আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাত ভাই চম্পাখ্যাত নায়িকা জরিনা সুন্দরীর শেষ ঠিকানা হলো বৃদ্ধাশ্রমের কবরস্থান

রূপালী পর্দার জরিনা সুন্দরীর (৯০) অবশেষে শেষ ঠিকানা হলো বৃদ্ধাশ্রমের কবরস্থানে। সেখানে আড়াই শতাধিক কবরের পাশে একটি কবর জরিনার। সবুজ ছায়াঘেরা পরিবেশে বৃদ্ধাশ্রমের কবরস্থান ছিল জরিনার খুবই পছন্দের। বৃদ্ধাশ্রমের কক্ষের কাছে এই কবরস্থান। প্রতিদিন কবরস্থানের দিকে তাকিয়ে আপনজনের নিপীড়ন-নির্যাতনের চোখের পানিতে জবাব দিতেন।

সেই কবরস্থানে জরিনা সুন্দরী চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। তার দ্বিতীয় স্বামী ধনাঢ্য ব্যক্তি। ছেলে-মেয়েরা সবাই বিত্তশালী। দ্বিতীয় স্বামী বেঁচে আছেন। কিন্তু জরিনাকে দাফন করার জন্য আপনজন কেউ আসেনি।

তবে মারা যাওয়ার এক মাস পর ২৬ রমজান স্মৃতি হিসাবে জরিনার ব্যবহূত কাপড় ও জিনিসপত্র নাতির শাশুড়ি এসে নিয়ে যান বলে বৃদ্ধাশ্রম সূত্রে জানা যায়। গত ১০ জুন জরিনা মারা যান। ষাটের দশকের চলচ্চিত্র জগতের সাড়া জাগানো নায়িকা ছিলেন জরিনা ওরফে জরিনা সুন্দরী। ঐ সময় অন্যান্য নায়ক-নায়িকার সঙ্গে জরিনা সুন্দরীর অভিনয় মাতিয়ে তুলেছিল সারাদেশ। তাকে দর্শকশ্রোতা এক নামে চিনতো।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। ষাটের দশকে জরিনা সাত ভাই চম্পা, গুনাই, রূপবান, জরিনা সুন্দরী, সাগর ভাসা, আপন দুলাল ও বেহুলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে গাজীপুর বিশিয়া কুড়িবাড়ি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে জরিনা সুন্দরীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জীবনের সুখ-দুঃখের কাহিনী তুলে ধরেন। ঐ সময় ঘণ্টাব্যাপী আলাপকালে স্বামী-সন্তান কর্তৃক নিপীড়ন-নির্যাতনের নির্দয় আচরণের কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে জরিনা মেঝেতে হেলে পড়েন। Click This Link জরিনা জানিয়েছিলেন ষাটের দশকে অভিনয়ের সময় তাকে বিয়ে করার জন্য পাকিস্তানি এয়ারফোর্সের এক শীর্ষ কর্মকর্তা অস্থির হয়ে পড়েন।

এক পর্যায়ে ঐ সময় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে জরিনাকে বিয়ে করেন পাকিস্তানি অফিসার। বিয়ে করার কয়েকমাস পর জরিনাকে নিয়ে যান করাচিতে। সেখানে ঐ অফিসারের প্রথম স্ত্রী ছিল। জরিনার বিয়ে অফিসারের প্রথম স্ত্রী মেনে নিতে পারেনি। তার উপর চালায় নির্যাতন।

দুই বছর নির্যাতন সহ্য করেছিলেন স্বামীর সংসারে থাকার আশায়। দুই বছর পর স্বামী ও সতীন মিলে তাকে নির্যাতন চালিয়ে বাধ্য করে স্বদেশে আসতে। এদেশে এসে জরিনা এক আত্মীয়ের বাসায় ঠাঁই নেন। জরিনা সুন্দরীর ওপর চোখ পড়ে পুরনো ঢাকার লালবাগের এক ধনাঢ্য ব্যক্তির। এই ব্যক্তি জরিনাকে বিয়ে করার জন্য পাগল।

এক পর্যায়ে জরিনা সুখের নীড়ের আশায় বিয়ে করেন উক্ত ধনাঢ্য ব্যক্তিকে। এই ব্যক্তিরও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। আবার সতীন ও তার সন্তানদের নির্যাতন নেমে আসে জরিনার ওপর। এ স্বামীর ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় জরিনার। স্বামী ও সতীনের পৈশাচিক নির্যাতন চলে জরিনার ওপর।

অবশেষে দ্বিতীয় স্বামী তাকে বের করে দেয় বাসা থেকে। ছেলের ঘরে ৪ নাতনী ও এক নাতি রয়েছে। এছাড়া আরো রয়েছে নামি-দামি ও বিত্তশালী আত্মীয়স্বজন। শেষ ঠিকানা হিসাবে জরিনা বেছে নেন গাজীপুরের বৃদ্ধাশ্রম। খতীব আব্দুল জাহিদ মুকুলের প্রতিষ্ঠিত বৃদ্ধাশ্রমে এসে তিনি মুগ্ধ হন।

এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা-যত্নে তিনি অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের কথা ভুলে যান বলে জরিনা কান্না-বিজড়িত কণ্ঠে জানান। চলচ্চিত্রে রূপে-গুণে ও অভিনয়ে খুবই সফল হলেও সংসার জীবনে তিনি হন পরাজিত। চলচ্চিত্র জগতে অভিনয়কালে যৌবনে দর্শক-শ্রোতাদের মত আপনজনরাও ঐ সময় জরিনাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকতেন। স্বামী, সংসার, সন্তান ও আপনজনের কাছে কতই না মমতা আর সম্মান পেয়েছিলেন। যৌবনের শেষে বৃদ্ধ বয়সে স্বামী ও আপনজনদের সেই মায়া-মমতা ও সম্মান যেন গুড়েবালি।

তার জীবনটাই ছিল আসলে অভিনয়। অতি ভালবাসা, অতি ধন-সম্পদ ও অতি বিলাসিতা অন্তিমকালে বড় বেদনাদায়ক বলে চোখ মুছতে মুছতে জরিনা সুন্দরী এই প্রতিনিধিকে বিদায় জানান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।