে হারায়। এবং ১৯১৯ থেকে ১৯২২ পর্যন্ত মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে কঠিন যুদ্ধে জয়ী হয়ে শেষপর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র আনাতোলিয়া বাঁচাতে সক্ষম হয়! এবং বর্তমানে এই এলাকাটুকুই টিকে আছে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের নামে! উপরের ম্যাপটার দিকে একবার তাকিয়ে আনাতোলিয়া অঞ্চলটা দেখে নিচের বর্তমান তুরস্কের ম্যাপটা দেখুন, ৩ বছরের যুদ্ধ শেষে ২৯ এ অক্টোবর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জন্ম হয়। ****** এটা সাধারন ব্লগ পাঠকদের জন্য শুধুমাত্র ব্যাসিক ফ্যাক্টস সম্বলিত লেখা। কোন ডিটেইলসে না যেয়ে অটোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত বিশ্লেষন। ৬০০ বছরের একটা সাম্রাজ্য সম্পর্কে ১টা পোস্টে নিখুত বিশ্লেষন সম্ভব না! তাই, পাঠকসকল বিষয়টা মাথায় রাখবেন।

কোন তথ্য বিভ্রান্তি হলে বা ব্যাখ্যা প্রয়োজন মনে করলে দয়া করে মন্তব্যের মাধ্যমে সেটা জানান। --------------------- কয়েকদিন পরেই তুর্কীর স্বাধীনতা দিবস। তাই ভাবলাম, তুর্কী নিয়ে কিছু লেখি। বাংলার মানুষের অনেক আগ্রহ রয়েছে বলেই ধারনা করি। এছাড়াও তরুন তুর্কী শব্দটার ব্যাপক ব্যাবহার দেখি।

তাই ভাবলাম এই শব্দের অর্থটা জানা এবং জানানো দরকার। কি ছিল আসলে তরুন তুর্কী! আর আর্মেনিয়ান গণহত্যাও অবশ্যই প্রাণীধানযোগ্য ঘটনা। এছাড়াও অটোমান সাম্রাজ্যের ও তুর্কী প্রজাতন্ত্রের আরো অনেক উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখার ইচ্ছা রাখি! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।