আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটল্প:সায়েন্স ফিকশন !!?

দৃষ্টি আকর্ষণ:-বোকামনের মানহীন পোস্ট ব্লগের নির্বাচিত পাতায়, ব্যক্তিগত নির্বাচিত সংকলন পোস্টে সংযুক্ত না করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত অনুরোধ থাকছে। [দয়া করে,বোকামনের যেকোনো পোস্টের সমালোচনায় সংকোচ-বোধ করবেন না] আস সালামু আলাইকুম। । Scince Fiction বাংলায় যাকে বলা হয় কল্পবিজ্ঞান। অভিধানে পাবেন কল্পনার মিশেল-দেওয়া বিজ্ঞানকাহিনী।

[সং. কল্প (কল্পনা) + বিজ্ঞান] এই সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বেই কিশোর ও তরুণদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয় একটি বিষয়। বর্তমানে সায়েন্স ফিকশন নির্ভর গল্প,উপন্যাস,টিভি সিরিজ সিনেমা ইত্যাদি অনেক বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ভবিষ্যৎ এর নি:সন্দেহে ছাড়িয়ে যাবে কল্পনাকেই। কল্পবিজ্ঞান বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে ভিন গ্রহের প্রাণী/মিউট্যান্ট/এলিয়েনের সাথে মানুষের যুদ্ধ, রোবটময় পৃথিবী যেখানে মানুষকে তেমন কোন পরিশ্রম করতে হয় না আবার কখনো যন্ত্রদানব নিয়ন্ত্রিত পৃথিবী ! মানুষ বন্দি রোবটের বাইনারী কোডের অন্তর্জালে, অথবা বিজ্ঞানের সুফল-সুবিধাভোগী সমাজের ভিতরে সুবিধা-বঞ্চিত আরেকটি সমাজ। অবিশ্বাস্য তবে অসম্ভব নয় এমনই কল্পকাহিনীর মিশেল সাইন্স ফিকশন। শুরুটা হয়তো আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে ঋষি বাল্মীকি-র রামায়ণ অথবা জাপানিজ ফেয়ারী টেল “এ টেল অফ দ্যা ব্যাম্বু কাটার” থেকে।

মডার্ন সায়েন্স ফিকশন কে সামনে নিয়ে আসলেন মার্কিন লেখক এবং জৈব রসায়নের অধ্যাপক আইজাক আসিমভ, সময়কাল-১৯২০ আইজাক আসিমভকে বলা হয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর গ্র্যান্ড মাস্টার। যদিও ১৮১৮ সালে প্রকাশিত ম্যারি শেলীর- “ফ্রাঙ্কেষ্টাইন” হল আধুনিক কল্পবিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য প্রথম সৃষ্টি। এবং ঐ সময়টা থেকেই টাইম-ট্রাভেল, ভবিষ্যৎ সভ্যতা ইত্যাদি সাহিত্যে বিচরণ করতে শুরু করে। ফিকটিশিয়াস টেকনোলোজির ধারনা নিয়ে আসেন জুন গ্যাব্রিয়েল ভার্ন, এইচ.জি ওয়েলস। “Journey to the Center of the Earth, Twenty Thousand Leagues Under the Sea, Round the World in Eighty Days” জুল ভার্নের এই উপন্যাসটি পাঠকদের দারুণভাবে শিহরিত করে।

ভার্ন লিখেন স্পেস ট্রাভেল, আন্ডার ওয়াটার ট্রাভেল এবং ভ্রমণ উপযোগী যান নিয়ে। সাইন্স ফিকশনের দর্শন মূলত তখন থেকেই আলোচিত হতে শুরু করে। সাই-ফাই মুভি জগতে প্রবেশ করে জর্জেস মিলাসের হাতে ধরে। হ্যাঁ প্রথম সাই-ফাই ফিল্ম “এ ট্রিপ টু দ্যা মুন” এনিমেশন, স্পেশাল ইফেক্ট নামটির সাথে পরিচিত হন বিশ্ববাসী। এরপর শুরু হয় সাইফাই ইতিহাসের গোল্ডেন এজ।

আসলে সাইফাইয়ের প্রি-হিস্টোরি বিশাল লম্বা-চওরা। পুরোপুরি লিখতে আমাকে উইকি বা বইয়ের সাহায্য নিতে হবে। হাতে সময় নেই। এবার বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের আগমন নিয়ে কিছু তথ্য। বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞান নিয়ে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনের শিক্ষক জগদানন্দ রায়।

কল্পকাহিনীটির নাম ছিল “শুক্র ভ্রমণ” এরপরে ১৮৯৬ সাল; জগদীশ চন্দ্র বসু লিখেন কল্পকাহিনী ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী, যা পরবর্তীতে ‘পলাতক তুফান’ নামে প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞানের জনক জগদীশ চন্দ্র বসুর এই গল্পটি দিয়েই বাংলায় কল্পবিজ্ঞান যুগের সূচনা। এরপরে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘কুহকের দেশে’, হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ‘মেঘদূতের মর্ত্যে আগমন’ইত্যাদি তো আছেই। কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের শুরুতে বিজ্ঞানের চেয়ে কল্পনাকেই অধিক প্রাধান্য দেয়া হতো। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

কল্পনা এবং বিজ্ঞান সমন্বয়ের কল্পবিজ্ঞানের বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারা নিয়ে আসেন সত্যজিৎ রায়। সময়কাল ১৯৬১; সন্দেশ পত্রিকায় ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরী’ গল্পের মধ্য দিয়ে সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করে বাংলা কল্পকাহিনীর আলোচিত চরিত্র “প্রফেসর শঙ্কু” বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক আলোচিত এবং জনপ্রিয় চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আটত্রিশটি সম্পূর্ণ ও দুটি অসম্পূর্ণ ডায়েরী প্রকাশিত হয়। সত্যজিৎ রায় তারই লেখা কল্পকাহিনী ‘বঙ্কু বাবুর বন্ধু’-র উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র “দ্যা এলিয়েন” নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। স্টিভেন স্পিলবার্গের কালজয়ী কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্র ‘E.T.’-র চিত্রনাট্যের ধারনা সত্যজিতের “দ্যা এলিয়েন” স্ক্রিপ্টের মি. অ্যাং চরিত্রটি থেকেই নেয়া হয়েছে।

অবশ্য এ নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। থাক সে কথা। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হুমায়ুন আহমেদ-এর ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য আরো এক ধাপ সামনে চলে আসে। তারপর ‘কপোট্রণিক’! এবং বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল !! বাকিটা বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন আছে ? মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলার কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করেছেন, পাঠক তৈরি করছেন এবং গুনে ও মানে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। কপোট্রনিক সিরিজটি পরবর্তীতে ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’ নামে বই আকারে প্রকাশ করা হয়।

কপোট্রনিক সুখ দুঃখ এর মৌলিকত্ব নি:সন্দেহে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে অমর হয়ে রবে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য- বিশেষভাবে শুরুর দিকের অদ্রিশ বর্ধন, মলয় রায় চৌধুরী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পরবর্তীতে আলী ইমাম,আহসান হাবীব, ওপার বাংলার সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, সমরেশ মজুমদার বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য সমৃদ্ধিশালী করেছেন। আবারো মনে করেয়ে দিতে চাই বাংলার কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে অধিকাংশ গল্প-উপন্যাসে ফিকশনের চাইতে ফ্যান্টাসির প্রাধান্যই বেশী ছিল। প্রথম মুসলিম সায়েন্স ফিকশন রচয়িতা ছিলেন- ইবনে আল-নাফিস। গ্রীক দর্শন পাশ কাটিয়ে যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন ইসলামের মৌলিক আদর্শ এবং বিশ্বাসসমূহের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

ইহজগৎ এবং পরজগত সম্পর্কে ধারনা দিতে গিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সায়েন্স ফিকশন উদ্ভাবক; সময়কাল খুব সম্ভবত ১২৬০-১২৮০। সায়েন্স ফিকশনের ডেফিনেশন ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন, কারণ এর সীমারেখা ব্যাপক। অতীত এবং বর্তমানের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক বিবিধ কর্মপদ্ধতি-লব্ধ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ সমাজ-ব্যবস্থা, পরিবর্তিত সভ্যতা এবং সম্ভাব্য টেকনোলজির কল্পনা আশ্রিত কাহিনীকে মোটামুটি সায়েন্স ফিকশন বলা যেতে পারে। বলা হয়ে থাকে, আজকের কল্পবিজ্ঞান আগামী দিনের বিজ্ঞান। কথাটা অনেকাংশেই সত্যি।

অতীতের বহু সায়েন্স ফিকশন ২০১৩ সালে এসে সায়েন্স ফ্যাক্ট হিসেবে আমরা জানি। কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীতে মিশে থাকতে পারে ভ্রমণ, রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার, দুরন্ত অভিযান, অতীন্দ্রিয় পরিপার্শ্ব, ভয়ংকর পরিস্থিতি,প্রেম রসায়ন, নীতি ও মানবিকতা বোধ ইত্যাদি। তবে এসবের ভীরে সায়েন্স ফিকশন কে পুরোপুরি ফ্যান্টাসি নির্ভর করা হয়ে থাকলে শেষাবধি তাকে সাই-ফাই বলে মেনে নেওয়া যাবে না। সাইন্টিফিক মেথড এবং ভবিষ্যৎ নিরীক্ষণ আবার দুর অতীতের স্মৃতিচারণ সামগ্রিক ভাবে সায়েন্স ফিকশনের জগত। আমি বলি- সাইন্স ফিকশন ইজ নট এ্যাবাউট অনলি সাইন্স, ইট ইজ এ্যাবাউট ফাইন্ড অর ডিসট্রয় এ্যাবাউট লাইফ ফর্ম।

আউটার স্পেস, এলিয়েন, হাই-টেক মেশিনারীজ, সাইবার যুদ্ধ কিংবা স্পেস হাউস ইত্যাদির মধ্যেই সাইফাই থেমে থাকেনি। উইলিয়াম গিবসনের “নিউরোমেনসার” আর্থার সি ক্লার্কের “স্পেস ওডিসি”-র পাশাপাশি আসিমভের “বাইসেনটিনিয়াল ম্যান” অত্যন্ত জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান কাহিনী হিসেবে বিবেচিত হবে। লেখক মার্ক সি. গ্লাসি এ ব্যাপারে বেশ মজার একটি সংজ্ঞা দিচ্ছেন- “The definition of science fiction is like the definition of pornography: you don't know what it is, but you know it when you see it.” ফুলে-ফলে-পত্র-পল্লবে ডালপালা ছড়াতে থাকা তরুণ-কিশোর ফিকশোনালাইজড হতে পছন্দ করে। তাই হয়তো যুগে যুগে সায়েন্স ফিকশন তাদের প্রিয় সাহিত্যের বিষয় হয়েছে। অবশ্য শিশু-বৃদ্ধ সবাইকেই শিহরিত করতে সক্ষম সাই-ফাই বিষয়াবলী।

কিছুকাল আগের কথা; জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় কথায় কথায় পরিচয় হয়েছিল একজন স্প্যানিশ কবির সাথে অবশ্য তিনি ইংরেজিতেও চমৎকার কবিতা লিখেন। কথার প্রসঙ্গে উঠে এসেছিল সাই-ফাই সাহিত্যের কথা। হাব-ভাবে বেশ বিরক্ত হয়ে তিনি বলেছিলেন- “হূম… কবিতার পাঠক কমছে, আর দিন দিন বেড়ে চলছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাঠকশ্রেনী….” তৎক্ষণাৎ হেসে উড়িয়ে দিলেও পরবর্তী কয়েকদিন তার এই কথাটির সত্যতা নিয়ে বেশ ভেবেছিলাম। যাইহোক- সায়েন্স ফিকশন কে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং বংশ ধারা রক্ষার্থে যে মাধ্যমটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; আপনারা দ্বিমত করবেন না সেটি হল সিনেমা/চলচ্চিত্র মাধ্যম। পৃথিবীতে অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা কল্পবিজ্ঞান বিষয়টার সাথে পরিচয় হতে পেরেছেন সিনেমার মাধ্যমে।

আসুন তাহলে আলোচনা করা যাক সাই-ফাই মুভি নিয়ে। ১৯০২ সালে জর্জ মিলিসের বিখ্যাত “এ ট্রিপ টু দ্যা মুন” মুভির মাধ্যমে প্রথম চন্দ্র অভিযান এবং এলিয়েন কল্পকাহিনী সেলুলয়েড বন্দি হল। ১৯১০ সালের ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ ১৯১৩ সালের ‘ডক্টর জেকিল এন্ড মিস্টার হাইড’ ছবির মাধ্যমে সাই-ফাই ও হরর ধারাকে মেশানো হল। এ ধরনের মুভি নির্মাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো কিন্তু তখনো এসএফ নামের আলাদা কোন যেনের ছিলনা। ‘মেট্রোপলিস’(১৯২৬) মুভিতে সামাজিক বক্তব্য উঠে আসলো।

পঞ্চাশের দশকে যুদ্ধোত্তর সময়ে প্রচুর কম-বাজেটের সাইফাই মুভি বানানো হল। বেশ কিছু মুভি সাড়া পেল যেমন-‘ফ্যাশ গর্ডনস ট্রিপ টু মার্স, ‘দি ডে দি আর্থ স্টুড স্টিল’ ইত্যাদি। এ সময়টাতে ইউএফও, ভিনগ্রহের এলিয়েন, স্পেস ওয়ার ব্যাপকভাবে সমাদৃত হতে শুরু করলো টিনএজ অডিয়েন্সদের কাছে। ষাটের দশক; স্ট্যানলি কুবরিক তৈরি করলেন ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ সাইফাই জগতকে প্রকৃতপক্ষেই সাই-ফাইড করলেন কুবরিক। কল্পবিজ্ঞান ছবির ইতিহাসের সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইউটার্ন।

বাস্তব-সদৃশ ভিজুয়াল ইফেক্ট এবং প্রায় নতুন ধরনের শব্দতরঙ্গ সিনেমা-প্রেমীদের চমকে দিলো। মুভিটি রূপ নিলো সাইন্স-ফিকশন সিনেমা ইতিহাসের মহাকাব্যে। এ দশকে মুক্ত পেল ফরাসি পরিচালক ফ্রাসোয়া ত্রুফোর ‘ফারেনহাইট ৪৫১’ সাইন্স-ফিকশনের সাথে যুক্ত হতে থাকলো বিভিন্ন সামাজিক অনাচার এবং কুসংস্কার বিরোধী ধারনার। উডি অ্যালেনের ‘স্লিপার’ বা ড্যান ও ব্যাননের ‘ডার্ক স্টার’ সাই-ফাই মুভির কমেডি-তে আমোদিত হলো দর্শক। সত্তরের দশক মুক্তি পেল ‘প্ল্যানেট অফ এ্যাপস’ বিবর্তনবাদকে খোলামেলা সামনে নিয়ে আসলেন ফ্রাঙ্কলিন জে সাফনার।

কুবরিক আরেকবার সাইন্স-ফিকশনকে সমাজের একটি অন্ধকার জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন; তৈরি করলেন “এ ক্লক-ওয়ার্ক অরেঞ্জ” সাইকোলজি,স্যাটায়ার এবং সাই-ফাইয়ের নিখুঁত সমন্বয় ঘটালেন কুবরিক। সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্বে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী কী আদৌ স্বাধীন। মানবজাতির সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ডার্ক মেটারগুলো কেমন হতে পারে তা ক্লক-ওয়ার্ক অরেঞ্জ ও রিচার্ড ফ্লেশারের “সয়লেন্ট গ্রিন” মুভি-দ্বয় কল্পবিজ্ঞানকে খানিকটা রিডিফাইন্ড করলো বটে। পাশাপাশি প্রথা ভাঙার কারণে, বিতর্কের খাতায় সায়েন্স-ফিকশনের নাম বোল্ড করে দিলো। আশির দশকের সবচাইতে জনপ্রিয় সাইফাই চরিত্রটি হলো ‘ইটি দি এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল’; সাল ১৯৯৯, মুক্তি পেল ম্যাট্রিক্স।

উন্নততর ভিজুয়াল ইফেক্ট সিনেমা জগতের সিনেমাটোগ্রাফি এবং ফটোগ্রাফি টেকনিক-এ অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনলো। “বুলেট টাইম” ইফেক্ট ব্যবহার করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি বুলেটের গতিতে ব্যবসাসফল হতে থাকলো। তবে ম্যাট্রিক্স মুভির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই মুভিটির মাধ্যমেই কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে দর্শনের অনুপ্রবেশ ঘটে। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত আরেকটি দুর্দান্ত কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত মুভি “বাইসেনটিনিয়াল ম্যান” রবিন উইলিয়ামসের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি মানুষ এবং রোবটের প্রেমময় কল্পজগতে প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার মতই একটি সিনেমা। ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ অব্ধি সায়েন্স ফিকশন সিনেমার রাজত্ব ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় কল্পজগত হতে থাকলো আরো বেশী কল্পনাময়। মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার মুভি বাজার চাঙ্গা রাখতে একেরপর এক ব্যবসা সফল সাই-ফাই মুভি নতুন প্রজন্মকে বিমোহিত করেছে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জেমস ক্যামেরনের “অ্যাভাটার”, কল্পবিজ্ঞানের ধারনার আলোকে দর্শককে রূপকথার জগতে নিয়ে যায়। বেশ ব্যয়বহুল ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো সিনেমাটি, আমার আগের কথার মতই সাই-ফাই পরিশেষে কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যেতে সফল হয়। ক্যামেরন খুব চমৎকার ও যৌক্তিক একটি বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেন- আমরা টেকনোলজিক্যালী যতই আধুনিক হই না কেন, যদি প্রকৃতির ভারসাম্যে আঘাত হানি তবে কোন বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি আমাদের মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না…..।

সর্বকালের সেরা কিছু সাই-ফাই(কল্পবিজ্ঞান) চলচ্চিত্রের নাম উল্লেখ করছি। কোনটি এখনো দেখা হয়নি জানাবেন- ১.২০০১ আ স্পেস অডিসি (১৯৬৮) ২.ই.টি. দি এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল (১৯৮২) ৪.মেট্রোপলিস(১৯২৭) ৪.প্ল্যানেট অফ দ্যা এপস ৫.স্টার ওয়ার্স ৪ আ নিউ হোপ (১৯৭৭) ৬.আ ক্লক-ওয়ার্ক অরেঞ্জ (১৯৭১) ৭.দ্য ডে দি আর্থ স্টুড স্টিল (১৯৫১) ৮.ব্লেড রানার (১৯৮২) ৯.টার্মিনেটর ২: জাজমেন্ট ডে (১৯৯১) ১০.এলিয়েন (১৯৭৯) ১১.ইনভেশন অফ দ্য বডি স্ন্যাচারস (১৯৫৬) ১২.ব্যাক টু দ্য ফিউচার (১৯৮৫) ১৩.ডিস্ট্রিক্ট ৯(২০০৯) ১৪.দ্য থিং(১৯৮২) ১৫.দি ইনভিজিবল ম্যান (১৯৩৩) ১৬.স্টার ওয়ারস ৫ দি এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক(১৯৮০) ১৭.ক্লোজ এনকাউন্টারস অফ দ্য থার্ড কাইন্ড(১৯৭৭) ১৮.ফ্রাংকেনস্টাইন(১৯৩১) ১৯.দ্য ব্রাইড অফ ফ্রাংকেনস্টাইন (১৯৩৫) এবং ২০.মুন (২০০৯) ২১.দ্য টার্মিনেটর (১৯৮৪) ২২.স্টার ট্রেক ২ দ্য রেথ অফ খান(১৯৮২) ২৩.ব্রাজিল(১৯৮৫) ২৪.দ্য মেট্রিক্স(১৯৯৯) ২৫.জুরাসিক পার্ক(১৯৯৩) ২৬.ফরবিডেন প্ল্যানেট(১৯৫৬) ২৭.আভাটার(২০০৯) এ্যানিমেটেড সায়েন্স ফিকশন; ওয়াল্ট ডিজনির কোন এক কার্টুন-এর মাধ্যমে ১৯২০ সাল থেকেই এ্যানিমেটেড সায়েন্স ফিকশনের পথচলা শুরু। এ্যানিমেটড সাই-ফাই মুভির ল্যান্ডমার্ক হয়ে থাকবে জাপানিজ মুভি “আকিরা(১৯৮৮)” যদিও ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “ফ্যান্টাসটিক প্ল্যানেট” ফিল্মটির কথা ভুলে যাওয়া চলবেনা। বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল ছবিটি। সায়েন্স ফিকশনে জাপান বরাবরই দারুণ কিছু উপহার দিয়েছে।

বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় জাপানের ম্যানগা সিরিজ পরবর্তীতে এনিম “ডোরেমন” এর কথা। অবাক হচ্ছেন ! বাংলাদেশে আলোচিত-সমালোচিত ডোরেমন আসে কী করে ? হিন্দি ভাষা-জনিত কারণে এবং নোবিতার হরহামেশা মিথ্যা বলার স্বভাব, সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিলেও দোষ পড়েছে ডোরেমনের ঘাড়ে। ফুজিকো ফুজিও পোস্টমর্ডান ডায়ামেনশনে ডোরেমন চরিত্রটি তৈরি করেছেন এবং তা অবশ্যই সায়েন্স ফিকশনের অন্যতম সেরা একটি চরিত্র। ১৯৭০ থেকে ১৯৬৬ সময়কালে বসে বাইশ-শ শতাব্দীর ডোরেমন জগতকে তিনি যেভাবে চিত্রায়িত করেছেন; সত্যিই অসাধারণ। ডোরেমন জাপানিজ সোসাইটির অঙ্গ হতে পেরেছিল বলেই আজ জাপানের দশ-বারো বছরের শিশুটিও রবোটিক মেকানিজম নিয়ে কাজ করে।

ভিএফএক্স, যন্ত্রপাতির ঝনঝনানি, সুপার হিরো টাইপ রাজনীতি ইত্যাদি কারণে ইদানীংকালের হলিউডের অধিকাংশ সাইফাই কে অনেকেই অন্তঃসারশূন্য বলে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এনিমেটেড সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম। আপনি যদি “ওয়ালি” মুভি দেখে থাকেন তবে সারমর্ম বুঝে নিতে পারবেন অতি সহজেই। ২০১২ সালের অস্কার প্রাপ্ত ফিল্ম “আরগো”-র স্টোরি, বিশ্বে সাই-ফাই মুভির জনপ্রিয়তার মাত্রা নিরূপণ করতে সহায়ক বলে মনে করছি। আয়রন ম্যান থ্রি অথবা সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত প্যাসিফিক রিমে দেখানো বিভিন্ন প্রযুক্তি আমাদের আমাদের ভবিষ্যৎ সভ্যতার উৎকর্ষে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে সময়ই তা বলে দিবে।

স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। ইচ্ছে যখন সায়েন্স ফিকশন লেখার: বিজ্ঞান অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান। মাপা-মাপি, সূত্র, পরখ করার মত ধারনা। তবে কী বিজ্ঞানের ছাত্রদের পক্ষেই সম্ভব সাইন্স ফিকশনের জগতে বিচরণ করার ! ভুল ধারনা। কল্পনা জগতের দৃষ্টিশক্তির সাথে সাইন্স নামের একখানা চশমা লাগিয়ে দিন।

ব্যস হয়ে গেল। চশমাখানার ব্যবস্থা করা জটিল কোন কাজ নয়, গুগল মামা আ-ছেনা ! নিয়মিত সায়েন্স নিয়ে বিভিন্ন সাময়িকী পড়ুন, মুভি দেখুন, পত্রিকার প্রযুক্তি পাতায় চোখ রাখুন। নিউটনের মাথা উপর আপেল কিভাবে পড়েছিল; ব্যাখ্যাখানি কী খুব জটিল! সাইন্স ফিকশনের বিবিধ ক্যাটাগরি বা থিম খুব সহজেই নেটে পেয়ে যাবেন। উপায়-উপকরণ না হয় পেয়ে গেলেন কিন্তু উপাদানসমূহের মিশ্রণ কিভাবে ঘটানো হবে। কপি-পেস্ট করে লেখনী শক্তির সৃজনশীলতা হারাবেন না, দোয়া করে।

সায়েন্স সম্পর্কে প্রচুর তথ্য জানার চেষ্টা করুন। পড়াশোনা করতে হবে যে, টামর্স এন্ড কন্ডিশন সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। তা না হলে আপনার সায়েন্স ফিকশন ফ্যান্টাসিতে ফ্যান্টাসটিক হতে পারে, সায়েন্স ফিকশন হবে না। প্রয়োজন অনুভব করুন। আপনার হাতের কাছে কী কী থাকলে আপনাকে বাজারে যেতে হবে না বাজার করতে, তাই বলে কী আপনি না খেয়ে থাকবেন।

আপনি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আপনাকে তৈরি করতে বলছি না। বলছি ভাবুন বাজার এবং আপনার মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে কেমন কাটছাঁট করেত চান আপনি। ফিকশন লিখছেন তাই সহজলভ্যতা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। অথবা ধরুন আপনি একজন সুপার হিরো/যাদুকর।

জাদুমন্ত্র ব্যবহার করবেন না-কি যাদুর ছড়ি ? যাদুর ছড়িকে অভ্যাসবশত: আমরা কী করে থাকি ? অভ্যাস ত্যাগ করুন, সাইন্টিফিক কনসেপ্ট ইন্সটল করুন। তবে হার্ড সাইন্স ফিকশন তৈরি করতে চাইলে, আপনাকে বিজ্ঞানের ছাত্রই হতে হবে। বিজ্ঞানের ছাত্র বলতে আমি শুধু একাডেমিক পড়াশোনার কথা বলছি না। জানার ইচ্ছে থাকলেই হলো। আবার অনেক বেশী জানেন বলে আপনি পাঠককে সাইন্স ল্যাবে নিয়ে যাবেন! আপনার সায়েন্স ফিকশন পাঠক জনপ্রিয়তা হারাবে।

কল্পজগত আপনি দেখছেন, পাঠক কিন্তু দেখছে না, পড়ছে নসাকইফিন্সশ ………….. একি ! ইনসাফিকন্সশ সঠিকভাবে লেখা যাচ্ছে না কেন ?? একটু অপেক্ষা করুন সামথিং গোস রং হেয়ার …. ওয়েট প্লিজ…………. …………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… ....... লেখার কোন একটি অংশে আপনি হয়তো জেনেছেন একজন স্প্যানিশ কবির কথা। একটি দুঃখজনক খবর- এইমাত্র ব্রে-কিং নিউজে পেলাম। আমাদের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এবং ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকা প্রতিটি পিসি ও পোর্টেবল ডিভাইস অত্যন্ত শক্তিশালী আননোওন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কী ধরনের ইমপ্যাক্ট হতে পারে এখনো জানা সম্ভব না হলেও ওয়েব থেকে ন্সনসাকইফিশ সংক্রান্ত সকল তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। এবং এই নামটিও টাইপ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বর্ণগুলো উলট-পালট শো করছে। সিভিটিএনএনএর খবর অনুযায়ী ভিডিও ম্যাসেজ দিয়ে সাইবার হামলার দ্বায় স্বীকার যে করেছেন তার নাম ######## তার বিশেষ একটি পরিচয়, তিনি স্প্যানিশ ভাষায় নিয়মিত কবিতা লিখেন। আউটার ওয়ার্ল্ডের বুদ্ধিমান স্পিসিস বা এলিয়েনদের প্রযুক্তিগত সহায়তায় তিনি সাইবার এ্যাটাক পরিচালনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। পৃথিবীতে কোন ধরনের সায়েন্স-ফিকশন সাহিত্য চর্চা করতে দেওয়া হবে না, কারণ এতে করে মানবজাতির সাহিত্য-সংস্কৃতি তার নিজস্ব আইডেন্টিটি হারাচ্ছে বলে হামলার দ্বায় স্বীকারকারী ব্যক্তি মনে করে থাকেন। বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আরো জানান “সিলিউক” নামক গ্রহে বাস করা এ্যালিয়েনদের ধারনা সাইন্স-ফিকশন চর্চা মানুষদের অদূর ভবিষ্যতে এলিয়েনদের জীবন-যাপনের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

যা “সিলিউক” গ্রহ-বাসিদের জন্য অসম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। Draft 11:14:21 Zurich  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।