আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা-মায়ের কলহের বলি হলো দিহান?

‘তোমাদের অনেক জ্বালাইতেছি। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তোমরা দুধ-কলা দিয়ে কেন সাপ পুষবা? সেই সাপের বাঁচার চেয়ে না বাঁচাই ভালো। ’ ঘরটিতে ছিল এ রকম একটা চিরকুট আর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত দিহান মেহজাবিনের (১২) লাশ। স্বজনেরা পুলিশকে বলেছেন, বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের জেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে তাঁদের ধারণা।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া এলাকায়। গতকাল রোববার সকালে পুলিশ দিহানের লাশ উদ্ধার করে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আজিমপুর শাখার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল সে। তার মা ফাতেমা সুলতানা চৌধুরী সেখানকারই শিক্ষক। আর বাবা আলীউজ্জামান একজন হোমিও চিকিৎসক।

বাবা-মা ঝগড়া করে আলাদা বাস করতে শুরু করার পর থেকে মায়ের সঙ্গে থাকত দিহান। মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুদ্দৌলা বলেন, হাজি চিনু মিয়া সড়কের ওই বাসার একটি ঘরে ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা ওড়নায় ঝুলছিল দিহানের শরীর। বাবা-মায়ের কলহ ও বাবার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখে সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বজনদের বরাত দিয়ে এসআই সিরাজুদ্দৌলা বলেন, দিহানদের ফ্ল্যাট ছয়তলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলায়।

তৃতীয় তলায় থাকেন তার নানা-নানি। গতকাল সকাল সাতটার দিকে দিহানকে রেখে বাসা থেকে বের হন তার মা। এর আধঘণ্টা পর তার নানি নাশতা করার জন্য ডাকতে গিয়ে দেখেন, দিহান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। নানা গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, দিহানের বাবা দেড় বছর আগে তাদের নিয়ে যাত্রাবাড়ীতে থাকা শুরু করেন। সেখানে তাঁর হোমিও চেম্বার ছিল।

যাত্রাবাড়ীতে যাওয়ার পর অন্য নারীর সঙ্গে আলীউজ্জামানের কথিত সম্পর্কের কথা দিহানের মা ফাতেমার কানে আসে। এর জের ধরে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো। গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে মারধরও করেছেন আলীউজ্জামান। একপর্যায়ে গত ১৯ মে আলীউজ্জামানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে দিহানকে নিয়ে টিক্কাপাড়ায় বাবার বাড়িতে চলে আসেন ফাতেমা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দিহানের মামা কাওসার চৌধুরী বলেন, বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব, মামলা ও আলাদা থাকা মেনে নিতে পারেনি দিহান।

সে মাঝেমধ্যে বাবাকে ফোন করত। কাওসার দাবি করেন, ফোন করলে বাবা আলীউজ্জামান তাকে গালিগালাজ করতেন। এ কারণে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দিহানকে নিষেধ করেছিলেন তার মা। এসব কারণে মেয়েটি মানসিকভাবে ভালো ছিল না। যোগাযোগ করা হলে আলীউজ্জামান প্রথম আলোর কাছে মেয়েকে গালিগালাজ ও স্ত্রীকে মারধর করা এবং অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, পাশের বাড়ির একটি ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য শনিবার দিহানকে মারধর করেন তার মা ফাতেমা। মা আরও মন্তব্য করেন, ‘দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষছি। ’ আলীউজ্জামান বলেন, ‘মেয়ে যে আমার কাছে আসতে চায়, এ কারণেই তার মা এই কথা বলেছে। মেয়ে এই কথা সহ্য করতে পারেনি। মেয়েটাকে তালা মেরে চলে যেত।

আজকেও (রোববার) গিয়েছিল। ’ আলীউজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, দিহানের মায়ের পরিবার তাঁকে লাশও দেখতে দিতে চায়নি। মোহাম্মদপুরে গেলে মারধর ও গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিয়েছে। দিহান বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল। গতকাল দুপুরে বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে তার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

বাসাভর্তি আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, দিহানের সহপাঠী ও স্কুলের শিক্ষকেরা। (প্রথম আলো’র সৌজন্যে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।