আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

:::: এবং হিমালয়... ::::

::::: দেখবো এবার জগতটাকে ::::: স্টোক কাংড়ির এই ছবিটা কার তোলা কে জানি। উইকিপিডিয়া’তে এটাই পেলাম। স্টোক কাংড়ি পর্বত চুড়াটাকে আসলে কারাকোরাম রেঞ্জের অংশ বলে থাকে একদল। আরেকদল দাবী করে স্টোক নিজেই একটা আলাদা পার্বত্য রেঞ্জ। তাহলে হিমালয়ের কোল ঘেষে লাদাখ এর স্টোক রেঞ্জের সর্বচ্চ চুড়া হয় স্টোক কাংড়ি।

উচ্চতা দৈত্যাকার বিশ হাজার একশ সাইত্রিশ ফুট ( ছয় হাজার একশ পয়ত্রিশ মিটার)। শুনেছি স্টোক ক্লাইম্বিং এর সময় কারাকোরাম রেঞ্জের সর্বোচ্চ চুড়া কেটু বা গডউইন অস্টিন (মাউন্ট এভারেস্টের পড়ে কেটুই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চুড়া, এভারেস্টের চেয়ে মাত্র ৭৫২ ফুট ছোট হলেও ক্লাইম্বিং এর দিক দিয়ে পৃথিবীর টাফেস্ট মাউন্টেনের একটা এই কে-টু) চুড়াটার খুব চমৎকার সব ছবি তোলা যায়। স্টোক কাংড়ির অবস্থানঃ 33°59′11″N 77°26′32″E33.98639°N 77.44222°E তে। স্টোক কাংড়ির সামিট রিপোর্ট গুলোতে ক্লাইম্বিং এর পরিবেশ লেখা থাকে খুব মজার করে- মডারেটেড ডিউরিং সামার, অলমোস্ট ইম্পোসিবল ডিউরিং উইন্টার। তাই জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম পর্যন্তই স্টোক কাংড়ি ক্লাইম্বিং এর সময়।

যদিও বেস্ট সিজন অগাস্ট। সেপ্টেম্বর থেকেই তুষার পাত শুরু হয়ে যায়। সে হিসাবে আমার সময় বেছে নেয়াটা সামান্য দেরীই হয়ে গেল। স্টোক কাংড়ি একটা নন টেকনিক্যাল পিক। কিন্তু সমস্যা একটাই এর ২০ হাজারী ফুটের উচ্চতা।

শরীর বিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের জন্যে এই উচ্চতাটা চরমভাবাপন্ন। ১০ হাজার ফুটের উপরে উচ্চতাকে বলে হাই অল্টিচিউড, ১৫ হাজারের উপরে ভেরি হাই অল্টিচিউড আর ১৮ হাজার ফুটের উপরে গেলে সেটা হয়ে যায় এক্সট্রিম হাই অল্টিচিউড। এক্সট্রিম হাই অল্টিচিউড এমন উচ্চতা যেখানে বাতাসের চাপ খুবই কম, অক্সিজেনের অভাব, তীব্র শীত আর ভয়ঙ্কর ঝরো হাওয়ার সাথে মানুষকে লড়তে হয়। বাতাসের চাপ আর অক্সিজেনের অভাবে মানুষ পর্যাপ্তভাবে একমাটালাইজ (উচু আবহাওয়ার সাথে অভিযোজিত হওয়া) না হলে সহজেই হাই অল্টিচিউড সিকনেসে পড়ে। সাধারনভাবে হাই অল্টিচিউড সিকনেসের লক্ষন, তীব্র মাথা ব্যাথা, খেতে না পারা, না ঘুমানো এসব।

আর এক্সট্রিম পর্যায়ে হয়ে যায় লাংসে এবং ব্রেনে পানি চলে আসা, শরীরের থেকে প্রয়োজনীয় লিকুইড লিক করা, হেলুসিনেশান (সম্ভবত একারনেই ইয়েতিদের দেখা মেলে হিমালয়ের উচু জায়গাগুলোতেই) খারাপ পরিস্থিতী মৃত্যু। এছাড়া বৈরি পরিস্থিতি তো থাকেই। এভেলাঞ্চ (তুষার ধ্বস), তুষার ঝর, আর টেম্পারেচার শুন্যের অনেক নিচে। আগেই বলেছি এই পিকটা নন টেকনিক্যাল। শুধু মাত্র উচ্চতার সাথে লড়াই করতে হয়।

একটা গ্লেসিয়ারের নদী পেরুতে হবে, তাও শুধু শেষ দিনে। আর এর পরেই একটা স্ক্রি ফিল্ড (ছোট ছোট আলগা পাথরে ভর্তি ঢালু এলাকা)। চুড়া সামিটের আগে এদুটোকেই কঠিন জায়গা হিসাবে বলা হয়। গ্লেসিয়ারটার সমস্যা হলো এটাকে পেরিয়ে সামিট শেষ করে আবার দিনের শুরুতেই ক্রস করে ফিরতে হয়। একটু বেলা বাড়লেই সেটা গলতে শুরু করে।

অনেক ভারি ভারি আর কঠিন কঠিন নিরস কথা বার্তা দিয়ে পোষ্ট ভর্তি করে দিলাম। এই কথা গুলোর মোদ্দা কথা, দির্ঘদিন ধরে দেখা স্বপ্নটাকে সফল করার চেষ্টায় নামছি। আগামী কাল রওনা হচ্ছি ভারতের উদ্দেশ্যে। কলকাতা হয়ে দিল্লী, সেখানে একদিন কাটিয়ে চলে যাব তিব্বতের কাছা কাছি সেই চুড়াটার কাছে। বাকীটা হবে স্বপ্নপুরনের যাত্রা।

এটা মুলত দোয়া চাই টাইপ পোষ্ট। দোয়া করবেন যাতে নিরাপদে ফিরে আসতে পারি প্রিয় ঢাকা শহরে। ইউটিউবে স্টোক কাংড়ি সামিটের নিয়ে (শেষ দিন অর্থাৎ সামিট পুশের উপরে) এই ভিডিওটা পেলাম।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।