আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ'

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ নজরুল সেই কবে ভৈরবী রাগের সুর বসিয়ে কৃষ্ণকে নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন। তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী/ কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ ... আজও সে গান আমরা অভিভূত হয়ে শুনি। মাত্র ১৪ টি পঙতিতে কৃষ্ণজীবনের এমন পরিপূর্ণ উপস্থাপন কীভাবে সম্ভব হল তা ভেবে বিস্মিত হই।

তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ টুটিল আগল, নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায় হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়,’ বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায় কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ। । বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন কারার মাঝে এলো বন্ধ-বিমোচন, ধরি’ অজানা রূপ আসিল অনাগত জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।

। কৃষ্ণ, যিনি অন্ধকার দূর করেন, এবং অদৃশ্যে বিচরণ করেন। তবে তাঁর হাতে একটি বাঁশীও রয়েছে। নজরুলও বাঁশী বাজাতেন। যিনি অন্ধকার দূর করেন এবং অদৃশ্যে বিচরণ করেন তার সঙ্গে সাধারন মানুষের অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা; তবে, তাঁর হাতে একটি বাঁশী থাকলে তিনি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি চলে আসেন।

ওই একই গানে কৃষ্ণকে নজরুল বলেছেন, কালো রাখাল। যা হোক। যিনি অন্ধকার দূর করেন, যিনি অদৃশ্যে বিচরণ করেন-সেই ‘কৃষ্ণ-মুরারী’ আসছেন। তাতে কি হবে? তাতে, অর্গল টুটে যাবে। জীবনে এই বন্ধনমুক্তি জরুরি।

যে কারণে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: " যুক্ত কর হে সবা সঙ্গে/ মুক্ত কর হে বন্ধ"। এ জন্যই ‘নিখিল বিশ্ব' পাগল হয়ে শ্রীকৃষ্ণের অপেক্ষায় রয়েছে। তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ টুটিল আগল, নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। যারা সহ্য করে তারা সর্বজয়ী হবে।

কবি কৃষ্ণর জীবনের ভবিষ্যৎবানী করছেন। কৃষ্ণ, বিষ্ণুর অস্টম অবতাররুপে উত্তরভারতের মথুরায় দেবকী-বসুদেবের ঘরে জন্মাবেন। মথুরার রাজা কংস স্বৈরাচারী পাষন্ড। পিতা উগ্রসেনকে কারাগারে আটক করে রেখেছেন। কংস সম্পর্কে কৃষ্ণর মাতুল।

কংস জানতে পারে: ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। ’ সুতরাং কংস মথুরাজুড়ে শিশুহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। মৃত্যুকে এড়াতেই শিশুকৃষ্ণ গোকুলে নন্দ-যশোদার ঘরে বেড়ে উঠছিল। ছোট্ট এক শিশুর কত বিড়ম্বনা! যে কারণে নজরুল লিখেছেন: ‘ সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। ’ এবার নন্দ-যশোদার ঘরে ও গোকুলে কৃষ্ণর জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রসঙ্গে নজরুল: বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায় হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়,’ বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায় কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।

। ‘বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়’ অসম্ভব সুন্দর একটি রুপকাশ্রয়ী চরণ। কিন্তু ‘ অশ্রু-যমুনায়’ কেন? শ্রীকৃষ্ণের জন্ম যমুনাপাড়ের মথুরায়। তারই জন্মসংবাদে যমুনায় উজানে আনন্দের অশ্রু বইছে। এবং- হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়,’ কৃষ্ণর পালক-মাতা যশোদা।

যশোদা শব্দের আগে ‘বসুধা’ শব্দটির প্রয়োগ লক্ষনীয়। বসুধা মানে পৃথিবী। কবি কি যশোদাকে পৃথিবী বলছেন? মাতৃস্নেহে কৃষ্ণকে লালন করেছিলেন বলে? তাহলে কৃষ্ণ =মানবতা বা মানবকূল। সেই মা-পৃথিবী গোপাল (বালক কৃষ্ণ) কে লালন করেছেন। সেই চরণটি স্মরণ করি: ‘সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।

’ সর্বসহা মা-পৃথিবী যশোদা বালক কৃষ্ণ কে লালন করে সর্বজয়ী হয়েছেন। কিংবা আমাদের প্রতি এটি নজরুলের উপদেশ। যারা সহ্য করে তারা সর্বজয়ী হবে। যাক। যমুনাপাড়ের গোকুলে বালক কৃষ্ণ গরু নিয়ে মাঠে যেত।

দিনভর নেচে গেয়ে খেলে বেড়াত। সেই অভূতপূর্ব দৃশ্যের বর্ননায় নজরুল লিখেছেন একটি মনোরম চরণ: কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ। । কাল্-রাখাল=কালো রাখাল। কৃষ্ণকে কালো রাখাল বলা একমাত্র নজরুলের পক্ষেই সম্ভব।

কালো রাখাল বলায় কৃষ্ণ আরও প্রাণের কাছাকাছি চলে এল । এরপর নজরুল বলছেন: বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। কৃষ্ণের মতো এমন বিরাট আত্মার আগমনে বিশ্ব ভরে উঠছে স্তবে, বন্দনায়। অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। (এই লাইনটির মানে বোঝা গেল না! অর্থ কিন্তু বোঝা গেল ...অন্ধকার রাজ্যে সুন্দর আলোকিত মানুষ এসেছেন ...) স্বৈরাচারী মথুরারাজ কংসের কারাগারে কৃষ্ণের মাতা-পিতা দেবকী-বসুদেবকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।

সে প্রসঙ্গে নজরুল লিখেছেন: ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন কারার মাঝে এলো বন্ধ-বিমোচন, ধরি’ অজানা রূপ আসিল অনাগত জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ। । কৃষ্ণ আসলে মুক্তির প্রতীক। মানবতার প্রতীক। এবং মানবতার মুক্তি অনিবার্য।

নজরুলের এই অনবদ্য গানটিতে সে কথাই যেন ফুটে উঠেছে। মানবতার সেই অনিবার্য মুক্তি অর্জনের পথে নজরুল একটি যাদুবাক্য আমাদের মনে রাখতে হবে : ‘সর্বসহা আজি সর্বজয়ী ... পূর্বে প্রকাশিত। এখানে ঈষৎ পরিবর্তিত করে উপস্থাপন করা হল। গানটির ডাউনলোড লিঙ্ক http://www.mediafire.com/?5lzqiu2fzjl সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রাধাকৃষ্ণ উপন্যাসটির ডাউনলোড লিঙ্ক http://www.mediafire.com/?4n1u711na2m7i7j উৎসর্গ: নষ্টকবি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।