আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪০ বছর উপেক্ষিত এক মুক্তিযোদ্ধা

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছর পরেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আজও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি রণাঙ্গন কাঁপানো মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনের। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাবেক কমান্ডারের দাবিকৃত মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ না দেয়ায় তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গেরাকুল গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ বেপারীর পুত্র সোহরাব হোসেন (৫৬) বলেন, দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি ৯নং সেক্টরের গ্রম্নপ কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকনের অধীনে দীর্ঘ ৯ মাস রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি। সে মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরযোদ্ধা হিসেবে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক তোফায়েল আহম্মেদ স্বাক্ষরিত একটি সনদপত্রও দেয়া হয় আমাকে।

এছাড়াও একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে ১৯৮০ সালের ১১ মে তৎকালীন গৌরনদী থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোশারফ হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি সনদপত্র দেয়া হয়েছে। অথচ ৪০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি। আর সেদিন (যুদ্ধের সময়) যারা লুটতরাজ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তাদের অধিকাংশই আজ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অনত্মভর্ুক্ত করে বড় মাপের মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কর্তনসহ বাদপড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অনত্মভর্ুক্তির জন্য তিনি স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের শক্তি মহাজোট সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। মৃতু্যর পূর্বে তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হবে কি না, এ নিয়ে তিনি এখনও শঙ্কিত।

প্রসঙ্গে এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, সোহরাব হোসেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধচলাকালে দীর্ঘ ৯ মাস রণাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। সহকর্মী সাহানুর বেপারী, মহসিন সরদার, সুরাত আলী ও রহমআলী সরদার বলেন, দেশে যুদ্ধ শুরম্ন হওয়ার পর ভারত থেকে সোহরাব হোসেনসহ আমরা ১০ জন একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে ৯নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকনের অধীনে কটকস্থল, হোসনাবাদ ও বাটাজোরে পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ওই সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে সোহরাব হোসেন বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন। তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তাদের সহযোদ্ধা সোহরাব হোসেনের নাম দীর্ঘদিনেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আলাউদ্দিন বালী, সদস্য সচিব মনিরম্নল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমান্ডার মোঃ আব্দুল হক ঘরামী বলেন, সোহরাব হোসেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক উপজেলা কমান্ডারের কাছে তিনি কাগজপত্র জমা দিলেও আমাদের কাছে এতদিন তিনি কোন কাগজপত্র জমা দেননি। সাবেক কমান্ডারের খামখেয়ালীর কারণে গৌরনদীর অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এখনও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। তবে আগামীতে নতুন তালিকা গঠনের সময় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনসহ বাদপড়া অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অনত্মর্ভুক্ত করা হবে বলেও তারা উলেস্নখ করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।