আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার নাম মফিজ ,ভাড়া হইছে তিরিশ

রাজা.............................. অনেকদিন আগের কথা বাংলাদেশের কোন এক গ্রামে বাস করত মফিজ। ছোট বেলায় মফিজ গ্রামের মানুষের আলু , পটল, নারকেল, লাউ ইত্যাদি চুরি করে তাঁদের উপকার করার চেষ্টা করত। গ্রামের মানুষ তাঁর উপকারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। অনেকবার তাঁকে তাঁর উপকারের পুরস্কার স্বরূপ মারধোর করেছিল। তখন মফিজ বলতে চেয়েছিল, আমার নাম মফিজ ; আমি আপনাগো সেবা করবার চাই।

মফিজ সেদিন বলতে পারে নাই। তবুও মফিজ কখনোই মানুষের উপকার করা থেকে পিছপা হয়নি। মফিজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের জন্য উপকার করার প্রবনতাও বেড়ে গেল। একসময় গ্রামের মানুষ ভাবলো যে, মফিজ কেন শুধুমাএ একটা গ্রামের মানুষের উপকার করবে ? তারচেয়ে বরং গোটা দেশের উপকার করুক। তাই তাঁরা মফিজকে লাথি মেরে সম্মানের সাথে গ্রাম থেকে বের করে দিল।

এরপর মফিজ চিন্তা করল যে কোথায় গেলে একসাথে অনেক মানুষের উপকার করা যাবে। বুঝতে পারল যে ঢাকা গেলেই একসাথে অনেক মানুষের উপকার করা সম্ভব। মফিজ ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় এসে মফিজ দেখলো যে ওখানকার লোকজনের উপকার করাটা অতিব জরুরি। আর উপকারের পুরস্কার ও বেশ আরামদায়ক।

গ্রামে চুরি করে ধরা খেলে কয়েকজন মিলে মারধোর করে কিংবা বিচার সালিশ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঢাকায় চুরি করে ধরা খেলে একসাথে কতজন মারধোর করে তা তাৎক্ষনিকভাবে গুণে তাল পাওয়া যায়না। আবার মারধোরের পর খাওয়া থাকার ব্যাবস্থা স্বরূপ পুলিশ মারফত জেলে প্রেরন করে। কিছুদিনের মধ্যেই মফিজ অনেক লাইন-ঘাট বুঝে ফেলল। সে দেখল যে এখানে একটু টাকা পয়সা খরচ করলেই পুরস্কারের মাএা কমানো যায়।

তাই মফিজ কাঁচা টাকা পয়সার কথা চিন্তা করে একটা সম¥ানীয় পেশায় নিয়োজিত করল নিজেকে। সে পকেটমারা শুরু করল। এই লাইনে সে খুব অল্প সময়ের ভেতর বেশি করে জনসেবা করতে সফল হল। অনেকের সাথেই তাঁর পরিচয় হল যারা তাঁর মত জনসেবা করে বেড়ায়। অর্থাৎ সে বেশকিছু পকেটমার, চোর, ছিনতাইকারী বন্ধু পেয়ে গেল।

ঢাকা শহরে একটা পেশায় নিয়োজিত থেকে চলা সম্ভব নয়। তাই মফিজ তাঁর এক বন্ধুর হাত ধরে অন্য একটি পেশায় নিয়োজিত হল। এটার মাধ্যমে মফিজ প্রত্যক্ষভাবে জনগনের সেবা করার সুযোগ পেল। সে ভাল ভাল মেয়ে মানুষের জন্য ভাল ভাল ছেলে যোগাড় করত। সে রাস্তা থেকে সেইসব ছেলেদের ধরে আনত যারা পতিতালয়ে যাবার রাস্তা জানত না।

এতে মেয়েগুলোর উপকার হত, ছেলেগুলোর উপকার হত আবার তাঁর নিজের ও উপকার হত। যাইহোক এই পেশা ধরেই কালু ভাইয়ের সাথে পরিচয় ঘটে মফিজের। কালু ভাই ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক নেতা। কালু ভাই মফিজের মধ্যে জনসেবা করার প্রবনতা দেখে আপ্লুত হন। তিনি মফিজকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বৈনি করায় দেন।

অভিষেকেই মফিজ সেঞ্চুরী হাঁকিয়ে কালু ভাইয়ের মন জয় করেন। এরপর থেকে কালু ভাই যেখানে যেত মফিজকে নিয়ে যেত। মফিজ আরও কাছে থেকে জনসেবা করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে একদিন কালু ভাইয়ের সমকক্ষে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখতে থাকে। এ কারনে কালু ভাইয়ের সকল আদেশ মফিজ অক্ষরে অক্ষরে পালন করত। বেশকিছুদিন যাবার পরে মফিজ লক্ষ্য করল যে কালু ভাইয়ের সাথে থেকে সে কালু ভাইয়ের সমকক্ষ হতে পারবেনা।

এত বছর গোলামি করেও তাঁর অবস্থান একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে। সে কালু ভাইয়ের সাথে থেকেই নিজে একটা বড় দলে ঢোকার চেষ্টা করল। অদম্য মেধাবী আর দেশ সেবার নেশায় মত্ত মফিজ খুব তাড়াতাড়ি কালু ভাইকে টপকিয়ে একটা বড় দলে জায়গা পেতে সক্ষম হল। সব চোর ছ্যাঁচরা আর পকেটমাররাও দেশ সেবার জন্য যোগ দিল মফিজের সাথে। সকলে একসাথে দেশ সেবা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল।

মফিজের সাফল্যে আশান্বিত হয়ে অনেক বড় বড় দলের সংস্কারপন্থী নেতা যারা দল ছেড়েছিল নিজেদের নৈতিকতার জন্য, তাঁরাও এসে ভিড় জমালো তাঁর সাথে। খুব অল্প সময়ে মফিজ রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের একটা পাকা অবস্থান করে নিল। মফিজ তাঁর দেশ সেবার জন্য যে সকল গুণাবলী দরকার তার সবটাই অর্জন করল। যদিও আগে থেকেই তাঁর কিছু গুণ (যেমন:চুরি,ছিনতাই,দালালী) ছিল। মফিজ এত গুণ অর্জন করল যে তাঁর দলীয় নেএী তাঁকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিতে বাধ্য হল।

সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের যোগ্য কাছাখোলা পাবলিকেরা মফিজ কে দেশ সেবার সুযোগ করে দিল। মফিজ তাঁর দলীয় নেএীর সিদ্ধান্তকে সত্য প্রমাণ করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করল। নেএী খুশি হয়ে প্রথম চান্সেই মফিজকে একটা মন্ত্রী পদ দিয়ে দিলেন। মফিজের এখন অনেক কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে সে।

দেশের সেবা করে। জনগণ এখন আর মফিজের উপকারে অতিষ্ট না। বরং মফিজের সাথে কোনো জনমের সম্পর্ক আছে কিনা সেইটা খোঁজ করে তাঁর কাছ থেকে বেশী উপকার পাবার চেষ্টা করে। মফিজ এখন যেখানে সেখানে সমাবেশ করতে পারে। মাশাআল্লাহ কাছাখোলা পাবলিকের অভাব হয়না তাঁর সমাবেশে।

মফিজ এখন প্রাণ খুলে বলতে পারে, আমার নাম মফিজ, ভাড়া হইছে তিরিশ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।