আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বডিগার্ড!!!বাম্পার হিট!!!!!! কিন্তু…… ( হিন্দী মুভির রিভিউ ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান !!! )

হিন্দী মুভির প্রতি কোন ভালোলাগা না থাকলেও আলোচিত মুভি গুলো দেখার চেষ্টা করি । কয়েকদিন ধরেই বডিগার্ড ছবিটার নাম শুনছি। ইতিহাস নাকি সৃষ্টি করেছে এই ছবি। কি ভারত কি চারতের বাইরে জমিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে নাকি ছবিটা। প্রথম সপ্তাহেই দেশ থেকে তুলেছে ৮৬ কোটি রুপী যা কিনা ভারতে একটা রেকর্ড।

তাই ছবিটা যোগাড় করে দেখে ফেললাম। পরিচালক সিদ্দিক এর ছবি। এই ছবিটা নাকি সিদ্দিক পরিচালিত একই নামের মালয়ালাম ছবির রিমেক। সাউথ ইন্ডিয়ার ছবিগুলোর মধ্যে মালয়ালাম ছবি গুলো তে সাধারণত বাজেট অনেক কম হয়। সফট পর্ণ ছবির জোয়ারে ওখানকার মূল ধারার ছবিগুলো নাকি ভালো বিপদে আছে।

সিদ্দিকের বডিগার্ড মালয়ালাম ছবির জন্য একটা মাইলফলকই ছিল। মালয়ালাম ছবির সাফল্যের পরেই ভারতের অন্য ভাষাগুলোতে ছবিটি রিমেক করা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সালমান খান এর এই বডিগার্ড। প্রযোজক অতুল সালমান এরই ভগ্নীপতি। এবার আসা যাক ছবিতে।

সালমান খান বর্তমানের হিন্দী ছবির জন্য এক ধরনের হিট ফর্মূলাই দিয়েছেন বলা যায়। সাউথ মাসালা + সালমান খান = হিট ছবি সেই সাল্লু মাসালা জেনার এর নতুন মুভি এই বডিগার্ড। বডিগার্ড এর ভুমিকায় যথারীতি সালমান। এক প্রভাবশালী পরিবার এর বড়কর্তা রাজ বাব্বর। তার প্রতি সালমানের রয়েছে অনেক শ্রদ্ধা কারণ সালমান এর বাবা ছিলেন তার বডিগার্ড এবং সালমান এর বেচেঁ থাকার পিছনে তার রয়েছে অবদান।

সেই ঋণ শোধ এর জন্য উদগ্রীব সালমান নিযুক্ত হল রাজ বাব্বরের মেয়ে কারিনা কাপুর এর । বডিগার্ড এর হঠাৎ এই নিয়োগ কারিনার কাছে ছিল স্পস্ট এক যন্ত্রণা । সালমানের সারাক্ষণ রোবটিক বডিগার্ড সুলভ আচরণ থেকে বাঁচার জন্য কারিনা বের করে এক ফন্দি। মোবাইল ফোন থেকে ভিন্ন নামে ফোন করে সালমান কে বিরক্ত করতে থাকে । তারপর যা হয় আর কি !! প্রেমে পড়ে যায় সালমানে এর।

সালমান ও সেই অদেখা মেয়েটার প্রেমে হয়ে যায় পাগল। কিন্তু বাবার ভয়ে সালমান এর কাছে কিছু স্বীকার করতে পারেনা কারিনা। ওদিকে ভিলেন এর দল মারতে চায় কারিনা কে কিন্তু সিংহপুরুষ সালমান থাকতে তার ভয় কি। ভিলেন এর দল কে কাত করতে পারলে ও সালমান কি পাবে কারিনার আসল পরিচয় । সে কি কখনো জানতে পারবে কারিনা ই তার সাথে কথা বলতো ফোনে।

যে রাজ বাব্বর কে সালমান সারাজীবন মালিক বলে মেনে এসেছে; তার মেয়েই সালমানের প্রেম!! এটা কি আর জানা হবে এই জীবনে??? উত্তর জানতে হলে তো ভাই দেখতে হবে ছবিটা। ছবিতে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে যে কিনা ছবিতে যোগ করে এক নতুন মাত্রা। আর কিছুই বলবো না কাহিণীর ব্যাপারে। এবার আমার বিশ্লেষণ। ছবির কাহিণী আমার কাছে মোটামোটি লেগেছে।

তবে ছবিতে ভিলেন এর আগমন আরো যুক্তিযুক্ত করা যেত মনে হয়। চিত্রনাট্য বেশ জমাট কিন্তু কমেডী গুলো একটু বেশি স্থূল বলে মনে হয়েছে। অবশ্য স্থূলকায় কমেডিয়ান আর তার শরীর এর সাথে পাল্লা দিয়ে স্থূল কমেডি সাউথ এর মুভির সবসময় ই একটা দুর্বল দিক। কিন্তু ছবির সবচাইতে দুর্বল দিক ছবির একশন সিকোয়েন্স গুলো । পরিচালক সাধারণত কমেডি ছবি করেন বলেই কিনা জানি না ছবির একশন সিন গুলো প্রচন্ড দুর্বল।

মাঝে মাঝে হাসি এসেছে এনিমেশন এর ব্যবহার দেখে। একটা রিমোট চালিত খেলনা হেলিকপ্টার ধ্বংশ এর সিন এবং ছবির প্রথম দিকে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ার দৃশ্য কার্টুন ছবিতেই বেশি মানাতো। সাধারণ গড়পড়তা মানের সাউথের ছবিতেই এমন হাস্যকর দৃশ্য দেখা যায় না। ছবিতে অভিনেতাদের অভিনয় এর জায়গা ছিল সামান্য। সালমান নির্ভর এই ছবিতে সালমানের অভিনয় চরিত্র অনুযায়ি উপযুক্ত ই বলা যায়।

কারিনা অভিনয় এর জায়গা বের করার চেষ্টা করেছেন অনেক বোধকরি কিছুটা পেরেও গেছেন। কারিনার বান্ধবীর চরিত্রের মেয়েটা বেশ ভালো করেছে । আর মেইন ভিলেন এর চরিত্রে অনেকদিন পর আদিত্য পাঞ্চালি কে দেখে আমার নিজের বেশ ভালো লেগেছে। সবমিলিয়ে গড়পড়তা অভিনয়। বডিগার্ডের প্রাণ এই ছবির গান গুলো।

গান গুলো কে আমি হাত খুলেই নম্বর দিতে চাই। “আগায়া হে দেখো বডিগার্ড” ছবির শক্ত প্রচারণার জন্য বেশ মানানসই ছিল। তবে আমি মুগ্ধ হয়েছি “তেরি মেরি মেরি তেরি” গান টা শুনে। অনেকদিনপর হিন্দী ছবিতে এই ধরনের মেলোডিয়াস ট্র্যাক শুনলাম। গান টা বেশ যত্ন নিয়ে শুট অ করা হয়েছে।

পুরো ছবিতে এই গান টাই ছিল আমার একমাত্র ভালোলাগা। হিমেশ অনেকদিন পর বেশ ভালো কোন কাজ করলেন। সবমিলিয়ে আমার রেটিং হল – ৭\১০ এই ছবিটার এমন ব্যবসা সফল হওয়ার পিছনে ছবির প্রচারণার বড় ভূমিকা আছে বলে মনে হচ্ছে। আর সালমান কে যে বলিউডের রজনীকান্ত বলা হচ্ছে তা মনে হয় কয়েকদিন পর সত্যি হয়েই দেখা দেবে। সাল্লু মাসাল জেনার এর ছবি গুলো আরো কিছুদিন বলিউডে চলবে বলে মনে হচ্ছে।

সবসময় ই বলিউডে একটা ট্রেন্ড থাকে। কিছুদিন ছিল কমেডি ছবির এখন সাউথ ট্রেন্ড চলছে। “সিঙ্ঘাম”, রেডি,দাবাং, ছবির সাফল্যও এই ইঙ্গিত ই দেয়। আর বলিউডে এই ধরনের ছবির জন্য সালমান ই যে বড় বাজি তা এখন সহজেই বলা যায়। শক্তিশালী প্রতিবাদী অতিমানব এর চরিত্র কিছুদিন করত থাকলে সালমান খান যে বলিউডের রজনীকান্ত এর জায়গা পাকাপাকি ভাবে পেয়ে যাবে তাতে আমার সন্দেহ খুব একটা নেই।

কিন্তু এর মধ্যে খারাপ ব্যাপার হল এই এইসব ফর্মূলা ভিত্তিক ছবির ভিড়ে সত্যিকারের ভাল ছবি হিন্দীতে পাওয়া কষ্টই হয়ে যাবে। (আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে টাকা দিয়েও তাকে এই ছবি কেউ দেখাতে পারবে নাহ। যারা এমন ভাবছেন তাদের এই ছবি দেখতে আমি বলবো না কারণ তাদের ছবিটি পছন্দ করার কোন কারণই নেই। কিন্তু যারা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য ছবি দেখেন তাদের বলব দেখে ফেলেন;খারাপ লাগবে না খুব। ঘন্টা দুয়েক ভালোই কাটবে।

) বি. দ্র. বানানে ভুল গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। কম্পিউটার এ বাংলা লেখার অভ্যাস খুব একটা নাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।