আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহূর্তেই ধ্বংস হলো রেলগাড়ি

বাংলাদেশকে একটি সৃজনশীল জাতি হিসাবে দেখতে চাই। এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান, বীর প্রতীক ১৯৭১ সালের শেষ দিক। রাতে গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে পড়লেন এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা বেশির ভাগ স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জলপথে নৌকায় করে পৌঁছালেন লক্ষ্যস্থলে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুবাইল-আড়িখোলা রেলস্টেশনের মাঝামাঝি এক স্থানে। সেখানে আছে ছোট একটি রেলসেতু। রেলপথের দুই পাশের বেশির ভাগ স্থান জলমগ্ন। সেতুর দক্ষিণে একটি বটগাছ ও বিরাট পাটখেত। বেশ দূরে একটি গ্রাম।

রেলপথের আশপাশ জনমানবহীন। দু-তিন ঘণ্টা পরপর ট্রেন চলাচলের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনের জন্য উপযুক্ত স্থান। একটু আগে গেছে একটি রেলগাড়ি। দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে আর রেলগাড়ি আসার সম্ভাবনা নেই।

পরিকল্পনা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত শুরু করলেন তাঁদের কাজ। জয়নুল আবেদীনসহ কয়েকজন থাকলেন অপারেশনস্থলে। বাকিরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিলেন কাট অব পার্টি হিসেবে। বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা রেল স্লিপারের নিচের পাথর সরিয়ে বসালেন নিয়ন্ত্রিত মাইন। এক ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হলো তাঁদের কাজ।

মাইনের সঙ্গে তার লাগিয়ে তা টেনে নিলেন কাছাকাছি নিরাপদ স্থান পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেন সেখানে। এবার রেলগাড়ির জন্য অপেক্ষার পালা। তারপর সময় গড়াতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তার টেনে অবস্থান নিয়েছেন একটা পুকুরের পাড়ে।

চারদিকে পানি। শুধু ওই পাড়টাই শুকনো। সেখানে পোকামাকড়ের দংশনে তাঁরা সবাই অতিষ্ঠ। জয়নুল আবেদীন অসুস্থ হয়ে গেলেন। এদিকে রাত শেষে ভোর হয়।

কিন্তু ট্রেনের আর দেখা নেই। মুক্তিযোদ্ধারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারণ যত বেলা হবে, তাঁদের সেখানে অবস্থান করা বিপজ্জনক হয়ে পড়বে। এমন সময় ট্রেনের হুইসেলের শব্দ। তখন আনুমানিক সকাল ছয়টা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলগাড়ি দৃষ্টিগোচর হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্ফোরক দল প্রস্তুতই ছিল। সবাই অধীর উত্তেজনায়। অপেক্ষা করছেন রেলগাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে আসার জন্য। ইঞ্জিনের সামনে বালুভর্তি ওয়াগন।

বালুভর্তি ওয়াগন চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করামাত্র বিস্ফোরক দল মাইনের বিস্ফোরণ ঘটালেন। বিকট শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। কালো ধোঁয়া ও জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডু ওপরের দিকে উঠতে থাকল। ইঞ্জিন ও পেছনের কয়েকটি বগি মাইনের বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। ইঞ্জিন ও দুটি বগি সম্পূর্ণ ধ্বংস।

সেগুলো রেলপথ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে। ইঞ্জিনের পরের বগিতে ছিল পাকিস্তানি সেনা। তারা বেশির ভাগ হতাহত। অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান ১৯৭১ সালে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ২১ এপ্রিল সেখান থেকে কৌশলে দেশে ফেরেন। কয়েক দিন পর ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২ নম্বর সেক্টরে বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধ করেন। তিনি ছিলেন প্লাটুন কমান্ডার।

মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর সনদ নম্বর ৩১০। গেজেটে নাম লেখা আছে জয়নাল। তাঁর সঠিক নাম এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান। এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার ধারাখানা গ্রামে।

সেখানে তিনি থাকেন না। বর্তমানে ঢাকার গুলশানে বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম ছোমেদ আলী খান। মা বেগম চান বুড়ু। স্ত্রী ফেরদৌসী আরা জয়নুল।

তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান বললেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম দেশকে সোনার বাংলা করতে। স্বাধীনতার ৪০ বছরেও তা অর্জিত হয়নি। কিন্তু আমি আশাহত নই। নতুন প্রজন্ম রক্তমাখা পতাকাকে ভালোবেসে দেশকে সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়বে।

’ সূত্র: এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানের সাক্ষাত্কার; নিয়েছেন মুক্ত আসরের আবু সাঈদ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.