আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি জালাল উদ্দিন রুমী (পৃথিবীর বুকে একজন সুফির আগমন)

বেচেঁ থাকার স্বাদ নিচ্ছি... রুমীর জীবন এর সুচনাকাল : রুমির পৃথিবীতে আগমনের সময়টা ইতিহাসের খুব একটা ভালো সময় নয় । একদিকে খ্রিষ্টানদের ক্রুসেড অভিযান, ইউরোপের পশ্চিম অংশ থেকে আনাতোলিয়া উপদ্বীপ পেরিয়ে সর্বত্র আছরে পরছে । পূর্ব দিক থেকে দুধর্ষ মোঙ্গল বাহিনী । এমন এক সময় মানব আত্বার মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি, সান্নিধ্য সৃষ্টিকারী মহান প্রেমিক জালাল উদ্দিন রুমীর জন্ম ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে সেপ্টেম্বর মানে আজকের ঠিক এই দিনে । আজ কবির জন্ম দিন ।

১২০৭ সনের ৩০ শে সেপ্টেম্বর রুমি জন্ম গ্রহন করেন বলখ শহরের নিকটস্ত একটি স্থানে যা বর্তমানে আফগানস্থানের একটি অংশ । রুমির ছিলেন ইসলামি ফিকহ, ধর্ম ও সুফিবাদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে ধারক এক বংশের অধিকারী । তার পিতা বাহউদ্দিন ওয়ালাদ এর লিখিত একটি বই ‘মা’ রিফ (আত্বা কে ভালোবাসার কথা ) যা থেকে রুমি অত্যন্ত অনুপ্রানিত হয়েছিলেন । রুমির তরুন বয়সেই তার পরিবারকে তখন বলখ থেকে পালাতে হয় কারন ইতিহাসের আরেক ভিলেন চেঙ্গিস খান ধেয়ে আসছে তার শহরের দিকে । রুমি ও তার পরিবার প্রথমে দামেশকে ও পরে নিশাপুরে যায় ।

সেখানে রুমির সাথে সাক্ষাত ঘটে কবি ও শিক্ষক ফরিদউদ্দিন আত্তারের সাথে । তিনি কিশোর রুমির মধ্যে বিরাট আধ্যাত্বিক চেতনা দেখতে পান। বাহাউদ্দিন এর পেছনে রুমিকে দারিয়ে থাকতে দেখে ফরিউদ্দিন বলেন একটি সাগর আছে আর তাকে অনুসরন করছে একটি মহাসাগর । তিনি রুমিকে একটা একটা গ্রন্থ উপহার দেন , ইলাহিনামা (আল্লাহর গ্রন্থ) বেশ কিছুদির পর রুমির বিশোর্তিন্ন বয়সে তার পিতা ইন্তেকাল করেন । রুমি তার পিতার দায়িত্ব তথা মুরিদদের আত্বার বিকশের সাথে জরিত বিভিন্ন বিষয়, ধর্মতত্ব, কবিতা , সঙ্গীত এবং বিভিন্ন ইসলামি বিষয়ে শিক্ষা দিতেন ।

শিঘ্রি তার ক্ষ্যাতি ছরিয়ে পরে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দশ হাজার ছাত্রের সমাবেশ ঘটে । রুমির পরিচালিত দরবেশ সুফি তরিকার লক্ষ্য ছিল আত্বাকে উন্মোচন, মিলনের রহস্য আবিস্কার। তার এসব অনুশিলন করতেন গান, কবিতা, ধ্যান, নিরবতা , কাহিনী , সংলাপ এর মাধ্যমে । রুমি ইসলামে বিষয়ে মস্ত বড় পন্ডিত ছিলেন । তার রচিত কো্রানের তাফসির, অনুবাদ , ব্যাখ্যা আজো পঠিত হয় ।

সুফী রুমির নতুন করে নিজেকে চেনা : ১২৪৪ সালে রুমির জিবেনর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি সাল । এ বছরি তার প্রিয় ব্ন্ধুর সাক্ষাত পয় রুমি । সে আর কেউ না সামশেদ তাবরেজ । যার কারনে রুমিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুফিতে পরিনিত করেছে । তাবরেজ ছিলেন একজন দরবেশ ।

যাকে অনেকেই ড্যান্সিং দরবেশ বলে থাকেন কেননা সে রাস্তায় নেচে নেচে আল্লাহর জিকির করতেন । লোকো তাকে নেহায়েত পাগল বলে মনে করত এমনি প্রথমদিকে রুমি নিযেও । । তাবরেজ এর মাঝে এমন কিছু পেয়ে যায় যা সে এতো দিন খুজে বেরাচ্ছিল । এদিকে এতজন বদ্ধ পাগলের সাথে রুমির এই সক্ষ্যতা দেখে মানুষজন বলাবলি করতে লাগল রুমি নিজেই হয়ত পাগল হয়ে গেছে ।

অনেক গ্রন্থে তাবরেজের সাথে রুমির পরিচয়ের বিভিন্ন বিবরন পাওয়া যায় : কেউ বলে রুমি একদিন মুরিদদের নিয়ে তার পিতার মা রিফ পড়ে শুনাচ্ছিলেন। এমন সময় তাবরেজ এসে তার হাত থেকে গ্রন্থ নিয়ে পানিতে ফেলে দেয়ে । তখন রুমি বলে আপনি কে ? কি করছেন এসব ? তখন তাবরেজ বলে তোমার এসব আর পড়া ঠিক হবোনা। কিছুক্ষন পর তাবরেজ রুমিকে পানি থেকে কাগজগুলো তুলে রুমির হাতে দিল যা কিনা সম্পূর্ন শুকনা ঝরঝরা । রুমি তখন বলে ওগুলো ওখানেই পরে থাকুক ।

এই পরিত্যাগের মাধ্যেমে রুমি নিজে ধর্মিয় গুরু পেশা বাদ দিয়ে তাবরেজের কাছে বায়াত নিতে চায়। তাবরেজে তাকে বলে আমার কাছে বায়াত নিতে হলে তোমার আমার কথা শুনতে হবে যা তুমি করতে পারবেন না । আমার কথা না মানলে তোমাকে আমি বায়াত হিসেবে নিতে পারবনা । রুমি সব মানার কথা বলে । তাবরেজ আরো ভাবতে বলে তাকে ।

বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে রুমির সাথে তাবরেজের বন্ধুত্ব হয়। তাবরেজ সম্পর্কে রুমির একটি কবিতার বাংলা হলো : সমস্ত কিতাব গ্রন্থ যা আছে সব নদীতে ফেলে দাও ওখানে আল্লাহ নেই আল্লাহকে পেতে হলে সামশেদ তাবরেজের কাছে যাও । এভাবে আস্তে আস্তে রুমির আর তাবরেজ এর ঘনিষ্ঠতা বারতে থাকে আর রুমির সমস্ত রহস্যের জট খুলতে থাকে। সে নিজেকে নতুন করে চিনতে শুরু করে। রুমির কবিতার দুটি ধারা ফানা আর বাকা : রুমির কবিতার দুটি ধারা ফানা আর বাকা , দুটি আরবি শব্দ ।

সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের যথাক্রমে খেলা ও ব্যাবচ্ছেদ এর ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়েছে। ফানা হচ্ছে একের ভিতরে আরেকজনের লীন হওয়া । একের অস্তিত্তের ভিতরে নিজেরটাকে হারিয়ে ফেলা । যেমন সরাই খানায় মাতাল বলে উঠে যে আমাকে এখানে এনেছে , সেই আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে। আগুন ঘিরে উড়াউড়ির পর পতঙ্গ স্বয়ং আগুনের শিখিয় পরিনিত হওয়ার পর পশ্ন করে মোমবাতির শিখায় এমন কি ছিল যা আমায় শিঘ্রি গ্রাস করে নিল ? বাকা দরজা পেরিয়ে ভিন্ন পথ ।

আরবিতে বাকার ভিন্ন অর্থ আছে । ভিতরে একটা অস্তিত্ব । বাকা এমন একটি অবস্থান সব সময় আরেকজনকে অনুভব করা । যার সাথে ফানা তার সাথেই সে সব সময় বাকা অবস্থায় থাকে । রুমির কিছু রহস্যে ঘেরা সংলাপে থেকে কিছুটা দেখা যায় : বাকা বলছে : বন্ধু আমাদের ঘনিষ্টতা হচ্ছে যেখানেই তুমি তোমার পা রাখবে পদতলে দৃঢ়তার মাঝে আমাকেই অনুভব করবে ফানা বলছে : এ কেমন প্রেম আমি তোমার অস্তিত্ব দেখছি তোমাকে নয় ? বাকাকে বিবেচনা করা হয় রুমির বসন্তকালের কবিতার হিসেবে ।

সদা উপস্থিত সবুজ, সজিব সুন্দর । এক সাথে থেকো বন্ধুরা বিক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো না। জেগে থাকার জন্য আমাদের বন্ধুত্ব রুমি তার জীবনের শেষ বারোটি বছর ধরে একটি সুদীর্ঘ্ ধারাবাহিক কবিতা মসনবী রচনা করেছেন । চৌষট্টী হাজার লাইন বিশিষ্ঠ কবিতাটি ছয় খন্ডে বিভক্ত । বিশ্ব সাহিত্য এর সমতুল্য আর দ্বীতিয়টি নেই ।

অস্বাধারন একটি কাব্যগ্রন্থ । । এটি বহু বিষয়ে ঘিরে স্ফিত হয়ে উঠা একটি কাব্যগ্রন্থ । কোথাও আত্বার মধ্যকার কথা বার্তা, কোথাও কিছুটা রসিকতা কোথাও কোরানের আয়াতের ব্যাখ্যা । রুমিকে নিয়ে নিয়ে বহু গবেষকদরে মধ্যে আমেরিকান কবি কোলম্যান বার্কস মসনবী নিয়ে বলেছেন "এ এক এমন এক প্রবাহ যার আনন্দ থেকে নিজেকে বিরত রাখা কঠিন ।

মসনবীর কোনো সীমা পরিসীমা নেই " রুমির বাসর রাত ১২৭৩ সনের ১৭ ই ডিসেম্বর ঐ দিন পৃথীবি জুরে রুমির মৃত্যুবার্ষীকি পালিত হয় । সুফিরা বিশেষ করে তাসাউফ পন্থিরা তাকে উরস বলে । উরস বা বাসরের রাত । সৃষ্টিকর্তার সাথে রুমির মিলনের রাত । আমি সেই প্রেমিকের সাথে আছি যে দুই পৃথিবীকে একটি হিসেবে দেখেছে ।

এবং সেই একটিকেই জেনেছে প্রথম, শেষ বাহির ও ভিতর বলে এটাই কেবল মানুষের নিশ্বাস । পুনশ্চ : পুরে লিখা টা দিতে আমার কোলম্যান বার্কস এর রুমিকে নিয়ে লেখা The Sole of Rumi বই থেকে সাহাজ্য নিয়েছি । কিছু জিনিস আগে থেকে জানতাম । কিছু নেট থেকে । লেখাটা বেশি বড়ো হয়ে গেলো কিনা তাই ভাবছি।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।