বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। আর কিছুক্ষণ পর ঘোষিত হতে যাচ্ছে রাজাকারকূল শিরোমনি গোলাম আযম এর যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গোলাম আযমের নেতৃত্বে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাযজ্ঞ চলেছিল, তার প্রমাণ আনাচে-কানাচে সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তেমনই একটি সাইট থেকে ২০০৯ সালে এই সামহোয়্যারইন ব্লগের জন্য ইংরেজী থেকে অনুবাদ করে একটি সিরিজ পোষ্ট দিয়েছিলাম যাতে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের কীর্তিকলাপের বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। গোলাম আযমের রায় ঘোষণার প্রাক্কালে ঐ সিরিজের গোলাম আযমের অংশটুকু আজ আবার রিপোষ্ট করলাম।
এই পোষ্টের শেষে মূল পোষ্টের লিংকও সংযুক্ত করা হল।
গোলাম আযমঃ
ছবিঃ গোলাম আযম, রাও ফরমান এবং মালেক, বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবি হত্যার নীলনকশা নিয়ে আলোচনায় রত
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর এবং রাজাকারবাহিনীর আমির গোলাম আজম ছিল একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী। ১৯৭১ এর গণহত্যা, ধর্ষণ এবং সাড়ে ৪ লক্ষ বাঙ্গালী নারীর সম্ভ্রমহানি এবং শত শত বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবি হত্যার পিছনের ঘৃণ্য পশু। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা থেকে উদ্ধারকৃত একটি ছবিতে গোলাম আযম এবং তার শীর্ষ সহকারী মতিউর রহমান নিজামীকে প্রগতিশীল বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাদের একটি তালিকা পাকিস্তানী জেনারেলদের হাতে দিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদের হোতা এই গোলাম আযম ৭০হাজার রাজাকার, আল-বদর এবং আল – শামস্ বাহিনীর প্রধান ছিল।
মওদুদীর কাছ থেকে জরুরী টেলিগ্রাম পাওয়ার পর গোলাম আজম তার সাথে দেখা করার জন্য ১৯৭১ সালের ২২শে নভেম্বর লাহোর রওনা হয়। শেখ মুজিব সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করার কারণে সে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেনি। বাংলাদেশে ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়ে এই প্রধান অপরাধী হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে মক্কা গমন করে। শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং একটি প্রতি-বিপ্লব ঘটানোর উদ্দেশ্যে সে সৌদী আরব থেকে গোলাম আযম দুবাই, আবুধাবী, কুয়েত, বৈরুত এবং লিবিয়া গমন করে। তার ক্রমাগত আন্তর্জাতিক জনসংযোগের পর সে লন্ডন পৌঁছায়।
লন্ডন থেকে সে দৈনিক সংগ্রাম নামে একটি জামাতি পত্রিকা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রকাশ করে। ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা লন্ডনে গোলাম আযমের কর্মকান্ডের ওপর একটি কৌতুহলউদ্দীপক রিপোর্ট প্রকাশ করেঃ ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে, গোলাম আযম বাংলাদেশবিরোধী কর্মকান্ডের একটি নীল নকশা পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়ীতে অনুষ্ঠিত একটি সভায় পেশ করে। একটি বিশ্বস্ত সূত্রানুসারে কিছু পাকিস্তানী নাগরিকও সেই সভায় উপস্থিত ছিল। সেই গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ছিলঃ এ.টি.সাদি, তোয়াহা বিন হাবিব, আলী হোসেন, ব্যরিস্টার আখতার উদ্দীন, মেহের আলী এবং ডাঃ তালুকদার। পাকিস্তানী নাগরিক মাহমুদ আলী ছিল সেই সভায় উপস্থিত পাকিস্তানীদের মধ্যে অন্যতম।
সভার সভাপতি গোলাম আযম বলেছিল, “লন্ডন থেকে আমাদের কর্মকান্ড চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং কাউকে দেশে ফিরে যেতে হবে। আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে, তা নাহলে কোনো ফল আসবেনা। কিন্তু তোমরা যদি দেশে ফিরে যাও তাহলে তোমাদের যোগাযোগ থাকবে। আমি ইতিমধ্যে আমার লোকদের সাথে যোগাযোগ করেছি।
সবকিছু ঠিক আছে। ”প্রত্যেক সদস্যকে একটি লিফলেট বিতরণ করে গোলাম আযম বলল, “এটি বাংলাদেশের সমস্ত গ্রামের মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। জনগণ আমাদের সাথে আছে। কিছু সুত্র অনুসারে কথিত লিফলেটটিতে পাকিস্তানের সাথে প্রস্তাবিত জোটের পক্ষে প্রচারণা ছিল। অন্যরা বিশ্বাস করল যে এটি মসজিদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এটি একটি ইসলামিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল।
কিছু লোক ঐসব লিফলেট বিলি করা অবস্থায় ঢাকার কাছে গ্রেফতার হয়। গোলাম আযম বাংলাদেশবিরোধী কর্মকান্ডে পাকিস্তান এবং অন্যান্য কিছু মধ্য-পূর্ব দেশের সমর্থনের কথাও উল্লেখ করে। (জিয়ার মতো) গোলাম আযমও বলে, “টাকা কোনো সমস্যা নয়। ” শোনা যায় যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হওয়া মসজিদ পূননির্মাণের জন্য গোলাম আযম সৌদী আরবের কাছ থেকে সাড়ে চার কোটি রিয়াল সংগ্রহ করে। ধূর্ত গোলাম আযম ঐ অর্থের বেশীরভাগ অংশ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে বাড়ী কেনার জন্য খরচ করে।
বর্তমানে তার ছেলে মেহেদী ঐ বাড়ীতে বসবাস করছে। গোলাম আযমের বড় ছেলে কাইফি আজমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আইএসআই এবং জামাতী সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
মূল পোষ্ট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।