আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘূর্ণিঝড় আইলা

নামকরণ ঘূর্ণিঝড় আইলা'র নামকরণ করেন মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা। 'আইলা' শব্দের অর্থ ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। নামটি এই ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নির্ধারণ করেন জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা 'ইউএন এস্কেপ'-এর (UN Escape) বিজ্ঞানীরা। আইলা'র বিবরণ ২১ মে ২০০৯ তারিখে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় আইলার এবং উপকূলভাগে আঘাত হানে ২৫ মে তারিখে। এর ব্যাস ছিলো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি।

সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে, তবে পরে বাতাসের বেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি, সিডরের তুলনায় তুলনামূলক কম হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি ঘূর্ণিঝড় আইলা পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। [২] আইলার প্রভাবে নিঝুম দ্বীপ এলাকার সকল পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়েছে। ফলে তলিয়ে যায় খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন লোনা পানিতে তলিয়ে যায়।

৭৬ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি এবং ৩৬২ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ধ্বসে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর পর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ নিম্নরূপ: প্রায় ২,০০,০০০ একর কৃষিজমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায় (৯৭ হাজার একরের আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়) কাজ হারায় ৭৩,০০০ কৃষক ও কৃষি-মজুর আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় জলোচ্ছাস ও লোনা পানির প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ গরু ও ১,৫০০ ছাগল মারা যায় ঘূর্ণিঝড়ের কয়েক মাস পর থেকে এলাকাগুলোয় গাছপালা মরতে শুরু করে ও বিরানভূমিতে পরিণত হয় কমপক্ষে ৩,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় (২,৪৩,০০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়[৫]) পর পর দুই মৌসুম কৃষিকাজ না হওয়ায় প্রায় ৮,০০,০০০টন খাদ্যঘাটতি সৃষ্টি হয়। খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দাকোপের ঢাকী নদীর তীর ও বাঁধ ভেঙ্গে তার বিস্তার বেড়েছে দক্ষিণে। এর ফলে ছোট জালিয়াখালি নামক গ্রামটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে, ফলশ্রুতিতে পাল্টে গেছে কামারখোলা ইউনিয়নের মানচিত্র।

জালিয়খালি গ্রামের ৮০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ এখন উদ্বাস্তু (প্রেক্ষিত মে ২০১১)। উদ্বাস্তু এসব মানুষের কিছু অংশ (৬৩টি পরিবার) বাঁধের টিকে থাকা অংশে ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। উদ্বাস্তুদের অনেকের কাচা ঘরের পাশাপাশি কারও কারও একতলা পাকা ভবনও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি অবস্থা আইলা পরবর্তি উপকূল ভাগের মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। কারণ ঘূর্ণিঝড় আইলার রেশ কেটে গেলেও তার ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক এলাকায়।

পুকুরে মিঠাপানির বদলে লোনাপানি। ফলে পানীয় জলের সংকট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। লোনা পানির আগ্রাসনে জমিতে উৎপাদন কমে গেছে। বছরে যেখানে দুবার কি তিনবার ফসল চাষ করা যেত, এখন (২০০৯) সেখানে মাত্র একবার ফসল চাষ করা যায়। অনেক এলাকায় মানুষ বিকল্প পন্থায় বাঁচার চেষ্টা করছে: মুরগি পালার বদলে মানুষজন হাঁস পালন শুরু করেছেন, লতানো জাতের পানি সহিষ্ণু গাছের চারা লাগাচ্ছেন, লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের ধানের প্রয়োজনে যোগাযোগ করছেন কৃষি অফিসে।

আইলার এক বছর পরও (২০১০ খ্রিষ্টাব্দ) বিভিন্ন বাঁধের ভাঙন মেরামত না হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বিপুল এলাকার মানুষ। কোনো কোনো গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কপোতাক্ষ আর খোলপেটুয়া নদীর পানি। অনেকে জীবিকার প্রয়োজনে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের হাতে মারা পড়ছে। লোনা পানির আগ্রাসনে খাবার পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে অনেক এলাকায়। এমনকি মানুষ অনুপাতে নলকূপের সংখ্যাও নিতান্ত কম।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.