আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০ গোডাউন (বরিশালের কিছু বাস্তব ছবি)

হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় আজকালকার দিনের ছেলেমেয়েদের প্রেমের ক্ষেত্রে একটা কথা খুবই প্রচলিত –প্রথম দিনে হাই, দ্বিতীয় দিনে হ্যালো, তৃতীয় দিনে দুষ্ট আর চতুর্থ দিনে অসভ্য! ইঁচড়ে পাকা বাচ্চাদের এমন প্রেম প্রেম খেলার নানান কাহিনী বরিশালের যে বিদগ্ধ জায়গা নীরবে বুকে ধারণ করে আছে তা হল ৩০ গোডাউন। স্কুল লাইফে আমি এখানে বহুবারই গিয়েছি। আজ এত বছর পর এই মধ্যবয়সে এসে মনে হল যাই না একবার দেখে আসি কেমন আছে জায়গাটা! এখানে একটা কথা বলে নেয়া দরকার। ৩০ গোডাউন হল বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বিরাট এক জায়গা যেখানে অনেকগুলো গোডাউনে নানান পণ্য সংরক্ষণ করা হয়। তবে সেখানে আসলেই ৩০ টা গোডাউন আছে কিনা সেটা আমার কখনোই গুনে দেখা হয় নাই।

কলেজ রো-র পশ্চিম মাথা থেকে রিকশা নিলাম। সাথে বন্ধু হাসিব। আজকের আবহাওয়াটা ভাল। তেমন গরম নেই। ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

রিকশায় ঘুরতে আমার বরাবরই ভাল লাগে। তারপর নিজের শহর বলে কথা! তাই ভাল লাগার মাত্রাটা বেড়ে গেল বহুগুণ। বগুড়া রোড হয়ে মল্লিকা স্কুলের সামনে আসতেই আমাদের রিকশার এক চাকার হাওয়া ফুঁস হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে নামতে হল। আমি তো খুব বেশি মোটা হইনি! তাহলে হাওয়া বের হল কেন! রিকশাওয়ালা এক দোকান থেকে হাওয়া দেবার চেষ্টা করতে লাগল।

আমরা একটা চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম। হঠাৎ শোভনের সাথে দেখা। একটু পর আমাদেরকে কেন্দ্র করে চায়ের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া উড়তে লাগল। নানান বিষয়ে কথা হতে লাগল। দূরে দেখলাম এক রিকশায় করে খুব চেনা চেনা একটা ছেলে অচেনা সুন্দর একটা মেয়েকে নিয়ে এদিকেই আসছে।

আর রে এ তো দেখি ইমরান! জোরে ডাক দিলাম, ‘ইমরান! ওই শালা!’ ব্যাটা ফিরেও তাকাল না। গাধা নাকি! সাথে গার্লফ্রেন্ড থাকলে কি বন্ধুদের চেনা যায় না! অথচ আজ সকালেই ওর সাথে আমার গোরস্তান মসজিদে দেখা হয়েছে কথাও হয়েছে। আর এখন চেনে না! আজিব! ‘ওই ভোদাই ইমরান! ওই ছাগল!’ চিৎকার দিলাম। বহুকাল পরে কাউকে টিজ করে আনন্দ পেলাম! ছোটকালে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল দুর্নিবার। এখনও যে তা তেমন নেই তা আমি বলব না।

আমাদের কথা প্রসঙ্গে উঠল কিছু মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন জীবন যাপনের কথা! আমি শোভনকে জিজ্ঞাসা করলাম, দোস্ত! বিন্তি নামক এক মেয়ের সাথে শাওন নামক এক ছেলের কি সব ফাউল এম এম এস নিয়ে অনেক কিছু শোনা যায়? কি যে সব ব্যাপার শুরু হইসে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ কথা শেষ করতে পারলাম না। হাসিব একটা রিকশা দেখাল। হুড তুলে একজোড়া ছেলেমেয়ে যাচ্ছে! বলল, এই মেয়েটাই বিন্তি!!! কিন্তু সাথের পোলাডা তো শাওন না। অন্য আরেকটা। আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

মানুষ এত বেহায়া হয় কি করে! তবে একটা ব্যাপার ভেবে ভাল লাগল যে জীবনে আমি এই প্রথম কোন পর্ণো ছবির নায়িকাকে সামনা সামনি দেখলাম। ৩০ গোডাউন এসে দেখলাম ঈদের জন্য সব বন্ধ। গেটে তালা দেয়া। অগত্যা নদীর পাড়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। গোডাউনের গেটের পাশ থেকে বামদিকে একটা রাস্তা নদীর পাড়ে গিয়ে শেষ হয়েছে।

আরেকটা রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে। চিন্তা করলাম যাই আগে সোজা রাস্তায় ঘুরে আসি। সোজা রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতেই দেখলাম একটা ছোট ব্রিজ। রিকশাওয়ালা ঠিক মত টানতে পারছিল না। আমরা রিকশা থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে ব্রিজে উঠতে লাগলাম।

তখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। চারদিকের সবুজ যেন দুরন্ত অবুঝ রূপে ফুটে উঠেছে। অনেকদিন পর চোখে পড়ল কাশবন। ব্রিজের উপর উঠে দেখলাম একজোড়া ছেলে মেয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে। আমি জানি আড়িপাতা খুবই খারাপ কাজ।

তবুও ওদের পাশ থেকে যাবার সময় কিছু কথা আমার কানে এসে ঢুকল। আমার কান ও স্মৃতি যদি আমার সাথে প্রতারণা না করে তাহলে যা শুনেছিলাম তা হল- ছেলেটা বলল, তুমি জান না আমি তোমাকে কতখানি পছন্দ করি। মেয়েটা চুপ। ছেলেটা আবার বলল, আই লাভ ইউ লিয়া! মেয়েটা এবার একদম চুপ। এরপর ওদের মাঝে আর কি কথা হয়েছিল তা আমার আর জানা নেই কেননা ততক্ষণে আমরা ব্রিজ পার হয়ে গেছি।

ছেলেটা মেয়েটাকে প্রপোজ করছে। বাহ বেশ! ইশ এক সময় এমন বয়স আমারও ছিল!! নদীর পাড়টা সেই আগের মতই আছে। তবে ডানদিকে কয়েকটা চায়ের দোকান বেড়েছে। বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভটা দেখে মনে হল কিছুদিন আগে রঙ করানো হয়েছে। কীর্তনখোলা এখন কানায় কানায় পূর্ণ।

অনেকগুলো কচুরিপানা তার শরীর বেয়ে এলোমেলো ছুটে চলেছে। তার বুকের উত্তাল যৌবনে মাঝির ছোট নৌকাগুলো উপরে উঠছে আবার নিচে নামছে! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।