আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘দুই দিন পানিতে ছিলাম’

থাইল্যান্ড উপকূলে দুর্ঘটনায় পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি হোপের আরো তিন নাবিক গত বৃহস্পতিবার দেশে পৌঁছেছেন। এই তিনজন হলেন- হোপের ইঞ্জিন ক্যাডেট মুশফিকুর রহমান এবং ডেক ক্যাডেট মো. আবু বকর সিদ্দীক ও রায়েক ফাইরুজ। এদের মধ্যে খুলনার ছেলে ফায়রুজ থাকেন রাজধানীর মিরপুরে, আবু বকরের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বাংলা মোটরের এমএইচ টার্মিনাল ভবনে চট্টগ্রামে জাহাজ মালিকদের পিঅ্যান্ডআই ক্লাবের কার্যালয়ে দুর্ঘটনার রাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ দুজনের সঙ্গে কথা কথা বলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আশিক হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্র সাংবাদিক তানভীর আহাম্মেদ সজিব।


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আপনাদের শরীরের অবস্থা এখন কেমন?
রায়েক ফাইরুজ: আগের থেকে ভালো। থাইল্যান্ডে আমরা হাসপাতালে ট্রিটমেন্টে ছিলাম কয়েকদিন। আমার ঘাড়ে সামান্য ব্যথা আছে, আর মোটামুটি ভালো।
আবু বকর সিদ্দীক: ভালোর দিকে আছি। এর মধ্যে শরীরে কিছু ব্যথা আছে।

মাথায় আর হাতে ব্যথা আছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আপনারা যাত্রা শুরু করলেন কবে?
রায়েক ফাইরুজ: মালয়েশিয়ার লুমুট বন্দর থেকে ২ জুলাই সেইল করেছি। আর দুর্ঘটনা ঘটে তার পরদিন ৩ জুলাই রাত ১২টার দিকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: জাহাজে আপনারা মোট কতজন ছিলেন?
রায়েক ফাইরুজ: ১৭ জন ছিলাম। লাইফ বোর্ড ক্যাপাসিটি ছিল ২৪ জনের।

 
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সেদিন রাতে কী ঘটেছিল?
রায়েক ফাইরুজ: সেদিন জাহাজটা রাত ১২টার পরে হঠাৎ করে একদিকে কাত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে তা বাড়তে খাকে, এমন অবস্থা হয়ে যায় যে আমাদের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে হয়। সে সময় পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাপ্টেন চেয়েছিলেন যেভাবেই হোক, কোস্টের কাছাকাছি গিয়ে সেফ একটা পজিশনে অ্যাংকর করতে। কিন্ত তা আর সম্ভব হয়নি।

ওয়েদারও বেশ খারাপ ছিল, স্ট্রং উইন্ড ছিল, বজ্রপাত ছিল। খুব ঝড়ো আবহাওয়া ছিল।
এর মধ্যেই আমরা লাইফ র‌্যাফ্ট যেটা থাকে জাহাজের সেটা লোয়ার করে জাম্প করে জাহাজ অ্যাবান্ডন্ট করি আর কি, জীবন রক্ষার জন্য। এর মধ্যে ১২ জন লাইফ র‌্যাফ্ট উঠতে পারে, আর বাদ বাকিরা পারেনি। মানে আমি পারিনি।


আবু বকর সিদ্দীক: আমি লাইফ র‌্যাফ্টে উঠতে পেরেছিলাম তবে যারা পারেনি মানে বাকি ৫ জন লাইফ র‌্যাফ্টের বাইরে সাগরে ভেসে যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আপনারা উদ্ধার পেলেন কিভাবে?
রায়েক ফাইরুজ: একেক জনকে একেকভাবে উদ্ধার করা হয়। আমাদের পেছনে আরেকটা জাহাজ ছিল, সে জাহাজ যখন উদ্ধার করতে যায় তখন লাইফ র‌্যাফ্টও উল্টে যায়। ৫ জনকে উদ্ধার করা যায়, আর বাদ বাকিরা নিঁখোজ। এই ৫ জন চিটাগাংয়ে দেখছেন যারা পরে জাহাজে কর এসেছে।

তার মধ্যে ওনাকে পরের দিন (আবু বকর সিদ্দীক কে দেখিয়ে) হ্যালিকপ্টার রেসকিউ করছে লাইফ র‌্যাফ্ট থেকে।
আমাকে আরেকটা জাহাজ এমভি বাক্স লাগুন, দুই দিন পরে উদ্ধার করে। আর মুসফিক, তাকেও সেদিন সকালে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দুই দিন পরে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এই দুই দিন কি পানিতেই ছিলেন?
রায়েক ফাইরুজ: হ্যাঁ, এই দুই দিন আমরা পানিতেই ছিলাম।

খাওয়ার কিছু ছিল না, কোনোভাবে বেঁচে ছিলাম। আমি আর সেকেন্ড অফিসার একসাখে ছিলাম একটা লাইফ বয়ের মধ্যে। আমি পানিতে ভাসছিলাম, পরে জাহাজ থেকে লাইফ বয় থ্রো করেছ আমি সেটা ধরেছি, ওরা টেনে তুলেছে। পরে আমাকে একটা নেভির একটা জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। তারা আমাকে হ্যালিকপ্টারে করে ফুকেটের একটা হাসপাতালে নিয়ে যায়।

 
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটলো বলে আপনারা মনে করছেন?
রায়েক ফাইরুজ: কারণ আমরা ঠিক বলতে পারব না। আমরা যতটুকু দেখেছি, জাহাজ একদিকে প্রায় ৩০ ডিগ্রির মতো হেলে পড়ে। যান্ত্রিক ত্রুটি কি না, তা হয়ত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হলে জানা যাবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: জাহাজে আপনারা কী বহন করছিলেন?
রায়েক ফাইরুজ: কার্গোটা ছিল সিরামিক আর এর র‌্য ম্যাটেরিয়াল, চিনামাটির মতো একে ক্লে বল বলে। এটা আমরা মালয়েশিয়ার লুমুট পোর্ট থেকে চিটাগাং নিয়ে আসছিলাম।


বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: শোনা যাচ্ছে যে জাহাজ ওভারলোড ছিল। আপনারা ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত মালামাল বহন করছিলেন। এটা কি সত্য?
রায়েক ফাইরুজ: এটা সঠিক নয়। জাহাজ ওভারলোড ছিল না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশে ফিরে এসে কেমন লাগছে?
রায়েক ফাইরুজ: আল্লার কাছে অশেষ ধন্যবাদ।

দেশবাসী আমাদের জন্য দোয়া করেছেন, আপনাদের দোয়ার জোরে ফিরে এসেছি। কৃতজ্ঞতা শেস করা যাবে না। কখনো ভাবিনি ফিরে আসব।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এখান থেকে কোথায় যাবেন?
রায়েক ফায়রুজ: আমার বাসা মিরপুরে, সেখানে বাবা মা আছেন। ওখানেই যাব।


আবু বকর সিদ্দীক: এখন এখান থেকে ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাব। আমার বাড়ী সন্দ্বীপে। স্ত্রী, পাঁচ ছেলে আর এক মেয়ে আছে।  

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।