আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাজীপুরে যুব ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ১৯ কোটি টাকার টেন্ডারবাণিজ্য

গাজীপুর পৌরসভার নতুন রাস্তা ও পুরনো রাস্তার সংস্কারমূলক ৪৩টি প্রকল্পের প্রায় ১৯ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিতে ক্ষমতাসীন দলের পৌর এলাকার এক পীরভক্ত নেতার আশ্রয়ে আশ্রিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের তৎপরতায় থেমে গেছে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া। রি-টেন্ডার না করার জন্য গাজীপুর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, গাজীপুর পৌরসভা ৪৩টি উন্নয়ন কাজের বিপরীতে সাধারণ ঠিকাদারদের কাছে ২১ জুলাই অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৭ আগস্ট ছিল দরপত্র ক্রয়ের তারিখ। একদিন পর ১৮ আগস্ট ছিল দরপত্র জমা ও খোলার তারিখ।

কিন্তু স্থানীয় একটি টেন্ডারবাজ চক্রের দৌরাত্ব ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রতি কাজে নির্ধারিত ঠিকাদার ছাড়া কেউই দরপত্র জমা দেয়া তো দূরে থাক একটি কাজের দরপত্র ক্রয় করারও কোন সাধ্য ছিল না। সাধারণ ঠিকাদাররা পৌরসভা এলাকায় ভিড়তেই পারেনি। গাজীপুর জেলা পরিষদও ওই ক্যাডার চক্রের হাতে জিম্মি। ইতোপূর্বে একই চক্র জেলা পরিষদে একাধিক টেণ্ডারবাজির ঘটনা ঘটিয়েছে। গাজীপুর জেলা পরিষদের কাজ করতে হলে ওই ক্যাডার ও তার বাহিনীই নির্ধারণ করে দেয় কে কোন কাজ করবে।

তারা যাকে যে কাজ ভাগ করে দেবে নির্দিষ্ট ঠিকাদাররা শুধু ওই কাজের বিপরীতে দুই-তিনটি সিডিউল জমা দিতে পারবে। গাজীপুর পৌরসভার নতুন রাস্তা ও পুরনো রাস্তার সংস্কারমূলক ৪৩টি কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ওই কাজগুলো সম্পন্ন করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে শুরু হয় এ চক্রের দৌড়ঝাঁপ। কে কোন কাজ পাবে তার চূড়ান্ত হয় ১৬ আগস্ট রাতে গাজীপুর স্টেডিয়ামের নিচে নাট্যগোষ্ঠীর সাইনবোর্ড লাগানো একটি কক্ষে সে অনুযায়ী ১৭ ও ১৮ আগস্ট যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দলবল নিয়ে পাহারা দেয় টেন্ডার বাক্স। কিন্তু এ চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতা গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হ্যাভেন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব ও গাজীপুর পৌর ৩নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি মেসার্স বাঁধন কনস্ট্রাকশনের মালিক গোলাম মোস্তফা।

তারা টেন্ডারে অংশগ্রহণ না করতে পেরে পৌর কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পৌর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ হাবিবুর রহমান খান বলেন, পৌরসভার টেন্ডার প্রক্রিয়াটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অবৈধ কাজ হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন গাজীপুরের কোন এক এমপি এ টেন্ডারকে রি-টেন্ডার না করার জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করছেন। গাজীপুর পৌরসভার টেন্ডার বাণিজ্যের ব্যাপারে গাজীপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আঃ করিম জানান, টেন্ডার সংক্রান্ত ব্যাপারে ঈদের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাহার উদ্দিন ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হীরা সরকার বলেন, তাদের কোন নেতাকর্মী এ ঘটনায় জড়িত আছে কিনা তা তাদের জানা নেই। জানা গেছে, সব ঠিকাদার সিডিউল ক্রয়ের সুযোগ পেলে পৌরসভা শুধু সিডিউল বিক্রি করে ৪০ লাখ টাকা আয় করতে পারত। আবার দরপত্র বিজ্ঞপ্তির দাফতরিক প্রাক্কলনের উদ্ধৃত দরের শতকরা পাঁচ ভাগ অধিক ঊর্ধ্ব দরের কিংবা নিম্ন দরে দাখিলের বিধান রয়েছে। কাজ পাওয়ার আশায় সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঁচ ভাগ নিম্ন দরের সিডিউল দাখিল করে এবং টেন্ডার কমিটি লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে থাকেন। প্রতিযোগিতামূলক এ কাজে প্রাক্কলিত মূল্যের পাঁচভাগ নিম্ন দরে দাখিল করা হলে গাজীপুর পৌরসভার ১৯ কোটি টাকার কাজের লেস মানি হিসেবে কোটি টাকার তহবিল সাশ্রয় হতো।

এই টেন্ডারে ৬ জন ঠিকাদার ২৭টি কাজ ভাগিয়ে নিয়েছে। ফলে অনেক সাধারণ ঠিকাদার কাজ পায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দলবল নিয়ে পৌরসভায় ঢুকে পৌর কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে। এবিষয়ে জেলায় কর্মরত বেশিরভাগ সংবাদকর্মীরা ম্যানেজ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে, ফলে কোন সংবাদ প্রকাশ হয়নি। আবার কেউ কেউ ভয়ে সামান্য ভাগ নিয়ে নিরাপদে বসে রয়েছেন।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক গাজীপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানকে ম্যানেজ করতে জোর চেষ্টা চালায়। যাতে রিটেন্ডার না করা হয় সেজন্য এ গ্রুপটি এখনও বিভিন্নভাবে জোর তদবির চালাচ্ছে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.