আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

LATEST NEWS : এবার ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিলেন আরও একজন ঢাবি ছাত্র । (রুম নং ৩১১ , জগন্নাথ হল , ঢাবি)

নিপুণ লেখনীর শানিত গর্জন / লিখব আজ নিপুণ কথন তাপস দা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করার কথা ছিল এবার । দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল । খুব ভালো ব্যাটসম্যান ছিলেন । তাকে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের জগন্নাথ হলের মাঠে দেখা যেত ।

ভার্সিটি পর্যায়ের লিগে খেলতেন । হাসিখুশি মানুষটির সাথে পরিচয় হলে আসার পর থেকেই । ৩১১ নম্বর রুমে যেতাম । দাদার সাথে দেখা হলেই কুশল জিজ্ঞেস করতাম । দাদাও হেসে উত্তর দিতেন , “ভালো আছি ।

” আজ অনেক দিন পর তাকে হলের রাস্তায় পেয়ে গেলাম । সময়টা বিকেল ৫:৩০ হবে । টি ,এস,সি থেকে ফটোগ্রাফির কোর্স করে ফিরছি । দাদা সাদা একটা খেলার জার্সি পরে যাচ্ছেন । আমি তাকে দেখে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম ।

বললাম , “দাদা কেমন আছেন ?হলে দেখিনা যে! বাড়ি গেছিলেন ? কবে এলেন ?” দাদা আজ আগের মতো হাসলেন না । হাতটা মিলিয়েই চলে যেতে উদ্দত হলেন । আমি হাতটা টেনে ধরে আবার সুধালাম , “কি ব্যাপার দাদা ? মন খারাপ নাকি ? ” এবার একটু মাথা ঝাকালেন । আর দেরি না করে চলে গেলেন । আমি আর কথা বারালাম না ।

ভাবলাম , বড় ভাই ; সব কথাত জিজ্ঞেস করা যায়না । একা থাকতে দেওয়াই ভালো । দাদা সাউথ ভবনের দিকে গেলেন আর আমি অক্টোবরের দিকে । রুমে এসে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম । ঘুম হলনা ।

শরীরটা খারাপ দুদিন ধরে । ৮ : ৩০ এর দিকে খাওয়ার জন্য বের হলাম । নিচে নামলাম । অনেক লোক । ভাবলাম হয়ত কোনো সংগঠনের অনুষ্ঠান আছে ।

মেস এ যেয়ে জানলাম ৩১১ এর তাপস দা নেই । মনটা ভেঙ্গে গেলো । আর খেতে পারলাম না । এই বিকেলে যার সাথে হাত মিলালাম , রাতেই সে মানুষটা আর নেই ! ! হায়রে মানুষ ! কি এমন হয়েছিল যে এভাবে যেতে হবে ? তাও গলায় দরি দিয়ে ? এই যে আমরা কাদছি,আপনি দেখছেন দাদা ? কেন এমন বকামি করলেন ? এভাবে কেন বিদায় নিলেন ? আর কত কাঁদব ??!! উল্লেখ্য গত বছর পুজার ছুটিতে একই হলে আরও একজন ফ্যান এর সাথে গলায় দরি দিয়েছিলেন । সর্বশেষ আপডেটঃ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ রাখা হয়েছে ।

টাঙ্গাইলে বাড়ির লোকজনকে জানানো হয়েছে । যতদূর জানানো যায় বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালনা । তাপসদা-ই আয়ের উৎস ছিলেন । ছাত্র পড়িয়ে আর লিগ এ খেলে যে টাকা পেয়েছিলেন , শোনা যাচ্ছে তা দিয়ে উনি গ্রামে কিছু ব্যাবসাও করতেন । মৃত্যুর আগে দাদা একটি চিঠি রেখে যান বলে জানা যায় ।

তাতে তিনি লিখে রেখে গেছেন যে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয়, হতাশা থেকেই এই কাজ তিনি করেছেন । একজন ছাত্র জানালেন উনি বিকেলে হলের টেনিস কোর্টে উনার মোবাইল ভেঙ্গেছেন । একজন বললেন উনি নাকি হারপিক খুঁজছিলেন । হারপিক খেলেও আজ হয়ত তাকে বাঁচানো যেত । আরেকজন বললেন উনাকে নাকি দরি কিনতে দেখেছেন ।

ঘটনা ঘটেছে আজ সন্ধ্যার কিছু পর । রুমে কেউ ছিলোনা । ভেতর থেকে বাইরে তালা মারা হয়েছিল । রুমে একটা মাত্র সেলিং ফ্যান । সেটাতেই যা হওয়ার হলো ।

রুমমেটরা সব বাইরে ছিলেন । সবাই পরে ঘটনা জানতে পেরে রুমে আসেন । প্রভোস্ট স্যার এর উপস্থিতিতে তালা খোলা হয় । সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন । দীর্ঘ ৫ বছর তিনি এই রুমে ছিলেন ।

কত হাসি-কান্না ! পুলিশ এলো , প্রোক্টর স্যার এলেন । কিছুই করার রইলনা । মানুষটাই যে নেই ! রুমমেটদের কাছেই অনেক কথা জানা গেলো । একজন বললেন সারাদিন নাকি তার মেজাজ গরম ছিল । দেশের বাড়ি থেকে এসেছেন ৩ দিনের মতো হলো ।

তাপস দা কারও সাথে নিজের গোপন কথা খুব একটা শেয়ার করতেন না । এটাই বোধহয় কাল হল । যতদূর জানা যায় তাপসদার মৃত্যুর কারণ হতাশা । ধারনা করা হচ্ছে এর পিছে ছিলঃ ১) পড়ালেখায় খারাপ অবস্থা , ১ বছর গ্যাপ । ২) ব্যবসায় লোকসান ।

৩) প্রেমে কষ্ট পাওয়া । খারাপ লাগছে মানুষটার জন্য । খারাপ লাগছে জগন্নাথ হলের একটি সংস্কৃতিমনা রুমের সদস্যদের জন্য । এই রুম জন্ম দিয়েছে কাকন দা কে । সময় নিউজ এর দেবাশিষ রঞ্জন সরকার এই রুমেরই প্রাক্তন অধিবাসী ।

DUPS এর প্রেসিডেন্ট শুভাশিষ সরকার এর মতো ভালো মানুষ থাকতেন এই রুমেই আজ পর্যন্ত । তরুণ খ্যাতনামা বিতার্কিক প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি DUDS (Dhaka University Debating Society ) এর হল শাখার সাধারন সম্পাদক , থাকতেন তাপস দার পাশের বেডেই , এক সময় তারা এক বেডে ডাব্লিংও করতেন । কি ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের মাঝে । দেখে মনে হত আপন দুইভাই যেন । আজ থেকে ৩১১ এক অভিশপ্ত রুম ।

কেউ থাকবেন না এই রুমে । লোকজন দেখতে আসবে, এখন যেমনটি আসছে । DUPS (Dhaka University Photographic Society) এর প্রাক্তন পরপর দুইবার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, যিনি বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকে কর্মরত, দীপঙ্কর দিপুদা আমাকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন । আমি তাকে সান্তনা দিতে পারলাম না । এই কিছুদিন আগে যার বিয়েতে তাপসদার হাসিখুসি উপস্থিতি ছিল, তাকে আর কি বুঝ দিব ? আজ মনটা খুব খারাপ ।

শরীর খারাপের সাথে যোগ হল মন খারাপের ভেলা । আজ আমার ঘুম আসবেনা । আমার এই হাতে দাদার হাঁটের ছাপ লেগে আছে । আজ আমার চখে শুধুই ভাসবে তাপস দার মুখ । হলে যে মানুষটির কোন খোঁজ কেউ জানেনা, কাউকে কিছু না জানিয়েই নিরবে বিদায় নিলেন তিনি ।

এই বিদায় কষ্টের । এই বিদায় মেনে নেয়া যায়না । মেনে নিতে পারছিনা .. আপডেটঃ দুপুর ১২:৩০ : একটু আগে দুপুর ১২ টার দিকে লাশ ঢা,মে,ক, থেকে হলে এনে হল মন্দির প্রাঙ্গনে রাখা হয়েছিল যারা লাশ দেখতে পারেননি তাদের জন্য । শেষ দেখা শেষে প্রক্টর স্যার এর তত্ত্বাবধানে লাশ নিয়ে একটি এ্যাম্বুল্যান্স, ২তি মাইক্রো আর একটি বাস সহযোগে দেশের বাড়ি টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।