আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুই আমাদের অপরাধী করে চলে গেলি.........................

স্বপ্নময়ী আমি স্বপ্ন দেখি সবসময় সুন্দরের...... বরগুনা জেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়ন। গ্রামের নাম জাকিরতবক। শস্য শমলা সুজলা সফলা ছোট্ট একটা গ্রাম। সেই গ্রামের দরিদ্র মা আকলিমা খাতুনের মেয়ে ফেরদৌসী আখতার। মাত্র ১০ বছর বয়সেই রূপে-গুণে মুগ্ধ করেছে সবাইকে।

জাকিরতবক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব পরীক্ষায়ই সে প্রথম হয়েছে। গ্রামের এবং স্কুলের সবাই আদর করে ডাকত সোনাবরু। সোনার মতো বরণ। বাবা কাশেম আলী দফাদার মারা গেছেন একরকম বিনা চিকিত্সায়। সোনাবরু তখন অনেক ছোট।

তার পর থেকে অভাব অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী। মা আকলিমা খাতুন সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন গ্রামের সড়ক মেরামত কাজে। তারপর যা জোটে তাই দিয়ে তাদের কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটে। একবেলা খাবার জোটে তো অন্যবেলা অনাহার। তার পরও দুঃখিনী মা সোনাবরুকে স্কুলে পড়াচ্ছিলেন।

স্কুলের শিক্ষকরা উৎসাহ দেন, মেয়ে তোমার মেধাবী, পড়াও। তোমার দুঃখ ঘুচবে একদিন। পেটে পাথর বেঁধে মেয়েকে পড়ান আকলিমা। আর বছর শেষে মায়ের শ্রমে-ঘামে জবজবে মুখ হাসিতে ঝলমল করে। সোনাবরু এবারও পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।

এমনি করেই সে চতুর্থ শ্রেণীতে উঠেছে। ছোট শিশু সোনাবরু মায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। উদরজুড়ে ক্ষুধা আর দু’চোখভরা পানি নিয়ে মাকে প্রশ্ন করে—মা গো, আমরা এত গরিব কেন? সবার বাবা আছে, আমাদের বাবা নেই কেন? জবাব দিতে পারেন না অসহায় মা। চোখ উপচিয়ে নামে অশ্রু। এভাবেই দিন কাটছিল।

তারপর আসে সেই দিন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১। আগের দিনও বাড়িতে কিছু রান্না হয়নি। না খেয়েই শুয়ে পড়েছিল সোনাবরু। কিন্তু আজকের দিনটা তো অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল। আজ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে।

শুধু আজ যে সোনাবরুর জন্মদিনও। সকালে ঘুম থেকে উঠে সোনাবরু দেখে, পাতিলে খাবার নেই, হাঁড়িতে চাল নেই। মাকেও কোথাও খুঁজে পায় না। মা যে সাতসকালে উঠে পাশের গ্রামে তার বাপের বাড়িতে ছুটে গেছে ছেলেমেয়ের জন্য কিছু জোগাড় করতে, সে কথা তো ছোট্ট সোনাবরু জানে না। দু’দিনের ক্ষুধার্ত সোনাবরু চলে যায় স্কুলে।

যাওয়ার সময় পাশের একটি দোকান থেকে অনেক বলে-কয়ে জোগাড় করে একটি ছোট্ট কেক, জন্মদিনের কেক। তারপর সেই কেক দিয়ে শিক্ষক ও সহপাঠীদের নিয়ে পালন করে নিজের জন্মদিন। এর মাঝেই হেডমাস্টার পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। সোনাবরু আবার প্রথম হয়েছে। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরে সোনাবরু।

দেখে শূন্য হাঁড়ি-পাতিল। মাও ফেরেননি। ছোট্ট সোনাবরু কী করে জানবে তার দুঃখিনী মা তখন ভাই-ভাবীদের গেরস্থালি কাজ করে কিছু চালের সংস্থান করছে। দুঃখে-অভিমানে উথলে ওঠে ছোট মেয়ে সোনাবরুর বুক। সর্বগ্রাসী ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে কতক্ষণ খালি মেঝেতে হৃদয় বিছিয়ে কাঁদে।

চোখ ঘোলা হয়ে আসতে থাকে। মাথা ঘুরতে থাকে। হাত-পা কাঁপতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মা আকলিমা সামান্য কিছু চাল জোগাড় করে বিকালে বাড়ির পথ ধরেন। ফিরতে ফিরতে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যা।

ত্রস্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকে দেখেন জরাজীর্ণ ঘরের দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকেই দেখেন তার আদরের সোনাবরুর প্রাণহীন নিথর দেহ শূন্যে ঝুলছে। সেই সোনামুখ গোলগাল হায় সকলি তেমনি আছে। শুধু ভয়াল ক্ষুধার দংশন খেয়ে সোনাবরু চলে গেছে। সোনাবরু আত্মহত্যা করেছে।

আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিত্কার করে মাটিতে আছড়ে পড়েন দুঃখিনী মা—ওরে সোনাবরু, ওরে আমার জাদু, ফিরে আয় ফিরে আয়। মায়ের সর্বস্বহারা আহাজারি ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে উঠানে আছড়ে পড়ে। তারপর ছড়িয়ে যায় এখানে-ওখানে। প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরতে থাকে দশদিগন্ত চৌচির করে। একে একে জড়ো হয় পাড়া-প্রতিবেশীরা।

কিন্তু সোনাবরু আর ফেরে না। ফিরবে না। যেখানে সোনাবরু গেছে সেখান থেকে কেউ কোনোদিন ফেরে না। সংক্ষেপে এই হলো সোনাবরুর কাহিনী। কালের কণ্ঠে সোহেল হাফিজের এ প্রতিবেদনটি পাঠ করে আমি কঁকিয়ে উঠেছি বেদনায়।

বলতে ইচ্ছে করেছে, সোনাবরু মা আমার, অবর্ণনীয় ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলি তুই। কেন তুই এমন করলি? কিসের অভিমান জমা হয়েছিল তোর ওই ছোট্ট বুকে? কার ওপর এত অভিমান ছিল তোর?মা গো, তোর হতভাগিনী মা আর কিইবা করতে পারত। অসম্ভব নিষ্ঠুর হৃদয়হীন একটা সমাজে জন্মেছিলি তুই। এই সমাজের যারা কর্তা, হোমড়া-চোমড়া তারা অষ্টপ্রহর ব্যস্ত থাকে প্রতিপক্ষ ঘায়েলের নোংরা মানসিকতা নিয়ে। ক্ষমতার লোভ আর ক্ষমতার দম্ভে এখান থেকে তিরোহিত হয়েছে মানবতা, দায়িত্বশীলতা, আদর্শ, ন্যায়নীতি আর নৈতিকতা।

দুর্নীতি এখন এখানকার সংস্কৃতি। স্বজনপ্রীতি, লুণ্ঠন আর অবিচারই এখন জীবন। বিশ্বাস কর মা, এমন একটা দেশ আমরা কোনোদিন চাইনি। এমন একটা বর্বরতার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমরা এ সমাজটাকে বদলাতে চেয়েছিলাম।

আমরা চেয়েছিলাম এমন এক দেশ, যেখানে কেউ কাউকে শোষণ করবে না, কেউ আর না খেয়ে থাকবে না। কিন্তু আমরা পারিনি। আমরা লোভের কাছে, স্বার্থপরতার কাছে, নিষ্ঠুরতার কাছে আমাদের সব অর্জন জলাঞ্জলি দিয়েছি। আর তাই তো আমাদের বুকের ওপর আজ পুলিশের হিংস্র বুট। আর আমাদের কর্তারা, আমাদের ভাগ্যবিধাতারা চারদিকে তথাকথিত রাজনীতির নোংরা বর্জ্য ছড়িয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত আছে হাতি-ঘোড়া নিয়ে।

এদের সময় কোথায় তোর মতো একটা ছোট্ট সোনামণির বুকের কষ্ট লাঘবের। মা গো, আমাদের এই নোংরা রাজনীতি, আমাদের আত্মা বিক্রয়কারী পরগাছা সুশীল সমাজের ওপর অভিমান করে এ তুই কী করলি মা। তোর নিষ্পাপ অভিমান ধারণ করার জন্য যে যোগ্যতা লাগে, তা আমাদের রাজনীতি বহু আগেই হারিয়ে বসে আছে। এই রাজনীতি গলিত শবের মতো দুর্গন্ধযুক্ত। বিষাক্ত।

এই রাজনীতিতে সবকিছুর স্থান আছে, শুধু মানুষের কোনো দাম নেই। মা গো, মাটির ধরার ধূলিবালি তো তোকে আর কোনোদিন স্পর্শ করবে না। তুই এখন যেখানে আছিস সে তো চিরবসন্তের দেশ। বাগানে ফুলে ফুলে তুই চুমু দিয়ে যাচ্ছিস। প্রজাপতির মতো ছুটছিস এ গাছ থেকে সে গাছে।

ক্ষুধা-তৃষ্ণাহীন অনন্ত আনন্দ তোর চারদিকে হিল্লোল তুলছে। আর তুই ডানাওয়ালা প্রজাপতি, ছোট্ট পাখির মতো কিচিরমিচির। দেখে দেখে ফেরেশতাদের চোখ বারবার ভিজে যাচ্ছে পানিতে, আহা মানুষ এমন নিষ্ঠুর কেন, এই রকম চমত্কার প্রাণবন্ত একটি মেয়েকে মানুষরা না খাইয়ে খাইয়ে হত্যা করেছিল। মানুষদের মধ্যে আজ কি একজনও মানুষ নেই? সোনাবরু, মা আমার, সেই অনির্বচনীয় আনন্দ মুহূর্তে তুই কিন্তু মনে কোনো দুঃখ রাখিস না। ক্ষমা করে দিস তোর জনমদুঃখিনী অসহায় মাকে।

আর পারলে বিধাতাকে বলিস, প্রভু, বাংলাদেশ আজ আর কোনো মানবিক ভূখণ্ড নয়। ওখানে ১৬ কোটি লোক আছে, কিন্তু মানুষ নেই একজনও। এমন ভুবন রাখার আর কোনো প্রয়োজন আছে কি? এ কথা বলতে না পারলে বলিস, ওই দেশটাকে প্রভু রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের হাত থেকে রক্ষা কর। আমার মতো আরও লাখ লাখ শিশু ওখানে প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। ঘরে ঘরে স্তূপীকৃত হয়ে আছে জমাটবাঁধা কান্না।

মানুষের দুঃখের পাশে দাঁড়ানোর কেউ আজ আর নেই ওদেশে। ওখানকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে পাপে। দগ্ধ হয়ে গেছে সবুজ। শুকিয়ে মরছে নদী। প্রভু একটা কিছু কর।

বরগুনা জেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়ন। গ্রামের নাম জাকিরতবক। শস্য শমলা সুজলা সফলা ছোট্ট একটা গ্রাম। সেই গ্রামের দরিদ্র মা আকলিমা খাতুনের মেয়ে ফেরদৌসী আখতার। মাত্র ১০ বছর বয়সেই রূপে-গুণে মুগ্ধ করেছে সবাইকে।

জাকিরতবক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব পরীক্ষায়ই সে প্রথম হয়েছে। গ্রামের এবং স্কুলের সবাই আদর করে ডাকত সোনাবরু। সোনার মতো বরণ। বাবা কাশেম আলী দফাদার মারা গেছেন একরকম বিনা চিকিত্সায়। সোনাবরু তখন অনেক ছোট।

তার পর থেকে অভাব অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী। মা আকলিমা খাতুন সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন গ্রামের সড়ক মেরামত কাজে। তারপর যা জোটে তাই দিয়ে তাদের কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটে। একবেলা খাবার জোটে তো অন্যবেলা অনাহার। তার পরও দুঃখিনী মা সোনাবরুকে স্কুলে পড়াচ্ছিলেন।

স্কুলের শিক্ষকরা উৎসাহ দেন, মেয়ে তোমার মেধাবী, পড়াও। তোমার দুঃখ ঘুচবে একদিন। পেটে পাথর বেঁধে মেয়েকে পড়ান আকলিমা। আর বছর শেষে মায়ের শ্রমে-ঘামে জবজবে মুখ হাসিতে ঝলমল করে। সোনাবরু এবারও পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।

এমনি করেই সে চতুর্থ শ্রেণীতে উঠেছে। ছোট শিশু সোনাবরু মায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। উদরজুড়ে ক্ষুধা আর দু’চোখভরা পানি নিয়ে মাকে প্রশ্ন করে—মা গো, আমরা এত গরিব কেন? সবার বাবা আছে, আমাদের বাবা নেই কেন? জবাব দিতে পারেন না অসহায় মা। চোখ উপচিয়ে নামে অশ্রু। এভাবেই দিন কাটছিল।

তারপর আসে সেই দিন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১। আগের দিনও বাড়িতে কিছু রান্না হয়নি। না খেয়েই শুয়ে পড়েছিল সোনাবরু। কিন্তু আজকের দিনটা তো অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল। আজ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে।

শুধু আজ যে সোনাবরুর জন্মদিনও। সকালে ঘুম থেকে উঠে সোনাবরু দেখে, পাতিলে খাবার নেই, হাঁড়িতে চাল নেই। মাকেও কোথাও খুঁজে পায় না। মা যে সাতসকালে উঠে পাশের গ্রামে তার বাপের বাড়িতে ছুটে গেছে ছেলেমেয়ের জন্য কিছু জোগাড় করতে, সে কথা তো ছোট্ট সোনাবরু জানে না। দু’দিনের ক্ষুধার্ত সোনাবরু চলে যায় স্কুলে।

যাওয়ার সময় পাশের একটি দোকান থেকে অনেক বলে-কয়ে জোগাড় করে একটি ছোট্ট কেক, জন্মদিনের কেক। তারপর সেই কেক দিয়ে শিক্ষক ও সহপাঠীদের নিয়ে পালন করে নিজের জন্মদিন। এর মাঝেই হেডমাস্টার পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। সোনাবরু আবার প্রথম হয়েছে। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরে সোনাবরু।

দেখে শূন্য হাঁড়ি-পাতিল। মাও ফেরেননি। ছোট্ট সোনাবরু কী করে জানবে তার দুঃখিনী মা তখন ভাই-ভাবীদের গেরস্থালি কাজ করে কিছু চালের সংস্থান করছে। দুঃখে-অভিমানে উথলে ওঠে ছোট মেয়ে সোনাবরুর বুক। সর্বগ্রাসী ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে কতক্ষণ খালি মেঝেতে হৃদয় বিছিয়ে কাঁদে।

চোখ ঘোলা হয়ে আসতে থাকে। মাথা ঘুরতে থাকে। হাত-পা কাঁপতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মা আকলিমা সামান্য কিছু চাল জোগাড় করে বিকালে বাড়ির পথ ধরেন। ফিরতে ফিরতে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যা।

ত্রস্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকে দেখেন জরাজীর্ণ ঘরের দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকেই দেখেন তার আদরের সোনাবরুর প্রাণহীন নিথর দেহ শূন্যে ঝুলছে। সেই সোনামুখ গোলগাল হায় সকলি তেমনি আছে। শুধু ভয়াল ক্ষুধার দংশন খেয়ে সোনাবরু চলে গেছে। সোনাবরু আত্মহত্যা করেছে।

আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিত্কার করে মাটিতে আছড়ে পড়েন দুঃখিনী মা—ওরে সোনাবরু, ওরে আমার জাদু, ফিরে আয় ফিরে আয়। মায়ের সর্বস্বহারা আহাজারি ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে উঠানে আছড়ে পড়ে। তারপর ছড়িয়ে যায় এখানে-ওখানে। প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরতে থাকে দশদিগন্ত চৌচির করে। একে একে জড়ো হয় পাড়া-প্রতিবেশীরা।

কিন্তু সোনাবরু আর ফেরে না। ফিরবে না। যেখানে সোনাবরু গেছে সেখান থেকে কেউ কোনোদিন ফেরে না। সংক্ষেপে এই হলো সোনাবরুর কাহিনী। কালের কণ্ঠে সোহেল হাফিজের এ প্রতিবেদনটি পাঠ করে আমি কঁকিয়ে উঠেছি বেদনায়।

বলতে ইচ্ছে করেছে, সোনাবরু মা আমার, অবর্ণনীয় ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলি তুই। কেন তুই এমন করলি? কিসের অভিমান জমা হয়েছিল তোর ওই ছোট্ট বুকে? কার ওপর এত অভিমান ছিল তোর?মা গো, তোর হতভাগিনী মা আর কিইবা করতে পারত। অসম্ভব নিষ্ঠুর হৃদয়হীন একটা সমাজে জন্মেছিলি তুই। এই সমাজের যারা কর্তা, হোমড়া-চোমড়া তারা অষ্টপ্রহর ব্যস্ত থাকে প্রতিপক্ষ ঘায়েলের নোংরা মানসিকতা নিয়ে। ক্ষমতার লোভ আর ক্ষমতার দম্ভে এখান থেকে তিরোহিত হয়েছে মানবতা, দায়িত্বশীলতা, আদর্শ, ন্যায়নীতি আর নৈতিকতা।

দুর্নীতি এখন এখানকার সংস্কৃতি। স্বজনপ্রীতি, লুণ্ঠন আর অবিচারই এখন জীবন। বিশ্বাস কর মা, এমন একটা দেশ আমরা কোনোদিন চাইনি। এমন একটা বর্বরতার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমরা এ সমাজটাকে বদলাতে চেয়েছিলাম।

আমরা চেয়েছিলাম এমন এক দেশ, যেখানে কেউ কাউকে শোষণ করবে না, কেউ আর না খেয়ে থাকবে না। কিন্তু আমরা পারিনি। আমরা লোভের কাছে, স্বার্থপরতার কাছে, নিষ্ঠুরতার কাছে আমাদের সব অর্জন জলাঞ্জলি দিয়েছি। আর তাই তো আমাদের বুকের ওপর আজ পুলিশের হিংস্র বুট। আর আমাদের কর্তারা, আমাদের ভাগ্যবিধাতারা চারদিকে তথাকথিত রাজনীতির নোংরা বর্জ্য ছড়িয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত আছে হাতি-ঘোড়া নিয়ে।

এদের সময় কোথায় তোর মতো একটা ছোট্ট সোনামণির বুকের কষ্ট লাঘবের। মা গো, আমাদের এই নোংরা রাজনীতি, আমাদের আত্মা বিক্রয়কারী পরগাছা সুশীল সমাজের ওপর অভিমান করে এ তুই কী করলি মা। তোর নিষ্পাপ অভিমান ধারণ করার জন্য যে যোগ্যতা লাগে, তা আমাদের রাজনীতি বহু আগেই হারিয়ে বসে আছে। এই রাজনীতি গলিত শবের মতো দুর্গন্ধযুক্ত। বিষাক্ত।

এই রাজনীতিতে সবকিছুর স্থান আছে, শুধু মানুষের কোনো দাম নেই। মা গো, মাটির ধরার ধূলিবালি তো তোকে আর কোনোদিন স্পর্শ করবে না। তুই এখন যেখানে আছিস সে তো চিরবসন্তের দেশ। বাগানে ফুলে ফুলে তুই চুমু দিয়ে যাচ্ছিস। প্রজাপতির মতো ছুটছিস এ গাছ থেকে সে গাছে।

ক্ষুধা-তৃষ্ণাহীন অনন্ত আনন্দ তোর চারদিকে হিল্লোল তুলছে। আর তুই ডানাওয়ালা প্রজাপতি, ছোট্ট পাখির মতো কিচিরমিচির। দেখে দেখে ফেরেশতাদের চোখ বারবার ভিজে যাচ্ছে পানিতে, আহা মানুষ এমন নিষ্ঠুর কেন, এই রকম চমত্কার প্রাণবন্ত একটি মেয়েকে মানুষরা না খাইয়ে খাইয়ে হত্যা করেছিল। মানুষদের মধ্যে আজ কি একজনও মানুষ নেই? সোনাবরু, মা আমার, সেই অনির্বচনীয় আনন্দ মুহূর্তে তুই কিন্তু মনে কোনো দুঃখ রাখিস না। ক্ষমা করে দিস তোর জনমদুঃখিনী অসহায় মাকে।

আর পারলে বিধাতাকে বলিস, প্রভু, বাংলাদেশ আজ আর কোনো মানবিক ভূখণ্ড নয়। ওখানে ১৬ কোটি লোক আছে, কিন্তু মানুষ নেই একজনও। এমন ভুবন রাখার আর কোনো প্রয়োজন আছে কি? এ কথা বলতে না পারলে বলিস, ওই দেশটাকে প্রভু রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের হাত থেকে রক্ষা কর। আমার মতো আরও লাখ লাখ শিশু ওখানে প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। ঘরে ঘরে স্তূপীকৃত হয়ে আছে জমাটবাঁধা কান্না।

মানুষের দুঃখের পাশে দাঁড়ানোর কেউ আজ আর নেই ওদেশে। ওখানকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে পাপে। দগ্ধ হয়ে গেছে সবুজ। শুকিয়ে মরছে নদী। প্রভু একটা কিছু কর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।