আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাবা(অনুগল্প)

১৯৬৩ অক্টোবরের কোন এক ভোর। কানসাসের মৃদু হাওয়ায় জানান দিচ্ছে শীত আসছে। "প্যান এম" এর কানসাস টু হিথ্রো ফ্লাইটে র বিজনেস ক্লাসে মুবিন। এয়ার পোর্ট থেকে কেনা পেপার ব্যাক Ourselves to Know by John O'Hara তে মনযোগ দেবার চেষ্টা করছে। বিজনেস ক্লাস পেয়েছে প্রফেসর ক্লজ মুলারের সৌজন্যে।

নীচে অসীম আটলান্টিকের পানি দেখতে কাহাতক আর ভালো লাগে। তবুও এক বৃদ্ধা জানালার পাশে বসার জন্য এক নিগ্রোর সাথে বচসা লাগিয়ে দিয়েছিলো। আপাত ভাবে বইয়ে তাকানো ,কিন্তু মুবিন ভাবছে অন্য কথা। গাড়ীর ভিউ মিররে তাকানোর মতো মুবিন ফিরে গেলো অতীতে। তার এখানে আসার কথা ছিলো না,ইকনমিক্সে আরো কত ভালো রেজেল্টের সহপাঠী ছিলো!অন্ত:ত আ্যামেরিকা তে না।

ক্লাস নাইনে থাকতে ভূগোল স্যার জানতে চেয়েছিলেন আ্যামেরিকার রাজধানী কোথায়?উত্তরে মুবিন বলেছিলো ন্যুইয়র্ক। আর সে ছেলে কিনা আজ আ্যামেরিকাতে!অর্থনীতির ছাত্র কিনা পিএইচ ডি করছে ইন্ডলজির উপর!অনেকটা ঝোঁকের বসেই কানসাসে নিজের অনার্সের কিছু প্রোজেক্ট পেপার ভর্তির আবেদন পত্রের সাথে জমা দিয়েছিলো। পেপার গুলো কিছুই না,জাস্ট পাশ করার জন্য গতানুগতিক। একটা ছিলো বাল্যবিবাহের জন্ম কিভাবে-যার মুলকথা -উপমহাদেশের ধনীদের থেকে উৎপত্তি। আরেকটা মুঘলে রাজধানী দিল্লী না থাকলে সমুদ্র পারে থাকলে ভারতবর্ষ অন্তত কলোনী থাকতো না।

কিংবা কীনসের গভরমেন্ট ইন্টারভেনশন কিভাবে উপমহাদেশে সাবকন্টিনেন্টে কার্যকর করা যায়। চিঠি এলো,তবে যে প্রফেসর এর পাঠানো হয়েছিলো তার কাছ থেকে না। এলো ইন্ডলজির হেড ক্লজ মুলারের কাছ থেকে। জর্মন আ্যমেরিকান বয়স ৮০এর উপর। ইন্ডলজি উনার নেশা।

প্রথম দেখাতে ডীন কে গাধা সম্মোধন করে বল্লেন এবারই শেষ!ডীন উনার ছাত্র,মুবিন পরে জেনেছে আজকে ত্রিশ বছর ধরেই হের ডক্টর মুলার বলছেন এবারই শেষ। তাকে পছন্দ করার কারণ হিশেবে দেখেছে তার লেখায় নাকি বিশ্লেশন গুলো খুবই স্টেডি আর ইতিহাসের প্রয়োজনীয় উপকরণ নেয়া। হের মুলারের মুখে অসংখ্য দাগ,ফেন্সিং খেলে এরকম বানিয়েছেন। ভদ্রলোকের দু টে নেশা-ছিলো ফেন্সিং আর ইন্ডলজি। এখন শারিরীক সামর্থ্যের কারণে ইন্ডলজি।

যৌবনে প্রাশান আর্মি তে ছিলেন এরপর গণিতের প্রফেসর এর পর ইন্ডলজি তে। দু দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখা লোক। হের ডক্টর ,মুবিন কে লন্ডন পাঠেচ্ছে ইন্ডিয়া অফিসে লাইব্রেরীতে। বৈষ্নবিদের নিয়ে যত ডকুমেন্ট আছে সংগ্রহ করা। ফাঁকে ব্রিটিশ লাইব্রেরীতে ঢু মারা।

নিজেরও কিছু ডকুমেন্ট দরকার। পাশের যাত্রীর সাথে গাল গল্প করে ৬ ঘন্টা পার করা যায় সে চেষ্টা বাদ,কারণ সে শুরু করতে হয় পাকিস্তান কোথায়, ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট,ইন্ডিয়ান না ইন্ডিয়ানার নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। পুর্ব পাকিস্তান কই?বার্মার কোন দিকে? এটা বোঝাতে প্রাণ বের হয়ে যায় এরপর গল্প জমানোর চেষ্টা বাদ দিয়েছে। " লন্ডনে যাচ্ছো?"এ প্রশ্ন শুনে অতীতা থেকে বর্তমানে ফিরে এলো। ২০ বছরের এক যুবক থেকে মার্জিত ভাবে শুধোল।

সে সাথে আন্তরিক ভংগিতে বাড়ানো হাত "আমি ববি" "আমি মুবিন" "তুমি ইন্দিয়ান?" মুবিন হালে পানি পেল ,যাক অন্য আ্যমেরিকানাদের মতো ডাল না!গুবলেট পাকায়নি। "তোমরা তো দাবা ভাল খেল" "না তবে টুকটাক" আস দাবা খেলে সময়টা পার করি ওকে "হোস্টেস কে বোর্ড দিতে বলি?' "কেন,বোর্ড লাগবে কেন?মনে মনে খেলি" "মানে?" "তুমি একটা মনে মেন চাল দিবে আমি একটা। তুমি সাদা গূটি আমি কালো" "আমার পক্ষে সম্ভব না" "কেন?আমিতো শুনেছি তোমরা ইন্দিয়ান সবাই দাবা ভালো খেল?" আয় হায় এ দেখি অন্য টাইপ ডাল! ইন্ডিয়ান ইন্ডিয়ানাতে ভুল করে নাই বাট ধরে নিয়েছে সব ইনডিয়ানই দাবা খেলে! লন্ডন নামার সময় ববি বল্লো ,"শিকাগোতে এলে বেড়াতে যেয়ো,বল্লেই হবে ববি ফিশারের বাড়ি যাবো"। সবাই চিনিয়ে দেবে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।