আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৯ নম্বর লোকাল বাসে নিউমার্কেট টু মিরপুর সপরিবার আনন্দভ্রমণে দেশের হর্তাকর্তারা

সবচে সুন্দর এই বেঁচে থাকা প্রায় একযুগ আগে,যখন সদ্য কৈশোর পেরিয়েছি, তখন বন্ধুমহলে কেউ ঘাপলা করলে এক অভিনব শাস্তির ব্যাবস্থা করেছিলাম আমরা । তাকে সন্ধ্যাবেলায় জোর করে মিরপুরগামী ৯ নম্বর (আমি জানিনা ওই বাসটা এখন আদৌ আছে কিনা,থাকলেও কি অবস্থা) লোকাল বাসে তুলে দেয়া হত ধানমন্ডি লেকের সামনে থেকে । ওই বাসটায় প্রচণ্ড ভীড় থাকত ওইসময় । লোকজনের ঠ্যালা ধাক্কা খেয়ে,ঘামের গন্ধ,পকেটমার,সহযাত্রীর শরীরের নিবিড় সান্নিধ্য ইত্যাদি নানা ঝামেলার পরও সফলতার সাথে যাত্রা সম্পন্ন করতে পারেন, তাদের কষ্টের মাত্রা মুসা ইব্রাহিমের এভারেস্ট জয়ের মত না হলেও কাছাকাছি হবে নিঃসন্দেহে (মুসা ভাই,কিছু মনে নিয়েন না) । তাই ছিল এই অভিনব শাস্তির ব্যাবস্থা ।

অবশ্য বেশির ভাগ সময়েই আমাদের সাজাপ্রাপ্ত বন্ধুরা বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়ে বাস আমাদের চোখের আড়াল হওয়ামাত্র আসাদগেট বা শুক্রাবাদে নেমে যেত । বিষয়টা ছিল নিতান্তই ফান । আজ এত বছর পরে এসে উপলব্ধি করি এর মাধ্যমে কি নিদারুণ উপহাসই না আমরা করেছি ওই বাসে যারা নিয়মিত যাতায়াত করে তাদের । দিনের পর দিন এই দুর্মূল্যের বাজারে নিজের গাড়ি কেনার সামর্থ্য না থাকায় অথবা ট্যাক্সিক্যাব বা সিএনজি তে চড়ার আর্থিক সঙ্গতির অভাবে মানুষগুলোকে বাধ্য হয়েই এই বাসে যাতায়াত করতে হয়েছে এবং হচ্ছে দিনের পর দিন । আমি শুধু ৯ নম্বর বাসের কথা বললাম ।

আমি জানি ঢাকার সব লোকাল বাসের অবস্থা একই রকম । একটা কথা মনে পড়ল । কবি বলেছেন-“ যার ব্যাথা সেই বোঝে, যার হারায় সেই খোঁজে ” । সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝতে হলে আগে তাদের সারিতে গিয়ে দাঁড়াতে হবে । লোকাল বাসে চলাচলের যে কষ্ট আর নগরজীবনে ছাপোষা মানুষের যন্ত্রণা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি আর অফিসে বসে কোন ভাবেই উপলব্ধি করা যাবে না ।

যারা ব্রেড,বাটার,জেলি দিয়ে নাস্তা করে আর চর্ব্য চোষ্য খায় তারা কিভাবে বুঝবে ভুখা নাঙ্গা মানুষের দুঃখ । ওইদিন দেখলাম ব্যাস্ত নগরীর যানজটের বুক চিরে এক ভি আই পির গাড়ি যাচ্ছে । সামনে হুটার দিয়ে পুলিশের গাড়ি রাস্তা পরিষ্কার করে ,আশেপাশের গাড়ি আটকিয়ে রাস্তার জ্যাম আরও বাড়িয়ে দিয়ে ভি আই পির গাড়ির অবাধ চলাচল নিশ্চিত করছে । বাংলাদেশের হর্তাকর্তা যারা আছেন তাদের স্ট্যাটাসের সিম্বল হচ্ছে তাদের গাড়ি । প্রাডো বা পাজেরো গাড়িতে এসি ছেড়ে কাঁচের মধ্য দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সব কিছুই বাড়াবাড়ি রকম ভাল লাগারই কথা ।

আমাদের দৈন্যদশা তাদের চোখ এড়িয়ে যাবে এ আর আশ্চর্য কি ! ধরে নিলাম উনি ভি আই পি, ওনার সময়ের অনেক মুল্য । কিন্তু ওই সময়টার খানিকটা অংশ যদি দেশের জন্য,দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করতেন আর নিজের কাজটা ঠিকমত করতেন তাহলে কি আমরা একটু হলেও ভাল থাকতে পারতাম না ? এনাদের মধ্যে সবাইকে ঢালাও ভাবে খারাপ বলা উচিৎ হবে না বোধহয় । নিশ্চয়ই ভাল মানুষও আছেন । কিন্তু আমার উপলব্ধি হচ্ছে সাধারণ মানুষের দুঃখ বুঝতে হলে আগে তাদের কাতারে এসে দাঁড়াতে হবে । ছোটবেলায় পড়েছিলাম- “কি যাতনা বিষে,বুঝিবে সে কিসে- কভু আশীবিষে দংশেনি যারে” ।

তাই ছাপোষা মানুষের যন্ত্রণা বুঝানোর জন্য আমাদের সেই ঘাপলাবাজ বন্ধুদের মত দেশের হর্তাকর্তা ও উপর তলার মানুষদেরকে বাধ্যতামুলকভাবে সপরিবারে সপ্তাহে একদিন ৯ নম্বর লোকাল বাসে নিউমার্কেট টু মিরপুর ভ্রমণ এবং বস্তিতে একদিন থাকা খাওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক । আপনারা কি বলেন ?? মনটা ভাল না । তাই খুব কষ্ট নিয়ে পোস্টটা দিলাম । আমার আগের একটা পোষ্টের লিঙ্ক দিলাম । শুধুমাত্র বড়রা মন খারাপ থাকলে পড়তে পারেন ইঁচড়ে পাকা ছেলেবেলার নীল ছবির গল্প ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।