আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বদর নেতা মুজাহিদ

ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে পা দেয়া মুজাহিদ একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষেই শুধু দাঁড়াননি, গণহত্যা-লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও দমন করতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছিল।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলে এই মুজাহিদের গাড়িতেই উঠেছিল জাতীয় পতাকা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
ইসলামী ছাত্রসংঘ দিয়ে শুরু করে মূল দল জামায়াতের অন্যতম কাণ্ডারী হয়ে ওঠেন মুজাহিদ, পান নির্বাহী প্রধান অর্থাৎ সেক্রেটারি জেনারেলের পদ। মন্ত্রী কিংবা দলের শীর্ষ পদে আসীন হলেও জনগণ যে কখনো তাকে গ্রহণ করেনি, তার প্রমাণ সংসদ নির্বাচনে কয়েবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জিততে না পারা।


পারিবারিক আবহেই সেই রাজনীতিতে যুক্ত হন ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি জন্ম নেয়া মুজাহিদ, যে রাজনীতি অসাম্প্রদায়িক ধারার বিপরীত। তার বাবা পূর্বপাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য আব্দুল আলী ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির ফরিদপুর জেলা শাখার প্রধান ছিলেন।
গত শতকের ষাটের দশকে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়েই জামায়াতে ইসলামীর তথনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘে যোগ দেন মুজাহিদ। ১৯৬৮-৭০ মেয়াদে সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি।
উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর চলে আসেন ঢাকায়, ১৯৭০ সালে তিনি ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সেক্রেটারির দায়িত্ব নেন।

১৯৭১ সালের অক্টোবরে সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি হন তিনি।
মুজাহিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করেন বলে তার আইনজীবীর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্র সংঘের সভাপতি হিসেবে কার্যত পদাধিকার বলেই আল বদর বাহিনীর শীর্ষ পদে চলে আসেন মুজাহিদ। যে পদটিতে আগে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, যিনি এখন জামায়াতের আমির এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারারুদ্ধ।
জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে একাত্তরের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মতিউর রহমান নিজামী বলেন, "আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে।

এ দেশের ইসলাম প্রিয় তরুণ ছাত্রসমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আল বদর বাহিনী গঠন করেছে। ”
আল বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে মুজাহিদের ভূমিকাই প্রধান করে ট্রাইব্যুনালে দেখিয়েছে প্রসিকিউশন। মুজাহিদের নির্দেশে একাত্তরে দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ধরে নেয়া হয় বলে ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে সিরাজুদ্দীন হোসেনের মতো জাতির সূর্যসন্তানদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, যাতে মূল ভূমিকা পালন করে আল বদর বাহিনী।    
প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ আদালতে বলেন, “সারা দেশের আল বদর বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল মুজাহিদের হাতে।

শেষ দিন পর্যন্ত আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা মুজাহিদের হুকুম তামিল করেছে। ”
তবে মুজাহিদের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, জামায়াতের এখনকার এই নেতা তখনকার আল বদর বাহিনীতে ছিলেন না।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে জামায়াত। একই কথা গোলাম আযম, আব্দুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও বলেছিল জামায়াত, যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।  
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুনরুজ্জীবিত জামায়াতে সক্রিয় হয়ে ১৯৮২ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন মুজাহিদ।

১৯৮৯ থেকে দুই বছর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের পর ২০০০ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি।
মুজাহিদকে ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে আটক করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। তখন থেকে কারাগারেই রয়েছেন তিনি।
বন্দি হওয়ার কয়েক বছর আগেও মুজাহিদ নিজের এবং দলীয় সহকর্মীদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।


তবে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের দায় নিয়েই কারাভোগ করতে হচ্ছে/ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে মুজাহিদকে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।