আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আর অপরাজিত থাকা হলনা

shamseerbd@yahoo.com বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমেই চোখে পড়ল একটা শালিক। মনটা কেমন খচ করে উঠল। এই একটা কুসংস্কার থেকে কেন জানি এখনও বের হয়ে উঠতে পারিনি। এক শালিক নাকি দুঃখের বার্তা নিয়ে আসে। তা সবসময় সত্য এটা আমি বাস্তবিক না মানলেও মনের মাঝে একটা কিন্তু থেকে যায়, সতর্ক থাকার চেস্টা করি যাতে কোন ঝামেলায় না পড়ি আর এদিক ওদিক তাকাতে থাকি যদি দুটা শালিক কোনভাবে চোখে পড়ে।

কপাল এমনই খারাপ দুটা শালিকের আর দেখা পেলামনা। সেই সাথে নতুন বাগড়া লাগল রিক্সায় উঠতে গিয়ে বউ এর হাত ব্যাগের হাতল ছিড়ে গেল। বউ এর ও মনটা খারাপ হয়ে গেল। দিদার আস্বস্ত করল আরে ভাবী এইগুলা কোন ব্যাপারনা !!! অবশ্য এমন কাজে যাচ্ছি সেখানে ভাগ্য ভাল খারাপের আমরা শুধুই দর্শক, এর বাইরে আর কোন ভূমিকা নেই আমাদের। সকালের আরামের ঘুমটা ভেঙ্গে দিয়ে রাব্বী জানাল সে বাংলাদেশ ওয়েস্টইন্ডিজ ম্যাচের টিকেট জোগাড় করছে আমরা যেন সময় মত হাজির হয়ে যায়।

কিছুক্ষন পর আবার জানাল পাঁচটা টিকেট পাওয়া গেছে। আমি বউ সহ , সাথে আরিফ দিদার যাচ্ছি খেলা দেখতে। স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেল ঘটনা উল্টা। রাব্বী দুটা ভিআইপি গ্যালারির টিকেট যোগাড় করে বসে আছে আর তিনটা টিকেট নিয়ে কে যেন আসার কথা। তার আর আসার নাম নেই !!! দুটা টিকেট আমাদের হাতে দিয়ে বলল তোমরা যাও আমরা আসতেছি।

ততক্ষনে বাংলাদেশ চারটা উইকেট হারিয়ে ফেলছে এই খেলা আর দেখার কি আছে। ভেতরে ঢুকতে যাওয়া যেন এক ভোগান্তি । হেডফোন নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেনা। এক ভদ্রলোককে দেখলাম এই নিয়ে চিল্লাচিল্লি করছে আর তার পাশ দিয়ে আরেকজন ব্লুটুথ হেডফোন কানে লাগিয়ে দিব্বি ঢুকে গেল। আমাদের নিরাপত্তা রক্ষীরা আসলে কি নিয়ে উদ্বিগ্ন সেটা বোঝা গেলনা- কোন স্পেসিফিক চেক লিস্টই নাই তাদের কাছে-গতানুগুতিক যা মন চায় তাই বাতিল করে দিচ্ছে তারা ।

সিগারেট নিয়ে ঢুকতে দিবেনা আর ভেতরে ভিআইপি গ্যালারিতে সিগারেটের ধোঁয়ায় সিঁড়ির পাশে টেকা দায়-এসব কেমন ঢুকল এর জবাব কে দিবে, স্হানীয় সাংসদকে দেখলাম ধুমাইয়া সিগারেট টানছে আর লোকজনত টানছেই। আমরা খেলা দেখছি রাব্বীরা তখনও টিকেট খুজে পাচ্ছেনা। একবার বলে আসবে একবার বলে আসবেনা। ফোন দিয়া ঝাড়ি দিলাম, এটা কেমন কথা আমাদের কে মাঠে ঢুকাইয়া দিয়া তোমরা আসবানা। সে জানাল বাংলাদেশের এই দুর্দশা দেখার জন্য এত টাকা দিয়ে টিকেট করতে নাকি তার আর ইচ্ছা করছেনা।

তো আমাদের কে কেন আসতে বললি। হাসতে হাসতে উত্তর সকালে মনে হইল খেলা দেখি- তাই টিকেট না করেই তোমাদের বল্লাম টিকেক করছি, এটা না বললেত তোমরা আর আসতানা পঞ্চম উইকেট যাবার পর তারা আসল, টিকেটের দাম নাকি অর্ধেক হয়ে গেছে বাইরে বিশ্বকাপের সময় বন্ধু আরজু শখ করে বাংলাদেশ ওয়েস্টইন্ডিজ খেলা দেখতে গেছিল, সে এর আগে কোন দিন ফ্লাডলাইটে খেলা দেখে নাই, তার সে ইচ্ছা আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে, সেদিন বাংলাদেশ ৫৮ রানে খেলা শেষ করে দিয়ে বেচারার শখ পূরনে বাগড়া দিয়েছিল। আজ আমার বউ এর ও কি সেই দশা হবে- বেচারী প্রথমবারের মত স্টেডিয়ামে গেছে খেলা দেখতে !!! মুশফিক আর নাছিরের দৃঢ়তায় আমরা ফ্লাড লাইট জ্বলতে দেখলাম। প্রতিটা রানই চরম উল্লাস নিয়ে উপভোগ করছি আমরা, ভেঙ্গে পড়া দলটাকে চরম সাহসিকতায় তারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে এক বন্ধু স্ট্যাটাস দিল ২২৫ করলেই আমরা জিতব, আমিও আশাবাদী হই।

বাংলাদেশ দলের সাথে আমার পরাজয়ের কোন রেকর্ড নেই। যতবারই মাঠে গেছি জিতেই ফিরছি। আমরা অপরাজেয় রেকর্ডটা অক্ষুন্ন থাকবে মনে মনে এই আশা লালন করে চলেছি। রাজ্জাক এসে সে ভাবনায় আরো কিছুক্ষন দোলা দিল। ২২৫ না হলেও ২২০, আমরা কিছুটা আশাবাদী, যদি কেউ ................. না কেউ আমাদের আশার পালে হাওয়া দেয়নি.............. তাই আশরাফুল যখন বেদম মার খায় আমরা উল্লাস করি, তৌহিদ ফোন দিয়ে বলে বের হও মাঠ , থেকে আড্ডা দিই কিছুক্ষন।

খেলোয়াড়দের শরীরি ভাষায় নেই কোন প্রতিজ্ঞা - দেখিয়ে দেব, করে ছাড়ব টাইপ , কি আর করা , কুফা টাত লেগেছিল সেই সকালেই এক শালিক দেখে, ব্যাগের হাতল ছিড়ে !!!! আমার ও আর অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা অক্ষুন্ন থাকলনা । ------------------------------------------------- এই শক্তি বর্ধক কলা আমাদের খেলোয়াড়দেরও দরকার হতাশা........ ওরা পারলোনা মন বেশী খারাপ হয়ে গেলে কিছু কাশফুলের ছবি দেখতে পারেন : Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।