আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই যে রিক্সা, যাবে(যাবি)?

এই যে রিক্সা, যাবে(যাবি)? যাব। কত? বিশ টাকা দেবেন। বল কী! এইটুকু রাস্তা__ টাকা ! এ তো দিনে ডাকাতি ! বারো টাকা দেব – যাবে? এ হনী কথা চালাচালি কান পাতলেই শোনা যায়। শোনা যায়, রিক্সা স্ট্যান্ডে, হাটে বাজারে, মাঠে ময়দানে। বাবার বয়সী রিক্সাওলাকে কত অনায়সে আমরা ‘তুই’ বলি; জ্যাঠার বয়সী সব্জি বিক্রেতাকে যেন সঙ্গত অধিকারবলে জিঞ্জেস করি – পটল কত করে তর, পরীক্ষার খাতায়, চাষি আমাদের সমাজ বন্ধু, তারা রোদে পুড়ে, জলে ভিজে …… ইত্যাদি লিখে নম্বর বাগাই; বক্তৃতামঞ্চে ‘দরিদ্র বাংলাদেশি’ ‘বাংলাদেশি আমার ভাই’ বলে হাততালি কুড়োই।

কিন্তু ঠা ঠা রোদে ঘর্মাক্ত, বিজবিজে দাড়িগোঁফের ওই যে লোকটা মাটি মাখছে তাকে “আপনি” বলতে কেন কে জানে আমাদের জিভে আঠা জড়িয়ে যায়। ওই লোকটার সঙ্গে যেন ‘তুমি তুই’-টাই মানানসই। অথচ এই মানুষগুলোই কিন্তু হাঁটুর বয়সী মালিকটিকে ‘আপনি-জী ছাড়া বলেই না। সামাজিক এই রোগ(মহামারি) আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর চলে আসছে। সব্জি বা মাছ বিক্রী যে মানুষটা করছে তাকে ‘তুমি’ (বয়েস একটু কম হলে আর একধাপ নেমে – তুই), কিন্তু কাঁচের দরজা ঠেলে ঠান্ডা দোকানঘরে ঢুকে টিভি বা ফ্রিজ দরদামের সময় সদ্য যুবক বা যুবতী বিক্রেতাকে ‘আপনি’ বলছি যথোচিত ভদ্রতার সঙ্গে।

কারণ, তার জামাপ্যান্ট, পায়ে চকচকে জুতো এবং গলায় টাই। রাজমিস্ত্রি আর টিভি মিস্ত্রিকে যে সমান সম্মান দিতে বাধে আমাদের , তার কারণ বোধহয়, একজন সাজসরঞ্জাম নিয়ে আসে চটের থলেতে আর অন্যজন অ্যাটাচি কেসে। এই মারাত্মক ব্যাধির কবলে পড়েই বাকসর্বস্ব মতলববাজ নেতার শালাকে দেখলেও বিগলিত হই, দুর্ণীতিগ্রস্থ ধনী লোকের পোষা অ্যালসেশিয়ানে প্রাণপাত করি। এ ব্যাধি আমাদের জাতীয় ব্যাধি। আমাদের অস্থি মজ্জায় কলোনি গেড়ে প্রবল বংশবিস্তার করছে এর ভাইরাস।

এই ভাইরাসের কব্জায় পড়েই আমাদের মাথা নত হয়ে আসে বৈভবের কাছে, আমাদের মেধামনন মোহগ্রস্থ হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।