আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা ও সন্তান

অনেকেই আমাকে লিখতে বলেন। লেখালেখি আমি করি, বলতে গেলে যা দেখি তাই লিখি। সেদিন বৃটেন থেকে প্রকাশিত মহিলা বিষয়ক কাগজ "নারী: সম্পাদক আমাকে বলেছেন ইসলামের আলোকে নারী বিষয়ে কিছু লিখার জন্য। নারী সম্পাদকের হুকুম তামিল করা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তিনি এমন একটি কাজে হাত দিয়েছেন যা অনেক আগেই আমাদের করা উচিত ছিল, ইংল্যান্ডের নারীদের কল্যাণার্থে (বাংলাভাষা-ভাষী) এখনো কোন কাগজ বা সাময়ীকির ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ আমার চোখে পড়েনি।

গণতন্ত্রের পাদপীট উচ্চ শিক্ষার কাঙ্কিত স্থান এবং নারীদের অধিকার সচেতন এমন একটি দেশ হলো বিলেত। সেই দেশে নারীরা বৈষম্যের শিকার হবে তা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু অবিশাস্য হলেও সত্য এখানে ও নারীরা অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। কমিউনিটি হিসাবে ভাগ করে যদি শুধু বাংলাদেশীদের দিকে তাকাই তা হলে সহজেই ধরা পরবে বিশেষ করে অনেক স্বামীরা চান না তাদের স্ত্রীরা বাইরে বেরুক বা কাজ করুক। আবার যারা চান তারও সমস্যায় পড়ে যান।

অপর দিকে অনেক মা-বাবা আছেন যারা তাদের মেয়েদেরকে বিয়ের পূর্বে বাইরে কাজে দিতে আগ্রহী নন। আর যারা নিজ মেয়েদেরকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন, তাদের অনেকেই আবার প্রতারিত হয়েছেন নিজে মেয়েদের দ্বারা । সার্বিক অবস্থার দিকে তাকালে দ্বন্দের মধ্যে ঘোরপাক খেতে হচ্ছে। আমি প্রথমেই আলোচনা করব মেয়েদের নিয়ে। একজন মা সবসময়ই চান নিজ সন্তানেরা ভালোভাবে মানুষ হোক, আর এ কথা মাথায় রেখেই প্রতিটি বাবা-মা-ই নিজ সাধ্য অনুযায়ী তাদের সন্তানদের লালন পালন করেন ।

সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে এক পর্যায়ে এসে দেখা যায় ছেলেদের চাইতে মেয়েদের শরীর ও মনমানসিকতার পরিবর্তন হয় খুবই দ্রুত, আর সে সময় থেকেই দেখা দেয় যতসব বিপত্ত্বি। আমার মতে, মেয়েদেরকে তখন থেকেই উচিত সময়োপযোগী ব্যবহার ও সু-শিক্ষা দেওয়া। কিশোর বয়সে মাত্র ৭-৮ ঘন্টা স্কুলে কাটিয়ে মেয়েদের বেশির সময়ই ঘরের আঙিনায় কাটাতে হয়। একজন মা যদি তখন থেকেই নিজ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তার মেয়েকে আচার আচরণ, ব্যবহার, আদর ও শিক্ষা দেন তা হলে মা এবং মেয়ের মধ্যে কোন দুরত্ব সৃষ্টি হবে না বরং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্পর্কে দৃঢ়তা বাড়বে। বয়সের সাথে সাথে সমস্যা কমবে বৈ বাড়বে না।

একজন মা কখনোই চান না তার নিজ মেয়ের জীবনে কোন ধ্বংস বা কাল বৈশাখির ঝড় নেমে আসুক। মেয়েদের সাথে সম্পর্কেও ভিত্তি পাকা করতে হলে পারষ্পরিক আলোচনা এবং একমাত্র বন্ধু সুলভ ব্যবহারই প্রযোজ্য। মা-মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্বই ঘুছিয়ে দিতে পারে যে কোন রামের বিপর্যয় বা সর্বনাস। শিক্ষার বিকল্প পৃথিবীতে কিছুই নেই, শিক্ষা এমন একটি সম্পদ যা কখনো ভাগ করা যায় না। এই জন্য শিক্ষাকে পালন কর্তা ফরজ বলেছেন।

তবে তা হতে হবে অবশ্যই সু-শিক্ষা। প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একদিন কয়েক ঘন্টা ব্যয় করা যেতে পারে কোরআনের গল্প করে। কোরআনুল কারিমে আছে খুবই উপভোগ্য গল্প উপন্যাস। এবং তা সম্পূর্ন সত্য, বাস্তবিক ন্যায়নিষ্ট, শিক্ষনীয় ও পালনীয়। হযরত, মারিয়ম, আসিয়া, হাজেরা, রাহিমা, জুলেখা –ইফসুফ, বিলকিস ও সুলাইমান, আদম, হাওয়া (আঃ) তাদের ত্যাগের, কষ্টের এবং রোমাঞ্চকর প্রেমের কাহিনী।

যা বাস্তবে অনেকেরই প্রভাব ফেলবে। তাদেরকে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে পূর্বেই ব্যাপকভাবে সচেতন করে তুললে আগামী জীবন চলতে তা সহায়ক ভ’মিকা রাখবে। অনেক সময় মেয়েলী অনেক সমস্যা হয়, প্রথমে তা একে অপরে বসে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করা যায়। বেশি উদ্ধিগ্নতা বা রাগ করে কিংবা কঠিন ভাবে শাষিয়ে কোন সমস্যা সমাধান করা যাবে না। আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যে সমাজ বন্ধন পারস্পরিক মূল্যেবোধ কোন মূল্য রাখে না।

যে পরিবেশে ১১ বছরের মেয়ে সন্তানের মা হয়ে যায়, সেখানে অভিবাবকরা মেয়েদের নিয়ে চিন্তা করাই স্বাভাবিক। তাই মেয়েদের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণ এবং লাভ ক্ষতির দিকটা ভালভাবে বুঝাতে সক্ষম হলে সম্পূর্ন পরিস্থিতি পাল্টানো সম্ভব হবে। মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে তাদের যোগ্য পাত্র সন্ধানে তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং তাদের পছন্দকে ভালোভাবে কথা বলে পরখ করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোতে মেয়েদের সিদ্ধান্ত এবং যাচাই বাচাই করার সুযোগ দিলে ক্ষতির সম্ভাবনা অবশ্যই কম হবে। তা ছাড়া মেয়েদের বন্ধু-বান্ধব কারা, তাদের পরিবার, পরিবেশ যাচাই করে মিশতে বলুন।

কারণ অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব নির্বাচনে ভুল হলে অসংখ্য বাঁধা হয়ে দাড়ায়। গুরুজনেরা প্রায়ই বলেন সৎ সঙ্গ স্বর্গে বাস করা যায়। এই কথাটার গুরুত্ব ও বাস্তব জীবন চলতে পথে পাওয়া যায়। নিজ সন্তানদের নিয়ে ভ্রমন করুন, শুধু গতানুগতিক আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি নয়, তাদের নিয়ে বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি, দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যান। তা ছাড়া তাদেরকে বিভিন্ন পার্টিও আয়োজন করার দায়িত্ব দিন এবং মজার মজার রান্না তৈরি করার সময় তাদের সাথে রান্নার কৌশলটা শেয়ার করুন এবং শিখতে দিন।

রান্নাও একটি শিল্প, এর কলা-কৌশল রপ্ত করাও একটি বিশাল কৃত্তিত্ব। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় তাদেরকে অংশ নিতে বলুন, এতে করে প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। এই সমস্যা সংকুল পৃথিবীতে সঠিক প্রতিভা বিকাশেই হতে পারে মেয়েদের সঠিক মূল্যায়ন। অবসরে তাদের নিয়ে হাতের কাজ শেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, এত করে সেলাই, আর্ট, ঘওেররাখার মতো বিভিন্ন দ্রব্য বানালে অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকবে না। ধর্ম চর্চা ও পরোপকার করে বিশ্বের অনেক মহিলারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন , মহীয়সি হয়েছেন।

ধর্ম চর্চায় যেমন অভ্যাস ভালো হয় তেমনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও থাকা যায় এবং জীবনে শান্তি হয় ভবিষ্যত উজ্বল হয়। যে কোন অশ্লিলতা থেকেও মুক্ত থাকা যায়। জগতের প্রতিটি মা-ই তাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনা করেন। আজ পর্যন্ত এমন কোন মা আমার চোখে পড়েনি যে তিনি তার সন্তানদের বিচলিত হতে দেখে চোখের পানি ফেলেননি। এমন অনেক পেয়েছি পরে আক্ষেপ করে বলেন আগে লক্ষ্যই করেননি মেয়ে যে বড় হয়েছে, নতুবা শিক্ষা দিতে পারতাম।

আসলে আল-ইসলাম ও এইভাবে নারীদের কল্যাণ চায়। প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি পাবে বলে আলোচনা এখানেই সীমাবদ্ধ রাখলাম অবশ্যই আগামী সংখ্যায় অসম্পূর্নতাকে পূর্ন করব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো পথে চলার তৈফিক দান করুন। আমিন। রচনাকাল- ২০১০ কভেন্ট্রি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।