আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোয়েল, দেশী ল্যাপটপ; আমাদের তারুণ্যের মুক্তিপণ!

সাইফ শাহজাহান শুচি সৈয়দ পাঠক নিতান্তই ব্যক্তিগত দুঃখ নিয়ে আজকের এই লেখাটি লিখছি। লেখার আগে দীর্ঘ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পাড় করেছি সময়। শেষ পর্যন্ত মন থেকে সায় পেয়ে লিখছি বিচারের ভার আপনাদের। ছোটবেলায়, আমাদের স্কুল জীবনে, পরীক্ষা দিয়েছি রেজাল্ট পেয়েছি, এক ক্লাশ থেকে আরেক ক্লাশে উঠেছি। পদ্ধতিটা ছিল অনেকটা একমুখী।

শিক্ষকরাই ছিলেন সব সিদ্ধান্ত একক ভাবে প্রদানের অধিকারী। অনেক পরিবর্তন এসেছে এখনকার স্কুলিং-এ। শিক্ষকরা অনেক উদার, অনেক ছাত্রবান্ধব। আমার পিতা শিক্ষকতা করেছেন। তিনি তার পেশায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন কিনা সেটা জানার সৌভাগ্য আমার হয়নি কিন্তু তিনি যে একজন শ্রেষ্ঠ পিতা ছিলেন তা আমি নির্দ্বিধায় ঘোষণা করতে পারি।

স্বভাবতই শিক্ষকদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আমার মজ্জাগত। এখন প্রত্যেক টার্মের পরীক্ষার পর ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা শিক্ষকরা মূল্যায়নের পর অভিভাবকদের কাছে পাঠান তাদের মূল্যায়ন বা প্রদত্ত মার্কস ঠিক আছে কিনা সেটা দেখার জন্য। আমার সন্তানদের খাতাও সেই সুবাদে আমাকে দেখতে হয়। দেখে সই করে ফেরত দেবার জন্য। শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি একটি স্বচ্ছতা নিশ্চিতকর যুগান্তকারী পদ্ধতি।

এই পদ্ধতি প্রমাণ করে আমাদের শিক্ষকেরা অনেক উদার এবং শিক্ষকতার মহান পেশার উপযুক্ত। সমাজের অনেক অঙ্গনেই অনেক প্রথাগত অনুদারতা, সংস্কার-কুসংস্কার বাসা বেধে আছে বলেই সমাজের কাক্সিক্ষত অপরিহার্য পরিবর্তন ঘটছে না। শুধু শিক্ষাঙ্গনের এই জবাবদিহিতার পদ্ধতিটা যদি আমরা আমাদের রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং জীবনযাপনের নানা ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে পারতাম তাহলে আমার মনে হয় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটতো। জবাবদিহিতামূলক এই খাতা পুনর্মূল্যায়ন তো দূরের কথা আমি আমার গোটা জীবনে পরীক্ষা দেবার পর উত্তরপত্রের চেহারা পর্যন্ত দেখিনি। আমাদের এক বড় ভাই মোতাহার হোসেন, পুস্তকব্যবসায়ীÑতার কন্যা পিয়া এখন বুয়েটে পড়ছে; শিগগিরি যে কিনা স্থাপত্য বিভাগ থেকে পাশ করে নবীন স্থপতি হিসেবে বেরিয়ে আসবে।

ছোট বেলায় এই অসম্ভব মেধাবী মেয়েটি আমাদের প্রতিবেশী ছিল। পুস্তক ব্যবসায়ী বাবার মেয়ে, বই পড়তে পটু ছিল। ও যখন স্কুলেই ভর্তি হয়নি তখন একদিন ওর বাবার সঙ্গে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। পিয়া তখন ‘ছোটদের মহাভারত’ ও ‘ছোটদের রামায়ণ’ পড়ে শেষ করেছে। শুনে আমি বিস্মিত! বিস্ময় কাটাতে আমি ওকে মহাভারতের কয়েকটি চরিত্রের নাম বলে তাদের কাহিনী গুলো কি জানতে চাইলামÑপিয়া এতো স্বচ্ছন্দে আনুপূর্বিক ভাবে কাহিনী বয়ান করে চরিত্র গুলো কে কার কেমন আÍীয় তা বিশদ বলে গেলÑ শুনে আমার আক্কেলগুড়–ম! ওকে সেদিন আমার কাছে মনে হয়েছিলÑ আরে, এতো একটা জ্যান্ত রোবট! যাকে বলে দাঁড়ি, কমাসহ মুখস্থপ্রায়।

আমি বিস্মিত হয়েছিলাম আমার যতটুকু বিস্মিত হবার ক্ষমতা আছে ততটুকু বিস্ময়ে! সেই অসাধারণ মেধাবিনী পিয়া যখন স্কুলে ভর্তি হল তখনও সে তার বাবার শাহবাগের বইয়ের দোকানের গ্লাসের র‌্যাকের ভেতর ঢুকে বই পড়ায় মগ্ন হয়ে থাকত। একদিন দেখি তার পেন্সিলে লেখা উত্তরপত্র হাতে তার পিতা বসে আছেন দোকানে, পিয়া যথারীতি মগ্ন পাঠে। যাকে বলে গতানুগতিক সামাজিকতা, সেই সামাজিকতার কৌতূহল দেখিয়ে আমি তার বাবার হাত থেকে উত্তরপত্রটি নিয়ে চোখ বুলাতে শুরু করায় চুম্বকের মতই আটকে গেল আমার মনোযোগÑপিয়া মোট ৯৮ নম্বর পেয়েছে! সে তার প্রশ্নপত্রের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে!! শিক্ষকও তাকে তার প্রাপ্য ন্যায্য মার্কস দিয়েছেন। যদি বলি, ছাত্রী এবং শিক্ষক উভয়ই উভয়ের কাছে পরীক্ষা দিয়েছে সেই উত্তরপত্রের পৃষ্ঠায় তবে ভুল বলা হবেনা এক বিন্দুও!!! যেমন ছাত্রী তেমন শিক্ষক বটে। আমি লা-জবাব হয়ে পিয়ার বাবার হাতে খাতাটি ফেরত দিয়ে বললাম, ‘আমি সারাজীবনেও উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের উত্তর দিইনিÑখোদা আমাকে অত ধৈর্যের অধিকারী করেননি।

আপনার এই রোবট কন্যাকে সেটা দিয়েছেন, ওকে চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দিন!’ আমি তার বাবাকে আরও বলেছিলাম, এই খাতাটি যদি মূল্যায়নের দায়িত্ব আমার হতো তবে রোবট মেয়েটিকে আরও অন্তত ৪ থেকে ৬ নম্বর বেশি দিতাম পেন্সিলে লেখা তার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন খাতাটির জন্য। পিয়ার বাবা বোধকরি আমার মতের সঙ্গে সহমত হয়েছিলেন। শিক্ষা ব্যবস্থার এই জবাবদিহিতার সুবিধায় এখন আমি যখন আমার পুত্র এবং কন্যার উত্তরপত্রে চোখ বুলাই তখন যা ঘটে তার বর্ণনা দিইÑ গত বছর আমার পুত্রের খাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে, শিক্ষক প্রদত্ত নম্বর যোগ করতে করতে ছেলেকে বললাম, তোমাদের স্যার অনেক ভাল। আমি তোমার এই খাতা দেখলে তোমার প্রায় ৮ থেকে ১০ মার্কস কমে যেত। ছেলের ভুলগুলি দেখালাম; যেগুলো তার শিক্ষক ছাড় দিয়ে গেছেন।

আর যে কারণে পিয়াকে ৬ নম্বর বেশি দিতে চেয়েছিলাম সেই কারণটির কথা উল্লেখ করে তাকে বললাম, সেই কারণে কম করে হলেও ২ নম্বর কম পেতে তুমি। আমার কথার ফল হয়েছে এই যেÑ সে খাতা দেখায় তার মা-কে; আমাকে শুধু অভিভাবকের নামের জায়গায় স্বাক্ষর করতে হয়। কবিগুরুর কবিতায় আছেÑ ‘সত্য যে কঠিন/ সেই কঠিনেরে ভালবাসিলাম। ’ বাস্তবে ‘কঠিনেরে’ সবাই ভয় পায়Ñ ভালোবাসা? কখনই না! জানিনা সেই ‘কঠিনেরে’ ভালো না-বাসার দলের আমিও একজন কিনা! এ লেখার পাঠ শেষে পাঠকই সেটা বলতে পারবেন। এ বছরের ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার ফলাফল কয়েক দিন আগে বেরিয়েছে।

আমার কন্যার উত্তরপত্রের প্রদত্ত নম্বর যোগ করে সে এবং তার মা সনাক্ত করে যে ১০ নম্বর ভুলক্রমে শিক্ষক যোগ করেননি। ভুলটি সামান্য তাতে সন্দেহ নেই। সংশোধনযোগ্য এবং সংশোধন করেছেনও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক। কিন্তু রেজাল্ট কার্ডে তাকে দেয়া হয়েছে ১০ এর স্থলে ৭ অর্থাৎ ৩ নম্বর কম। কেন তাকে তার প্রাপ্য নম্বর থেকে ৩ নম্বর কম দেয়া হয়েছে! যেটুকু আমি অনুমান করি তাহলÑ তাকে তার প্রাপ্য নম্বর দিলে শ্রেণীতে তার পজিসন যা ১Ñ২০ পর্যন্ত নির্ধারণ করেন তারাÑ সেখানেও পরিবর্তন আনতে হবে।

সোজা কথায় আলস্যজনিত এই অনিয়ম! শিক্ষকের সদিচ্ছার প্রতি আমার সন্দেহ নেই। বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত কোন দুঃখ প্রকাশের জন্য নয়, এটি উল্লেখের কারণ একটি সাধারণ অনিয়মের ঘটনা সম্পর্কে পাঠককে ধারণা দেয়া মাত্র। আমার কন্যার মন যতই খারাপ হোক না কেন আমি জানি তার খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব আমার থাকলে সে অন্তত ২ নম্বর কম পেতÑ তা থেকে আরও ১ কম পেয়েছে এই তো! মন খারাপ হয়েছে আমার পুত্রেরও। সে তার মা-কে বলেছে, ‘আম্মু, অন্য কোনও স্কুলে কি ভর্তি হওয়া যায়?’ সন্দেহ নেই জীবনের এই ঊষালগ্নে সে বেশ বড় একটা আঘাত পেয়েছে মনে। আমরা জানি যে, তার শিক্ষকরা তাকে বেশ পছন্দ করে, ক্লাশের ক্যাপ্টেন-এর দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন তারা।

লিখিত পরীক্ষায় তাকে সর্বোচ্চ মার্কসও দিয়েছেন। কিন্তু নতুন নিয়মে শিক্ষকদের হাতে থাকা মার্কস থেকে তাকে কম দিয়ে দ্বিতীয় করা হয়েছে। তার ছোট্ট মনে যে গভীর দুঃখ সেটা আমার সামনে ব্যক্ত করছে নাÑ কেননা সে জানে তার শিক্ষকরা যে মার্কস তাকে দিন না কেন আমার কাছে তা কমে যাবেÑ সেটা তার হস্তাক্ষরের কারণে হলেও! আমি তার দুঃখে দুঃখিত হতাম না যদি এটা না জানতাম যে, শিক্ষক মহোদয় তাকে কম নম্বর দিয়ে যাকে বেশি দিয়েছেন তার সেই সহপাঠীও ভাল কিন্তু তাকে বেশি নম্বর দেবার কারণ ছাত্রটি তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ে! বিষয়টি ক্ষতিকর সেই ছাত্রটির জন্যওÑআমার পুত্রের জন্যেও। আমার দুঃখ হল এ কারণেই। শিক্ষক মহোদয় এই সামান্যতা না দেখালেও পারতেন।

আমার লেখাটি এ পর্যন্ত আসার পর আমার পুত্রের কাছ থেকে জানতে পারলাম তাদের ৩ জনকে গতকাল একজন শিক্ষক ৩ টি জেলপেন উপহার দিয়েছেনÑরেজাল্টের কৃতিত্বের জন্য। ছোট্ট একটি উপহার, ৩টি কলম ৩টি শিশুর হাতে তাদের অ্যাচিভমেন্টের স্মারক হিসেবে তুলে দিয়ে শিক্ষক মহোদয় যে কত বড় একটি কাজ করেছেন তার ফল হয়তো আজ তিনি দেখতে পাবেন না কিন্তু এই ৩ ছাত্রের সাফল্যের নেপথ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে উৎসাহের এই বীজকণা-রই! এই প্রজšে§র শিক্ষকেরা কেবল স্থির আশারপ্রদীপ রূপে নয়, চলিষ্ণু আলোকবর্তিকা বলে প্রতিভাত হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। ২. আজকের পত্রিকায় দুটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। একটি দেশের অন্যটি প্রতিবেশী দেশের একটি রাজ্যের। ইতিবাচক সংবাদ আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি।

দেশের খবরটি হচ্ছেÑ দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)-র কারখানায় সংযোজিত সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপ ‘দোয়েল’ আগামী অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর প্রতিবেশী দেশের খবরটি হচ্ছে তামিলনাড়– রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তার নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি পূরণের জন্যে সে রাজ্যের ৬৮ লাখ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে ল্যাপটপ পৌঁছে দেবার ঘোষণা অচিরেই বাস্তবায়ন করবেন। দুটি সংবাদের তুলনা করলে স্বীকার করতেই হবে আমরা ভারতের একটি রাজ্যের তুলনায় অনেক অনেক দূর পিছিয়ে আছি। এই দৌড়ে সমান হবার জন্যেও আমাদের প্রয়োজন অন্তত সমস্ত স্কুলে যদি না-ও পারি রেজাল্টে যে ২০টি স্কুল-কলেজ এগিয়ে থাকে তাদের শিক্ষার্থীসহ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা এবং ল্যাপটপ পৌঁছে দেওয়া। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে শুধুমাত্র ল্যাপটপ নয়Ñ সমস্ত ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি যেগুলো শিক্ষা উপকরণ এবং যোগাযোগ টুলস্ হিসেবে ব্যবহারের উপযোগিতা সম্পন্ন সেগুলোর দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের আওতায় রেখে শিক্ষাকে দ্রুততর ও উৎসাহিত করা।

গত টার্মে আওয়ামী লীগের সরকার যেমন লক্ষাধিক টাকার সেলফোনকে হাজার টাকার রেঞ্জে সাধারণ মানুষের নাগালে এনে দিয়েছিল, প্রযুক্তিকে বিলাসদ্রব্যের জায়গা থেকে প্রয়োজনীয়তা ও যোগাযোগের সহজ উপকরণে রূপ দিয়েছিল এবারের টার্মে তেমনই গুরুত্ব দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট পিসি, ই-বুক রিডার, সেলফোন সেট প্রভৃতি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসÑ যেগুলোকে শিক্ষার উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায় সেগুলোকে সহজলভ্য, সহজপ্রাপ্য করে দিতে হবে। যাতে এগুলো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ বাড়ে এবং শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে আÍকর্মসংস্থান ঘটে। স্কুল কলেজে উপবৃত্তি, নগদ টাকা, গম, টিফিন এগুলোর বদলে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল ও আগ্রহকে প্রণোদনা দিয়ে শতভাগ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। একই উপকরণ জঙ্গীরা ব্যবহার করে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমাবাজির কাজে আমরা তা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনিÑ এসব উপকরণ দিয়েই আমাদেরকে জক্সগীদের নির্মূল করতে হবে। আমরা আমাদের ‘ক্ষুধার্ত প্রজš§’কে (‘ক্ষুধার্ত’Ñ অর্থ পেটের ক্ষুধায় ‘ক্ষুধার্ত’ নয়; শিক্ষা-সংস্কৃতি-প্রকৃত রাজনৈতিক চেতনায় কৌতূহলী, তৃষ্ণার্ত অর্থে) যদি কর্মে আবদ্ধ না করতে পারি তাহলে তমসায় ঢেকে যাবে আমাদের ভবিষ্যৎ।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপক নৈরাজ্য দেখি আমরা প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পাতা উল্টালেই। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেবার নৈরাজ্য চলছে সারা দেশে। একটু উদ্যোগ নিলেই এই নৈরাজ্যকে ইতিবাচক অর্জনের পথে প্রবাহিত করা যায়। দেশের পত্রপত্রিকা এবং চ্যানেলগুলো যদি মোবাইল ক্যামেরায় তোলা ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওর জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। এ উদ্যোগ নিতে পারে সরকারি প্রচার মাধ্যম গুলোও।

শেয়ার বাজার, ইউনিপেটুইউ কিংবা ডেসটিনির কৃত্রিম বেচাবিক্রির প্রতারণার শিকার হয়ে যে তরুণেরা গায়ে কাফনের কাপড় পরে নিজেদের হত্যার আহবান জানাচ্ছে সেই তরুণদেরকেই জীবনের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে জাতির কাজে লাগানো সম্ভব। যদি উপরোল্লিখিত সমস্ত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস গুলো যেভাবেই হোক কমমূল্যে তরুণদের হাতে কর্মোপকরণ রূপে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক সময় এই মহানগরীর গুলিস্তান এলাকায় বক্স ক্যামেরায় ১ মিনিটে ছবি তোলার জন্য কিছু পেশাজীবি মানুষ বক্স ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। জরুরি প্রয়োজনে চাকরি প্রার্থীরা তাদেরকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে নিতেন। সেই কাজটি উন্নত প্রযুক্তি আরও সহজ করে দিয়েছে।

আজ আর ১ মিনিটে নয় ১ সেকেন্ডেই সেই সার্ভিস দেয়া সম্ভব। এখন অনেক তরুণ একটি কম্পিউটার, স্ক্যানার এবং লেজারপ্রিন্টার বসিয়েই একটি পরিপূর্ণ স্টুডিও চালাচ্ছে। প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান আর উপকরণ তাদেরকে অনেক সমৃদ্ধ পেশায় টেনে এনেছেÑ পেশার এই ম্যাজিককে কাজে লাগাতে পারে সরকার। গ্রীক পুরাণে প্যান্ডোরার বাক্সের কাহিনী আছে। যে বাক্সে বন্দি ছিল পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা-দুর্ভোগ।

সেটার মুখ খুলে দেবার কারণেই পৃথিবীতে এতো সমস্যার আবির্ভাব ঘটেছে। আমার মনে হয় এই একুশ শতকে আমাদেরকে নতুন করে লিখতে হবে প্যান্ডোরার বক্সের কাহিনী আমাদের দেশের বাস্তবতায়। ল্যাপটপ, ট্যাবলেট পিসি, ই-বুক রিডার, সেলফোন প্রভৃতি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে সমস্যা অপনোদনের লক্ষ্যেÑ সেগুলোর ভেতরে থাকা লক্ষ-হাজার সফটওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত সমস্যাকে আমাদের পরিণত করতে হবে সমাধানে। আমাদের তরুণেরা যেমন এভারেস্টের শীর্ষে পদচ্ছাপ রেখে এসেছে আমাদের সামর্থ ও সক্ষমতারÑ তারই প্রমাণ তারা রাখবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞেও। যদি আমরা তাদের হাতে উপকরণ তুলে দিতে পারি।

মহানবী হযরত মহম্মদ (স.) খুব সম্ভব বদরের যুদ্ধে বন্দী যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ নির্ধারণ করেছিলেনÑ যে বন্দী ১০ জন মুসলমানকে শিক্ষাদান করবেন তাকে মুক্ত করে দেয়া হবেÑ এই একুশ শতকে আধুনিক প্রযুক্তিকে আমাদের সেই বিবেচনায় নিয়ে একটি কম্পিউটার কিংবা ১টি ল্যাপটপ থেকে যদি ৫০জন বা ১০০জন শিক্ষার্থীও শিক্ষা লাভ করে সেটাই হবে আমাদের জাতির জন্য মুক্তিপণ। বিষয়টি জনপ্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারকরা উপলব্ধি করবেন বলেই আমার বিশ্বাস। তামিনাড়–র জয়ললিতাকে সাধুবাদ জানিয়েও আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাই সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিনি যেন জাতির তারুণ্যের মুক্তিপণ হিসেবে, তার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেÑ তাদের কাছে উš§ুক্ত করে দেন আধুনিক এই আলাদীনের চেরাগ-প্রযুক্তিগুলোকে। কেননা শিক্ষা, একমাত্র শিক্ষাই ঘোচাতে পারে আমাদের সমস্ত অন্ধকার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।