আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শরৎ এসেছে নিষ্প্রাণ মাটিতে। বাংলাদেশ কি শরৎ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত?

জীবন একটাই; জীবনের জয় অনিবার্য.. সূর্য অস্ত যাচ্ছে, ভাত জুড়িয়ে যাচ্ছে, মাছি ভনভন করছে। হৃৎপিণ্ড চলছে ঘড়ির মতই ঢিবঢিব, ঢিবঢিব। আর ঋতুও বদলাচ্ছে। স্বাগতম শরৎকাল। না! হাওয়ায় হওয়ায় মেঘের ভেলা ভাসিয়ে শরৎ আসে নাই।

এসেছে বাংলা ক্যালেণ্ডারের নতুন পাতায়। যদিও নিঃশব্দ আগমনেই শরৎ আসে। বয়স হয়েছে মেলা, তাই আর কত? চঞ্চলা বর্ষার বিদায়ের সুরেই টের পাওয়ার কথা শরৎ বাবুর আগমন। কিন্তু আজকের সকালের হুরুদ্দুম বৃষ্টি দেখে কে বলবে আজি কি তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে শরৎ কি তাই, যখন কাশফুলের সারি দেখলেই মনে পড়ে সত্যজিতের পথের পাঁচালী? শরৎ কি তাই, যখন বাতাস চঞ্চল, চিত্ত চঞ্চল আর ধরণী ব্যাকুল হয়? শরৎ কি তাই, বোধনের দিনে জয়ঢাকের বাদ্যে কোন নবপ্রেমের আবেগ কাছের মানুষের দিকে আরেকটু তাকাতে বলে? তা যদি হয়, তবে শরৎ এখনও আসে নাই কেবল আসি আসি করছে! কবি শামসুর রাহমান একটি পাখি কবিতায় নাগরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে স্বপ্নের পাখির কথা বলেছিলেন এইভাবে তার দু’চোখে মায়াপুরির ছায়া আছে দূর পাতালের স্বপ্ন আছে, আছে তারার আলো.. এখানে কবি সুখী ও সুন্দর জীবনের স্বপ্নকে একটি পাখির প্রতীকে প্রকাশ করেছেন এবং সে পাখি যে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নগরবাসীর জীবনে সুখ ও আনন্দের বন্যা বইয়ে দেবে। কবির সেই দেশ, সেই শহর ক্রমেই বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠছে।

মানুষ স্বপ্ন দেখছে একটি পাখি এসে শহরের আকাশে শান্তির মায়া ছড়িয়ে দেবে। সেই শহরের সাম্প্রতিক বর্ণনা দিতে গিয়ে মহাত্মা অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান লিখেছেন - ‘তারপরও আজ আমি বলিব ঢাকা শহরে তারেক মাসুদ নাই বলিয়া এই শহরকে বসবাসের আরো অযোগ্য মনে হইতেছে। ' অনেকদিন হলো শরৎ আমাদের জন্য চঞ্চল মনের প্রেম বয়ে আনতে পারে নাই। মরা, লাশ, সড়ক সংঘর্ষ, গণপিটুনি, ক্রসফায়ার, সলিল সমাধি ইত্যকার অপঘাতের চক্করে আটকা পড়েছে বাংলাদেশ। কি জানি এবারের শরতে নাগরিক জীবনে কাশফুল ফুটবে কি না! হয়তো ইট কাঠ কংক্রিটের দালানে শরৎ এসে কোন ফাঁকে ফুরুৎ করে চলে যাবে তা টেরও হয়তো পাওয়া যাবে না।

নাকি বেঘোরে মরা দুই টাকা মূল্যের বঙ্গ সন্তানের মতো শরতও বলবে - বাংলাদেশে এলাম আমি, বাংলাদেশে এলাম, বাংলাদেশের সড়ক পথে অপঘাতে মরলাম। শরৎকাল সমাগত। শরৎ আসুক এবার অপঘাতের বিরুদ্ধে মানবিক অনুভূতি নিয়ে। রাজধানীর সকল নদীর পাড় দখল করে বহুতল মাথাচাড়া দিচ্ছে। অপেক্ষায় আছি নদীর তীরের ঘন কাশবনে গিয়ে বলবো ওগো আজি শরতের রূপদীপালি, তাই পুবালি হাওয়ায় ঝরা শেফালি..।

আর তখন শরৎ ভ্রু কুঁচকে মশকারির ছলে আমাকে বলেবে, 'ক্যাচ মী ইফ য়্যু ক্যান'! না। ভাবালুতা ছেড়ে পথে নামবো আমি। আসুন এই শরৎকালকেই রচনা করি অপশাসন, অপঘাত আর রাষ্ট্রীয় মশকারির জন্য শেষ ঋতু হিসেবে। আরব বিপ্লবের মতো একটি শরৎ বিপ্লবের বড় প্রয়োজন এই মরার দেশে। যুগ যুগ ধরেই চলে আসা রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের ক্ষণ এসে গেছে।

রাষ্ট্রের লাঠিয়াল বাহিনী, আন্তর্জাতিক পুঁজির ভিক্ষুক নেতা-নেত্রী, কর্পোরেট মিডিয়া, কর্পোরেট মার্কেট সিস্টেমের বাইরে একটি মুক্ত স্বদেশ চাই। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক আর জনগণের কাছে জবাবদিহি চরিত্রের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এই শরৎ কি আমাদের মুক্তির পথ দেখাবে না? এই শরৎও হয়ে পড়বে দ্বিদলীয় পাল্টাপাল্টি রাজনীতি, প্রতিপক্ষকে হত্যা, অশ্লীল গালাগালির সংসদ আর পিটিয়ে মানুষ মারার ঋতু হিসেবে! খোদার কসম, এই মিশুক-তারেক’র মৃত্যুই যে কোন অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোকে লাত্থাইয়া ফেলতে যথেষ্ট। কিন্তু শোকসভা যখন আনুষ্ঠানিক রাবিন্দ্রিক কান্নাকাটিতে পরিণত হয়, অপঘাত যখন নিছক দুর্ঘটনার শিরোনাম হয়ে উঠে, বুদ্ধিজীবীরা যখন ঘুমিয়ে থাকেন; তখন আমরা কি করবো? কই, শামসুর রাহমানের পাখিতো এই নগরে আসে না। মাটির ময়না তো ছেড়ে চলে গেল। আমাদের সময়ের নায়কেরা কি এভাবেই একে একে চলে যাবে? তাহলে কি নিষ্প্রাণ মাটিতে শরৎ আসবে না? দুর্গা প্রতিমার কারিগররা এই শরতের নিষ্প্রাণ মাটিতেই তো প্রাণ সঞ্চার করেন বলে জানি।

সকাল বিকাল খিচুনি উঠে। একবার ডান চোখ কাঁপছে আর একবার বাম টা। শরীরের উপর কারো বুটের গোড়ালির থেতলানি টের পাই। মাথার ব্রহ্মতালু ফেটে যায়। কানে ভেসে আসে মরার দেশের মুখরা মন্ত্রীর নসিহত- তারেক মাসুদ গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধে নাই, মাইক্রোবাসের ওভারটেক করা ঠিক হয় নাই’ একটি গাধার সাথে মন্ত্রীর পার্থক্য হচ্ছে- গাধা তার গাংলিঙ্গের ব্যবহার নিশ্চিত করেছে, মন্ত্রীর পুংলিঙ্গটা অকেঁজো।

সশস্ত্র হতে ইচ্ছে করে মনে। মধ্যবিত্ত দোলায়মান মনের ডানে-বামে একটা প্রশ্ন খালি ঘুড়ির মতো গোত্তা খায়- কী করিতে হইবে‍! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।